London ১০:০৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১০০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭ মামলা

সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগের তদন্ত চলমান আছে।

পণ্য রপ্তানির আড়ালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান শেষে সংস্থাটি এসব মামলা করেছে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, সালমান এফ রহমান ও তার ভাই সোহাইল ফাসিহুর রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠান ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৯৩টি এলসি বা ঋণপত্রের বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করে।

নির্ধারিত সময় পার হলেও রপ্তানির প্রায় ৮৩ মিলিয়ন ডলার (৯৯৬ কোটি টাকা) দেশে না আনায় পাচারের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলছে সিআইডি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যের বেশিরভাগই পাঠানো হয়েছে সালমানপুত্র আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং সোহাইলপুত্র আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যৌথ মালিকানাধীন আরআর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের শারজাহ (সংযুক্ত আরব আমিরাত) এবং সৌদি আরবের ঠিকানায়।

এই চারজনসহ ২৮ আসামির বিরুদ্ধে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচারের তথ্য সিআইডি জানতে পেরেছে।

নিজের ভাই আহমেদ সোহাইল ফাসিহুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান) ১৯৭০ সালে গঠন করেন বেক্সিমকো (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড), যা পরে গ্রুপ হিসেবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে বিভিন্ন খাতে।

ওষুধ, বস্ত্র, আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, প্রকৌশল, মিডিয়াসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে সালমানের বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবসা। পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

কাগজে কলমে গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক হলেও সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বেই এসব কোম্পানি পরিচালিত হয়েছে। তার ভাই ও উদ্যোক্তা সহযোগী আহমেদ সোহাইল ফাসিহুর রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ও কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালকও।

যেসব কোম্পানির নামে বেক্সিমকো গ্রুপ অর্থপাচার করেছে বলে সিআইডি জেনেছে, তার মধ্যে আছে- অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস, অটাম লুপ অ্যাপারেলস, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস, কোজি অ্যাপারেলস, অ্যাসেস ফ্যাশন, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস, কাঁচপুর অ্যাপারেলস, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস, পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস, প্লাটিনাম গার্মেন্টস, স্কাইনেট অ্যাপারেলস, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস, আরবান ফ্যাশনস ও উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস।

সিআইডি বলছে, “বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করার পর রপ্তানিমূল্য ৪ মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে রপ্তানিমূল্য বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে সালমান এফ রহমানসহ বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যান্য স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত অর্থ বিদেশে পাচার করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।”

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলননের মুখে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে একই উড়োজাহাজে তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও দেশত্যাগ করেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।

তবে গত ১৩ অগাস্ট নৌপথে দেশ ছেড়ে পালানোর সময়ে বেক্সিমকো গ্রুপের এই ভাইস চেয়ারম্যানকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বিভিন্ন মামলায় দফায় দফায় তাদের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

সালমান এফ রহমান ও তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির নামে ও বেনামে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৭:৪১:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৬৩
Translate »

১০০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ, বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে ১৭ মামলা

আপডেট : ০৭:৪১:৩০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে পাচারের অভিযোগের তদন্ত চলমান আছে।

পণ্য রপ্তানির আড়ালে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার সালমান এফ রহমানসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা করেছে সিআইডি।

মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ও বিধি অনুযায়ী অনুসন্ধান শেষে সংস্থাটি এসব মামলা করেছে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, সালমান এফ রহমান ও তার ভাই সোহাইল ফাসিহুর রহমানের মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের ১৭টি প্রতিষ্ঠান ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে ৯৩টি এলসি বা ঋণপত্রের বিপরীতে পণ্য রপ্তানি করে।

নির্ধারিত সময় পার হলেও রপ্তানির প্রায় ৮৩ মিলিয়ন ডলার (৯৯৬ কোটি টাকা) দেশে না আনায় পাচারের ‘প্রাথমিক সত্যতা’ পাওয়ার কথা বলছে সিআইডি।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিদেশে রপ্তানি হওয়া পণ্যের বেশিরভাগই পাঠানো হয়েছে সালমানপুত্র আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমান এবং সোহাইলপুত্র আহমেদ শাহরিয়ার রহমানের যৌথ মালিকানাধীন আরআর গ্লোবাল ট্রেডিংয়ের শারজাহ (সংযুক্ত আরব আমিরাত) এবং সৌদি আরবের ঠিকানায়।

