London ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন্ন নির্বাচনে তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরল টানা তৃতীয়বারের বিজয় নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করছে বিরোধী দলগুলো।

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর

মোদির সরকার ২০১৯ সালে বিতর্কিত আইনটি পাস করে। এই আইন অনুযায়ী, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাওয়া অমুসলিম বাস্তুচ্যুতদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আইনটিতে বলা হয়, যে হিন্দু, পারসি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টানরা মুসলিম প্রধান আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে পালিয়ে এসেছে, তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য।

মুসলমান সম্প্রদায়কে আওতার বাইরে রাখার জন্য বেশ কয়েকটি অধিকার সংগঠন আইনটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর মোদি সরকার আইনটির জন্য বিধিমালা তৈরি করেনি। সেসময় বিক্ষোভের জেরে রাজধানী নয়াদিল্লিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকদিনের দাঙ্গায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে, যাদের অধিকাংশই মুসলমান এবং শত শত মানুষ আহত হয়।

গতকাল সোমবার (১১ মার্চ) সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে মোদি সরকার।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল বিজেপির ২০১৯ সালের (নির্বাচনি) ইশতেহারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি নির্যাতিতদের ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করবে।’

মুসলিম অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) সম্বলিত আইনটির মাধ্যমে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের সঙ্গে বৈষম্য করা হতে পারে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা ভারতে। তাদের আশঙ্কা, সরকার কিছু সীমান্তবর্তী রাজ্যে কোনোরকমের কাগজপত্র ছাড়াই মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দিতে পারে।

আইনটি ‘মুসলিমবিরোধী’ বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করেছে বিজেপি সরকার। আইনটির সমর্থনে তারা বলেছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে নিপীড়নের সম্মুখীন সংখ্যালঘুদের সাহায্য করার জন্য এটি প্রয়োজন রয়েছে।

মোদি সরকার আরও বলেছে, আইনটি নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি কারও কাছ থেকে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। আইনটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে তারা।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবশ্য অভিযোগ করেছে, ২০১৪ সালে দেশটিতে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন বেড়েছে।

 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:৩৬:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
১৫
Translate »

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আসন্ন নির্বাচনে তার হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) বিরল টানা তৃতীয়বারের বিজয় নিশ্চিত করতে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করছে বিরোধী দলগুলো।

ভারতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকর

আপডেট : ১১:৩৬:১১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

মোদির সরকার ২০১৯ সালে বিতর্কিত আইনটি পাস করে। এই আইন অনুযায়ী, ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে যাওয়া অমুসলিম বাস্তুচ্যুতদের ভারতীয় নাগরিকত্ব প্রদানের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

আইনটিতে বলা হয়, যে হিন্দু, পারসি, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও খ্রিস্টানরা মুসলিম প্রধান আফগানিস্তান, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে পালিয়ে এসেছে, তারা নাগরিকত্ব পাওয়ার যোগ্য।

মুসলমান সম্প্রদায়কে আওতার বাইরে রাখার জন্য বেশ কয়েকটি অধিকার সংগঠন আইনটিকে ‘মুসলিমবিরোধী’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশব্যাপী বিক্ষোভের পর মোদি সরকার আইনটির জন্য বিধিমালা তৈরি করেনি। সেসময় বিক্ষোভের জেরে রাজধানী নয়াদিল্লিতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকদিনের দাঙ্গায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটে, যাদের অধিকাংশই মুসলমান এবং শত শত মানুষ আহত হয়।

গতকাল সোমবার (১১ মার্চ) সরকারের একজন মুখপাত্র বলেন, ‘সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে মোদি সরকার।’ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়। তিনি বলেন, ‘এটা ছিল বিজেপির ২০১৯ সালের (নির্বাচনি) ইশতেহারের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটি নির্যাতিতদের ভারতে নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ সুগম করবে।’

মুসলিম অধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রস্তাবিত জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) সম্বলিত আইনটির মাধ্যমে ভারতের ২০ কোটি মুসলমানের সঙ্গে বৈষম্য করা হতে পারে। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম জনসংখ্যা ভারতে। তাদের আশঙ্কা, সরকার কিছু সীমান্তবর্তী রাজ্যে কোনোরকমের কাগজপত্র ছাড়াই মুসলমানদের নাগরিকত্ব বাতিল করে দিতে পারে।

আইনটি ‘মুসলিমবিরোধী’ বলে যে অভিযোগ উঠেছে তা অস্বীকার করেছে বিজেপি সরকার। আইনটির সমর্থনে তারা বলেছে, মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোতে নিপীড়নের সম্মুখীন সংখ্যালঘুদের সাহায্য করার জন্য এটি প্রয়োজন রয়েছে।

মোদি সরকার আরও বলেছে, আইনটি নাগরিকত্ব প্রদানের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে। এটি কারও কাছ থেকে নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়। আইনটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে অভিহিত করেছে তারা।

মানবাধিকার সংগঠনগুলো অবশ্য অভিযোগ করেছে, ২০১৪ সালে দেশটিতে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন বেড়েছে।