London ০৩:৩৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঈদুল ফিতর উদযাপন

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান।

রোববার (৩০ মার্চ) সকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকালের সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকার পান্থপথের সামারাই কনভেনশন সেন্টারে মুসলিম উম্মাহ বাংলাদেশের আয়োজনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে শিশু ও নারীসহ অনেক মুসল্লি অংশ নেন। নামাজ শেষে তারা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা দাবি করেন, পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা হারাম। সারা পৃথিবীতে ঈদ হচ্ছে, তাই আমরাও সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে ঈদ পালন করেছি, এবং এর আগেও ঈদ পালন করেছি।

এছাড়া, তারা একই তারিখে রোজা রাখা ও ঈদ উদ্‌যাপন করার জন্য সকল মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, বরগুনা, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামের মধ্যে এবং মাদারীপুরের ২৫টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

নারায়ণগঞ্জ: জেলার ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় হযরত শাহ্ সুফী মমতাজিয়া এতিমখানা ও হেফজখানা মাদ্রাসায় ‘জাহাগিরিয়া তরিকার’ অনুসারীরা ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং ঈদ উদযাপন করেন। জামাতের ঈমামের দায়িত্ব পালন করেন মুফতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন শুভ।

জামাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পুরাতন ঢাকা, ডেমরা, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, রূপগঞ্জ, বন্দর, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা থেকে মুসল্লিরা অংশ নেন।

নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ, দেশের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া এবং মোনাজাত করা হয়।

মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের দুই উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামে আজ পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সকালে গ্রামগুলোতে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সদরের শিলই ইউনিয়নের উত্তরকান্দি ও মাঝিবাড়ি ঈদগাহে জাহাগিরিয়া মাঠে সকাল ৯টার অনুষ্ঠিত হয় ঈদ জামাত। এতে স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন।

জাহাগীর তরিকার অনুসারীদের মতে, পৃথিবীর যেকোনো স্থানে নব চন্দ্র দেখা দিলে সেই অনুযায়ী ঈদ পালন করা উচিৎ। তাই সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেন তারা।

এছাড়া, জেলার সিরাজদীখান উপজেলার মালখানগর গ্রামের কয়েকটি পরিবার ঈদ উদযাপন করেছে। সকালে তারা ঈদের নামাজ আদায় করেন।

ফরিদপুর: জেলার বোয়ালমারীর ১০ গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহস্রাইল দায়রা শরিফের সমন্বয়কারী ও আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহিদুল হক।

এ ছাড়া আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা, ইচাপাশাসহ ৩টি গ্রামের কিছু মানুষ একই সাথে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এক দিন আগে যারা রোজা ও ঈদ উৎসব উদযাপন করেন তারা সবাই চট্টগ্রামের মির্জাখিল শরীফের মুরিদান। সহস্রাইল দায়রা শরিফ, রাখালতলী ও মাইটকুমরা মসজিদসহ তিনটি জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। আজ রবিবার সকাল ৯টা থেকে পর্যায়ক্রমে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ফেনী: নোয়াখালীর চারটি গ্রামের মানুষ আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন। সকাল ৯টায় দুই তিন উপজেলার ১০টি মসজিদে একযোগে ঈদের জামাতে অংশ নেয় এই চার গ্রামের মুসল্লিরা।

জানা যায়, বড় পীর আবু মুহম্মদ মহিউদ্দীন সৈয়দ আবদুল কাদির জিলানী (রঃ) এর মতাদর্শে তৈরি হয় কাদেরিয়া তরিকা। কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিণারায়নপুর, বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর, রামভল্লবপুর গ্রামের বাসিন্দারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছর একদিন আগে রোজা রাখে। এছাড়াও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে থাকে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা প্রায় ১০০ বছর ধরে ঈদ জামাতের আয়োজন করে থাকেন।

