London ০৯:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৪ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
দুর্গাপুরে হাজং সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী দেউলী উৎসব অনুষ্ঠিত ট্রাক চাপায় মোটরসাইকেল আরহি নিহত কালিয়াকৈরে ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে বর্ণাঢ্য র‍্যালি অনুষ্ঠিত কালিয়াকৈরে ঐতিহাসিক ৭ই নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন ” ক্ষুদ্র শিল্প ক্ষুদ্র নয়, দিনে দিনে বড় হয” এ শ্লোগান নিয়ে পটুয়াখালীতে বর্ণিল আয়োজনে ১০ দিন ব্যাপী বিসিক উদ্যোক্তা মেলা- ২০২৫ উদ্বোধন হয়েছে ডাল মিলকে ২ লাখ টাকা জড়িমানা বারহাট্টায় চোরাচালানের বিপুল সংখ্যক ভারতীয় শাড়ী ও থ্রি পিসসহ আটক ২ সিংড়ায় ৩১ দফার প্রচারণায় বিএনপি নেতা দাউদার মাহমুদ কার্ডিফ বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশনের কমিটি গঠন, আব্দুল হান্নান সভাপতি, মকিস মনসুর, সম্পাদক নির্বা‌চিত নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ঝুমা তালুকদার ঢাকায় গ্রেপ্তার

বিদেশি দুই উদ্ভিদের কথা 

মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের চীনা পুতুলগাছছবি: লেখক

অনেকগুলো বিদেশি উদ্ভিদ নার্সারিওয়ালা ও শৌখিন উদ্ভিদপ্রেমীদের মাধ্যমে আমাদের দেশে এসেছে এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমন দুটি উদ্ভিদ হচ্ছে সাদা মুসান্ডা ও চীনা পুতুলগাছ। দুটি উদ্ভিদের ছবিই তুলেছি আমার বর্তমান কর্মস্থল ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে।

সাদা মুসান্ডা

সাদা মুসান্ডা ফুলের আকর্ষণীয় অঙ্গ হলো এর বৃতি। বৃতি হওয়ার কথা সবুজ বর্ণের; কিন্তু সাদা মুসান্ডার বৃতি ডিম্বাকার, সাদা বর্ণের। সাদা মুসান্ডা ছোট গাছ বা গুল্ম। মুসান্ডাকে অনেক নার্সারিওয়ালা ‘মৌসন্ধ্যা’ নামে ডাকেন। এই উদ্ভিদ ৩ থেকে ৫ মিটার লম্বা হয়। এই আবাদি জাতটির নাম Mussaenda philippica aurorae’, এটি Rubiaceae পরিবারের উদ্ভিদ। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল লুইস কুইজোনের স্ত্রী ডোনা অরোরার নামানুসারে এই জাতের নামকরণ করা হয়েছে। ইংরেজিতে হোয়াইট মুসান্ডা, ডোনা অরোরা ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর আদি নিবাস ফিলিপাইন। পরে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি ছড়িয়ে পড়ে। এটি শোভাময় প্রজাতি হিসেবে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

উদ্ভিদের পাতা উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার, ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে। ফুল ছোট, কমলা থেকে হলুদ কমলা রঙের; ফুল নলাকার; পাপড়ি ছোট সোনালি হলুদ, দেখতে তারার মতো। পুষ্পবিন্যাস করিম্ব। পাপড়ির মতো দেখতে বৃত্যংশ পাঁচটি সাদা, ডিম্বাকার; ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এ গাছ পূর্ণ রোদে সবচেয়ে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে; কিন্তু আংশিক ছায়া সহ্য করতে পারে। জন্ডিস, আমাশয়, পেটব্যথা ও ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য এই উদ্ভিদকে ওষুধ হিসেবে পছন্দ করা হয়। এর পাতার নির্যাসে আলসারবিরোধী উপাদান রয়েছে। 

