London ০১:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেপ্টেম্বরে মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ১২ ঘটনা: এমএসএফ

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)

সেপ্টেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ১২টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্তত একজন নিহত হন। এ তথ্য দিয়ে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, বাংলাদেশে এই প্রথম ঘোষণা দিয়ে মাজারে আক্রমণ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় একাধিকবার আক্রমণ হয়েছে, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাজারের স্থাপনা; যা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অবমাননাকর আঘাত।

সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় এমএসএফ। গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করে সংস্থাটি।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ আরও কয়েক জেলায় মাজারে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ১২টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪৩ জন। তবে মাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছোট–বড় মিলিয়ে ৫০টির বেশি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এমএসএফ বলে, এসব ঘটনায় গ্রেপ্তারের কোনো খবর এখন পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে জানা যায়নি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা এবং সুফি মাজারে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়েছিল।

এমএসএফের প্রতিবেদেন বলা হয়, ৫ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ দরবার শরিফে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। ৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে পীর গোলাম মহিনউদ্দিন ওরফে টিপুর আস্তানাসহ বিভিন্ন স্থানে আটটি মাজার ভাঙচুর করে। সেখানে হামলাকারীরা নারী সদস্যদের জিম্মি করে পরিবারের দুই সদস্যকে মারধর ও ঘরে থাকা টাকা, স্বর্ণালংকার লুটপাট করে নিয়ে যায়। ১০ সেপ্টেম্বর রাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলে অবস্থিত হজরত হোসেন আলী শাহ ল্যাংটার মাজার। ১০ সেপ্টেম্বর সিলেটের খাদিম এলাকায় শাহপরান (রহ.) মাজারে আলেম-জনতার সঙ্গে দুর্বৃত্তদের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হন। শাহপরান (রহ.)–এর মাজারে হামলায় যে ছেলেটা মারা গেছেন তাঁর মরদেহ নেওয়ার মতো আত্মীয়স্বজন কাউকে পাওয়া যায়নি। ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকার ধামরাইয়ে বুচাই চান পাগলার মাজারটি ভাঙতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ নেন। এর আগে তাঁরা মাইকিং করে লোক জড়ো করেন এবং মাজারসংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে আগুন লাগিয়ে দেন। ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়া এলাকায় শাহ সুফি আবদুল কাইউম চিশতিয়ার মাজার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে মাজার, মাজারের দেয়াল ও কবর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের পোড়াবাড়ী এলাকায় একটি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি শাহ সুফি ফসিহ পাগলার মাজার নামে পরিচিত। রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথমে ভেকু দিয়ে মাজারটি ভেঙে ফেলা হয়। পাশে টিনশেড মসজিদও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সব স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

১২ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়নের মেহের আলী মাদবরকান্দি গ্রামে অবস্থিত ফকির করিম শাহ মাজার (আরশেদ পাগলার মাজার) ও নড়িয়ার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের পোড়াগাছা গ্রামে অবস্থিত মজিদিয়া দরবার শরিফ মাজারে (শালু শাহ মাজার) ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ২৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে আবারও টিপু শাহ মাজারের বাৎসরিক মাহফিলে বাধা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হন দুই থেকে তিনজন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন মনে করে, মাজার শুধু কোনো ধর্মীয় স্থাপনা নয়, মাজার আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার স্থায়ীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে মাজারের ঐতিহ্য রক্ষা করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় এমএসএফের প্রতিবেদনে।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও এ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা গত মাসের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনটি বাতিল না হওয়ায় আইনটিকে এখনো সাইবার নিরাপত্তাহীনতাবোধ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:৪৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
৪৭
Translate »

সেপ্টেম্বরে মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ১২ ঘটনা: এমএসএফ

আপডেট : ১১:৪৮:৫৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ)

সেপ্টেম্বর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাজারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের ১২টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় অন্তত একজন নিহত হন। এ তথ্য দিয়ে মানবাধিকার সংগঠন মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) বলেছে, বাংলাদেশে এই প্রথম ঘোষণা দিয়ে মাজারে আক্রমণ করা হয়েছে। অনেক জায়গায় একাধিকবার আক্রমণ হয়েছে, বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে মাজারের স্থাপনা; যা ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি অবমাননাকর আঘাত।

সেপ্টেম্বর মাসের মানবাধিকার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় এমএসএফ। গতকাল সোমবার এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকার প্রতিবেদন এবং নিজেদের তথ্যানুসন্ধানের ভিত্তিতে এ প্রতিবেদন করে সংস্থাটি।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকা, সিরাজগঞ্জ, গাজীপুর, নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ আরও কয়েক জেলায় মাজারে হামলা, ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগের ১২টি ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় একজন ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৪৩ জন। তবে মাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ছোট–বড় মিলিয়ে ৫০টির বেশি মাজারে হামলার ঘটনা ঘটেছে।