টাঙ্গাইলে ১৪ কি‌লো‌মিটার সড়‌কে যানজটটাঙ্গাইলে ১৪ কি‌লো‌মিটার সড়‌কে যানজট
গ্রামগুলো হলো- নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভা লক্ষ্মীনারায়ণপুর ও হরিণারায়নপুর গ্রাম, কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়নের রামভল্লবপুর, বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর গ্রাম।

চাঁদপুর: চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফ এবং জেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাতে আরব দেশ সমূহে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ঘোষণা হলে চাঁদপুরের এসব গ্রামের ঈদের জামায়াতের সময় সূচি নির্ধারণ করা হয়।

আজ ঈদের প্রথম জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠে সকাল ৯টায়। এই জামায়াতে ঈমামিত করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।

এরপর দ্বিতীয় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায়। এতে ইমামতি  করেন মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী।

দরবার শরীফের দুটি ঈদ জামায়াতে আশপাশের গ্রামের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।

এছাড়াও সকাল ৯টায় ঈদের বড় জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় মুন্সিরহাট বাজার জামে মসজিদে এবং আশাপাশের গ্রামে। এসব জামায়াতগুলোতে দরবারের অনুসারী মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ৬ উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রামে সুরেশ্বর পীরের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন আজ। সকাল ১০টায় জেলার প্রধান ও বড় জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরী দরবার শরীফ মাঠে। নামাজ শেষে শাহ্ সুরেশ্বরী (রা.) অনুসারীরা বিরিয়ানী, সেমাইসহ মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন।

সুরেশ্বর পীরের দরবার সূত্র জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় ১০০ বছর ধরে সুরেশ্বর দারবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর (রা.) অনুসারীরা আজ ঈদ উদযাপন করছেন।

জেলার সুরেশ্বর, চন্ডিপুর, ইছাপাশা, থিরাপাড়া, ঘড়িষার, কদমতলী, নীথিরা, মানাখানা, নশাসন, ভুমখারা, ভোজেশ্বর, কালাইখার কান্দি, মাদবর কান্দি, বাঘিয়া, কোটাপাড়া, বালাখানা, প্রেমতলা, ডোমসার, শৌলপাড়া, লাকার্তা, পাপরাইল গ্রামগু‌লোসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবারে ১০ হাজারের বেশি নারী পুরুষ আজ নামাজ শেষে সেমাই ও সিন্নি খেয়ে ঈদ আনন্দে মেতেছেন।

বরগুনা: জেলার ১৬ গ্রামে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। হযরত কাদেরিয়া চিশতিয়া তরিকা পন্থী ও কাদিয়ানী সম্প্রদায় সৌদির সাথে মিল রেখে প্রতিবছর ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকেন। প্রায় ১৫০ বছর ধরে বরগুনার বিভিন্ন গ্রামে এইভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়ে আসছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় বেতাগী উপজেলার বকুলতলী গ্রামে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইমামতি করেন হাফেজ মো. রমজান আলী।

নামাজ শেষে তারা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে শরবত পান করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান এবং আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এলাকাবাসী জানান, সৌদি আরবে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা একইদিনে ঈদুল ফিতর পালন করেন। তবে বাংলাদেশের আকাশে শনিবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় জাতীয়ভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে আগামীকাল সোমবার। কিন্তু বরগুনার ১৬টি গ্রামে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আগেই ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে কয়েকটি গ্রামের কিছু মুসল্লি। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার সহিহ হাদিস সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়ার ছাদে নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজে ইমামতি ও খুৎবা পাঠ করেন হাফেজ মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

সকাল থেকেই জেলার সদর উপজেলার,পলাশবাড়ী ও  সাদুল্লাপুর উপজেলার  বিভিন্ন এলাকা থেকে হেঁটে,বাইসাইকেল ,মোটরসাইকেল নিয়ে তালুক ঘোড়াবান্ধা মধ্যপাড়ায় জড়ো হতে থাকেন। পরে তারা স্থানীয় একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের ছাদে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। পাশে নারীরাও একই সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