চীনা পুতুলগাছ

এই উদ্ভিদের পাতা দেখতে কামিনীর মতো বলে নার্সারিওয়ালা বা বিক্রেতারা এটিকে থাই কামিনী বা ইন্ডিয়ান কামিনী বলে বিক্রি করে থাকেন। এর জাতের নাম Radhermachera sinica kunming’, এটি Bignoniaceae পরিবারের উদ্ভিদ।  এই গাছের আদি নিবাস থাইল্যান্ড।

ইংরেজিতে এই উদ্ভিদ ডোয়ার্ফ ট্রি জেসমিন, চায়না ডল ট্রি ইত্যাদি নামে পরিচিত। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ছোট গাছ বা গুল্ম। যৌগিক পাতাগুলো চকচকে, মসৃণ পত্রক দিয়ে গঠিত। পত্রক আকৃতিতে উপবৃত্তাকার। ফুল হালকা গোলাপি থেকে সাদা। সুগন্ধি ফুলের গলায় কমলা থেকে কমলা-হলুদ ডোরা থাকে। ফুল নরম ও মসৃণ।

মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের সাদা মুসান্ডা

মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের সাদা মুসান্ডাছবি: লেখক

পাতা গাঢ় সবুজ, চকচকে, ডিম্বাকৃতির ও যৌগিক। ফুল ফানেল বা ট্রাম্পেটের মতো। এটি ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ফুল হলুদ কেন্দ্রবিশিষ্ট সাদা, সুগন্ধযুক্ত। প্রধানত গ্রীষ্মে ফুল ফোটে; তবে মাঝেমধে৵ সারা বছর ফুল ফোটে। উঠানের শোভা বাড়িয়ে দেয় এই ফুল। জলবায়ু যত বেশি রৌদ্রোজ্জ্বল ও উষ্ণ হয়, এর ফুলের গুণ ও মান তত ভালো হয়। শুধু ফুল ফোটার পরেই এই গাছ ছাঁটাই করা উচিত। মৌমাছি, প্রজাপতি ও হামিং বার্ডের খুব প্রিয় এই ফুল। এদের দ্বারাই এই ফুলের পরাগায়ন ঘটে।

 উজ্জ্বল আলোয় জন্মালে এই উদ্ভিদে অত্যন্ত সুগন্ধি ফুলের বড় ক্লাস্টার বা গুচ্ছ তৈরি হয়। শাখার শীর্ষে ফুলের গুচ্ছে কয়েক সপ্তাহ ধরে ফুল ফোটে।


চয়ন বিকাশ ভদ্র, অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান প্রকৃতিবিষয়ক লেখক

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৪১:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
১২২
Translate »

বিদেশি দুই উদ্ভিদের কথা 

আপডেট : ০৪:৪১:১৪ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের চীনা পুতুলগাছছবি: লেখক

অনেকগুলো বিদেশি উদ্ভিদ নার্সারিওয়ালা ও শৌখিন উদ্ভিদপ্রেমীদের মাধ্যমে আমাদের দেশে এসেছে এবং জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এমন দুটি উদ্ভিদ হচ্ছে সাদা মুসান্ডা ও চীনা পুতুলগাছ। দুটি উদ্ভিদের ছবিই তুলেছি আমার বর্তমান কর্মস্থল ময়মনসিংহের মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে।

সাদা মুসান্ডা

সাদা মুসান্ডা ফুলের আকর্ষণীয় অঙ্গ হলো এর বৃতি। বৃতি হওয়ার কথা সবুজ বর্ণের; কিন্তু সাদা মুসান্ডার বৃতি ডিম্বাকার, সাদা বর্ণের। সাদা মুসান্ডা ছোট গাছ বা গুল্ম। মুসান্ডাকে অনেক নার্সারিওয়ালা ‘মৌসন্ধ্যা’ নামে ডাকেন। এই উদ্ভিদ ৩ থেকে ৫ মিটার লম্বা হয়। এই আবাদি জাতটির নাম Mussaenda philippica aurorae’, এটি Rubiaceae পরিবারের উদ্ভিদ। ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল লুইস কুইজোনের স্ত্রী ডোনা অরোরার নামানুসারে এই জাতের নামকরণ করা হয়েছে। ইংরেজিতে হোয়াইট মুসান্ডা, ডোনা অরোরা ইত্যাদি নামে পরিচিত। এর আদি নিবাস ফিলিপাইন। পরে ভারত ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এটি ছড়িয়ে পড়ে। এটি শোভাময় প্রজাতি হিসেবে বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে।

