London ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল করে দেওয়া হয়েছিল: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

ঢাকার ইস্কাটনের বিস মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আজ শনিবার

চুরির ঘটনায়ও যদি মামলা করার প্রয়োজন পড়ত, কোনো থানা নিত না। চুরির মামলা নেওয়ার জন্য এলাকার নেতাদের অনুমতি নিতে হতো। সাবেক সরকারের সময় দেশটা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল করে দেওয়া হয়েছিল।

ঢাকার ইস্কাটনের বিস মিলনায়তনে আজ শনিবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। অর্থনীতি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার যে কমিটি গঠন করেছে, তিনি এই কমিটির প্রধান।

এফবিসিসিআইয়ের তিন সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির হোসেন ও মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) ও সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, আবু ইউসুফ, সায়মা হক বিদিশা ও শাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ঢাকা চেম্বারের দুই সাবেক সভাপতি সবুর খান ও আসিফ ইব্রাহিমসহ ২১ জনের বক্তব্য শেষে কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। আলোচনায় আরও অংশ নেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বারভিডার সভাপতি আবদুল হক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক পারভেজ করিম আব্বাসী।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপনাদের কথা শুনে মনে হলো দেশে একটি স্বাভাবিক সরকার বিদ্যমান। মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের পর আন্দোলনের মুখে একটি সরকার এসেছে। এটা কোনো স্বাভাবিক সরকার নয় এবং যার বয়স তিন মাসও হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রের একটা ছেদ হয়েছে, যে কারণে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। একটা ভিন্নতর পরিস্থিতিতে সরকার পরিচালিত হচ্ছে—কারও আলোচনায় এই স্বীকৃতিটাও দেখা গেল না।’

আগের সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, জাতীয় আয়কে নিয়ে খেলাধুলা করা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির তথ্য বিকৃত করা হয়েছে, রপ্তানি আয়ের পার্থক্যের কারণে লেনদেনের ভারসাম্যে সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। বিকল করে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ডামি সংসদে দাঁড়িয়ে এক মিনিট কথা বলে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগকেও প্রভাবিত করা হয়েছে স্বার্থগোষ্ঠীর মাধ্যমে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু আইএমএফকেও ফাঁকি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাতারাতি পরিবর্তন তো আসবে না। এত দিন কোনো নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল না, জবাবদিহি ছিল না। এ রকম একটা ব্যবস্থার পর নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এগুলো নিয়ে দেড় দশক ধরে আলোচনা হয়েছে—এমন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, দেড় দশকে কেন এগুলোর বাস্তবায়ন হলো না? কেন আপনারা বাস্তবায়ন করতে পারলেন না? রাজনীতিবিদেরা এখন ব্যবসায়ী। আর আমলারা রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, ‘সবাই সংস্কার নিয়ে কথা বলছি। সংস্কারের দুটি অংশ। একটা হচ্ছে জমে থাকা সংস্কার, আরেকটা হচ্ছে উন্নয়নের পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কার। অথচ আমরা বলছি সংস্কারের উপরিকাঠামো নিয়ে। সংস্কারের নীতিমালা স্পষ্ট করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে; কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না। ভূমিহীন কৃষকের কী হবে, পোশাককর্মীদের মজুরি কত হবে—এসব নিয়েও ভাবতে হবে। আর প্রতি মুহূর্তে সবার কাছ থেকে জবাবদিহি চাইতে হবে, নইলে হবে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সরকার বেশ কিছু উদ্যোগও পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন সুফল না এলেও সামনে হয়তো আসবে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে, তাকে তুলে নিতে হবে—এসব চলছে; কিন্তু রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার অর্থনৈতিক তাৎপর্য আছে। কারও রাজনৈতিক অধিকার না থাকলে তার অর্থনৈতিক অধিকার কমে যায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪
২২
Translate »

রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল করে দেওয়া হয়েছিল: দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

আপডেট : ১২:৪৪:১৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৬ অক্টোবর ২০২৪

ঢাকার ইস্কাটনের বিস মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। আজ শনিবার

চুরির ঘটনায়ও যদি মামলা করার প্রয়োজন পড়ত, কোনো থানা নিত না। চুরির মামলা নেওয়ার জন্য এলাকার নেতাদের অনুমতি নিতে হতো। সাবেক সরকারের সময় দেশটা এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিকল করে দেওয়া হয়েছিল।

