London ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরকীয়ার জেরে স্ত্রীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন, পুড়লেন স্বামীও

অনলাইন ডেস্ক:

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পরকীয়া করার অভিযোগে রহিমা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন তার স্বামী নুরুল আলম (৪৫)। এসময় নিজের শরীরেও আগুন দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে উপজেলার উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের চরপক্ষী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা দগ্ধ অবস্থায় রহিমা ও আলমকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সদর হাসপাতালে তাদেরকে ভর্তি রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরমান হোসেন তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে রেফার করেন।

রহিমার শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ ও আলমের পা-হাত-বুকসহ শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

দগ্ধ রহিমা উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের গাইয়ারচর এলাকার আব্দুল হামিদের মেয়ে ও আলম একই ইউনিয়নের চরপক্ষী গ্রামে আব্দুর মান্নানের ছেলে। আলম পেশায় ব্যবসায়ী।

নুর আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগে আলম একই ইউনিয়নের গাইয়ারচর এলাকার রহিমাকে বিয়ে করে। এটি দু’জনরই দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। বিয়ের পর প্রায় ৯ লাখ টাকা ধারদেনা করে আলম চরে দোকাঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। সেই সুযোগে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের কানিবগার চরের কাদির সিকদারের সঙ্গে রহিমা পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ২০২৪ সালে ২২ জুলাই দোকান থেকে এসে তিনি কাদির ও রহিমাকে একা ঘরে দেখতে পায়। এ ঘটনায় পরে তিনি রায়পুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদেরকেও জানায়। কিন্তু ঘটনার কোন সুরাহা হয়নি। এরমধ্যে রহিমা তার পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আলম। এ ঘটনায় আলম তার স্ত্রী ও নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

নুর আলম বলেন, কোথাও কোন বিচার না পেয়ে প্রচন্ড রাগ হয়। এতে পেট্রোল কিনে বাড়িতে এসে দেখি কাদিরসহ তার লোকজন বসে আছে। এনিয়ে ঘরে ঢুকে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রাগে ক্ষোভে পেট্রোল ঢেলে রহিমার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছি। নিজের গায়েও আগুন লাগিয়েছি।

এ ঘটনায় কথা বলা যায়নি রহিমার সঙ্গে। তবে তার ভাগনী লুবনা আক্তার বলেন, পেট্রোল ঢেলে আমার খালার শরীরে আলম আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা আগুন নেভায়। এসময় ধস্তাধস্তি করায় খালার শরীরের আগুন আলমের গায়েও লাগে। তবে কি কারণে আগুন লাগানো হয়েছে তা বলেতে পারেনি সে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল বলেন, দগ্ধ অবস্থায় দুইজন রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এরমধ্যে নারীর শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ ও পুরুষের প্রায় ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এর আগেই দগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালেও পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫
Translate »

পরকীয়ার জেরে স্ত্রীর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন, পুড়লেন স্বামীও

আপডেট : ১১:০৭:০৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৮ মে ২০২৫

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পরকীয়া করার অভিযোগে রহিমা বেগম (৩০) নামে এক গৃহবধূর শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেন তার স্বামী নুরুল আলম (৪৫)। এসময় নিজের শরীরেও আগুন দেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে উপজেলার উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের চরপক্ষী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা দগ্ধ অবস্থায় রহিমা ও আলমকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সদর হাসপাতালে তাদেরকে ভর্তি রেখে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক আরমান হোসেন তাদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ণ ইউনিটে রেফার করেন।

রহিমার শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ ও আলমের পা-হাত-বুকসহ শরীরের ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

দগ্ধ রহিমা উত্তর চরআবাবিল ইউনিয়নের গাইয়ারচর এলাকার আব্দুল হামিদের মেয়ে ও আলম একই ইউনিয়নের চরপক্ষী গ্রামে আব্দুর মান্নানের ছেলে। আলম পেশায় ব্যবসায়ী।

নুর আলমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কয়েক বছর আগে আলম একই ইউনিয়নের গাইয়ারচর এলাকার রহিমাকে বিয়ে করে। এটি দু’জনরই দ্বিতীয় বিয়ে ছিল। বিয়ের পর প্রায় ৯ লাখ টাকা ধারদেনা করে আলম চরে দোকাঘর নির্মাণ করে ব্যবসা করছেন। সেই সুযোগে দক্ষিণ চরবংশী ইউনিয়নের চরকাছিয়া গ্রামের কানিবগার চরের কাদির সিকদারের সঙ্গে রহিমা পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়ে। ২০২৪ সালে ২২ জুলাই দোকান থেকে এসে তিনি কাদির ও রহিমাকে একা ঘরে দেখতে পায়। এ ঘটনায় পরে তিনি রায়পুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদেরকেও জানায়। কিন্তু ঘটনার কোন সুরাহা হয়নি। এরমধ্যে রহিমা তার পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে অবাধে মেলামেশা শুরু করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে আলম। এ ঘটনায় আলম তার স্ত্রী ও নিজের শরীরে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা আগুন নিভিয়ে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে।

নুর আলম বলেন, কোথাও কোন বিচার না পেয়ে প্রচন্ড রাগ হয়। এতে পেট্রোল কিনে বাড়িতে এসে দেখি কাদিরসহ তার লোকজন বসে আছে। এনিয়ে ঘরে ঢুকে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে রাগে ক্ষোভে পেট্রোল ঢেলে রহিমার গায়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছি। নিজের গায়েও আগুন লাগিয়েছি।

এ ঘটনায় কথা বলা যায়নি রহিমার সঙ্গে। তবে তার ভাগনী লুবনা আক্তার বলেন, পেট্রোল ঢেলে আমার খালার শরীরে আলম আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে স্থানীয়রা আগুন নেভায়। এসময় ধস্তাধস্তি করায় খালার শরীরের আগুন আলমের গায়েও লাগে। তবে কি কারণে আগুন লাগানো হয়েছে তা বলেতে পারেনি সে।

সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল বলেন, দগ্ধ অবস্থায় দুইজন রোগীকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। এরমধ্যে নারীর শরীরের প্রায় ৫০ শতাংশ ও পুরুষের প্রায় ৩০ শতাংশ দগ্ধ হয়। তাদেরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এর আগেই দগ্ধদের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালেও পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।