পটিয়া (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, আনোয়ারা উপজেলার প্রায় ৬০ গ্রামের মানুষ আজ ঈদ উদযাপন করছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে সেহেরি খেয়ে তার রোজা শুরু করেন।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা দীর্ঘ ২০০ বছর পূর্ব থেকে সৌদি আরবের সময়ানুযায়ী একদিন আগে রোজা রেখে থাকেন।

মির্জাখীল দরবার সূত্রে জানা যায়, মির্জাখীল এলাকা ছাড়াও উপজেলার গারাংগিয়া, সোনাকানিয়া, ছোটহাতিয়া, আছারতলি, সাইরতলি, এওচিয়া, খাগরিয়া, ছদাহা, গাটিয়াডাঙ্গা এবং লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, চরম্বা ও চুনতি, বাঁশখালী উপজেলার জালিয়াপাড়া, ছনুয়া, শীলকূপের মনকিরচর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডোংরা, তৈলারদ্বীপ ও কালিপুর পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও, বাহুলী, ভেল্লাপাড়াসহ ৫০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ আজ ঈদ পালন করছেন।

এছাড়াও চট্টগ্রামের হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রামে মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারী রয়েছেন তারাও ঈদ উদযাপন করছেন।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর রমজান শেষে ঈদের চাঁদ দেখা ও ঈদ উদ্‌যাপন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঈদের আনুষ্ঠিকতা পালিত হচ্ছে, যা এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ মার্চ শাওয়াল মাসের চাঁদের বয়স ছিল ১.০৫ দিন। সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে একই দিনে ঈদ উদ্‌যাপন নিয়ে আলোচনা হলেও ইসলামি চিন্তাবিদরা কোরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন শিগগিরই সরকারিভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৭:১৩:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫
১৫
Translate »

রাজধানীসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ঈদুল ফিতর উদযাপন

আপডেট : ০৭:১৩:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৩০ মার্চ ২০২৫

সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থান।

রোববার (৩০ মার্চ) সকালে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কয়েকটি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

সকালের সাড়ে ৭টা থেকে ঢাকার পান্থপথের সামারাই কনভেনশন সেন্টারে মুসলিম উম্মাহ বাংলাদেশের আয়োজনে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। নামাজে শিশু ও নারীসহ অনেক মুসল্লি অংশ নেন। নামাজ শেষে তারা পরস্পরের সঙ্গে কোলাকুলি করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন।

নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিরা দাবি করেন, পৃথিবীর কোথাও চাঁদ দেখা গেলে রোজা রাখা হারাম। সারা পৃথিবীতে ঈদ হচ্ছে, তাই আমরাও সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে ঈদ পালন করেছি, এবং এর আগেও ঈদ পালন করেছি।

এছাড়া, তারা একই তারিখে রোজা রাখা ও ঈদ উদ্‌যাপন করার জন্য সকল মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানান।

জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চট্টগ্রাম, ফরিদপুর, বরগুনা, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, চাঁদপুরের অর্ধশত গ্রামের মধ্যে এবং মাদারীপুরের ২৫টি গ্রামে প্রায় ৩০ হাজার মানুষ ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন।

আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট-

নারায়ণগঞ্জ: জেলার ফতুল্লার লামাপাড়া এলাকায় পবিত্র ঈদুল ফিতরের নামাজ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৯টায় হযরত শাহ্ সুফী মমতাজিয়া এতিমখানা ও হেফজখানা মাদ্রাসায় ‘জাহাগিরিয়া তরিকার’ অনুসারীরা ঈদের নামাজ আদায় করেন এবং ঈদ উদযাপন করেন। জামাতের ঈমামের দায়িত্ব পালন করেন মুফতি মাওলানা আনোয়ার হোসেন শুভ।

