London ১২:৫৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অভিভাবকমহল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ যে কোন ধরনের মাদকদ্রব্য। উপজেলার ১শ’র বেশি স্পটে মাদকের কেনাবেচা চলে দিন-রাত। উপজেলার পার্শ্ববর্তী কচুয়া, চিতলমারী, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সঙ্গে থাকা গ্রামগুলোতে এর প্রভাব বেশি। বিভিন্ন সময়ে মাদক নিয়ে সভা, সেমিনার, মানববন্ধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা।

উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও অবাধে চলছে মাদক কারবারিদের রমরমা ব্যবসা। মাদকের করাল গ্রাসে আসক্ত হয়ে ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষজন। এ তালিকায় রয়েছে যুবসমাজ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এতে উপজেলা জুড়ে মাদকসেবীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এলাকায় উঠতি বয়সী তরুণ ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের মাঝে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন অভিভাবকমহল।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে মাদক ব্যবসা। আগে বেচাকেনা হতো খুব গোপনে। বর্তমানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রাও ভয়ে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছেন না। ফলে উপজেলাতে এখন অবাধে চলছে মাদক কেনাবেচা। উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারাই ফেনসিডিলের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। অপরদিকে ইয়াবা ও গাঁজার দাম তুলণামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যেসব এলাকা নীরব ও সহজে বহনযোগ্য, সেইসব স্পটে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতাদের দেখা যায়। এছাড়াও উপজেলার গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের ব্যবসা হচ্ছে। প্রতিদিন যে হাড়ে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। বর্তমানে উপজেলা জুড়ে মাদকের অভয়ারণ্য বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই।

উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত সবাই অল্পবয়সী। মাদকের ভয়াল নেশার ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের অল্পবয়সী যুবক ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের বাবা-মা।

এদিকে জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের পাড়েরহাটের দরিচর গাজীপুর, ইন্দুরকানীর চাড়াখালি, পত্তাশী বাজার ও বাগোলেরহাট, বালিপাড়ার পথেরহাট, চন্ডিপুরের বলেশ্বর বাজার এবং কলারনসহ আরও কয়েকটি পয়েন্ট থেকে গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন অবৈধ মাদক ও মালামাল ঢুকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকায় অতীতের চেয়ে ভয়ংকর রুপ নিয়েছে। এ সিন্ডিকেট ভাঙা না হলে মাদক সেবী ও মাদক কারবারি বৃদ্ধি পাবে। প্রশাসনের কাছে উপজেলাবাসীর দাবি দ্রুত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহমুদ আল ফরিদ ভূইয়া জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই সচেতন। ইতিমধ্যে ডিবি দুটি মামলা করেছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, অতি দ্রুত মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবো।

এ বিষয়ে পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেখানেই তথ্য পাই সেখানে আমাদের অভিযান চালানো হয়। আপনাদের কাছে তথ্য থাকলে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করবেন।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫
১৩
Translate »

হাত বাড়ালেই মিলছে মাদক, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় অভিভাবকমহল

আপডেট : ০৪:১৩:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের পাড়া-মহল্লা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলেও হাত বাড়ালেই মিলছে গাঁজা, মদ, ফেনসিডিল, ইয়াবাসহ যে কোন ধরনের মাদকদ্রব্য। উপজেলার ১শ’র বেশি স্পটে মাদকের কেনাবেচা চলে দিন-রাত। উপজেলার পার্শ্ববর্তী কচুয়া, চিতলমারী, টুঙ্গিপাড়া উপজেলার সঙ্গে থাকা গ্রামগুলোতে এর প্রভাব বেশি। বিভিন্ন সময়ে মাদক নিয়ে সভা, সেমিনার, মানববন্ধসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে স্থানীয়রা।