ঢাকার ইস্কাটনের বিস মিলনায়তনে আজ শনিবার সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ: অর্থনৈতিক নীতিমালা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এ কথা বলেন। অর্থনীতি নিয়ে একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার যে কমিটি গঠন করেছে, তিনি এই কমিটির প্রধান।

এফবিসিসিআইয়ের তিন সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, মীর নাসির হোসেন ও মো. জসিম উদ্দিন, বাংলাদেশ চেম্বারের সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) ও সাবেক সভাপতি শাহেদুল ইসলাম হেলাল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, আবু ইউসুফ, সায়মা হক বিদিশা ও শাহিদুল ইসলাম জাহিদ, ঢাকা চেম্বারের দুই সাবেক সভাপতি সবুর খান ও আসিফ ইব্রাহিমসহ ২১ জনের বক্তব্য শেষে কথা বলেন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।

সিজিএসের চেয়ার মুনিরা খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনায় সঞ্চালনা করেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। আলোচনায় আরও অংশ নেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, বারভিডার সভাপতি আবদুল হক, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষক পারভেজ করিম আব্বাসী।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আপনাদের কথা শুনে মনে হলো দেশে একটি স্বাভাবিক সরকার বিদ্যমান। মানুষের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের পর আন্দোলনের মুখে একটি সরকার এসেছে। এটা কোনো স্বাভাবিক সরকার নয় এবং যার বয়স তিন মাসও হয়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রের একটা ছেদ হয়েছে, যে কারণে নতুন প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। একটা ভিন্নতর পরিস্থিতিতে সরকার পরিচালিত হচ্ছে—কারও আলোচনায় এই স্বীকৃতিটাও দেখা গেল না।’

আগের সরকারের বিভিন্ন কাজের সমালোচনা করে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, জাতীয় আয়কে নিয়ে খেলাধুলা করা হয়েছে, মূল্যস্ফীতির তথ্য বিকৃত করা হয়েছে, রপ্তানি আয়ের পার্থক্যের কারণে লেনদেনের ভারসাম্যে সমস্যা তৈরি করা হয়েছে। বিকল করে দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে। ডামি সংসদে দাঁড়িয়ে এক মিনিট কথা বলে ব্যাংকের পরিচালকদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। বিচার বিভাগকেও প্রভাবিত করা হয়েছে স্বার্থগোষ্ঠীর মাধ্যমে।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছ থেকে ঋণ নেওয়া হয়েছে; কিন্তু আইএমএফকেও ফাঁকি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। রাতারাতি পরিবর্তন তো আসবে না। এত দিন কোনো নির্বাচনী অঙ্গীকার ছিল না, জবাবদিহি ছিল না। এ রকম একটা ব্যবস্থার পর নতুন সরকার দায়িত্ব নিয়েছে।

অনুষ্ঠানে যেসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে, এগুলো নিয়ে দেড় দশক ধরে আলোচনা হয়েছে—এমন মন্তব্য করে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রশ্ন, দেড় দশকে কেন এগুলোর বাস্তবায়ন হলো না? কেন আপনারা বাস্তবায়ন করতে পারলেন না? রাজনীতিবিদেরা এখন ব্যবসায়ী। আর আমলারা রাজনীতিবিদ হয়ে গেছেন।

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো বলেন, ‘সবাই সংস্কার নিয়ে কথা বলছি। সংস্কারের দুটি অংশ। একটা হচ্ছে জমে থাকা সংস্কার, আরেকটা হচ্ছে উন্নয়নের পরের ধাপে নিয়ে যাওয়ার জন্য সংস্কার। অথচ আমরা বলছি সংস্কারের উপরিকাঠামো নিয়ে। সংস্কারের নীতিমালা স্পষ্ট করতে হবে এবং দ্রুততম সময়ে বাস্তবায়ন করতে হবে; কিন্তু গরিব মানুষের কথা ভাবছি না। ভূমিহীন কৃষকের কী হবে, পোশাককর্মীদের মজুরি কত হবে—এসব নিয়েও ভাবতে হবে। আর প্রতি মুহূর্তে সবার কাছ থেকে জবাবদিহি চাইতে হবে, নইলে হবে না। দ্রব্যমূল্য নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। সরকার বেশ কিছু উদ্যোগও পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন সুফল না এলেও সামনে হয়তো আসবে।’

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, কারও ওপর নিষেধাজ্ঞা দিতে হবে, তাকে তুলে নিতে হবে—এসব চলছে; কিন্তু রাজনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ন করার অর্থনৈতিক তাৎপর্য আছে। কারও রাজনৈতিক অধিকার না থাকলে তার অর্থনৈতিক অধিকার কমে যায়।