জামাতে অংশ নিতে গাজীপুরের টঙ্গী, ঢাকার কেরানীগঞ্জ, পুরাতন ঢাকা, ডেমরা, সাভার এবং নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ, রূপগঞ্জ, বন্দর, আড়াইহাজার ও সোনারগাঁ উপজেলা থেকে মুসল্লিরা অংশ নেন।

নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ, দেশের শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া এবং মোনাজাত করা হয়।

মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের দুই উপজেলার অন্তত ১৫টি গ্রামে আজ পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। সকালে গ্রামগুলোতে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জেলা সদরের শিলই ইউনিয়নের উত্তরকান্দি ও মাঝিবাড়ি ঈদগাহে জাহাগিরিয়া মাঠে সকাল ৯টার অনুষ্ঠিত হয় ঈদ জামাত। এতে স্থানীয় শতাধিক ব্যক্তি অংশ নেন।

জাহাগীর তরিকার অনুসারীদের মতে, পৃথিবীর যেকোনো স্থানে নব চন্দ্র দেখা দিলে সেই অনুযায়ী ঈদ পালন করা উচিৎ। তাই সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উদযাপন করেন তারা।

এছাড়া, জেলার সিরাজদীখান উপজেলার মালখানগর গ্রামের কয়েকটি পরিবার ঈদ উদযাপন করেছে। সকালে তারা ঈদের নামাজ আদায় করেন।

ফরিদপুর: জেলার বোয়ালমারীর ১০ গ্রামে ঈদুল ফিতর উদযাপন করা হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সহস্রাইল দায়রা শরিফের সমন্বয়কারী ও আলফাডাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. মাহিদুল হক।

এ ছাড়া আলফাডাঙ্গা সদর ইউনিয়নের শুকুরহাটা, ইচাপাশাসহ ৩টি গ্রামের কিছু মানুষ একই সাথে এখানে ঈদের নামাজ আদায় করেন। এক দিন আগে যারা রোজা ও ঈদ উৎসব উদযাপন করেন তারা সবাই চট্টগ্রামের মির্জাখিল শরীফের মুরিদান। সহস্রাইল দায়রা শরিফ, রাখালতলী ও মাইটকুমরা মসজিদসহ তিনটি জামায়াতে ঈদের নামাজ আদায় করেন। আজ রবিবার সকাল ৯টা থেকে পর্যায়ক্রমে ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

ফেনী: নোয়াখালীর চারটি গ্রামের মানুষ আজ পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছেন। সকাল ৯টায় দুই তিন উপজেলার ১০টি মসজিদে একযোগে ঈদের জামাতে অংশ নেয় এই চার গ্রামের মুসল্লিরা।

জানা যায়, বড় পীর আবু মুহম্মদ মহিউদ্দীন সৈয়দ আবদুল কাদির জিলানী (রঃ) এর মতাদর্শে তৈরি হয় কাদেরিয়া তরিকা। কাদেরিয়া তরিকার অনুসারী লক্ষ্মীনারায়ণপুর, হরিণারায়নপুর, বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর, রামভল্লবপুর গ্রামের বাসিন্দারা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রতি বছর একদিন আগে রোজা রাখে। এছাড়াও ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা পালন করে থাকে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে তারা প্রায় ১০০ বছর ধরে ঈদ জামাতের আয়োজন করে থাকেন।

টাঙ্গাইলে ১৪ কি‌লো‌মিটার সড়‌কে যানজটটাঙ্গাইলে ১৪ কি‌লো‌মিটার সড়‌কে যানজট
গ্রামগুলো হলো- নোয়াখালীর সদর উপজেলার নোয়াখালী পৌরসভা লক্ষ্মীনারায়ণপুর ও হরিণারায়নপুর গ্রাম, কবিরহাট উপজেলার ঘোষবাগ ইউনিয়নের রামভল্লবপুর, বেগমগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বসন্তবাগ ও ফাজিলপুর গ্রাম।

