London ০২:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
সর্প দংশন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালা পটুয়াখালীর নতুন জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চৌধুরী ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীদের খোঁজখবর নিলেন জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চু ছোটবনগ্রামে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ পটুয়াখালীতে উচ্চ আদালতের আদেশ অমান্য করে ৯ কোটি ৬৫ লাখ টাকার চেক বিতরণ রাজশাহীতে কর্মচারি ঐক্য পরিষদের মানববন্ধন সিরাজগঞ্জে মিথ্যা সংবাদ প্রচারে ডিলারশীপ বাতিলের ষড়যন্ত্রের অভিযোগ উল্লাপাড়ায় র‌্যাবের অভিযানে কষ্টি পাথরের মূর্তিসহ দুই পাচারকারী গ্রেফতার পাবনায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে যুবদল নেতা নিহত, আহত ১ রাজশাহীতে সাবেক ডিবি হাসান কে গণপিটুনি

রাণীনগরে ঐতিহ্যবাহী পদ্মা পূজা ও পদ্মা মেলায় মানুষের ঢল

আবু সাইদ, নওগাঁ

নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহনকারী পদ্মা পূজা এবং সেই উপলক্ষে আয়োজিত জমকালো পদ্মা মেলা। মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই উৎসব, যা যেন পুরো মিরাটকে একদিনের জন্য পরিণত করে আনন্দঘন মিলনমেলায়।

সকালে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পরপরই মেলা প্রাঙ্গণে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। স্থানীয় মিরাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরজুড়ে বসে উপজেলার সবচেয়ে বড় পদ্মা পূজার মেলা। পূজার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার বাইরে এই মেলাকে ঘিরেই যেন তৈরি হয় এক সম্প্রীতির আবহ।

স্থানীয় যুবকদের অংশগ্রহণে আয়োজিত নৌকাবাইচ ছিল মেলার অন্যতম আকর্ষণ। নদীতে বর্ণিল নৌকাগুলোর ছুটে চলার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। শিশুদের জন্য ছিল দোলনা, নাগরদোলা ও নানা রকম খেলনার দোকান। খাবারের স্টলগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেলায় অংশ নেওয়া মানুষদের চোখেমুখে ছিল উৎসবের উচ্ছ্বাস।

মেলার বিশেষত্ব ছিল এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণ। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু সকলের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে। নানা বয়সী মানুষজন যেন ফিরে গিয়েছিলেন শেকড়ের কাছে, পুরনো দিনের গ্রামীণ সংস্কৃতির ছোঁয়া পেয়ে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নজরকাড়া। রাণীনগর থানার পুলিশ সার্বক্ষণিক টহলের মাধ্যমে পুরো মেলাকে নিরাপদ রাখেন। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। মেলায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উপস্থিত ছিলেন রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাফিজ মোঃ রায়হান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
“মিরাট ইউনিয়নের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি।”

এক দর্শনার্থী অ্যাডভোকেট আলামিন বলেন,
“এই মেলাটি শুধুই আনন্দের উপলক্ষ নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। এই দিনটি আমাদের পরিবারে আলাদা গুরুত্ব পায়, যেন এক উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।”

মিরাটের স্থানীয়রা মনে করেন, এই মেলার মাধ্যমে শুধু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই নয়, বরং পারস্পরিক সহাবস্থানের বন্ধনও আরও দৃঢ় হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়ে মিলেমিশে অংশ নেন বলে এই আয়োজন প্রতিবছরই অপেক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৩২:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫
১২
Translate »

রাণীনগরে ঐতিহ্যবাহী পদ্মা পূজা ও পদ্মা মেলায় মানুষের ঢল

আপডেট : ০৪:৩২:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫

নওগাঁ জেলার রাণীনগর উপজেলার মিরাট ইউনিয়নে অনুষ্ঠিত হয়েছে দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য বহনকারী পদ্মা পূজা এবং সেই উপলক্ষে আয়োজিত জমকালো পদ্মা মেলা। মঙ্গলবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে এই উৎসব, যা যেন পুরো মিরাটকে একদিনের জন্য পরিণত করে আনন্দঘন মিলনমেলায়।

সকালে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরুর পরপরই মেলা প্রাঙ্গণে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। স্থানীয় মিরাট ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরজুড়ে বসে উপজেলার সবচেয়ে বড় পদ্মা পূজার মেলা। পূজার ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার বাইরে এই মেলাকে ঘিরেই যেন তৈরি হয় এক সম্প্রীতির আবহ।

স্থানীয় যুবকদের অংশগ্রহণে আয়োজিত নৌকাবাইচ ছিল মেলার অন্যতম আকর্ষণ। নদীতে বর্ণিল নৌকাগুলোর ছুটে চলার দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা। শিশুদের জন্য ছিল দোলনা, নাগরদোলা ও নানা রকম খেলনার দোকান। খাবারের স্টলগুলোতেও ছিল উপচে পড়া ভিড়। মেলায় অংশ নেওয়া মানুষদের চোখেমুখে ছিল উৎসবের উচ্ছ্বাস।

মেলার বিশেষত্ব ছিল এখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণিপেশার মানুষের অংশগ্রহণ। নারী-পুরুষ, বৃদ্ধ-শিশু সকলের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। অনেকে পরিবার নিয়ে এসেছিলেন, কেউবা বন্ধুদের সঙ্গে। নানা বয়সী মানুষজন যেন ফিরে গিয়েছিলেন শেকড়ের কাছে, পুরনো দিনের গ্রামীণ সংস্কৃতির ছোঁয়া পেয়ে।

নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল নজরকাড়া। রাণীনগর থানার পুলিশ সার্বক্ষণিক টহলের মাধ্যমে পুরো মেলাকে নিরাপদ রাখেন। কোথাও কোনো বিশৃঙ্খলা ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়। মেলায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে উপস্থিত ছিলেন রাণীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল হাফিজ মোঃ রায়হান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,
“মিরাট ইউনিয়নের এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। স্থানীয় প্রশাসন ও জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটেনি।”

এক দর্শনার্থী অ্যাডভোকেট আলামিন বলেন,
“এই মেলাটি শুধুই আনন্দের উপলক্ষ নয়, এটি আমাদের ঐতিহ্য বহন করে। এই দিনটি আমাদের পরিবারে আলাদা গুরুত্ব পায়, যেন এক উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।”

মিরাটের স্থানীয়রা মনে করেন, এই মেলার মাধ্যমে শুধু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যই নয়, বরং পারস্পরিক সহাবস্থানের বন্ধনও আরও দৃঢ় হয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবাই একত্রিত হয়ে মিলেমিশে অংশ নেন বলে এই আয়োজন প্রতিবছরই অপেক্ষার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।