London ১১:৫২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রংপুরে শিশু হাসপাতালের সাড়ে ৩১ কোটি টাকার ভবন পড়ে আছে সাড়ে চার বছর

রংপুরে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতাল

রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট তিনতলা শিশু হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণের পর সাড়ে চার বছর ধরে অলস পড়ে আছে। চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ না হওয়ায় ২০২০ সালে ভবন নির্মাণের এত বছর পরেও চিকিৎসাসেবা চালু করা সম্ভব হয়নি বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৫ জুন ৬৫৯ জনবল নিয়োগের প্রস্তাবনা দিয়ে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক পরিচালক আবু হানিফ এই চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এ ছাড়া হাসপাতালের পেছনে বছরে ৪৬ কোটি ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৬৩৮ টাকা ব্যয় হবে বলে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য ৬৫৯ জনবলের মধ্যে একজন তত্ত্বাবধায়ক, চিকিৎসকসহ প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ১৮০, নার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১১৬, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৬৩ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ৩০০ জন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশু হাসপাতাল ভবনটির ক্যাম্পাস সুনসান ও নিরিবিলি। প্রতিটি কক্ষের ফটকে তালা ঝুলছে। তিনতলা ভবনে ওঠার সিঁড়িসহ সব জায়গায় তালা থাকায় ওপরে ওঠারও কোনো উপায় নেই। সেই সঙ্গে প্রধান ফটকটিও বন্ধ থাকে। ছোট একটি পকেট গেট দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়।

এদিকে এই হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাত্র তিনটি কক্ষে অস্থায়ীভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন শিশু রোগীর বহির্বিভাগ চালু করা হয়। তবে স্বতন্ত্র এই শিশু হাসপাতালের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ও রোগীদেরও তেমন সাড়া নেই।

হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় দেখা গেল, মাত্র তিনটি কক্ষে রংপুর মেডিকেলের আওতাধীন অতিরিক্ত শিশু বহির্বিভাগ করা হয়েছে। শিশু কোলে নিয়ে নামমাত্র বহির্বিভাগে তিনজন মাকে দেখা গেল। দুটি কক্ষের মধ্যে একজন মেডিকেল কর্মকর্তা বসে আছেন। অন্য কক্ষটিতে কেউ নেই।

চিকিৎসা কর্মকর্তা নুরজাহান বিনতে ইসলাম বলেন, শিশু হাসপাতালের সঙ্গে এই শিশু বহির্বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। জনবল নিয়োগ দিয়ে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে শিশু হাসপাতালটি চালু করা হলে এই অঞ্চলের শিশু রোগীদের জন্য অনেক উপকার হতো।
শিশু বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মী ইমরান আলী বলেন, শিশু হাসপাতালটি এখনো চালু হয়নি। লোকবলও নেই। এখানে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২০ শিশু রোগীর চিকিৎসা হয়। দুপুরের পর বন্ধ। এ পর্যন্তই।

রংপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগীয় শহরে সিটি করপোরেশনের সামনে সদর হাসপাতালের জায়গায় ১ একর ৭৮ শতাংশ জমির মধ্যে এই ১০০ শয্যাবিশিষ্ট তিনতলা শিশু হাসপাতাল ভবনসহ আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। এর পেছনে ব্যয় হয়েছে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা। দরপত্র অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। এই হাসপাতাল ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা সিভিল সার্জনকে ২০২০ সালের ৮ মার্চ হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তরের প্রায় সাড়ে চার বছর ইতিমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) উপপরিচালক ওয়াজেদ আলী বলেন, শিশু হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণের কয়েক বছর পর গত বছরের ৫ জুন জনবল নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি চালু হলে রংপুর বিভাগের আট জেলার শিশুদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অনেক এগিয়ে যাবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
৩৬
Translate »

রংপুরে শিশু হাসপাতালের সাড়ে ৩১ কোটি টাকার ভবন পড়ে আছে সাড়ে চার বছর

আপডেট : ০৩:০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

রংপুরে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট শিশু হাসপাতাল

রংপুর শহরের প্রাণকেন্দ্রে প্রায় সাড়ে ৩১ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট তিনতলা শিশু হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণের পর সাড়ে চার বছর ধরে অলস পড়ে আছে। চিকিৎসকসহ জনবল নিয়োগ না হওয়ায় ২০২০ সালে ভবন নির্মাণের এত বছর পরেও চিকিৎসাসেবা চালু করা সম্ভব হয়নি বলে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ৫ জুন ৬৫৯ জনবল নিয়োগের প্রস্তাবনা দিয়ে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের দপ্তর থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়। রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সাবেক পরিচালক আবু হানিফ এই চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এ ছাড়া হাসপাতালের পেছনে বছরে ৪৬ কোটি ৫৬ লাখ ৩ হাজার ৬৩৮ টাকা ব্যয় হবে বলে প্রস্তাবনায় বলা হয়েছিল।

সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, হাসপাতালটি পরিচালনার জন্য ৬৫৯ জনবলের মধ্যে একজন তত্ত্বাবধায়ক, চিকিৎসকসহ প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা ১৮০, নার্সসহ দ্বিতীয় শ্রেণির কর্মচারী ১১৬, তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৬৩ ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ৩০০ জন।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, শিশু হাসপাতাল ভবনটির ক্যাম্পাস সুনসান ও নিরিবিলি। প্রতিটি কক্ষের ফটকে তালা ঝুলছে। তিনতলা ভবনে ওঠার সিঁড়িসহ সব জায়গায় তালা থাকায় ওপরে ওঠারও কোনো উপায় নেই। সেই সঙ্গে প্রধান ফটকটিও বন্ধ থাকে। ছোট একটি পকেট গেট দিয়ে যাওয়া-আসা করতে হয়।

এদিকে এই হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাত্র তিনটি কক্ষে অস্থায়ীভাবে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আওতাধীন শিশু রোগীর বহির্বিভাগ চালু করা হয়। তবে স্বতন্ত্র এই শিশু হাসপাতালের সঙ্গে কোনো সম্পৃক্ততা ও রোগীদেরও তেমন সাড়া নেই।

হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় দেখা গেল, মাত্র তিনটি কক্ষে রংপুর মেডিকেলের আওতাধীন অতিরিক্ত শিশু বহির্বিভাগ করা হয়েছে। শিশু কোলে নিয়ে নামমাত্র বহির্বিভাগে তিনজন মাকে দেখা গেল। দুটি কক্ষের মধ্যে একজন মেডিকেল কর্মকর্তা বসে আছেন। অন্য কক্ষটিতে কেউ নেই।

চিকিৎসা কর্মকর্তা নুরজাহান বিনতে ইসলাম বলেন, শিশু হাসপাতালের সঙ্গে এই শিশু বহির্বিভাগের কোনো সম্পর্ক নেই। জনবল নিয়োগ দিয়ে যন্ত্রপাতি সরবরাহ করে শিশু হাসপাতালটি চালু করা হলে এই অঞ্চলের শিশু রোগীদের জন্য অনেক উপকার হতো।
শিশু বহির্বিভাগের স্বাস্থ্যকর্মী ইমরান আলী বলেন, শিশু হাসপাতালটি এখনো চালু হয়নি। লোকবলও নেই। এখানে সকাল ৯টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে ২০ শিশু রোগীর চিকিৎসা হয়। দুপুরের পর বন্ধ। এ পর্যন্তই।

রংপুর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, রংপুর বিভাগীয় শহরে সিটি করপোরেশনের সামনে সদর হাসপাতালের জায়গায় ১ একর ৭৮ শতাংশ জমির মধ্যে এই ১০০ শয্যাবিশিষ্ট তিনতলা শিশু হাসপাতাল ভবনসহ আবাসিক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হয়। এর পেছনে ব্যয় হয়েছে ৩১ কোটি ৪৮ লাখ ৯২ হাজার ৮০৯ টাকা। দরপত্র অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২১ নভেম্বর নির্মাণকাজ শুরু হয়ে শেষ হয় ২০১৯ সালের ১৯ নভেম্বর। এই হাসপাতাল ভবনটি আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা সিভিল সার্জনকে ২০২০ সালের ৮ মার্চ হস্তান্তর করা হয়েছে। হস্তান্তরের প্রায় সাড়ে চার বছর ইতিমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে।

রংপুর বিভাগীয় (স্বাস্থ্য) উপপরিচালক ওয়াজেদ আলী বলেন, শিশু হাসপাতাল ভবনটি নির্মাণের কয়েক বছর পর গত বছরের ৫ জুন জনবল নিয়োগের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়। কিন্তু সাড়া পাওয়া যায়নি। এটি চালু হলে রংপুর বিভাগের আট জেলার শিশুদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম অনেক এগিয়ে যাবে।