২৪ বছর শিকলে বন্দি শাহানের জীবন,মেলেনি উন্নত চিকিৎসা

নেত্রকোণার দুর্গাপুরের ৩০ বছর বয়সী শাহান আলী। গত ২৪ বছর ধরে হাতে ও পায়ে শিকল ও দড়ির বাঁধনে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে। তাকে ২৪ ঘন্টাই বেঁধে রাখতে হয়। তার যখন ৬ বছর বয়স তখন তার শরীরে খিঁচুনি দেখা দেয়,এরপর থেকেই সে মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছে।
শাহান দুর্গাপুর উপজেলার চন্ডিগড় ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের থাপনারগাতি গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মিয়ার ছেলে। আর্থিক সংকটের কারণে তাকে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেনি তার পরিবার। স্থানীয়রা বলছেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো শাহান আলী শিকলমুক্ত জীবনে ফিরতে পারবে।
দিনের বেলায় বসতঘরের পেছনে খোলা আকাশের নিচে গাছের সঙ্গে ও রাতে ঘরের ভিতর খুটির সঙ্গে হাতে ও পায়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়। সেখানেই চলে তার খাওয়া-দাওয়া আর প্রশ্রাব-পায়খানা। এভাবেই বছরের পর বছর ধরে চলছে শাহানের বন্দি জীবন।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘরের ভেতর দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে মানসিক ভারসাম্যহীন শাহানকে। তাকে সারাদিন ও রাতেও এভাবে বেঁধে রাখতে হয় বলে জানান বাবা আব্দুল মজিদ আলী। বাঁধন খুলে দিলে সে আক্রমণাত্মক আচরণ করে। সে নিজের শরীরে আঘাত করে,এমনকি ঘরের বেড়ার টিনেও জোরে ধাক্কা মারে।
শাহান আলীর বাবা আব্দুল মজিদ বলেন,জন্মের ৬ বছর বয়স হওয়ার পর থেকেই তার মধ্যে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু হয়। সে সময় তাকে ছেড়ে দিলে ছোটাছুটি করে যাকে সামনে পেত তাকেই মারধর করতো। এলাকাবাসীর গরু,হাস,মুরগি, ছাগল সহ পোষা প্রাণীকে মারধর করাসহ পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করতো। যতই বড় হচ্ছিলো অস্বাভাবিক আচার-আচরণ, মারধর দিন দিন বাড়তে থাকে। পরে সামর্থ্য মতো কিছুদিন চিকিৎসা চালালেও সুস্থ হয়নি শাহান আলী। তার আচরণের কোনো পরিবর্তন হয়নি। বরং দিন দিন বাড়তেই থাকে। তাই অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়াতে বাধ্য হয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বেঁধে রাখা হচ্ছে তাকে।
শাহানের মা রহিমা খাতুন বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা করালেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা যায় তার মাঝে। বয়স যখন ছয় তখনই মানুষকে মারধর শুরু করে। বড় দূর্ঘটনাও ঘটিয়েছে। এজন্যই তাকে রাতে ঘরের ভিতর খুটির সঙ্গে এবং সকালে বাড়ির সামনে গাছের সঙ্গে বেঁধে রেখে সেখানেই খাবার দেয়া হয়।
তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন,দীর্ঘ সময় ধরে হাতে পায়ে বেঁধে রেখেছি সন্তানকে। দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখায় হাত ক্ষত হয়ে গেছে। এই দৃশ্য মা হয়ে সহ্য করতে পারছি না।
এলাকাবাসী বলেন, উন্নত চিকিৎসা পেলে হয়তো কিছুটা স্বাভাবিক হতো শাহান। শিকলমুক্ত হতো তার জীবন৷





















