London ০৭:৪৭ অপরাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টি নির্বাচন কমিশন কারও হুকুম মতো চলবে না: সিইসি ঝড় তুললেন বিদ্যা সিনহা মিম! সমন্বয়ককে একা পেয়ে কুপিয়ে জখম ডাকেটের ১৬৫, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ইংল্যান্ডের বিশ্বরেকর্ড সংগ্রহ অচেনা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানকে ২৯ মিলিয়ন ডলার দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র ট্রাম্পের দাবি আমরা অন্যের ওপর দোষ চাপাই, কিন্তু নিজেরা বদলাই না পরিবেশ উপদেষ্টা সাউন্ড গ্রেনেড-জলকামানে পণ্ড আউটসোর্সিং কর্মীদের অবস্থান কর্মসূচি বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি: তিন ডাকাত গ্রেপ্তার, এএসআই বরখাস্ত টেকসই ব্যবসায়িক প্রবৃদ্ধির জন্য ইবিএফসিআই ও বাংলাদেশ হাইকমিশন লন্ডনের অংশীদারিত্ব জোরদারের আহ্বান

ভাষার মাস এলেই খোঁজ হয়, বাকি এগারো মাস কেউ খোঁজ নেয় না

অনলাইন ডেস্ক

মহান ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় ও অসাধারণ ব্যক্তিত্ব লালমনিরহাট জেলার কৃতি সন্তান ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের।

ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য জাতির কাছে তিনি ভাষা সৈনিক নামেই পরিচিত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাটের যেসব ভাষাসৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে আবদুল কাদের আজও বেঁচে আছেন। কিন্তু মনের মধ্যে জমিয়ে রেখেছেন চাপা অভিমান ও কষ্ট।

সরেজমিন এই ভাষাসৈনিকের বাড়ি গিয়ে জানা যায়, বয়সের ভারে ন্যুব্জ পড়া আবদুল কাদেরের শরীরের অবস্থা ভালো নেই। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস  এলেই জেলা প্রশাসন রুটিন মাফিক একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে সংবর্ধনা দেন। কিন্তু বছরের বাকি এগারো মাস কেউ খোঁজ রাখেন না।

লালমনিরহাট জেলা সদরের হাড়িভাঙ্গা (হলদিটারী) গ্রামের গর্বিত সন্তান ৫২’ র ভাষা সৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানী ছিলেন মহান ভাষা আন্দোলনের এক সাহসী সৈনিক। ১৬ পৌষ ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করা এই সংগ্রামী ব্যক্তি ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কারণে সবাই তাঁকে আব্দুল খালেক কাদের ভাসানী নামেই ডাকতো।

তিনি জানান, ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বাড়িতে চলে যায়। তখন পুলিশের খাতায় পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা।

আবদুল কাদের ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সেসময়ে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। লালমনিরহাটে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক ছিলেন আবদুল কাদের। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতাল সমর্থনে তিনিসহ ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সদস্য লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য বিদ্যালয়ে চলে আসে।

পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশলে ছাত্রনেতারা বিদ্যালয়ের জানালা দিয়ে পালিয়ে যান। পরে তারা চিহ্নিত হলে পুলিশ তাদের ধরে এনে থানায় আটকে রাখে। কিন্তু তারা তখন থানা হাজত থেকেই রাষ্ট্র ‘ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দেওয়া শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশের মতো সক্রিয় ভূমিকায় ছিল লালমনিরহাটের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। জেলায় জীবিত ও প্রয়াত নারী-পুরুষ মিলে ১২ জন ভাষাসৈনিক ছিলেন। এদের মধ্যে ১১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল বুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্র নাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম ও জহির উদ্দিন।

তিনি আরো বলেন , ভাষা সৈনিকদের আত্মসম্মান আছে, তাই আমরা সবাই শিক্ষিত। তাই কারো কাছে কিছু চাইতে চাই না। সরকারই নির্ধারণ করবে আমাদের জন্য কি করবে। আমার নিজের অর্থনৈতিক কোন সমস্যা নেই। আমার সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত। তবে আমার সময়কার অনেক ভাষা সৈনিকরা অত্যন্ত মানবেতর সাথে জীবন যাপন করেছে। সরকার ভাষা সৈনিকদের জন্য কিছুই করেনি।

ভাষা সৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানীর মোট ৪ সন্তান। দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। তার স্ত্রীও বেঁচে আছেন। ৯৬ বছর বয়স হলেও এখনো তার চলাফেরা স্বাভাবিক। সকলের কাছে তিনি দোয়া চেয়েছেন। আব্দুল কাদের ভাসানী ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন এবং নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানার ও ভাষার প্রতি ভালোবাসা রাখার আহ্বান জানান।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:৫৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
Translate »

ভাষার মাস এলেই খোঁজ হয়, বাকি এগারো মাস কেউ খোঁজ নেয় না

আপডেট : ০৫:৫৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

মহান ভাষা আন্দোলনের অবিস্মরণীয় ও অসাধারণ ব্যক্তিত্ব লালমনিরহাট জেলার কৃতি সন্তান ভাষা সৈনিক আবদুল কাদের।