এমএসএফ বলে, এসব ঘটনায় গ্রেপ্তারের কোনো খবর এখন পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমে জানা যায়নি। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে দেশে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থাপনা এবং সুফি মাজারে হামলাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করার কথা জানানো হয়েছিল।

এমএসএফের প্রতিবেদেন বলা হয়, ৫ সেপ্টেম্বর রাতে নারায়ণগঞ্জের দেওয়ানবাগ দরবার শরিফে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। ৯ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে পীর গোলাম মহিনউদ্দিন ওরফে টিপুর আস্তানাসহ বিভিন্ন স্থানে আটটি মাজার ভাঙচুর করে। সেখানে হামলাকারীরা নারী সদস্যদের জিম্মি করে পরিবারের দুই সদস্যকে মারধর ও ঘরে থাকা টাকা, স্বর্ণালংকার লুটপাট করে নিয়ে যায়। ১০ সেপ্টেম্বর রাতে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে পূর্বাচলে অবস্থিত হজরত হোসেন আলী শাহ ল্যাংটার মাজার। ১০ সেপ্টেম্বর সিলেটের খাদিম এলাকায় শাহপরান (রহ.) মাজারে আলেম-জনতার সঙ্গে দুর্বৃত্তদের সংঘর্ষে অন্তত ৪০ জন আহত হন। শাহপরান (রহ.)–এর মাজারে হামলায় যে ছেলেটা মারা গেছেন তাঁর মরদেহ নেওয়ার মতো আত্মীয়স্বজন কাউকে পাওয়া যায়নি। ১১ সেপ্টেম্বর দুপুরে ঢাকার ধামরাইয়ে বুচাই চান পাগলার মাজারটি ভাঙতে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ নেন। এর আগে তাঁরা মাইকিং করে লোক জড়ো করেন এবং মাজারসংশ্লিষ্ট স্থাপনাগুলো গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সেখানে আগুন লাগিয়ে দেন। ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট শহরতলির খাদিমপাড়া এলাকায় শাহ সুফি আবদুল কাইউম চিশতিয়ার মাজার ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে মাজার, মাজারের দেয়াল ও কবর হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ভেঙে ফেলা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুরের পোড়াবাড়ী এলাকায় একটি মাজারে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে এটি শাহ সুফি ফসিহ পাগলার মাজার নামে পরিচিত। রাত সাড়ে ১২টার দিকে প্রথমে ভেকু দিয়ে মাজারটি ভেঙে ফেলা হয়। পাশে টিনশেড মসজিদও ভাঙচুর করা হয়। এ সময় সব স্থাপনায় আগুন ধরিয়ে দেয় তারা।

১২ সেপ্টেম্বর শরীয়তপুরে জাজিরার বিলাসপুর ইউনিয়নের মেহের আলী মাদবরকান্দি গ্রামে অবস্থিত ফকির করিম শাহ মাজার (আরশেদ পাগলার মাজার) ও নড়িয়ার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের পোড়াগাছা গ্রামে অবস্থিত মজিদিয়া দরবার শরিফ মাজারে (শালু শাহ মাজার) ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ২৫ সেপ্টেম্বর কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে আবারও টিপু শাহ মাজারের বাৎসরিক মাহফিলে বাধা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় আহত হন দুই থেকে তিনজন।

মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন মনে করে, মাজার শুধু কোনো ধর্মীয় স্থাপনা নয়, মাজার আমাদের সংস্কৃতির অংশ। সে ক্ষেত্রে অন্তর্বর্তী সরকার স্থায়ীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ করে মাজারের ঐতিহ্য রক্ষা করবে বলে আশা প্রকাশ করা হয় এমএসএফের প্রতিবেদনে।

এমএসএফের প্রতিবেদনে বলা হয়, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্ত্বেও এ মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটেছে। ঘটেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক নির্যাতনে মৃত্যুর ঘটনা, যা অত্যন্ত উদ্বেগের। রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনা গত মাসের তুলনায় অনেকাংশে বেড়েছে, যা উদ্বেগজনক। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মতপ্রকাশের সংবিধান প্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেই চলেছে। সাইবার নিরাপত্তা আইনটি বাতিল না হওয়ায় আইনটিকে এখনো সাইবার নিরাপত্তাহীনতাবোধ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।