London ০২:৫৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিত-কোহলিদের প্রতি বিসিসিআইয়ের কঠিন ১০ শর্ত

স্পোর্টস ডেস্ক

ভারতীয় ক্রিকেটারদের ১০টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।

অমান্য করলে আইপিএল ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে না দেওয়া, বেতন-ভাতা থেকে টাকা কেটে নেওয়ার শাস্তিও হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের।

রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের বিষয়ে বিসিসিআই এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছে সাম্প্রতিক বাজে ফলের পরিপ্রেক্ষিতে।

ভারতের টেস্ট দল সর্বশেষ দুটি সিরিজে বড় ব্যবধানে হেরেছে-ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে, অস্ট্রেলিয়ায় স্বাগতিকদের কাছে ৩-১ ব্যবধানে।

টানা দুটি সিরিজের পারফরম্যান্স নিয়ে সম্প্রতি পর্যালোচনা বৈঠকে বসে বিসিসিআই। এতে বোর্ড সচিব দেবজিত সাইকিয়া, প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর, টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক রোহিত শর্মা, প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ভারতীয় দলের মধ্যে শৃঙ্খলা, ইতিবাচক পরিবেশ নিশ্চিতে অবশ্য পালনীয় ১০টি নির্দেশনা চূড়ান্ত করা হয়। যা বিসিসিআইয়ের চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড়দের বৃহস্পতিবারই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইএসপিএনক্রিকইনফোসহ বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিসিসিআইয়ের ১০ নির্দেশনার অনুলিপি পেয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হওয়া এ সব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে:

১. ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ
জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হতে এবং কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পেতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ খেলতেই হবে। এটি বাধ্যতামূলক। শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা যাবে। তবে সেটি হবে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের অনুমোদনসাপেক্ষে, যা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।

২. আলাদাভাবে পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণ
টিম হোটেল থেকে অনুশীলন বা ম্যাচ ভেন্যুতে যাতায়াত করতে হবে টিম বাসে। হোটেল থেকে মাঠে বা মাঠ থেকে হোটেলে পরিবার নিয়ে আলাদাভাবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাওয়া যাবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রধান কোচের পূর্ব-অনুমোদন নিতে হবে।

৩. বেশি ওজন বহন করা যাবে না
দলের সঙ্গে সফরের সময় অতিরিক্ত ব্যাগেজ বহন করা যাবে না। ব্যাগ ও ওজন নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে সেটি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে নিজের খরচে বহন করতে হবে। দল করবে না।

৩০ দিনের বেশি লম্বা সফরের ক্ষেত্রে একজন খেলোয়াড় ৩টি স্যুটকেস ও ২টি কিট ব্যাগ অথবা সর্বোচ্চ ১৫০ কেজি ওজনের ব্যাগেজ নিতে পারবেন। আর সফর ৩০ দিনের কম হলে ব্যাগেজ নেওয়া যাবে ৪টি, ওজন ১২০ কেজির মধ্যে।

৪. ব্যক্তিগত স্টাফে বাধ্যবাধকতা
ব্যক্তিগত স্টাফ, যেমন ব্যবস্থাপক, রাঁধুনি, সহকারী, নিরাপত্তা কর্মকর্তা-সফরে সঙ্গে নেওয়া যাবে যদি বিসিসিআইয়ের সুস্পষ্ট অনুমোদন থাকে। এর মাধ্যমে দলের পরিচালন কার্যক্রমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া নিশ্চিত করা হবে।

৫. সেন্টার অব এক্সলেন্সে ব্যাগ পাঠানো
বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত সেন্টার অব এক্সলেন্সে ক্রীড়াসামগ্রী ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পাঠাতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে। আলাদাভাবে পাঠাতে চাইলে খরচ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে বহন করতে হবে।

৬. অনুশীলনে উপস্থিতি
প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অনুশীলন সেশনের পুরোটা সময় দলের সঙ্গে থাকতে হবে। নিজের অনুশীলন শেষ হয়ে গেলে আগেভাগে চলে যাওয়া যাবে না।

৭. বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাধ্যবাধকতা
সিরিজ বা ট্যুর চলাকালে কোনো খেলোয়াড় (ব্যক্তিগত) বিজ্ঞাপন বা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

৮. পরিবারের ভ্রমণ নীতি
বিদেশে ৪৫ দিনের বেশি অবস্থান করতে হবে-এমন সফরে সঙ্গী ও সন্তানদের নেওয়া যাবে। তবে প্রতি সিরিজে (সংস্করণ-ভিত্তিতে) একবারই নেওয়া যাবে, অবস্থান করতে পারবে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড় ও তার পরিবারের আবাসনের খরচ বিসিসিআই বহন করবে।