উপজেলা সদরসহ প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও অবাধে চলছে মাদক কারবারিদের রমরমা ব্যবসা। মাদকের করাল গ্রাসে আসক্ত হয়ে ডুবে থাকছে উপজেলার উচ্চবিত্ত থেকে শুরু করে নিম্নবিত্ত শ্রেণির মানুষজন। এ তালিকায় রয়েছে যুবসমাজ, স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্র, ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।

এতে উপজেলা জুড়ে মাদকসেবীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এলাকায় উঠতি বয়সী তরুণ ও স্কুল-কলেজ পড়ুয়া ছাত্রদের মাঝে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় আছেন অভিভাবকমহল।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে, আগের চেয়ে কয়েকগুণ বেড়েছে মাদক ব্যবসা। আগে বেচাকেনা হতো খুব গোপনে। বর্তমানে প্রকাশ্যে মাদক বিক্রি করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। স্থানীয়রাও ভয়ে এসব মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারছেন না। ফলে উপজেলাতে এখন অবাধে চলছে মাদক কেনাবেচা। উপজেলার সচেতন নাগরিক সমাজ মাদকের এই ভয়াল থাবা থেকে নতুন প্রজন্মকে বাঁচাতে স্থানীয় প্রশাসনকে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

সরেজমিনে দেখা যায়, যারা কিছুটা বিত্তশালী তারাই ফেনসিডিলের দিকে ঝুঁকে রয়েছেন। অপরদিকে ইয়াবা ও গাঁজার দাম তুলণামূলক কম হওয়ায় এ দুটি মাদকের দিকে আকৃষ্ট হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন আয়ের মানুষ। যেসব এলাকা নীরব ও সহজে বহনযোগ্য, সেইসব স্পটে মোটরসাইকেল ও ইজিবাইকের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মাদক বিক্রেতাদের দেখা যায়। এছাড়াও উপজেলার গ্রাম পর্যায়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্পটে প্রকাশ্যেই মাদকের ব্যবসা হচ্ছে। প্রতিদিন যে হাড়ে বাড়ছে মাদকসেবীর সংখ্যা, এতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকেরা। বর্তমানে উপজেলা জুড়ে মাদকের অভয়ারণ্য বলে অভিহিত করেছেন অনেকেই।

উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক বলেন, মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত সবাই অল্পবয়সী। মাদকের ভয়াল নেশার ছোবলে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে আমাদের অল্পবয়সী যুবক ছেলেরা। ধ্বংস হচ্ছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরাও। মাদকাসক্ত সন্তানদের নিয়ে চরম দুশ্চিন্তার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি আমরা শিক্ষকসহ শিক্ষার্থীদের বাবা-মা।

এদিকে জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের পাড়েরহাটের দরিচর গাজীপুর, ইন্দুরকানীর চাড়াখালি, পত্তাশী বাজার ও বাগোলেরহাট, বালিপাড়ার পথেরহাট, চন্ডিপুরের বলেশ্বর বাজার এবং কলারনসহ আরও কয়েকটি পয়েন্ট থেকে গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন অবৈধ মাদক ও মালামাল ঢুকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাক্তি জানান, মাদক সিন্ডিকেটের সঙ্গে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের জড়িত থাকায় অতীতের চেয়ে ভয়ংকর রুপ নিয়েছে। এ সিন্ডিকেট ভাঙা না হলে মাদক সেবী ও মাদক কারবারি বৃদ্ধি পাবে। প্রশাসনের কাছে উপজেলাবাসীর দাবি দ্রুত মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।

নাজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. মাহমুদ আল ফরিদ ভূইয়া জানান, মাদকের বিরুদ্ধে আমরা সবাই সচেতন। ইতিমধ্যে ডিবি দুটি মামলা করেছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি, অতি দ্রুত মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবো।

এ বিষয়ে পিরোজপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান খান বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। যেখানেই তথ্য পাই সেখানে আমাদের অভিযান চালানো হয়। আপনাদের কাছে তথ্য থাকলে আমাদের দিয়ে সহযোগিতা করবেন।