এই চারজনসহ ২৮ আসামির বিরুদ্ধে জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, শ্রীলঙ্কাসহ বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির আড়ালে অর্থপাচারের তথ্য সিআইডি জানতে পেরেছে।

নিজের ভাই আহমেদ সোহাইল ফাসিহুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে সালমান ফজলুর রহমান (সালমান এফ রহমান) ১৯৭০ সালে গঠন করেন বেক্সিমকো (বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড), যা পরে গ্রুপ হিসেবে ব্যবসা সম্প্রসারণ করে বিভিন্ন খাতে।

ওষুধ, বস্ত্র, আমদানি-রপ্তানি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, হোটেল, প্রকৌশল, মিডিয়াসহ নানা খাতে ছড়িয়ে আছে সালমানের বেক্সিমকো গ্রুপের ব্যবসা। পুঁজিবাজারেও তার প্রভাব নিয়েও নানা আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে।

কাগজে কলমে গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ও পরিচালক হলেও সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বেই এসব কোম্পানি পরিচালিত হয়েছে। তার ভাই ও উদ্যোক্তা সহযোগী আহমেদ সোহাইল ফাসিহুর রহমান বেক্সিমকো গ্রুপের ও কোম্পানিগুলোর চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ব্যবস্থাপনা পরিচালকও।

যেসব কোম্পানির নামে বেক্সিমকো গ্রুপ অর্থপাচার করেছে বলে সিআইডি জেনেছে, তার মধ্যে আছে- অ্যাডভেঞ্চার গার্মেন্টস, অ্যাপোলো অ্যাপারেলস, অটাম লুপ অ্যাপারেলস, বেক্সটেক্স গার্মেন্টস, কসমোপলিটান অ্যাপারেলস, কোজি অ্যাপারেলস, অ্যাসেস ফ্যাশন, ইন্টারন্যাশনাল নিটওয়্যার অ্যান্ড অ্যাপারেলস, কাঁচপুর অ্যাপারেলস, মিডওয়েস্ট গার্মেন্টস, পিয়ারলেস গার্মেন্টস, পিঙ্ক মেকার গার্মেন্টস, প্লাটিনাম গার্মেন্টস, স্কাইনেট অ্যাপারেলস, স্প্রিংফুল অ্যাপারেলস, আরবান ফ্যাশনস ও উইন্টার স্প্রিন্ট গার্মেন্টস।

সিআইডি বলছে, “বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী পণ্য রপ্তানি করার পর রপ্তানিমূল্য ৪ মাসের মধ্যে প্রত্যাবাসন করার বাধ্যবাধকতা থাকা সত্ত্বেও যথাসময়ে রপ্তানিমূল্য বাংলাদেশে প্রত্যাবাসন না করে সালমান এফ রহমানসহ বেক্সিমকো গ্রুপের অন্যান্য স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কর্তৃক উক্ত অর্থ বিদেশে পাচার করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।”

ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলননের মুখে গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। সেদিন শেখ হাসিনার সঙ্গে একই উড়োজাহাজে তার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানও দেশত্যাগ করেন বলে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে।

তবে গত ১৩ অগাস্ট নৌপথে দেশ ছেড়ে পালানোর সময়ে বেক্সিমকো গ্রুপের এই ভাইস চেয়ারম্যানকে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকসহ রাজধানীর সদরঘাট থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর বিভিন্ন মামলায় দফায় দফায় তাদের রিমান্ডে নেয় পুলিশ।

সালমান এফ রহমান ও তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বিভিন্ন কোম্পানির নামে ও বেনামে প্রায় ৩৩ হাজার ৪৭০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে বিদেশে পাচার এবং অন্যান্য আর্থিক অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম পৃথক অনুসন্ধান কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।