চাঁদপুর: চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার সাদ্রা দরবার শরীফ এবং জেলার প্রায় অর্ধশত গ্রামে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন হচ্ছে। গতকাল শনিবার রাতে আরব দেশ সমূহে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ঘোষণা হলে চাঁদপুরের এসব গ্রামের ঈদের জামায়াতের সময় সূচি নির্ধারণ করা হয়।

আজ ঈদের প্রথম জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা দরবার শরীফ মাঠে সকাল ৯টায়। এই জামায়াতে ঈমামিত করেন পীরজাদা মাওলানা মুফতি জাকারিয়া চৌধুরী।

এরপর দ্বিতীয় ঈদ জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় সাদ্রা হামিদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা মাঠে সকাল সাড়ে ৯টায়। এতে ইমামতি  করেন মাওলানা মুফতি আরিফ চৌধুরী।

দরবার শরীফের দুটি ঈদ জামায়াতে আশপাশের গ্রামের লোকজন অংশগ্রহণ করেন। নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ, দেশের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়।

এছাড়াও সকাল ৯টায় ঈদের বড় জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় মুন্সিরহাট বাজার জামে মসজিদে এবং আশাপাশের গ্রামে। এসব জামায়াতগুলোতে দরবারের অনুসারী মুসল্লী অংশগ্রহণ করেন।

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ৬ উপজেলার অন্তত ৩০টি গ্রামে সুরেশ্বর পীরের অনুসারীরা সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে ঈদুল ফিতর উদযাপন করছেন আজ। সকাল ১০টায় জেলার প্রধান ও বড় জামায়াত অনুষ্ঠিত হয় নড়িয়া উপজেলার সুরেশ্বরী দরবার শরীফ মাঠে। নামাজ শেষে শাহ্ সুরেশ্বরী (রা.) অনুসারীরা বিরিয়ানী, সেমাইসহ মিষ্টি জাতীয় খাবার খেয়ে ঈদ উদযাপন করেছেন।

সুরেশ্বর পীরের দরবার সূত্র জানায়, সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে প্রায় ১০০ বছর ধরে সুরেশ্বর দারবার শরীফের প্রতিষ্ঠাতা হযরত জান শরীফ শাহ্ সুরেশ্বরীর (রা.) অনুসারীরা আজ ঈদ উদযাপন করছেন।

জেলার সুরেশ্বর, চন্ডিপুর, ইছাপাশা, থিরাপাড়া, ঘড়িষার, কদমতলী, নীথিরা, মানাখানা, নশাসন, ভুমখারা, ভোজেশ্বর, কালাইখার কান্দি, মাদবর কান্দি, বাঘিয়া, কোটাপাড়া, বালাখানা, প্রেমতলা, ডোমসার, শৌলপাড়া, লাকার্তা, পাপরাইল গ্রামগু‌লোসহ প্রায় ৩০টি গ্রামের অন্তত এক হাজার পরিবারে ১০ হাজারের বেশি নারী পুরুষ আজ নামাজ শেষে সেমাই ও সিন্নি খেয়ে ঈদ আনন্দে মেতেছেন।

বরগুনা: জেলার ১৬ গ্রামে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। হযরত কাদেরিয়া চিশতিয়া তরিকা পন্থী ও কাদিয়ানী সম্প্রদায় সৌদির সাথে মিল রেখে প্রতিবছর ঈদুল ফিতর উদযাপন করে থাকেন। প্রায় ১৫০ বছর ধরে বরগুনার বিভিন্ন গ্রামে এইভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপন হয়ে আসছে। আজ সকাল সাড়ে ৮টায় বেতাগী উপজেলার বকুলতলী গ্রামে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়। জামায়াতে ইমামতি করেন হাফেজ মো. রমজান আলী।

নামাজ শেষে তারা একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেন এবং মসজিদ প্রাঙ্গণে শরবত পান করে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেন। এরপর তারা নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যান এবং আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।