ভাষা আন্দোলনে অসামান্য অবদানের জন্য জাতির কাছে তিনি ভাষা সৈনিক নামেই পরিচিত। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে লালমনিরহাটের যেসব ভাষাসৈনিক সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন তাদের মধ্যে আবদুল কাদের আজও বেঁচে আছেন। কিন্তু মনের মধ্যে জমিয়ে রেখেছেন চাপা অভিমান ও কষ্ট।

সরেজমিন এই ভাষাসৈনিকের বাড়ি গিয়ে জানা যায়, বয়সের ভারে ন্যুব্জ পড়া আবদুল কাদেরের শরীরের অবস্থা ভালো নেই। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস  এলেই জেলা প্রশাসন রুটিন মাফিক একটি আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে ডেকে নিয়ে সংবর্ধনা দেন। কিন্তু বছরের বাকি এগারো মাস কেউ খোঁজ রাখেন না।

লালমনিরহাট জেলা সদরের হাড়িভাঙ্গা (হলদিটারী) গ্রামের গর্বিত সন্তান ৫২’ র ভাষা সৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানী ছিলেন মহান ভাষা আন্দোলনের এক সাহসী সৈনিক। ১৬ পৌষ ১৩৩৬ বঙ্গাব্দে জন্মগ্রহণ করা এই সংগ্রামী ব্যক্তি ছিলেন প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তাঁর প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার কারণে সবাই তাঁকে আব্দুল খালেক কাদের ভাসানী নামেই ডাকতো।

তিনি জানান, ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ভাষা আন্দোলন ভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন হয়। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতালের সমর্থনে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করে বাড়িতে চলে যায়। তখন পুলিশের খাতায় পাকিস্তানবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হন ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সদস্যরা।

আবদুল কাদের ১৯৫২ সালে লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। সেসময়ে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়েন তিনি। লালমনিরহাটে গঠিত ভাষা সংগ্রাম পরিষদের সম্পাদক ছিলেন আবদুল কাদের। ২৩ ফেব্রুয়ারি হরতাল সমর্থনে তিনিসহ ভাষা সংগ্রাম পরিষদের কয়েকজন সদস্য লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীদের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। খবর পেয়ে কিছুক্ষণের মধ্যে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তারের জন্য বিদ্যালয়ে চলে আসে।

পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশলে ছাত্রনেতারা বিদ্যালয়ের জানালা দিয়ে পালিয়ে যান। পরে তারা চিহ্নিত হলে পুলিশ তাদের ধরে এনে থানায় আটকে রাখে। কিন্তু তারা তখন থানা হাজত থেকেই রাষ্ট্র ‘ভাষা বাংলা চাই’ স্লোগান দেওয়া শুরু করে। একপর্যায়ে পুলিশ তাদের ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন সংগ্রামে সারা দেশের মতো সক্রিয় ভূমিকায় ছিল লালমনিরহাটের ছাত্রসমাজ ও রাজনৈতিক নেতারা। তারা ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে মাতৃভাষার দাবিতে আন্দোলন করেছেন। জেলায় জীবিত ও প্রয়াত নারী-পুরুষ মিলে ১২ জন ভাষাসৈনিক ছিলেন। এদের মধ্যে ১১ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। তারা হলেন- আশরাফ আলী, ড. শাফিয়া খাতুন, মনিরুজ্জামান, আবদুল বুদ্দুছ, কমরেড শামসুল হক, মহেন্দ্র নাথ রায়, আবিদ আলী, জরিনা বেগম, জাহানারা বেগম (দুলু), কমরেড সিরাজুল ইসলাম ও জহির উদ্দিন।

তিনি আরো বলেন , ভাষা সৈনিকদের আত্মসম্মান আছে, তাই আমরা সবাই শিক্ষিত। তাই কারো কাছে কিছু চাইতে চাই না। সরকারই নির্ধারণ করবে আমাদের জন্য কি করবে। আমার নিজের অর্থনৈতিক কোন সমস্যা নেই। আমার সন্তানরা প্রতিষ্ঠিত। তবে আমার সময়কার অনেক ভাষা সৈনিকরা অত্যন্ত মানবেতর সাথে জীবন যাপন করেছে। সরকার ভাষা সৈনিকদের জন্য কিছুই করেনি।

ভাষা সৈনিক আব্দুল কাদের ভাসানীর মোট ৪ সন্তান। দুই ছেলে এবং দুই মেয়ে। তার স্ত্রীও বেঁচে আছেন। ৯৬ বছর বয়স হলেও এখনো তার চলাফেরা স্বাভাবিক। সকলের কাছে তিনি দোয়া চেয়েছেন। আব্দুল কাদের ভাসানী ভাষা আন্দোলনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন এবং নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস জানার ও ভাষার প্রতি ভালোবাসা রাখার আহ্বান জানান।