London ০১:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩১ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র ঘোষণা আদালতের

রায় ঘোষণার পর চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে শাহাদাত হোসেন। আজ দুপুরে

তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেছেন আদালত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির জন্যও আদালত সরকারকে নির্দেশ দেন।

আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন এ রায় দেন। বাদীর আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পেয়েছেন আদালত। এ জন্য বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে চসিকের মেয়র ঘোষণা করেছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির আদেশও দিয়েছেন।

ছাত্র–জনতার বিক্ষোভে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর আর কার্যালয়ে আসেননি। মেয়রকে অপসারণ করে ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এরপর আদালত থেকে আজ নতুন নির্দেশনা এল।

এদিকে রায় ঘোষণার পর বিএনপি নেতা-কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। তাঁরা নানা স্লোগান দিয়ে শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে স্বাগত জানান। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নয়জনকে বিবাদী করে মামলাটি করেছিলেন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।

বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন

বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনছবি: সংগৃহীত

মামলার নয়জন বিবাদী হলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা, সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, মেয়র প্রার্থী আবুল মনসুর, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, ওয়াহেদ মুরাদ ও জান্নাতুল ইসলাম।

মামলায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী ফলাফল তথা ইভিএমের প্রিন্ট করা (ছাপা) কপি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। হাতে লেখা ফলাফল দেওয়া হয়। এতে বোঝা যায়, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। বিবাদীরা পরস্পরের যোগসাজশের মাধ্যমে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী দেখানো হয়েছে।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ভোটের দিন হামলা, গোলাগুলি, প্রাণহানি ও ক্ষমতাসীনদের শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। এতে ভোটের উৎসব অনেকটা ম্লান হয়ে যায়। ভোট শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কোনো ভোটই হয়নি।

রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ে চট্টগ্রামসহ দেশের ১৮ কোটি মানুষ খুশি হয়েছেন। যাঁরা আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে ভোট দিতে পারেননি, এই রায়ে তাঁদেরও জয় হয়েছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৯:৫৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪
৫০
Translate »

বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রাম সিটির মেয়র ঘোষণা আদালতের

আপডেট : ০৯:৫৯:২৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ অক্টোবর ২০২৪

রায় ঘোষণার পর চট্টগ্রাম আদালত চত্বরে বিএনপির নেতা–কর্মীদের সঙ্গে শাহাদাত হোসেন। আজ দুপুরে

তিন বছর আগে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে জয়ী ঘোষণা করেছেন আদালত। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারির জন্যও আদালত সরকারকে নির্দেশ দেন।

আজ মঙ্গলবার চট্টগ্রাম প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক খাইরুল আমিন এ রায় দেন। বাদীর আইনজীবী মফিজুল হক ভূঁইয়া বলেন, ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির প্রমাণ পেয়েছেন আদালত। এ জন্য বিএনপির প্রার্থী শাহাদাত হোসেনকে চসিকের মেয়র ঘোষণা করেছেন। আগামী ১০ দিনের মধ্যে এ–সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারির আদেশও দিয়েছেন।

ছাত্র–জনতার বিক্ষোভে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীর আর কার্যালয়ে আসেননি। মেয়রকে অপসারণ করে ১৯ আগস্ট চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. তোফায়েল ইসলামকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এরপর আদালত থেকে আজ নতুন নির্দেশনা এল।

এদিকে রায় ঘোষণার পর বিএনপি নেতা-কর্মীরা আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। তাঁরা নানা স্লোগান দিয়ে শাহাদাত হোসেনকে মেয়র হিসেবে স্বাগত জানান। ২০২১ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগে নয়জনকে বিবাদী করে মামলাটি করেছিলেন নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক শাহাদাত হোসেন।

বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেন

বিএনপি নেতা শাহাদাত হোসেনছবি: সংগৃহীত

মামলার নয়জন বিবাদী হলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশনের সচিব, চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচনী কর্মকর্তা, সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা, মেয়র প্রার্থী আবুল মনসুর, এম এ মতিন, খোকন চৌধুরী, ওয়াহেদ মুরাদ ও জান্নাতুল ইসলাম।

মামলায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী ফলাফল তথা ইভিএমের প্রিন্ট করা (ছাপা) কপি দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু তা দেওয়া হয়নি। হাতে লেখা ফলাফল দেওয়া হয়। এতে বোঝা যায়, নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। বিবাদীরা পরস্পরের যোগসাজশের মাধ্যমে বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে হারিয়ে দিয়েছেন। ভোটের দিন ভোটকেন্দ্র ভোটারের উপস্থিতি না থাকলেও আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে বিপুল ভোটে জয়ী দেখানো হয়েছে।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরী ৩ লাখ ৬৯ হাজার ২৪৮ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হন। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শাহাদাত হোসেন ৫২ হাজার ৪৮৯ ভোট পান।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১৯ লাখ ৩৮ হাজার ৭০৬ জন। নির্বাচনে ভোট পড়ে মাত্র ২২ দশমিক ৫২ শতাংশ। ভোটের দিন হামলা, গোলাগুলি, প্রাণহানি ও ক্ষমতাসীনদের শক্তি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। এতে ভোটের উৎসব অনেকটা ম্লান হয়ে যায়। ভোট শেষে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে কোনো ভোটই হয়নি।

রায় ঘোষণার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন আদালত প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ে চট্টগ্রামসহ দেশের ১৮ কোটি মানুষ খুশি হয়েছেন। যাঁরা আওয়ামী দুঃশাসনের আমলে ভোট দিতে পারেননি, এই রায়ে তাঁদেরও জয় হয়েছে।