London ১০:৪২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মহার্ঘভাতার দাবিতে মহাসমাবেশ যমুনা অভিমুখে সরকারি কর্মচারীদের মিছিলে পুলিশের বাধা

অনলাইন ডেস্ক

বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল ও ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতাসহ ৭ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায় ঐক পরিষদের মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। বাধা পেরিয়ে কর্মচারীরা সামনে এগোনোর চেষ্টা করলে জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

এদিকে, কর্মচারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাদের ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে যমুনায় যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে তারা দাবি-দাওয়া নিয়ে যমুনায় যান।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন ১১তম থেকে ২০তম গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের সমন্বয়ক মো. মাহমুদুল হাসান ও বাংলাদেশ ১৭-২০ গ্রেড সরকারি কর্মচারী সমিতির সমন্বয়ক মো. রফিকুল আলম।

এর আগে সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ শুরু করে সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। বিশেষ অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

সমাবেশে সরকারি কর্মচারীরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নিরলসভাবে মানুষের সেবা দিয়ে আসছে। তারা যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। অবিলম্বে ৭ দফা দাবি মেনে নিতে হবে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের দাবি-দাওয়া মেনে না নেওয়া হলে সারাদেশের সব সরকারি অফিসে ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

এদিকে, সমাবেশ শেষে দাবি-দাওয়া নিয়ে হঠাৎ কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

কর্মচারীদের সাত দফা দাবি
১. বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পে-কমিশন গঠন ও পে-স্কেল ব্যক্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন সময়ের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা (১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য) জানুয়ারি ২০২৫ থেকে কার্যকর করতে হবে।

২. যে সকল কর্মচারী মূল বেতনের শেষ ধাপে উন্নীত হয়েছেন, তাদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি নিয়মিত করতে হবে। বেতন স্কেলের বৈষম্য নিরসনের জন্য ১০ ধাপে বেতন স্কেলে নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে।

৩. সচিবালয়ের ন্যায় সকল সরকারি, আধাসরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সমপদগুলোর পদবী ও গ্রেড পরিবর্তন করতে হবে এবং এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ন করে কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করতে হবে।

৪. ২০১৫ সালে পে-স্কেলের গেজেটে প্রত্যাহারকৃত তিনটি টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল ও সকল স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাচ্যুইটির পাশাপাশি পেনশন প্রবর্তনসহ বিদ্যমান গ্রাচুয়িটি/আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশের স্থলে শতভাগ নির্ধারণ ও পেনশন গ্র্যাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

৫. বাজারমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মুল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয় বিবেচনা করে প্রদেয় সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ, ১১-২০ গ্রেডের রেশন ব্যবস্থার প্রর্বতন ও সরকার প্রদত্ত গৃহ ঋণ সুবিধা সহজীকরণ করতে হবে।

৬. ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা পাঁচ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে। এছাড়া টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দিতে হবে।

৭. উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান করার অবকাশ নেই মর্মে অর্থ মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত বৈষম্যমূলক আদেশ ও আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:২৬:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
২৫
Translate »

মহার্ঘভাতার দাবিতে মহাসমাবেশ যমুনা অভিমুখে সরকারি কর্মচারীদের মিছিলে পুলিশের বাধা

আপডেট : ১০:২৬:২৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল ও ৫০ শতাংশ মহার্ঘভাতাসহ ৭ দফা দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাওয়া সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায় ঐক পরিষদের মিছিলে বাধা দিয়েছে পুলিশ।

শুক্রবার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর আড়াইটার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ মিছিল শুরু হয়। মিছিলটি শাহবাগ মোড়ে পৌঁছালে তাতে বাধা দেয় পুলিশ। বাধা পেরিয়ে কর্মচারীরা সামনে এগোনোর চেষ্টা করলে জলকামান দিয়ে পানি ছিটিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।

এদিকে, কর্মচারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আন্দোলনকারীদের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তাদের ৭ সদস্যের প্রতিনিধিদলকে যমুনায় যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়। বিকেল সোয়া ৩টার দিকে তারা দাবি-দাওয়া নিয়ে যমুনায় যান।