উদ্ভিদের পাতা উপবৃত্তাকার থেকে ডিম্বাকার, ১৫ সেন্টিমিটার লম্বা হতে পারে। ফুল ছোট, কমলা থেকে হলুদ কমলা রঙের; ফুল নলাকার; পাপড়ি ছোট সোনালি হলুদ, দেখতে তারার মতো। পুষ্পবিন্যাস করিম্ব। পাপড়ির মতো দেখতে বৃত্যংশ পাঁচটি সাদা, ডিম্বাকার; ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এ গাছ পূর্ণ রোদে সবচেয়ে ভালোভাবে বেড়ে ওঠে; কিন্তু আংশিক ছায়া সহ্য করতে পারে। জন্ডিস, আমাশয়, পেটব্যথা ও ইনফ্লুয়েঞ্জার চিকিৎসার জন্য এই উদ্ভিদকে ওষুধ হিসেবে পছন্দ করা হয়। এর পাতার নির্যাসে আলসারবিরোধী উপাদান রয়েছে। 

চীনা পুতুলগাছ

এই উদ্ভিদের পাতা দেখতে কামিনীর মতো বলে নার্সারিওয়ালা বা বিক্রেতারা এটিকে থাই কামিনী বা ইন্ডিয়ান কামিনী বলে বিক্রি করে থাকেন। এর জাতের নাম Radhermachera sinica kunming’, এটি Bignoniaceae পরিবারের উদ্ভিদ।  এই গাছের আদি নিবাস থাইল্যান্ড।

ইংরেজিতে এই উদ্ভিদ ডোয়ার্ফ ট্রি জেসমিন, চায়না ডল ট্রি ইত্যাদি নামে পরিচিত। এটি গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ছোট গাছ বা গুল্ম। যৌগিক পাতাগুলো চকচকে, মসৃণ পত্রক দিয়ে গঠিত। পত্রক আকৃতিতে উপবৃত্তাকার। ফুল হালকা গোলাপি থেকে সাদা। সুগন্ধি ফুলের গলায় কমলা থেকে কমলা-হলুদ ডোরা থাকে। ফুল নরম ও মসৃণ।

মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের সাদা মুসান্ডা

মুমিনুন্নিসা সরকারি মহিলা কলেজ ক্যাম্পাসের সাদা মুসান্ডাছবি: লেখক

পাতা গাঢ় সবুজ, চকচকে, ডিম্বাকৃতির ও যৌগিক। ফুল ফানেল বা ট্রাম্পেটের মতো। এটি ১৫ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ফুল হলুদ কেন্দ্রবিশিষ্ট সাদা, সুগন্ধযুক্ত। প্রধানত গ্রীষ্মে ফুল ফোটে; তবে মাঝেমধে৵ সারা বছর ফুল ফোটে। উঠানের শোভা বাড়িয়ে দেয় এই ফুল। জলবায়ু যত বেশি রৌদ্রোজ্জ্বল ও উষ্ণ হয়, এর ফুলের গুণ ও মান তত ভালো হয়। শুধু ফুল ফোটার পরেই এই গাছ ছাঁটাই করা উচিত। মৌমাছি, প্রজাপতি ও হামিং বার্ডের খুব প্রিয় এই ফুল। এদের দ্বারাই এই ফুলের পরাগায়ন ঘটে।

 উজ্জ্বল আলোয় জন্মালে এই উদ্ভিদে অত্যন্ত সুগন্ধি ফুলের বড় ক্লাস্টার বা গুচ্ছ তৈরি হয়। শাখার শীর্ষে ফুলের গুচ্ছে কয়েক সপ্তাহ ধরে ফুল ফোটে।


চয়ন বিকাশ ভদ্র, অধ্যাপক, উদ্ভিদবিজ্ঞান প্রকৃতিবিষয়ক লেখক