London ০৬:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

৩৪ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বেচে সংসার চলছে কাশেমের

ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করেন আবুল কাশেম ছবি

ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকার ফুটপাতে ডালায় পিঁপড়ার ডিম নিয়ে বসেন মো. আবুল কাশেম (৪৮)। লাল পিঁপড়া কামড়ালেও তা সহ্য করছেন। পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করতে বড়শি দিয়ে মাছশিকারিরা আসেন তাঁর কাছে, চাহিদামতো ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ৩৪ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তিনি।

কাশেম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাকতা মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৯০ সাল থেকে লাল পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সব পিঁপড়ার ডিম পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রয়োজন লাল পিঁপড়ার বাসা। লাল পিঁপড়ার বাসায় মেলে প্রচুর সাদা ডিম। এই পিঁপড়ার ডিমই তাঁর জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম।

লাল পিঁপড়াগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘মাঞ্জাইল’ পিঁপড়া বলে ডাকা হয়, জানালেন কাশেম। ঝোপে কিংবা গাছে সবুজ পাতায় গোলাকৃত্তির বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে এ পিঁপড়া। সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশি গাছগুলোতে লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। বড় বাসায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে। ডিমগুলো মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডিম আস্ত না থাকলে মাছ খায় না। এ কারণে পিঁপড়ার ডিম মৎস্যশিকারিদের কাছে জনপ্রিয়। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পর্যন্ত পিঁপড়ার ডিম বেশি পাওয়া যায়।

এই ডিম সংগ্রহের বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, একটা লম্বা বাঁশ ও বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে গ্রামের গাছ খুঁজে পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হয়। এই ডিম বিক্রি করেই তিনি পাকা বাড়ি করেছেন, ২২ কাঠার মতো জমি কিনেছেন, সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। তাঁর বড় ছেলে আরিফুল ইসলাম (২৬) স্থানীয় কলেজে ডিগ্রিতে পড়ছেন এবং একটি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। দুই মেয়ে লামিয়া আক্তার (১৩) ও কামরুন নাহার (১১) স্থানীয় মহিলা মাদ্রাসায় পড়ছে।

প্রতিদিন এক থেকে তিন কেজি পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করতে পারেন বলে জানান কাশেম। প্রতি কেজি পিঁপড়ার ডিম ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। যখন এই পেশায় এসেছিলেন, তখন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতেন।

এই ডিম কিনতে এসেছিলেন নগরের নওমহল এলাকার মো. সোহাগ (৩৮)। তিনি বলেন, পিঁপড়ার ডিম দিয়ে বড়শিতে মাছ শিকারের টোপ দিলে মাছ ধরার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সাত-আট দিন পরপর পিঁপড়ার ডিম কিনে নিয়ে যান তিনি।

নগরের খাগডহর এলাকার বাবুল মিয়া (৫৭) রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। তবে শারীরিক অসুস্থতায় এখন আর রিকশা চালাতে পারেন না। পিঁপড়ার ডিম কিনতে এসে তিনি জানান, কাজ করতে না পারায় বড়শি দিয়ে নদী ও বিলে মাছ ধরতে বসেন। এই ডিম দিয়ে বড়শি ফেললে বড় মাছ ধরা পড়ে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:২৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪
৩০
Translate »

৩৪ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বেচে সংসার চলছে কাশেমের

আপডেট : ০৪:২৯:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর ২০২৪

ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করেন আবুল কাশেম ছবি

ময়মনসিংহ নগরের জিরো পয়েন্ট এলাকার ফুটপাতে ডালায় পিঁপড়ার ডিম নিয়ে বসেন মো. আবুল কাশেম (৪৮)। লাল পিঁপড়া কামড়ালেও তা সহ্য করছেন। পিঁপড়ার ডিম সংগ্রহ করতে বড়শি দিয়ে মাছশিকারিরা আসেন তাঁর কাছে, চাহিদামতো ডিম সংগ্রহ করে নিয়ে যান। ৩৪ বছর ধরে পিঁপড়ার ডিম বিক্রিকে পেশা হিসেবে নিয়েছেন তিনি।