প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে রয়েছেন ১১তম থেকে ২০তম গ্রেড সরকারি চাকরিজীবী ফোরামের সমন্বয়ক মো. মাহমুদুল হাসান ও বাংলাদেশ ১৭-২০ গ্রেড সরকারি কর্মচারী সমিতির সমন্বয়ক মো. রফিকুল আলম।

এর আগে সকাল ১০টা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশ শুরু করে সরকারি কর্মচারীদের দাবি আদায় ঐক্য পরিষদ। সেখানে প্রধান অতিথি ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। বিশেষ অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি।

সমাবেশে সরকারি কর্মচারীরা বলেন, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা নিরলসভাবে মানুষের সেবা দিয়ে আসছে। তারা যৌক্তিক দাবি নিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। অবিলম্বে ৭ দফা দাবি মেনে নিতে হবে। আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাদের দাবি-দাওয়া মেনে না নেওয়া হলে সারাদেশের সব সরকারি অফিসে ১১তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে।

এদিকে, সমাবেশ শেষে দাবি-দাওয়া নিয়ে হঠাৎ কর্মচারীরা মিছিল নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাসভবন যমুনা অভিমুখে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

কর্মচারীদের সাত দফা দাবি
১. বৈষম্যমুক্ত নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের লক্ষ্যে পে-কমিশন গঠন ও পে-স্কেল ব্যক্তবায়নের পূর্ব পর্যন্ত অন্তর্বতীকালীন সময়ের জন্য ৫০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতা (১১-২০ গ্রেডের কর্মচারীদের জন্য) জানুয়ারি ২০২৫ থেকে কার্যকর করতে হবে।

২. যে সকল কর্মচারী মূল বেতনের শেষ ধাপে উন্নীত হয়েছেন, তাদের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি নিয়মিত করতে হবে। বেতন স্কেলের বৈষম্য নিরসনের জন্য ১০ ধাপে বেতন স্কেলে নির্ধারণসহ পে-কমিশনে কর্মচারী প্রতিনিধি রাখতে হবে।

৩. সচিবালয়ের ন্যায় সকল সরকারি, আধাসরকারি দপ্তর, অধিদপ্তর, পরিদপ্তর ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের সমপদগুলোর পদবী ও গ্রেড পরিবর্তন করতে হবে এবং এক ও অভিন্ন নিয়োগবিধি প্রনয়ন করে কর্মচারীদের মধ্যে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করতে হবে।

৪. ২০১৫ সালে পে-স্কেলের গেজেটে প্রত্যাহারকৃত তিনটি টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পুনর্বহাল ও সকল স্বায়তশাসিত প্রতিষ্ঠানে গ্রাচ্যুইটির পাশাপাশি পেনশন প্রবর্তনসহ বিদ্যমান গ্রাচুয়িটি/আনুতোষিকের হার ৯০ শতাংশের স্থলে শতভাগ নির্ধারণ ও পেনশন গ্র্যাচুইটি ১ টাকার সমান ৫০০ টাকা নির্ধারণ করতে হবে।

৫. বাজারমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি এবং মুল্যস্ফীতি বৃদ্ধির বিষয় বিবেচনা করে প্রদেয় সকল ভাতাদি পুনঃনির্ধারণ, ১১-২০ গ্রেডের রেশন ব্যবস্থার প্রর্বতন ও সরকার প্রদত্ত গৃহ ঋণ সুবিধা সহজীকরণ করতে হবে।

৬. ব্লক পোস্টে কর্মরত কর্মচারীসহ সকল পদে কর্মরতদের পদোন্নতি বা পাঁচ বছর পর পর উচ্চতর গ্রেড প্রদান করতে হবে। এছাড়া টেকনিক্যাল কাজে নিয়োজিত কর্মচারীদের টেকনিক্যাল পদমর্যাদা দিতে হবে।

৭. উন্নয়ন প্রকল্প থেকে রাজস্বখাতে স্থানান্তরিত পদের পদধারীদের প্রকল্পের চাকরিকাল গণনা করে টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড প্রদান করার অবকাশ নেই মর্মে অর্থ মন্ত্রণালয় হতে জারিকৃত বৈষম্যমূলক আদেশ ও আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে।