London ০৪:১৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিয়ে না করে একা থাকলে কি গুনাহ হবে?

অনলাইন ডেস্ক

বিয়ে বা বিবাহ হলো একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি। এ চুক্তি বা বন্ধনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বলা হয়ে থাকে, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে এ তিন বিধাতা নিয়ে। এটা মহান আল্লাহ তাআলার বিধানও বটে।

মূলত সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। বিয়ের মাধ্যমে মানুষের নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্ব দূর হয়। বিয়ের করার মাধ্যমে মানুষের জীবনে পূর্ণতা পায়। দ্বীন এবং ইমানে পরিপক্বতা আসে।

আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর হজরত হাওয়া (আ.)-কে তার জীবন সঙ্গীরূপে সৃষ্টি করেন। তাদের বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু, হাদিস, ৬১৪৮; তাবরানি, হাদিস, ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস, ২৭২৮)

বর্তমানে আমাদের সমাজে বিয়ে নিয়ে অনেকের মানসিকতা প্রচলিত ধারার বাইরে। অনেকে বিয়ে না করে একা থাকতে চান। তারা একাই জীবন উপভোগের কথা বলে থাকেন। একা থাকাটা কারও কারও কাছে ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। নানা কারণে অনেকেই নির্ধারিত বয়স পার হয়ে গেলেও বিয়ে করেন না।

বিয়ে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তার (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)

রাসূল (স.) বিয়েকে তার সুন্নত হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ থাকবে সে আমার উম্মত নয়।

এ বিষয়ে হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনজনের একটি দল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল।

যখন তাদের নবীজির আমল সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।

এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কখনো বাদ দিব না।

অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূল (স.) তাদের কাছে এসে বললেন, তোমরা কি ওই সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তার প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সাওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম, হাদিস, ১৪০১, আহমাদ, হাদিস, ১৩৫৩৪)

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেগুলোকে উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া সম্ভব না। বিয়ে করা নবীজির (স.) সুন্নত অনুসরণের অন্তর্ভুক্ত।

এ বিষয়ে মুফতি নাসির উদ্দীন হুসাইনি বলেন, বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। একজন ব্যক্তি তার চারিত্রিক সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে এই সুন্নতের ওপর আমল করবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ এই সুন্নতকে অবহেলা করে, সেক্ষেত্রে তার গুনাহ হবে। এ জন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও একা থাকা উচিত না।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:২৩:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
২৬
Translate »

বিয়ে না করে একা থাকলে কি গুনাহ হবে?

আপডেট : ০৪:২৩:০৮ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

বিয়ে বা বিবাহ হলো একটি সামাজিক বন্ধন বা বৈধ চুক্তি। এ চুক্তি বা বন্ধনের মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপিত হয়। বলা হয়ে থাকে, জন্ম-মৃত্যু-বিয়ে এ তিন বিধাতা নিয়ে। এটা মহান আল্লাহ তাআলার বিধানও বটে।

মূলত সৃষ্টিগতভাবেই নারী-পুরুষ একে অপরের পরিপূরক। নারী ছাড়া পুরুষ এবং পুরুষ ছাড়া নারীর জীবন অসম্পূর্ণ। বিয়ের মাধ্যমে মানুষের নিঃসঙ্গতা ও একাকিত্ব দূর হয়। বিয়ের করার মাধ্যমে মানুষের জীবনে পূর্ণতা পায়। দ্বীন এবং ইমানে পরিপক্বতা আসে।

আল্লাহ তায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর হজরত হাওয়া (আ.)-কে তার জীবন সঙ্গীরূপে সৃষ্টি করেন। তাদের বিয়ের মাধ্যমে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে দেন। সেই ধারাবাহিকতা এখনো পৃথিবীতে চলমান।

আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন, ‘যখন বান্দা বিয়ে করে, তখন সে তার দ্বীনের অর্ধেক পূরণ করে। অতএব, বাকি অর্ধেকাংশে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে।’ (সহিহ আল-জামিউস সাগির ওয়া জিয়াদাতুহু, হাদিস, ৬১৪৮; তাবরানি, হাদিস, ৯৭২; মুসতাদরাক হাকিম, হাদিস, ২৭২৮)

বর্তমানে আমাদের সমাজে বিয়ে নিয়ে অনেকের মানসিকতা প্রচলিত ধারার বাইরে। অনেকে বিয়ে না করে একা থাকতে চান। তারা একাই জীবন উপভোগের কথা বলে থাকেন। একা থাকাটা কারও কারও কাছে ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছে। নানা কারণে অনেকেই নির্ধারিত বয়স পার হয়ে গেলেও বিয়ে করেন না।

বিয়ে সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘আর তার (আল্লাহ) নিদর্শনাবলির মধ্যে রয়েছে যে, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকেই স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি পাও। আর তিনি তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা ও মায়া সৃষ্টি করেছেন।’ (সুরা রুম, আয়াত : ২১)

রাসূল (স.) বিয়েকে তার সুন্নত হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, যে ব্যক্তি আমার সুন্নত থেকে বিমুখ থাকবে সে আমার উম্মত নয়।

এ বিষয়ে হজরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তিনজনের একটি দল নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইবাদাত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করার জন্য নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর স্ত্রীদের বাড়িতে আসল।

যখন তাদের নবীজির আমল সম্পর্কে জানানো হলো, তখন তারা ইবাদাতের পরিমাণ কম মনে করল এবং বলল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে আমাদের তুলনা হতে পারে না। কারণ, তার আগের ও পরের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।

এমন সময় তাদের মধ্য থেকে একজন বলল, আমি সারা জীবন রাতভর সালাত আদায় করতে থাকব। অপর একজন বলল, আমি সব সময় সওম পালন করব এবং কখনো বাদ দিব না।

অপরজন বলল, আমি নারী সংসর্গ ত্যাগ করব, কখনও বিয়ে করব না। এরপর রাসূল (স.) তাদের কাছে এসে বললেন, তোমরা কি ওই সব লোক যারা এমন এমন কথাবার্তা বলেছ? আল্লাহর কসম! আমি আল্লাহকে তোমাদের চেয়ে বেশি ভয় করি এবং তোমাদের চেয়ে তার প্রতি বেশি অনুগত; অথচ আমি সাওম পালন করি, আবার তা থেকে বিরতও থাকি। সালাত আদায় করি এবং নিদ্রা যাই ও মেয়েদেরকে বিয়েও করি। সুতরাং যারা আমার সুন্নাতের প্রতি বিরাগ পোষণ করবে, তারা আমার দলভুক্ত নয়। (মুসলিম, হাদিস, ১৪০১, আহমাদ, হাদিস, ১৩৫৩৪)

আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যে প্রকৃতি, বৈশিষ্ট্য ও চাহিদা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন সেগুলোকে উপেক্ষা করে আল্লাহর প্রিয়পাত্র হওয়া সম্ভব না। বিয়ে করা নবীজির (স.) সুন্নত অনুসরণের অন্তর্ভুক্ত।

এ বিষয়ে মুফতি নাসির উদ্দীন হুসাইনি বলেন, বিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। একজন ব্যক্তি তার চারিত্রিক সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে এই সুন্নতের ওপর আমল করবে। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ এই সুন্নতকে অবহেলা করে, সেক্ষেত্রে তার গুনাহ হবে। এ জন্য সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও একা থাকা উচিত না।