London ০৫:৫১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাসের হার কমেছে, বড় কারণ ইংরেজি

ভালো ফলে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। গতকাল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজেদীপু মালাকার

স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা আন্দোলনের মুখে বাতিলের কারণে এবার উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার মূল্যায়ন হয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)। আর যে কটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়েছে। এই দুই মূল্যায়ন মিলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ায় মূল্যায়নের বিষয়ে অনেকেরই ধারণা ছিল, পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে। অবশ্য ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ বেড়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন হলো, পাসের হার কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ইংরেজি বিষয়ের ফলাফলের প্রভাব। বাধ্যতামূলক ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার এবার অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় কম। সিলেট বোর্ড বাদে বাকি আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এই বিষয়ে গড়ে পাস করেছেন ৭৯ শতাংশ। যদিও কোনো কোনো বোর্ডে তা আরও কম। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের কিছুটা প্রভাবও পড়েছে ফলাফলে।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আগে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো।

এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৯। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন।

বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থীরা ফলাফলে এগিয়ে আছেন। বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি শাখায় পাসের হার ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মানবিকে পাসের হার ৬৮ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় এই হার ৭২ দশমিক ৪২ শতাংশ।

ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইংরেজি বিষয়ে যশোর ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসে হার প্রায় ৬৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৭ এবং কুমিল্লায় প্রায় ৮০ শতাংশ। অন্য বোর্ডে তা ৮০ শতাংশের কিছু বেশি। বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি। ‘বিষয় ম্যাপিংয়ের’ কারণে এ শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার শতভাগ। বাধ্যতামূলক এই বিষয়ের ফলাফলের প্রভাব পড়েছে গড় পাসের হারে।

ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সব কটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিরও সভাপতি।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যেসব বিষয়ের পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফলে উচ্চমাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতোই হয়েছে।

জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মূল্যায়নে বিষয় ম্যাপিংয়ের প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন, তিনি হয়তো উচ্চমাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছেন। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এটা জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরে স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত ২০ আগস্ট সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। পরে বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়।

যেভাবে বিষয় ‘ম্যাপিং’

বিষয় ম্যাপিং নতুন নয়। এর আগে করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে বিষয় ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে যে বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, সে বিষয়টি যদি এইচএসসিতে নিয়ে থাকেন, তাহলে এসএসসির প্রাপ্ত নম্বর এইচএসসির ফলাফলে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়ের ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

এগিয়ে ছাত্রীরা

এইচএসসিতে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ উভয় সূচকেই এবার ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা। নয়টি শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৭২ হাজার ৭৮৮ এবং ছাত্র ৫৮ হাজার ৫৮৮ জন। গত কয়েক বছর ধরেই পাবলিক পরীক্ষায় ছাত্রীরা ভালো ফল করছে।

জিপিএ-৫ বেশি ঢাকায়

একদিকে বন্যা, অন্যদিকে পরীক্ষা বাতিলের কারণে এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছিল। বাকি বিষয়ের ফলাফল তৈরি করা হয়েছে এসএসসির ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে। এ কারণে এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারও বেশি। এই বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ; যা ৯টি সাধারণ বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়েও প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। পাসের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ময়মনসিংহ বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ।

জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে এবারও শীর্ষে আছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ওই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৪৮ জন। এই বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ।

বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ২৮২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ২৬৯ জন। পাসের হার ৯৫ শতাংশ।

শূন্য ও শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান বেড়েছে

এবার সবাই পাস করা এবং কেউ পাস না করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবারের চেয়েছে বেড়েছে। এবার ৯ হাজার ১৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে সবাই পাস করেছেন। গতবার এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ৯৫৩টি। অন্যদিকে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেননি। গতবার যা ছিল ৪২টি। এ বিষয়ে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেছেন, সব সময়ই শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের মানোন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। যারা মানোন্নয়ন করতে পারে না, তাদের পাঠদান বা একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলের ব্যবস্থা করা হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:০০:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
২৪
Translate »

পাসের হার কমেছে, বড় কারণ ইংরেজি

আপডেট : ০২:০০:২৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

ভালো ফলে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। গতকাল ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজেদীপু মালাকার

স্থগিত হওয়া বিষয়গুলোর পরীক্ষা আন্দোলনের মুখে বাতিলের কারণে এবার উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার মূল্যায়ন হয়েছে ভিন্ন পদ্ধতিতে। বাতিল হওয়া পরীক্ষাগুলোর মূল্যায়ন হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার নম্বরের ভিত্তিতে (বিষয় ম্যাপিং)। আর যে কটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্রের ভিত্তিতে মূল্যায়ন হয়েছে। এই দুই মূল্যায়ন মিলে এবারের এইচএসসি পরীক্ষার ফলাফল তৈরি করা হয়েছে।

এই প্রক্রিয়ায় মূল্যায়নের বিষয়ে অনেকেরই ধারণা ছিল, পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমেছে। অবশ্য ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ বেড়েছে।

ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তাদের মূল্যায়ন হলো, পাসের হার কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ ইংরেজি বিষয়ের ফলাফলের প্রভাব। বাধ্যতামূলক ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার এবার অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় কম। সিলেট বোর্ড বাদে বাকি আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এই বিষয়ে গড়ে পাস করেছেন ৭৯ শতাংশ। যদিও কোনো কোনো বোর্ডে তা আরও কম। এ ছাড়া তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের কিছুটা প্রভাবও পড়েছে ফলাফলে।

গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আগে প্রধানমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো।

এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৫ দশমিক ৯। এবার জিপিএ-৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন।

বিজ্ঞান বিভাগে পরীক্ষার্থীরা ফলাফলে এগিয়ে আছেন। বিজ্ঞান ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি শাখায় পাসের হার ৯২ দশমিক ৬৯ শতাংশ। মানবিকে পাসের হার ৬৮ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ব্যবসায় শিক্ষায় এই হার ৭২ দশমিক ৪২ শতাংশ।

ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ইংরেজি বিষয়ে যশোর ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসে হার প্রায় ৬৯ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৭৭ এবং কুমিল্লায় প্রায় ৮০ শতাংশ। অন্য বোর্ডে তা ৮০ শতাংশের কিছু বেশি। বন্যার কারণে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষা হয়নি। ‘বিষয় ম্যাপিংয়ের’ কারণে এ শিক্ষা বোর্ডে ইংরেজি বিষয়ে পাসের হার শতভাগ। বাধ্যতামূলক এই বিষয়ের ফলাফলের প্রভাব পড়েছে গড় পাসের হারে।

ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে গতকাল ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি সব কটি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিরও সভাপতি।

অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যেসব বিষয়ের পরীক্ষাগুলো বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফলে উচ্চমাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতোই হয়েছে।

জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মূল্যায়নে বিষয় ম্যাপিংয়ের প্রভাব থাকতে পারে বলে মনে করেন তপন কুমার সরকার। তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন, তিনি হয়তো উচ্চমাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছেন। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এটা জিপিএ-৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল ৩০ জুন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরে স্থগিত পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে গত ২০ আগস্ট সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে পরীক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। পরে বিষয় ‘ম্যাপিং’ করে ফলাফল প্রকাশের সিদ্ধান্ত হয়।

যেভাবে বিষয় ‘ম্যাপিং’

বিষয় ম্যাপিং নতুন নয়। এর আগে করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে বিষয় ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে যে বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, সে বিষয়টি যদি এইচএসসিতে নিয়ে থাকেন, তাহলে এসএসসির প্রাপ্ত নম্বর এইচএসসির ফলাফলে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু বিষয়ের ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

এগিয়ে ছাত্রীরা

এইচএসসিতে পাসের হার এবং জিপিএ-৫ উভয় সূচকেই এবার ছাত্রদের চেয়ে এগিয়ে আছেন ছাত্রীরা। নয়টি শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রীদের পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। ছাত্রদের পাসের হার ৭২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্রী ৭২ হাজার ৭৮৮ এবং ছাত্র ৫৮ হাজার ৫৮৮ জন। গত কয়েক বছর ধরেই পাবলিক পরীক্ষায় ছাত্রীরা ভালো ফল করছে।

জিপিএ-৫ বেশি ঢাকায়

একদিকে বন্যা, অন্যদিকে পরীক্ষা বাতিলের কারণে এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে মাত্র তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা হয়েছিল। বাকি বিষয়ের ফলাফল তৈরি করা হয়েছে এসএসসির ফলাফলের সঙ্গে মিলিয়ে। এ কারণে এবার সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারও বেশি। এই বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ; যা ৯টি সাধারণ বোর্ডের গড় পাসের হারের চেয়েও প্রায় ১০ শতাংশ বেশি। পাসের হারে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে ময়মনসিংহ বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ।

জিপিএ-৫ পাওয়ার দিক থেকে এবারও শীর্ষে আছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। ওই বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৪৮ হাজার ৫৪৮ জন। এই বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ।

বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ২৮২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছেন ২৬৯ জন। পাসের হার ৯৫ শতাংশ।

শূন্য ও শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান বেড়েছে

এবার সবাই পাস করা এবং কেউ পাস না করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবারের চেয়েছে বেড়েছে। এবার ৯ হাজার ১৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন। এর মধ্যে ১ হাজার ৩৮৮টি প্রতিষ্ঠান থেকে সবাই পাস করেছেন। গতবার এমন প্রতিষ্ঠান ছিল ৯৫৩টি। অন্যদিকে ৬৫টি প্রতিষ্ঠান থেকে কেউ পাস করেননি। গতবার যা ছিল ৪২টি। এ বিষয়ে আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেছেন, সব সময়ই শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের মানোন্নয়নের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে। যারা মানোন্নয়ন করতে পারে না, তাদের পাঠদান বা একাডেমিক স্বীকৃতি বাতিলের ব্যবস্থা করা হয়।