London ০২:৩৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মুহূর্তেই দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা, ভাঙচুর চালাচ্ছে বিদ্যালয়ে

ভাঙচুর করা হয়েছে বিদ্যালয়ের ডাইনিংয়ের টেবিল চেয়ার। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় আমেনা বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলেছবি: সংগৃহীত

পরীক্ষায় অকৃতকার্য, ডাইনিংয়ের খাবারের মান অনুন্নত, শিক্ষকদের কড়া শাসনসহ নানা কারণে শিক্ষকের পদত্যাগ ও নানা ইস্যুতে জোট বাঁধছে শিক্ষার্থীরা। কখনো ছাত্রাবাসে টেলিভিশন দেখা বা খেলার মাঠের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে। তখনই ভাঙচুর চলছে বিদ্যালয়ে।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কয়েকটি আবাসিক বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। গত দুই সপ্তাহে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয়গুলো হলো আমেনা বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, মেহের হোসেন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, প্রাইম রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, ড্যাফোডিল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও সিটি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ অবস্থায় কয়েকটি বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

কয়েকজন শিক্ষক বলছেন, অপরাধ করলেও শিক্ষার্থীদের শাসন তো দূরের কথা, উচ্চ শব্দে ধমকও দেওয়া যায় না। অবশ্য শিক্ষার্থীদের কেউ উসকে দিচ্ছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখার কথা বলছেন তাঁরা।

নাম প্রকাশ না করে আমেনা বাকি স্কুলের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা এক শিক্ষক ও দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। এ জন্য আন্দোলন করেছি। একেকটি প্রতিষ্ঠানের ঘটনা একেক রকম। এখানে বহিরাগত কেউ আসেনি। তবে প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা ঠিক হয়নি। রাতের অন্ধকারে কে শোনে কার কথা।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাসখানেক আগে সিটি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে শিক্ষার্থীদের অন্তঃকোন্দলে জড়িয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর পর অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ঝামেলা হয়নি। সর্বশেষ গত সোমবার মেহের হোসেন স্কুল এবং শুক্রবার দিবাগত রাতে আমেনা বাকি, প্রাইম ও ড্যাফোডিল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। মেহের হোসেন স্কুলের মূল ভবনের সামনের অংশের সব গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। আমেনা বাকি স্কুলের ছাত্রাবাস ও ডাইনিংয়ের আসবাব, ফ্যান, পানির ট্যাব ভাঙচুর করা হয়েছে। একই ভাবে প্রাইম ও ড্যাফোডিল স্কুলের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে।

আমেনা বাকি স্কুলের প্রধান কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। তাই বলে এমন ভাঙচুরের ঘটনা কাম্য নয়। ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে লাইব্রেরি পর্যন্ত প্রায় সব জায়গায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এর পেছনে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

মেহের হোসেন স্কুলের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার আবাসিকের ছাত্রদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কেউ স্বীকার করেনি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে নজরদারি করা খুব প্রয়োজন।

নাম প্রকাশ না করে এক শিক্ষক বলেন, এসব আবাসিক স্কুলে সচেতন অভিভাবকের সন্তানেরা যেমন পড়ছে, তেমনি মা–বাবার অবাধ্য সন্তানেরাও পড়ছে। ওই বেপরোয়া ছেলেটার সঙ্গ পেয়ে আর ১০ জন খারাপ পথে হাঁটছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের কিছু ক্ষোভও আছে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।

ড্যাফোডিল স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মনজুর আলী শাহ বলেন, ঠিক কী কারণে শিক্ষার্থীরা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়াচ্ছে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কাল প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক পক্ষের একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

দুই যুগ আগে চিরিরবন্দর উপজেলায় সব মিলিয়ে ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থোপেডিক চিকিৎসক আমজাদ হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন আমেনা বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল। বর্তমানে উপজেলায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯৭। যার ৭৩টিই বেসরকারি। এর মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানে আবাসিক সুবিধা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শুধু দিনাজপুরেরই নয়, রংপুর-রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেক শিক্ষার্থী এসে পড়াশোনা করে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৪৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪
৩০
Translate »

মুহূর্তেই দ্বন্দ্বে জড়াচ্ছে শিক্ষার্থীরা, ভাঙচুর চালাচ্ছে বিদ্যালয়ে

আপডেট : ০২:৪৬:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২ নভেম্বর ২০২৪

ভাঙচুর করা হয়েছে বিদ্যালয়ের ডাইনিংয়ের টেবিল চেয়ার। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলায় আমেনা বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলেছবি: সংগৃহীত

পরীক্ষায় অকৃতকার্য, ডাইনিংয়ের খাবারের মান অনুন্নত, শিক্ষকদের কড়া শাসনসহ নানা কারণে শিক্ষকের পদত্যাগ ও নানা ইস্যুতে জোট বাঁধছে শিক্ষার্থীরা। কখনো ছাত্রাবাসে টেলিভিশন দেখা বা খেলার মাঠের ঝগড়াকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে জড়িয়ে পড়ছে। তখনই ভাঙচুর চলছে বিদ্যালয়ে।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কয়েকটি আবাসিক বিদ্যালয়ে এমন ঘটনা ঘটেছে। গত দুই সপ্তাহে পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এমন ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয়গুলো হলো আমেনা বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, মেহের হোসেন রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, প্রাইম রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল, ড্যাফোডিল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল ও সিটি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। এ অবস্থায় কয়েকটি বিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য ছুটি ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।

কয়েকজন শিক্ষক বলছেন, অপরাধ করলেও শিক্ষার্থীদের শাসন তো দূরের কথা, উচ্চ শব্দে ধমকও দেওয়া যায় না। অবশ্য শিক্ষার্থীদের কেউ উসকে দিচ্ছে কি না, সেটিও খতিয়ে দেখার কথা বলছেন তাঁরা।

নাম প্রকাশ না করে আমেনা বাকি স্কুলের এক শিক্ষার্থী বলে, ‘আমরা এক শিক্ষক ও দুই কর্মকর্তার পদত্যাগ দাবি করেছিলাম। এ জন্য আন্দোলন করেছি। একেকটি প্রতিষ্ঠানের ঘটনা একেক রকম। এখানে বহিরাগত কেউ আসেনি। তবে প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর করা ঠিক হয়নি। রাতের অন্ধকারে কে শোনে কার কথা।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাসখানেক আগে সিটি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে শিক্ষার্থীদের অন্তঃকোন্দলে জড়িয়ে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এর পর অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে ঝামেলা হয়নি। সর্বশেষ গত সোমবার মেহের হোসেন স্কুল এবং শুক্রবার দিবাগত রাতে আমেনা বাকি, প্রাইম ও ড্যাফোডিল রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুলে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। মেহের হোসেন স্কুলের মূল ভবনের সামনের অংশের সব গ্লাস ভাঙচুর করা হয়। আমেনা বাকি স্কুলের ছাত্রাবাস ও ডাইনিংয়ের আসবাব, ফ্যান, পানির ট্যাব ভাঙচুর করা হয়েছে। একই ভাবে প্রাইম ও ড্যাফোডিল স্কুলের জানালার কাচ ভাঙচুর করা হয়েছে।

আমেনা বাকি স্কুলের প্রধান কো-অর্ডিনেটর জয়ন্ত কুমার বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের কিছু দাবিদাওয়া আছে। তাই বলে এমন ভাঙচুরের ঘটনা কাম্য নয়। ছাত্রাবাস থেকে শুরু করে লাইব্রেরি পর্যন্ত প্রায় সব জায়গায় ভাঙচুর করা হয়েছে। এর পেছনে কেউ ইন্ধন দিচ্ছে কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতিমধ্যে শিক্ষকদের নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। অনির্দিষ্টকালের জন্য প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।’

মেহের হোসেন স্কুলের অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, শুক্রবার আবাসিকের ছাত্রদের ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের কেউ স্বীকার করেনি। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের মানসিক বিকাশে নজরদারি করা খুব প্রয়োজন।

নাম প্রকাশ না করে এক শিক্ষক বলেন, এসব আবাসিক স্কুলে সচেতন অভিভাবকের সন্তানেরা যেমন পড়ছে, তেমনি মা–বাবার অবাধ্য সন্তানেরাও পড়ছে। ওই বেপরোয়া ছেলেটার সঙ্গ পেয়ে আর ১০ জন খারাপ পথে হাঁটছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে দীর্ঘ দিনের কিছু ক্ষোভও আছে। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে।

ড্যাফোডিল স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সদস্য মনজুর আলী শাহ বলেন, ঠিক কী কারণে শিক্ষার্থীরা ভাঙচুরের ঘটনায় জড়াচ্ছে অনুসন্ধান করা হচ্ছে। কাল প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিক পক্ষের একটি সভা আহ্বান করা হয়েছে। সেখানে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

দুই যুগ আগে চিরিরবন্দর উপজেলায় সব মিলিয়ে ১২০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। ২০০০ সালের দিকে স্থানীয় যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও অর্থোপেডিক চিকিৎসক আমজাদ হোসেন প্রতিষ্ঠা করেন আমেনা বাকি রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল। বর্তমানে উপজেলায় বিদ্যালয়ের সংখ্যা ১৯৭। যার ৭৩টিই বেসরকারি। এর মধ্যে ২৭টি প্রতিষ্ঠানে আবাসিক সুবিধা আছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শুধু দিনাজপুরেরই নয়, রংপুর-রাজশাহীসহ বিভিন্ন জেলা থেকেও অনেক শিক্ষার্থী এসে পড়াশোনা করে।