London ১১:১৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পৃথিবীর শেষ রাস্তা কোথায় জানেন?

অনলাইন ডেস্ক

গোলাকার কমলালেবুর মতো এই পৃথিবীর শেষ কোথায় জানেন? একেক দিকে একেক দেশ বা স্থান পৃথিবীর শেষ সীমানা। পৃথিবীর শেষ মিশে গিয়েছে অসীমে। ভূ-বিজ্ঞানীরা দিলেন সেই রাস্তার হদিশ। বিপজ্জনকও বটে। ভূ-বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ই-৬৯ হাইওয়ে বিশ্বের অন্যতম উত্তরের রাস্তা, যা নরওয়ের ফিনমার্ক প্রদেশে অবস্থিত।

ই-৬৯ হাইওয়ে, এটি এমন একটি রাস্তা যা উত্তর মেরুর কাছে গিয়ে শেষ হয়। এই মহাসড়কটি পৃথিবীর অন্যতম নির্জন ও অদ্ভুত প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলে, যা একে পৃথিবীর শেষ রাস্তা হিসেবে পরিচিত করেছে।

ই-৬৯ হাইওয়ে নরওয়ের উত্তরাঞ্চলের হোনিংসভাগ থেকে শুরু হয়ে নর্ডক্যাপ পর্যন্ত বিস্তৃত। নর্ডক্যাপ ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের উত্তরতম বিন্দু হিসেবে পরিচিত। এই রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৯ কিলোমিটার এবং এটি বেশিরভাগই বরফাচ্ছন্ন, তুষারাবৃত প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলে।

ই-৬৯ হাইওয়ে এমন এক রাস্তা যেখানে মানুষ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এবং ভয়াবহতার মিশ্রণ অনুভব করতে পারে। বরফাচ্ছন্ন আর্টিক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই রাস্তা প্রকৃতিপ্রেমী এবং দুঃসাহসিক ভ্রমণকারীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ।

ই-৬৯ হাইওয়ের শেষ প্রান্ত, নর্ডক্যাপ, একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র। এখানে একটি ক্লিফ (পাহাড়ি ঢাল) রয়েছে, যা উত্তর মেরুর দিকে মুখ করে রয়েছে। পর্যটকেরা এখানে এসে মধ্যরাতের সূর্য এবং বরফময় প্রকৃতির অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করেন। এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় আশপাশে তুষার, সাগর, এবং কিছু পাহাড় ছাড়া খুব বেশি কিছু দেখা যায় না। এর নির্জনতা আর বিস্তৃত প্রকৃতি একে পৃথিবীর শেষ রাস্তা হিসেবে অনুভব করায়।

ই-৬৯ হাইওয়ে শুধুমাত্র একটি রাস্তা নয়, এটি উত্তর মেরুর কাছাকাছি মানুষের বসতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী প্রধান পথ। নরওয়ের এই উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য ই-৬৯ হাইওয়ে জীবনধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি খাদ্য, পণ্য এবং অন্যান্য সরবরাহ আনার পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ই-৬৯ হাইওয়ে ভৌগোলিকভাবে আর্টিক মহাসাগরের কাছে অবস্থিত, যা একে ইউরোপ এবং উত্তর মেরুর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রুটে পরিণত করেছে। নর্ডক্যাপ প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটককে আকর্ষণ করে। ই-৬৯ হাইওয়ে এই অঞ্চলে ভ্রমণ সহজ নয়।

পৃথিবীর শেষ রাস্তা কোথায় জানেন?

তবে এই রাস্তায় যাওয়া আপনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ই-৬৯ হাইওয়ে বরফাচ্ছন্ন আর্টিক অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও কমে নেমে যায়। এই হাইওয়েতে নর্ডক্যাপ টানেল নামে একটি বিখ্যাত টানেল রয়েছে। এটি প্রায় ৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সমুদ্রের নিচ দিয়ে চলে। এটি পৃথিবীর অন্যতম গভীরতম সমুদ্রতলীয় টানেল হিসেবে পরিচিত।

তীব্র শীত, বরফ এবং তুষারপাতের কারণে রাস্তা প্রায় সময় বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়া এবং ঘন কুয়াশা গাড়ি চালানোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তুষারপাতের সময় এখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেশি। তাই পৃথিবীর শেষ রাস্তায় একা যাওয়া নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র একটি দলে সেখানে যাওয়ার অনুমতি মেলে। সেই রাস্তায় গাড়ি চালানোও নিষিদ্ধ। কারণ এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকা শুধু বরফে ঢাকা, কাজেই একা গেলে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পাশাপাশি, এখানে শীতকালে ৬ মাস অন্ধকার থাকে, গ্রীষ্মকালে ৬ মাস সূর্য দেখা যায়। শীতকালে যেমন এখানে কোনও দিন নেই, তেমনই গ্রীষ্মকালে এখানে কোনো রাত নেই। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছোয় এবং গ্রীষ্মে তা পৌঁছোয় শূন্য ডিগ্রিতে। ‘ই-৬৯ হাইওয়ে’ তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৩০ নাগাদ। ১৯৩৪ সালে হাইওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। রাস্তার সম্প্রসারণ হয়েছে ধীরে ধীরে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:০২:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫
১০
Translate »

পৃথিবীর শেষ রাস্তা কোথায় জানেন?

