London ১২:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

প্রেষণে পরিচালক নিয়োগে সমাজসেবায় অস্থিরতা, প্রতিবাদ করায় কর্মকর্তা বদলি

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ক্যাডারভুক্তির লক্ষ্যে বিসিএস (সমাজসেবা) ক্যাডার, পদ সৃজনসহ কয়েক দফা দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে যাতে প্রেষণে পরিচালক নিয়োগ বন্ধ করা হয় ও তাঁদের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই এই পরিচালক নিয়োগ করা হয়; কিন্তু সেটি না করে আবারও দুজন উপসচিবকে প্রেষণে পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগের প্রতিবাদ করায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ক্যাডারভুক্তির লক্ষ্যে বিসিএস (সমাজসেবা) ক্যাডার, পদ সৃজনসহ কয়েক দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন থেকেই কর্মসূচি পালন করছেন। বৈষম্য দূর করতেই চলছে কর্মসূচি। কর্মসূচি চলাকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সব নাগরিক সেবা যথারীতি চলবে।

সমাজসেবার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দাবি ছিল, প্রশাসন ক্যাডার থেকে যাতে প্রেষণে পরিচালক নিয়োগ বন্ধ করা হয় ও তাঁদের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই এই পরিচালক নিয়োগ করা হয়, কিন্তু সেটি না করে আবারও দুজন উপসচিবকে প্রেষণে পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগের প্রতিবাদ করায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এই প্রতিবাদে তাঁরা ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল ছবি কালো করে দিয়েছেন। তাঁদের চাওয়া, অন্যায় যাতে তাঁদের সঙ্গে আর না হয়। এখন থেকে তাঁরা আর কোনো বৈষম্য চান না।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাজ্জাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি গত ১৮ আগস্ট সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদের কাছে স্মারকলিপি দাখিল করা হয়। দাবিগুলো ছিল বিসিএস (সমাজসেবা) ক্যাডার সৃজন, বিভিন্ন পদের স্কেল আপগ্রেডেশন, ফিডার পদের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ পদ সৃজন, অধিদপ্তরের পরিচালক পদে সব প্রেষণ বাতিলপূর্বক সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধির আলোকে যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান এবং কর্মচারীদের সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ। সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা দাবিগুলোর যৌক্তিকতা বিবেচনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। এর মধ্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ গত ৫ আগস্টের পর পরিচালকের শূন্য পদে প্রেষণে আওয়ামী লীগের দোসর উপসচিবদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সমাজসেবা অধিদপ্তরের সদর কার্যালয় ও সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে সর্বশেষ দুটি শূন্য পদে প্রেষণে দুজন ডিসিকে পরিচালক পদে পদায়ন করেছেন। এতে ১১ সেপ্টেম্বরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মহাপরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামালের দপ্তরে সমবেত হয়ে কিছু দাবি তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার নিকট দাখিল করা ৪ নম্বর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়—

১.

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখের অপসারণ;

২.

১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রেষণে নিযুক্ত সব পরিচালকের প্রেষণ আদেশ বাতিলপূর্বক প্রত্যাহার করতে হবে;

৩.

১২ সেপ্টেম্বরে থেকে প্রেষণে কর্মরত কোনো পরিচালককে অফিসে আসতে দেওয়া হবে না;

৪.

১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিদ্যমান নিয়োগবিধির আলোকে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত পরিচালক থেকে পরিচালক, উপপরিচালক থেকে অতিরিক্ত পরিচালক, সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক এবং সমাজসেবা অফিসার থেকে সহকারী পরিচালকসহ সব যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। ক্ষেত্রমতে পদোন্নতিযোগ্য পদ না থাকলে সুপারনিউমারি ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।

কর্মসূচি চলাকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সব নাগরিক সেবা যথারীতি চলবে। শুধু পরিচালকদের স্বাভাবিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত পরিচালকেরা পালন করবেন।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তিন উচ্চপর্যায়ের দুজন কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে তাঁরা সাড়া দেননি। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তিনি মন্তব্য করতে চান না।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৯:৫৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৫৬
Translate »

প্রেষণে পরিচালক নিয়োগে সমাজসেবায় অস্থিরতা, প্রতিবাদ করায় কর্মকর্তা বদলি

আপডেট : ০৯:৫৭:১৯ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ক্যাডারভুক্তির লক্ষ্যে বিসিএস (সমাজসেবা) ক্যাডার, পদ সৃজনসহ কয়েক দফা দাবিতে কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মকর্তাদের অভিযোগ, তাঁরা দাবি জানিয়ে আসছিলেন প্রশাসন ক্যাডার থেকে যাতে প্রেষণে পরিচালক নিয়োগ বন্ধ করা হয় ও তাঁদের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই এই পরিচালক নিয়োগ করা হয়; কিন্তু সেটি না করে আবারও দুজন উপসচিবকে প্রেষণে পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগের প্রতিবাদ করায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তরে অস্থিরতা বিরাজ করছে।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ক্যাডারভুক্তির লক্ষ্যে বিসিএস (সমাজসেবা) ক্যাডার, পদ সৃজনসহ কয়েক দফা দাবিতে বেশ কিছুদিন থেকেই কর্মসূচি পালন করছেন। বৈষম্য দূর করতেই চলছে কর্মসূচি। কর্মসূচি চলাকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সব নাগরিক সেবা যথারীতি চলবে।