অন্যান্য খরচ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের। পরিবারের সদস্যরা কখন আসবেন, সেটি কোচ, অধিনায়ক ও বোর্ডের মহাব্যবস্থাপকের (অপারেশনস) সঙ্গে আগেই আলোচনা করে নিতে হবে। এর বাইরে ভিন্ন কোনো পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অনুমোদন থাকতে হবে। খরচও খেলোয়াড়কেই বহন করতে হবে।

৯. বিসিসিআইয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ
বিসিসিআইয়ের অফিশিয়াল শুটিং, প্রচারণামূলক কার্যক্রম ও অন্যান্য আয়োজনে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অংশ নিতে হবে।

১০. সফর সমাপ্তকরণ
কোনো ম্যাচ যদি নির্ধারিত সময়ের আগেও শেষ হয়েও যায়, সিরিজ বা ট্যুর শেষ হওয়া পর্যন্ত খেলোয়াড়দের দলের সঙ্গে অবস্থান করতে হবে। চলে যাওয়া যাবে না।

বিসিসিআইয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে এই নির্দেশনা কঠোরভাবে মানতে হবে। নির্দেশনা অমান্যে বিসিসিআই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

যার মধ্যে আছে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের বিসিসিআই পরিচালিত টুর্নামেন্ট যেমন আইপিএল খেলায় নিষেধাজ্ঞা, বিসিসিআই চুক্তিতে থাকা ম্যাচ ফি কর্তন। এ সব নির্দেশনা ‘ভারতীয় ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্ব এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করে’ বলে উল্লেখ করেছে বিসিসিআই।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:৩৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫
১০
Translate »

রোহিত-কোহলিদের প্রতি বিসিসিআইয়ের কঠিন ১০ শর্ত

আপডেট : ১০:৩৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী ২০২৫

ভারতীয় ক্রিকেটারদের ১০টি সুনির্দিষ্ট বিষয়ে কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা দিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই)।

অমান্য করলে আইপিএল ও ঘরোয়া ক্রিকেট খেলতে না দেওয়া, বেতন-ভাতা থেকে টাকা কেটে নেওয়ার শাস্তিও হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ক্রিকেটারদের।

রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলিদের বিষয়ে বিসিসিআই এমন কঠোর অবস্থান নিয়েছে সাম্প্রতিক বাজে ফলের পরিপ্রেক্ষিতে।

ভারতের টেস্ট দল সর্বশেষ দুটি সিরিজে বড় ব্যবধানে হেরেছে-ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের কাছে ৩-০ ব্যবধানে, অস্ট্রেলিয়ায় স্বাগতিকদের কাছে ৩-১ ব্যবধানে।

টানা দুটি সিরিজের পারফরম্যান্স নিয়ে সম্প্রতি পর্যালোচনা বৈঠকে বসে বিসিসিআই। এতে বোর্ড সচিব দেবজিত সাইকিয়া, প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর, টেস্ট ও ওয়ানডে অধিনায়ক রোহিত শর্মা, প্রধান নির্বাচক অজিত আগারকার উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ভারতীয় দলের মধ্যে শৃঙ্খলা, ইতিবাচক পরিবেশ নিশ্চিতে অবশ্য পালনীয় ১০টি নির্দেশনা চূড়ান্ত করা হয়। যা বিসিসিআইয়ের চুক্তিতে থাকা খেলোয়াড়দের বৃহস্পতিবারই পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

ইএসপিএনক্রিকইনফোসহ বিভিন্ন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম বিসিসিআইয়ের ১০ নির্দেশনার অনুলিপি পেয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হওয়া এ সব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে:

১. ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ
জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হতে এবং কেন্দ্রীয় চুক্তিতে জায়গা পেতে ঘরোয়া ক্রিকেটে ম্যাচ খেলতেই হবে। এটি বাধ্যতামূলক। শুধু বিশেষ পরিস্থিতিতে ঘরোয়া ক্রিকেটে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা যাবে। তবে সেটি হবে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যানের অনুমোদনসাপেক্ষে, যা স্বচ্ছতার সঙ্গে নিশ্চিত করতে হবে।

২. আলাদাভাবে পরিবারের সঙ্গে ভ্রমণ
টিম হোটেল থেকে অনুশীলন বা ম্যাচ ভেন্যুতে যাতায়াত করতে হবে টিম বাসে। হোটেল থেকে মাঠে বা মাঠ থেকে হোটেলে পরিবার নিয়ে আলাদাভাবে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যাওয়া যাবে না। বিশেষ ক্ষেত্রে প্রয়োজন হলে নির্বাচক কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রধান কোচের পূর্ব-অনুমোদন নিতে হবে।