আপডেট : ০২:০২:০৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৫ জানুয়ারী ২০২৫

গোলাকার কমলালেবুর মতো এই পৃথিবীর শেষ কোথায় জানেন? একেক দিকে একেক দেশ বা স্থান পৃথিবীর শেষ সীমানা। পৃথিবীর শেষ মিশে গিয়েছে অসীমে। ভূ-বিজ্ঞানীরা দিলেন সেই রাস্তার হদিশ। বিপজ্জনকও বটে। ভূ-বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ই-৬৯ হাইওয়ে বিশ্বের অন্যতম উত্তরের রাস্তা, যা নরওয়ের ফিনমার্ক প্রদেশে অবস্থিত।

ই-৬৯ হাইওয়ে, এটি এমন একটি রাস্তা যা উত্তর মেরুর কাছে গিয়ে শেষ হয়। এই মহাসড়কটি পৃথিবীর অন্যতম নির্জন ও অদ্ভুত প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলে, যা একে পৃথিবীর শেষ রাস্তা হিসেবে পরিচিত করেছে।

ই-৬৯ হাইওয়ে নরওয়ের উত্তরাঞ্চলের হোনিংসভাগ থেকে শুরু হয়ে নর্ডক্যাপ পর্যন্ত বিস্তৃত। নর্ডক্যাপ ইউরোপের মূল ভূখণ্ডের উত্তরতম বিন্দু হিসেবে পরিচিত। এই রাস্তার দৈর্ঘ্য প্রায় ১২৯ কিলোমিটার এবং এটি বেশিরভাগই বরফাচ্ছন্ন, তুষারাবৃত প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে চলে।

ই-৬৯ হাইওয়ে এমন এক রাস্তা যেখানে মানুষ প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য এবং ভয়াবহতার মিশ্রণ অনুভব করতে পারে। বরফাচ্ছন্ন আর্টিক অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যাওয়া এই রাস্তা প্রকৃতিপ্রেমী এবং দুঃসাহসিক ভ্রমণকারীদের জন্য এক বিশেষ আকর্ষণ।

ই-৬৯ হাইওয়ের শেষ প্রান্ত, নর্ডক্যাপ, একটি বিখ্যাত পর্যটনকেন্দ্র। এখানে একটি ক্লিফ (পাহাড়ি ঢাল) রয়েছে, যা উত্তর মেরুর দিকে মুখ করে রয়েছে। পর্যটকেরা এখানে এসে মধ্যরাতের সূর্য এবং বরফময় প্রকৃতির অসাধারণ দৃশ্য উপভোগ করেন। এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় আশপাশে তুষার, সাগর, এবং কিছু পাহাড় ছাড়া খুব বেশি কিছু দেখা যায় না। এর নির্জনতা আর বিস্তৃত প্রকৃতি একে পৃথিবীর শেষ রাস্তা হিসেবে অনুভব করায়।

ই-৬৯ হাইওয়ে শুধুমাত্র একটি রাস্তা নয়, এটি উত্তর মেরুর কাছাকাছি মানুষের বসতির সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী প্রধান পথ। নরওয়ের এই উত্তরাঞ্চলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য ই-৬৯ হাইওয়ে জীবনধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটি খাদ্য, পণ্য এবং অন্যান্য সরবরাহ আনার পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

ই-৬৯ হাইওয়ে ভৌগোলিকভাবে আর্টিক মহাসাগরের কাছে অবস্থিত, যা একে ইউরোপ এবং উত্তর মেরুর মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ রুটে পরিণত করেছে। নর্ডক্যাপ প্রতিবছর হাজার হাজার পর্যটককে আকর্ষণ করে। ই-৬৯ হাইওয়ে এই অঞ্চলে ভ্রমণ সহজ নয়।

পৃথিবীর শেষ রাস্তা কোথায় জানেন?

তবে এই রাস্তায় যাওয়া আপনার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। ই-৬৯ হাইওয়ে বরফাচ্ছন্ন আর্টিক অঞ্চলের মধ্যে অবস্থিত। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা প্রায় মাইনাস ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তারও কমে নেমে যায়। এই হাইওয়েতে নর্ডক্যাপ টানেল নামে একটি বিখ্যাত টানেল রয়েছে। এটি প্রায় ৬.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং সমুদ্রের নিচ দিয়ে চলে। এটি পৃথিবীর অন্যতম গভীরতম সমুদ্রতলীয় টানেল হিসেবে পরিচিত।

তীব্র শীত, বরফ এবং তুষারপাতের কারণে রাস্তা প্রায় সময় বন্ধ হয়ে যায়। ঝড়ো হাওয়া এবং ঘন কুয়াশা গাড়ি চালানোর জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। তুষারপাতের সময় এখানে দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বেশি। তাই পৃথিবীর শেষ রাস্তায় একা যাওয়া নিষিদ্ধ। শুধুমাত্র একটি দলে সেখানে যাওয়ার অনুমতি মেলে। সেই রাস্তায় গাড়ি চালানোও নিষিদ্ধ। কারণ এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকা শুধু বরফে ঢাকা, কাজেই একা গেলে হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

পাশাপাশি, এখানে শীতকালে ৬ মাস অন্ধকার থাকে, গ্রীষ্মকালে ৬ মাস সূর্য দেখা যায়। শীতকালে যেমন এখানে কোনও দিন নেই, তেমনই গ্রীষ্মকালে এখানে কোনো রাত নেই। শীতকালে এখানে তাপমাত্রা মাইনাস ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছোয় এবং গ্রীষ্মে তা পৌঁছোয় শূন্য ডিগ্রিতে। ‘ই-৬৯ হাইওয়ে’ তৈরির পরিকল্পনা শুরু হয় ১৯৩০ নাগাদ। ১৯৩৪ সালে হাইওয়ে তৈরির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। রাস্তার সম্প্রসারণ হয়েছে ধীরে ধীরে।