সমাজসেবার একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দাবি ছিল, প্রশাসন ক্যাডার থেকে যাতে প্রেষণে পরিচালক নিয়োগ বন্ধ করা হয় ও তাঁদের কর্মকর্তাদের মধ্য থেকেই এই পরিচালক নিয়োগ করা হয়, কিন্তু সেটি না করে আবারও দুজন উপসচিবকে প্রেষণে পরিচালক নিয়োগ করা হয়েছে। এই নিয়োগের প্রতিবাদ করায় কয়েকজন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এই প্রতিবাদে তাঁরা ফেসবুকে নিজেদের প্রোফাইল ছবি কালো করে দিয়েছেন। তাঁদের চাওয়া, অন্যায় যাতে তাঁদের সঙ্গে আর না হয়। এখন থেকে তাঁরা আর কোনো বৈষম্য চান না।

সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক মো. সাজ্জাদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সমাজসেবা অধিদপ্তরে বিদ্যমান বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে পাঁচ দফা দাবি গত ১৮ আগস্ট সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদের কাছে স্মারকলিপি দাখিল করা হয়। দাবিগুলো ছিল বিসিএস (সমাজসেবা) ক্যাডার সৃজন, বিভিন্ন পদের স্কেল আপগ্রেডেশন, ফিডার পদের ন্যূনতম ৫০ শতাংশ পদ সৃজন, অধিদপ্তরের পরিচালক পদে সব প্রেষণ বাতিলপূর্বক সমাজসেবা অধিদপ্তরের নিয়োগবিধির আলোকে যোগ্য কর্মকর্তাদের পদোন্নতি প্রদান এবং কর্মচারীদের সব ধরনের বৈষম্য দূরীকরণ। সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা দাবিগুলোর যৌক্তিকতা বিবেচনায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নে নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন। এর মধ্য সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখ গত ৫ আগস্টের পর পরিচালকের শূন্য পদে প্রেষণে আওয়ামী লীগের দোসর উপসচিবদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সমাজসেবা অধিদপ্তরের সদর কার্যালয় ও সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ে সর্বশেষ দুটি শূন্য পদে প্রেষণে দুজন ডিসিকে পরিচালক পদে পদায়ন করেছেন। এতে ১১ সেপ্টেম্বরে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে মহাপরিচালক আবু সালেহ মোস্তফা কামালের দপ্তরে সমবেত হয়ে কিছু দাবি তুলে ধরেন। সেই সঙ্গে সমাজকল্যাণ উপদেষ্টার নিকট দাখিল করা ৪ নম্বর দাবি আদায়ের লক্ষ্যে নিম্নবর্ণিত কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়—

১.

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. খায়রুল আলম সেখের অপসারণ;

২.

১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রেষণে নিযুক্ত সব পরিচালকের প্রেষণ আদেশ বাতিলপূর্বক প্রত্যাহার করতে হবে;

৩.

১২ সেপ্টেম্বরে থেকে প্রেষণে কর্মরত কোনো পরিচালককে অফিসে আসতে দেওয়া হবে না;

৪.

১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে সমাজসেবা অধিদপ্তরের বিদ্যমান নিয়োগবিধির আলোকে পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তাদের অতিরিক্ত পরিচালক থেকে পরিচালক, উপপরিচালক থেকে অতিরিক্ত পরিচালক, সহকারী পরিচালক থেকে উপপরিচালক এবং সমাজসেবা অফিসার থেকে সহকারী পরিচালকসহ সব যোগ্য কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতি প্রদান করতে হবে। ক্ষেত্রমতে পদোন্নতিযোগ্য পদ না থাকলে সুপারনিউমারি ভিত্তিতে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।

কর্মসূচি চলাকালে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সব নাগরিক সেবা যথারীতি চলবে। শুধু পরিচালকদের স্বাভাবিক দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট অতিরিক্ত পরিচালকেরা পালন করবেন।

সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাইলে সমাজসেবা অধিদপ্তরের তিন উচ্চপর্যায়ের দুজন কর্মকর্তাকে ফোন করা হলে তাঁরা সাড়া দেননি। একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তিনি মন্তব্য করতে চান না।