৩. বেশি ওজন বহন করা যাবে না
দলের সঙ্গে সফরের সময় অতিরিক্ত ব্যাগেজ বহন করা যাবে না। ব্যাগ ও ওজন নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বেশি হলে সেটি সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে নিজের খরচে বহন করতে হবে। দল করবে না।

৩০ দিনের বেশি লম্বা সফরের ক্ষেত্রে একজন খেলোয়াড় ৩টি স্যুটকেস ও ২টি কিট ব্যাগ অথবা সর্বোচ্চ ১৫০ কেজি ওজনের ব্যাগেজ নিতে পারবেন। আর সফর ৩০ দিনের কম হলে ব্যাগেজ নেওয়া যাবে ৪টি, ওজন ১২০ কেজির মধ্যে।

৪. ব্যক্তিগত স্টাফে বাধ্যবাধকতা
ব্যক্তিগত স্টাফ, যেমন ব্যবস্থাপক, রাঁধুনি, সহকারী, নিরাপত্তা কর্মকর্তা-সফরে সঙ্গে নেওয়া যাবে যদি বিসিসিআইয়ের সুস্পষ্ট অনুমোদন থাকে। এর মাধ্যমে দলের পরিচালন কার্যক্রমের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া নিশ্চিত করা হবে।

৫. সেন্টার অব এক্সলেন্সে ব্যাগ পাঠানো
বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত সেন্টার অব এক্সলেন্সে ক্রীড়াসামগ্রী ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র পাঠাতে হবে টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে সমন্বয় করে। আলাদাভাবে পাঠাতে চাইলে খরচ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়কে বহন করতে হবে।

৬. অনুশীলনে উপস্থিতি
প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অনুশীলন সেশনের পুরোটা সময় দলের সঙ্গে থাকতে হবে। নিজের অনুশীলন শেষ হয়ে গেলে আগেভাগে চলে যাওয়া যাবে না।

৭. বাণিজ্যিক কার্যক্রমে বাধ্যবাধকতা
সিরিজ বা ট্যুর চলাকালে কোনো খেলোয়াড় (ব্যক্তিগত) বিজ্ঞাপন বা বাণিজ্যিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।

৮. পরিবারের ভ্রমণ নীতি
বিদেশে ৪৫ দিনের বেশি অবস্থান করতে হবে-এমন সফরে সঙ্গী ও সন্তানদের নেওয়া যাবে। তবে প্রতি সিরিজে (সংস্করণ-ভিত্তিতে) একবারই নেওয়া যাবে, অবস্থান করতে পারবে সর্বোচ্চ দুই সপ্তাহ। এ ক্ষেত্রে খেলোয়াড় ও তার পরিবারের আবাসনের খরচ বিসিসিআই বহন করবে।

অন্যান্য খরচ সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের। পরিবারের সদস্যরা কখন আসবেন, সেটি কোচ, অধিনায়ক ও বোর্ডের মহাব্যবস্থাপকের (অপারেশনস) সঙ্গে আগেই আলোচনা করে নিতে হবে। এর বাইরে ভিন্ন কোনো পরিস্থিতির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের অনুমোদন থাকতে হবে। খরচও খেলোয়াড়কেই বহন করতে হবে।

৯. বিসিসিআইয়ের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ
বিসিসিআইয়ের অফিশিয়াল শুটিং, প্রচারণামূলক কার্যক্রম ও অন্যান্য আয়োজনে প্রত্যেক খেলোয়াড়কে অংশ নিতে হবে।

১০. সফর সমাপ্তকরণ
কোনো ম্যাচ যদি নির্ধারিত সময়ের আগেও শেষ হয়েও যায়, সিরিজ বা ট্যুর শেষ হওয়া পর্যন্ত খেলোয়াড়দের দলের সঙ্গে অবস্থান করতে হবে। চলে যাওয়া যাবে না।

বিসিসিআইয়ের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, প্রত্যেক খেলোয়াড়কে এই নির্দেশনা কঠোরভাবে মানতে হবে। নির্দেশনা অমান্যে বিসিসিআই শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

যার মধ্যে আছে সংশ্লিষ্ট খেলোয়াড়ের বিসিসিআই পরিচালিত টুর্নামেন্ট যেমন আইপিএল খেলায় নিষেধাজ্ঞা, বিসিসিআই চুক্তিতে থাকা ম্যাচ ফি কর্তন। এ সব নির্দেশনা ‘ভারতীয় ক্রিকেটকে অগ্রাধিকার দেওয়ার গুরুত্ব এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করে’ বলে উল্লেখ করেছে বিসিসিআই।