কাশেম ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার বাকতা মধ্যপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। ১৯৯০ সাল থেকে লাল পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করেন তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে কথা হয় আবুল কাশেমের সঙ্গে। তিনি বলেন, সব পিঁপড়ার ডিম পাওয়া যায় না। এ জন্য প্রয়োজন লাল পিঁপড়ার বাসা। লাল পিঁপড়ার বাসায় মেলে প্রচুর সাদা ডিম। এই পিঁপড়ার ডিমই তাঁর জীবিকা নির্বাহের মাধ্যম।

লাল পিঁপড়াগুলোকে স্থানীয়ভাবে ‘মাঞ্জাইল’ পিঁপড়া বলে ডাকা হয়, জানালেন কাশেম। ঝোপে কিংবা গাছে সবুজ পাতায় গোলাকৃত্তির বাসা বানিয়ে ডিম পাড়ে এ পিঁপড়া। সাধারণত মেহগনি, আম, লিচুসহ দেশি গাছগুলোতে লাল পিঁপড়ার বাসা পাওয়া যায়। বড় বাসায় ১০০ থেকে ১৫০ গ্রাম ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয় খুব সতর্কতার সঙ্গে। ডিমগুলো মাছের খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ডিম আস্ত না থাকলে মাছ খায় না। এ কারণে পিঁপড়ার ডিম মৎস্যশিকারিদের কাছে জনপ্রিয়। সাধারণত মে থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পর্যন্ত পিঁপড়ার ডিম বেশি পাওয়া যায়।

এই ডিম সংগ্রহের বিষয়ে আবুল কাশেম বলেন, একটা লম্বা বাঁশ ও বাঁশের ঝুড়ি নিয়ে গ্রামের গাছ খুঁজে পিঁপড়ার বাসা থেকে ডিম সংগ্রহ করতে হয়। এই ডিম বিক্রি করেই তিনি পাকা বাড়ি করেছেন, ২২ কাঠার মতো জমি কিনেছেন, সন্তানদের পড়ালেখা করাচ্ছেন। তাঁর বড় ছেলে আরিফুল ইসলাম (২৬) স্থানীয় কলেজে ডিগ্রিতে পড়ছেন এবং একটি কোম্পানিতে চাকরি করছেন। দুই মেয়ে লামিয়া আক্তার (১৩) ও কামরুন নাহার (১১) স্থানীয় মহিলা মাদ্রাসায় পড়ছে।

প্রতিদিন এক থেকে তিন কেজি পিঁপড়ার ডিম বিক্রি করতে পারেন বলে জানান কাশেম। প্রতি কেজি পিঁপড়ার ডিম ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি করতে পারেন। যখন এই পেশায় এসেছিলেন, তখন ১২০ থেকে ১৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করতেন।

এই ডিম কিনতে এসেছিলেন নগরের নওমহল এলাকার মো. সোহাগ (৩৮)। তিনি বলেন, পিঁপড়ার ডিম দিয়ে বড়শিতে মাছ শিকারের টোপ দিলে মাছ ধরার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তাই সাত-আট দিন পরপর পিঁপড়ার ডিম কিনে নিয়ে যান তিনি।

নগরের খাগডহর এলাকার বাবুল মিয়া (৫৭) রিকশা চালিয়ে সংসার চালাতেন। তবে শারীরিক অসুস্থতায় এখন আর রিকশা চালাতে পারেন না। পিঁপড়ার ডিম কিনতে এসে তিনি জানান, কাজ করতে না পারায় বড়শি দিয়ে নদী ও বিলে মাছ ধরতে বসেন। এই ডিম দিয়ে বড়শি ফেললে বড় মাছ ধরা পড়ে।