London ১০:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় লিচুর সুবাসে ভরে উঠেছে চারপাশ, কিন্তু মুখে হাসি নেই লিচু চাষিদের

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় লিচুর সুবাসে বাতাস ভরে উঠলেও, লিচু চাষিদের মুখে ফুটেনি সেই কাঙ্ক্ষিত হাসি। চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা নিয়ে যাঁরা বাগান পরিচর্যায় দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, তাঁরা আজ হতাশা আর দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি ও উর্বর লাল মাটির কারণে কসবা, আখাউড়া এবং বিজয়নগর উপজেলা অঞ্চলগুলো লিচু চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এখানকার লিচু আকারে বড়, রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারা দেশের বাজারে। ফলে এই অঞ্চলকে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রতি বছর হাজার হাজার চাষি এই মৌসুমের অপেক্ষায় থাকেন, কারণ লিচু চাষ তাঁদের জীবিকার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে অনেকে লিচু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, কেউ ঋণ শোধ করেছেন, কেউ আবার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু এ বছর সেই দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে গেছে।

চাষিরা জানান, মুকুল আসার পর কিছুদিন গাছ ভরে উঠলেও হঠাৎ করেই গুটি ঝরে পড়তে শুরু করে। অনেক চেষ্টা করেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় বাজারের নামিদামি কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেও সমস্যার সমাধান মিলছে না।

গোপীনাথপুর গ্রামের অভিজ্ঞ লিচু চাষি মো. মাফত আলী বলেন, “আমার বাগানে প্রচুর গুটি হয়েছিল, কিন্তু এখন গাছগুলো প্রায় ফাঁকা। থোকা আছে, গুটি নেই। প্রতিদিন সকালে গিয়ে দেখি, গাছের নিচে পড়ে আছে গুটি। এতে মন খারাপ হয়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কী করব বুঝতে পারছি না। বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করেছি, তাতেও লাভ হচ্ছে না। কোথায় ভুল হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ এখনো পাইনি।”

চাষিদের অভিযোগ, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে যথাযথ সময়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে সমস্যাটি আরও ঘনীভূত হয়েছে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, তাঁরা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সন্তোষজনক কোনো সহায়তা পাননি।

স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও গুটি না টিকলে সে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অনেক চাষি, যা পরিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

এ অবস্থায় লিচু চাষিরা সরকারের কৃষি বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা চান, বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এই সমস্যার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যাতে আগামী বছর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতে হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:৪৭:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫
১৩
Translate »

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় লিচুর সুবাসে ভরে উঠেছে চারপাশ, কিন্তু মুখে হাসি নেই লিচু চাষিদের

আপডেট : ১০:৪৭:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫

 

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার গোপীনাথপুর ইউনিয়নসহ আশপাশের এলাকায় লিচুর সুবাসে বাতাস ভরে উঠলেও, লিচু চাষিদের মুখে ফুটেনি সেই কাঙ্ক্ষিত হাসি। চলতি মৌসুমে বাম্পার ফলনের প্রত্যাশা নিয়ে যাঁরা বাগান পরিচর্যায় দিনরাত পরিশ্রম করেছেন, তাঁরা আজ হতাশা আর দুশ্চিন্তায় সময় পার করছেন।

দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ি ও উর্বর লাল মাটির কারণে কসবা, আখাউড়া এবং বিজয়নগর উপজেলা অঞ্চলগুলো লিচু চাষের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী। এখানকার লিচু আকারে বড়, রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে সারা দেশের বাজারে। ফলে এই অঞ্চলকে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় লিচু উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

প্রতি বছর হাজার হাজার চাষি এই মৌসুমের অপেক্ষায় থাকেন, কারণ লিচু চাষ তাঁদের জীবিকার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে। বিগত বছরগুলোতে অনেকে লিচু চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন, কেউ ঋণ শোধ করেছেন, কেউ আবার সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগাতে সক্ষম হয়েছেন। কিন্তু এ বছর সেই দৃশ্যপট অনেকটাই পাল্টে গেছে।

চাষিরা জানান, মুকুল আসার পর কিছুদিন গাছ ভরে উঠলেও হঠাৎ করেই গুটি ঝরে পড়তে শুরু করে। অনেক চেষ্টা করেও তা বন্ধ করা যাচ্ছে না। স্থানীয় বাজারের নামিদামি কোম্পানির কীটনাশক ব্যবহার করেও সমস্যার সমাধান মিলছে না।

গোপীনাথপুর গ্রামের অভিজ্ঞ লিচু চাষি মো. মাফত আলী বলেন, “আমার বাগানে প্রচুর গুটি হয়েছিল, কিন্তু এখন গাছগুলো প্রায় ফাঁকা। থোকা আছে, গুটি নেই। প্রতিদিন সকালে গিয়ে দেখি, গাছের নিচে পড়ে আছে গুটি। এতে মন খারাপ হয়ে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা কী করব বুঝতে পারছি না। বিভিন্ন ওষুধ ব্যবহার করেছি, তাতেও লাভ হচ্ছে না। কোথায় ভুল হচ্ছে বুঝতে পারছি না। কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও কোনো নির্দেশনা বা পরামর্শ এখনো পাইনি।”

চাষিদের অভিযোগ, স্থানীয় কৃষি অফিস থেকে যথাযথ সময়ে পরামর্শ ও সহযোগিতা না পাওয়ার কারণে সমস্যাটি আরও ঘনীভূত হয়েছে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, তাঁরা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সন্তোষজনক কোনো সহায়তা পাননি।

স্থানীয় বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকলেও গুটি না টিকলে সে চাহিদা পূরণ করা সম্ভব নয়। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন অনেক চাষি, যা পরিবারিক ও সামাজিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে।

এ অবস্থায় লিচু চাষিরা সরকারের কৃষি বিভাগের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন। তারা চান, বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে এই সমস্যার প্রকৃত কারণ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যাতে আগামী বছর এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন না হতে হয়।