এলাকাবাসী জানান, সৌদি আরবে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ায় এসব এলাকার বাসিন্দারা একইদিনে ঈদুল ফিতর পালন করেন। তবে বাংলাদেশের আকাশে শনিবার শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা না যাওয়ায় জাতীয়ভাবে ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে আগামীকাল সোমবার। কিন্তু বরগুনার ১৬টি গ্রামে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে আগেই ঈদ উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

গাইবান্ধা: গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও সাদুল্লাপুর উপজেলায় পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপন করেছে কয়েকটি গ্রামের কিছু মুসল্লি। আজ সকাল সাড়ে ৮টার দিকে জেলার সহিহ হাদিস সম্প্রদায়ের মুসল্লিরা উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়নের তালুক ঘোড়াবান্দা গ্রামের মধ্যপাড়ার ছাদে নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজে ইমামতি ও খুৎবা পাঠ করেন হাফেজ মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

সকাল থেকেই জেলার সদর উপজেলার,পলাশবাড়ী ও  সাদুল্লাপুর উপজেলার  বিভিন্ন এলাকা থেকে হেঁটে,বাইসাইকেল ,মোটরসাইকেল নিয়ে তালুক ঘোড়াবান্ধা মধ্যপাড়ায় জড়ো হতে থাকেন। পরে তারা স্থানীয় একটি ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের ছাদে পবিত্র ঈদ উল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। পাশে নারীরাও একই সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করেন।

পটিয়া (চট্টগ্রাম): চট্টগ্রামের পটিয়া, চন্দনাইশ, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, আনোয়ারা উপজেলার প্রায় ৬০ গ্রামের মানুষ আজ ঈদ উদযাপন করছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে সেহেরি খেয়ে তার রোজা শুরু করেন।

দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মির্জাখীল দরবার শরীফের অনুসারীরা দীর্ঘ ২০০ বছর পূর্ব থেকে সৌদি আরবের সময়ানুযায়ী একদিন আগে রোজা রেখে থাকেন।

মির্জাখীল দরবার সূত্রে জানা যায়, মির্জাখীল এলাকা ছাড়াও উপজেলার গারাংগিয়া, সোনাকানিয়া, ছোটহাতিয়া, আছারতলি, সাইরতলি, এওচিয়া, খাগরিয়া, ছদাহা, গাটিয়াডাঙ্গা এবং লোহাগাড়া উপজেলার কলাউজান, বড়হাতিয়া, পুটিবিলা, চরম্বা ও চুনতি, বাঁশখালী উপজেলার জালিয়াপাড়া, ছনুয়া, শীলকূপের মনকিরচর, চাম্বল, শেখেরখীল, ডোংরা, তৈলারদ্বীপ ও কালিপুর পটিয়া উপজেলার হাইদগাঁও, বাহুলী, ভেল্লাপাড়াসহ ৫০ গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ আজ ঈদ পালন করছেন।

এছাড়াও চট্টগ্রামের হাটহাজারী, সন্দ্বীপ, ফটিকছড়ি, বান্দরবানের লামা, আলীকদম, নাইক্ষ্যংছড়ি, কক্সবাজার সদর, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়ার বেশ কয়েকটি গ্রামে মির্জাখীল দরবার শরিফের অনুসারী রয়েছেন তারাও ঈদ উদযাপন করছেন।

উল্লেখ্য, প্রতি বছর রমজান শেষে ঈদের চাঁদ দেখা ও ঈদ উদ্‌যাপন নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা হয়ে থাকে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিলিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঈদের আনুষ্ঠিকতা পালিত হচ্ছে, যা এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ৩০ মার্চ শাওয়াল মাসের চাঁদের বয়স ছিল ১.০৫ দিন। সৌদি আরবসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে একই দিনে ঈদ উদ্‌যাপন নিয়ে আলোচনা হলেও ইসলামি চিন্তাবিদরা কোরআন এবং হাদিসের নির্দেশনা মেনে চলার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন শিগগিরই সরকারিভাবে সৌদি আরবের সঙ্গে ঈদ উদ্‌যাপনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে।