নির্যাতন নিপীড়ন সত্ত্বেও রাজপথে অবিচল তৃণমূলের আস্থার প্রতীক-মির্জা মোস্তফা জামান

হামলা, মামলা, কারাবরণ আর নিপীড়ন কোনো কিছুই দমাতে পারেনি তাঁকে। বরং প্রতিটি আঘাতে আরও শাণিত ও দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছেন তিনি। সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপির রাজনীতিতে এমনই এক লড়াকু ও পরীক্ষিত মুখের নাম মির্জা মোস্তফা জামান। দলের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে থেকে তিনি কেবল কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নই করছেন না, বরং নিজের কারাভোগের অভিজ্ঞতা ও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের আগলে রেখেছেন পরম মমতায়। তাঁর নেতৃত্ব এখন জেলার রাজনীতিতে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।
মরহুম পিতা মির্জা মোরাদুজ্জামানের জাতীয়তাবাদী আদর্শকে বুকে ধারণ করে রাজনীতিতে হাতেখড়ি মির্জা মোস্তফা জামানের। ২০০১ সালে জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ২০০২ সাল থেকে টানা প্রায় এক দশক সভাপতির দায়িত্ব পালন করে তিনি নিজের নেতৃত্বের জাত চিনিয়েছেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের নির্বাহী কমিটির সিনিয়র সদস্য হিসেবেও কাজ করেন। ২০১৭ সালে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতা দলের সংকটকালীন মুহূর্তে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
মির্জা মোস্তফা জামানের রাজনৈতিক জীবনের এক বড় অংশ কেটেছে রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের ছায়ায়। এখন পর্যন্ত তাঁর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়েছে ৪০টি রাজনৈতিক মামলা, যার ৩৫টি এখনো বিচারাধীন। ২০০৭ সালের লগি-বৈঠা হামলা পরবর্তী পরিস্থিতি, ২০১৪ সালের নির্বাচনবিরোধী আন্দোলন এবং ২০২২ সালে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনসহ বিভিন্ন সময়ে তিনি বারবার কারাবরণ করেছেন।
কারাগারে থাকাকালীন তাঁর ওপর চালানো শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ রয়েছে। তবে কারাগারের এই দিনগুলোই তাঁকে নেতাকর্মীদের আরও কাছে নিয়ে এসেছে। কারামুক্ত হয়ে তিনি নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দলের কাজে।
এ বিষয়ে মির্জা মোস্তফা জামান বলেন, হামলা, মামলা আর কারাগার আমাদের মতো রাজনৈতিক কর্মীদের জন্য একটি দ্বিতীয় ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকার নির্যাতন করে ভেবেছে আমাদের আদর্শ থেকে বিচ্যুত করবে, কিন্তু প্রতিটি নিপীড়ন আমার এবং আমার কর্মীদের মনোবলকে ইস্পাতকঠিন করেছে। কারাগারের নির্জন কক্ষে বসে আমি সাধারণ কর্মী ও দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষের ভালোবাসা গভীরভাবে উপলব্ধি করেছি। এই ভালোবাসাই আমার সবচেয়ে বড় শক্তি।
দলের নেতাকর্মীরা জানান, মির্জা মোস্তফা জামান কেবল একজন নেতা নন, তিনি একজন অভিভাবক। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে তিনি জেলার প্রতিটি ইউনিটের কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখেন। কোনো কর্মী অসুস্থ হলে বা আইনি জটিলতায় পড়লে তিনি ব্যক্তিগতভাবে খোঁজখবর নেন এবং পাশে দাঁড়ান। তাঁর এই মানবিক গুণাবলী তাঁকে সাধারণ কর্মীদের কাছে বিপুল জনপ্রিয় করে তুলেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তৃণমূল কর্মী বলেন, মোস্তফা ভাই আমাদের শুধু নেতা নন, তিনি আমাদের ছায়া। বহুবার দেখেছি, পুলিশি হয়রানির ভয়ে যখন অনেকে পিছিয়ে গেছে, তখন তিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। জেলে থাকা অবস্থায়ও তিনি আমাদের পরিবারের খোঁজখবর নিয়েছেন। তাঁর মতো নেতা আছেন বলেই আমরা এখনো মাঠে থাকার সাহস পাই।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সরাসরি নির্দেশনায় পরিচালিত সাম্প্রতিক আন্দোলনগুলোতে, বিশেষ করে ২০২৩ সালের জুলাই আন্দোলন ও ঢাকা মহাসমাবেশে তাঁর ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। শত প্রতিকূলতার মাঝেও কর্মীদের সংগঠিত করে রাজপথে তাঁর সরব উপস্থিতি দলের জন্য অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করেছে।
কেবল রাজনৈতিক মঞ্চেই নয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনেও মির্জা মোস্তফা জামানের পদচারণা উল্লেখ করার মতো। সিরাজগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমি, রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, নজরুল একাডেমি এবং চেম্বার অব কমার্সসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে তাঁর সম্পৃক্ততা তাঁকে একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
শিক্ষাগত জীবনে এম.এ ও এল.এল.বি ডিগ্রিধারী এবং ব্যক্তিগত জীবনে দুই সন্তানের জনক এই নেতা তাঁর কর্ম ও সংগ্রামের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জের রাজনীতিতে এক অবিচল স্তম্ভ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে আগামী দিনে সিরাজগঞ্জ জেলা বিএনপি আরও শক্তিশালী ও সুসংগঠিত হবে এমনটাই প্রত্যাশা দলের তৃণমূল থেকে শীর্ষ পর্যায়ের সকল নেতাকর্মীর।























