London ০৪:৫৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
রাজশাহীতে করোনা সনাক্ত আখাউড়ায় প্রবাসীর বাড়িতে সংঘটিত চাঞ্চল্যকর চুরির রহস্য উদঘাটন, ২১ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উদ্ধার – পুলিশের অভিযানে আটক ১ মরহুম মীর্জা আব্দুল জব্বার বাবু স্মৃতি ফুটবল প্রীতি ম্যাচে অনুষ্ঠিত কালিয়াকৈরে উপজেলা ও পৌর বিএনপির নবগঠিত আহ্বায়ক কমিটিকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ মিছিল সিরাজগঞ্জে আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘর ও গর্ভবতী কার্ড প্রদানের কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ সলঙ্গায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাক দুর্ঘটনায় কিশোর নিহত-চালক আহত দুর্গাপুরে সীমান্ত এলাকা থেকে ১১০ বোতল ভারতীয় মদ জব্দ বিয়ের দাবিতে হিন্দু প্রেমিকের বাড়িতে মুসলিম নারী সিরাজগঞ্জে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন নিহত। নুরুল হক নুরকে অবরুদ্ধের প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গণ অধিকার পরিষদের বিক্ষোভ ও সমাবেশ

তবু ঝুঁকি নিয়ে জ্বালানি তেল খালাস

গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে ট্যাংকার ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ থেকে তেল খালাসের সময় বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হনফাইল ছবি

সাগরে বড় ট্যাংকার থেকে পাইপের মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাসের জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। দুই মাস আগে এই প্রকল্পের কাজ শেষও হয়েছে। তবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় জ্বালানি সরবরাহ শুরু হয়নি। এখনো সনাতন পদ্ধতিতে ছোট ট্যাংকারে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সময় ও খরচের পাশাপাশি ঝুঁকি বাড়ছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) তেল পরিবহনের ট্যাংকার ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ থেকে তেল খালাসের সময় বিস্ফোরণ থেকে আগুনের ঘটনায় তিনজন নিহত হন। এ ঘটনা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল খালাসের প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও চালু না হওয়ার বিষয়টি আবার সামনে এনেছে। দুর্ঘটনার পর গঠিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনেও এই প্রকল্প দ্রুত চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে গভীর সাগরে ভাসমান মুরিং (বিশেষায়িত বয়া) বসানো হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক হয়ে আবার পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে।

আগস্টে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ

তেল খালাসে খরচ ও সময় সাশ্রয় করতে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ বা ভাসমান জেটি নির্মাণের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট। এরপর চার দফা মেয়াদ বাড়ে। আর ব্যয় ৫ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৮ হাজার ২৯৮ কোটিতে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে (জিটুজি) চুক্তির ভিত্তিতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।

প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে গভীর সাগরে ভাসমান মুরিং (বিশেষায়িত বয়া) বসানো হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক হয়ে আবার পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাম্পিং স্টেশন, তিনটি করে অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল ট্যাংক, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর নির্মাণ করা হয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, নির্মাণকাজ শেষে গত বছরের জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো সাগরের তলদেশে পাইপলাইনে তেল খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন জাহাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পারায় তেল খালাসের সংযোগকারী ভাসমান পাইপ ছিঁড়ে যায়। এরপর চীন থেকে টাগবোট এনে ওই বছরের ডিসেম্বরে আবারও পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি তেল খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সফলভাবে ওই কার্যক্রম শেষ হয়েছিল।

সনাতন পদ্ধতিতে সাগরে বড় জাহাজ থেকে ছোট ট্যাংকারে প্রথমে তেল স্থানান্তর করা হয়। এরপর ছোট ট্যাংকার জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৩৮ বছরের পুরোনো দুটি ট্যাংকারের মাধ্যমে তেল পরিবহন ও খালাসের কাজ করা হয়।

পাইপে তেল খালাস শুরু না হওয়ার বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শরীফ হাসনাত প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণকাজ শেষে প্রকল্পটি বিপিসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজ বুঝে নেওয়ার পর গত ৮ আগস্ট নির্মাণ (ইপিসি) ঠিকাদারকে সনদ প্রদান করা হয়েছে। এখন বিপিসিই পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদার নিয়োগ করবে।

দেরিতে কাজ শুরু ও ব্যয় বাড়ার বিষয়ে মো. শরীফ হাসনাত বলেন, প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর একনেকের সভায় অনুমোদন পায়। এক বছর পর দাতা সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়। এরপর প্রকল্পের নকশা, কারিগরি ও প্রকৌশল দিক যাচাই-বাছাই করা, ঋণচুক্তিসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে গিয়ে তিন বছর সময় লেগেছে। অবশ্য প্রকল্পের শুরুর দিকে মেয়াদ ছিল তিন বছর। এরপর ধাপে ধাপে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

অন্যদিকে শুরুর চুক্তিমূল্যের পরিবর্তন, জমির মূল্যবৃদ্ধি, নকশা পরিবর্তন করে মাতারবাড়ী চ্যানেল অংশে পাইপলাইন গভীরে স্থাপন করা, ডলার–সংকটসহ বেশ কিছু কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

শেষ হলেও প্রকল্প চালুর সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা

এই প্রকল্পের নির্মাণ (ইপিসি) ঠিকাদার ছিল চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি)। প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদার হিসেবে সিপিপিইসিকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে গিয়েছিল। তবে সরকারের পটপরিবর্তনের পর নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, প্রকল্পটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি স্থগিত করা হয়েছে। এর পরিবর্তে সরকারি ক্রয়নীতি (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস বা পিপিআর) অনুযায়ী ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে। এ জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই পরামর্শ অনুযায়ী ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

মো. আমিন উল আহসান বলেন, নির্মাণ ঠিকাদার চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ করেছে। তারা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ওয়াকিবহাল। এ কারণে প্রাথমিকভাবে পরিচালনার দায়িত্ব তাদের দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি হয়নি। এখন নতুন করে আবার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এতে কত দিন সময় লাগবে, তা নিশ্চিত করে এখনই বলা যাচ্ছে না।

একটি ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর ঝুঁকির বিষয় নিয়ে পুরোনো আলোচনা আবার শুরু হয়। কারণ, ট্যাংকার দুটিই পুরোনো। এ ঘটনায় গঠিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের তদন্ত প্রতিবেদনেও ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে। কমিটি একগুচ্ছ সুপারিশও দিয়েছে।

সনাতন পদ্ধতিতে ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকল্প চালু হলে এক লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার থেকে তেল খালাসে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। যেটি এখন সনাতন পদ্ধতিতে ১০-১১ দিন সময় লাগছে।

সনাতন পদ্ধতিতে সাগরে বড় জাহাজ থেকে ছোট ট্যাংকারে প্রথমে তেল স্থানান্তর করা হয়। এরপর ছোট ট্যাংকার জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৩৮ বছরের পুরোনো দুটি ট্যাংকারের মাধ্যমে তেল পরিবহন ও খালাসের কাজ করা হয়। গত সপ্তাহে একটি ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর ঝুঁকির বিষয় নিয়ে পুরোনো আলোচনা আবার শুরু হয়। কারণ, ট্যাংকার দুটিই পুরোনো। এ ঘটনায় গঠিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের তদন্ত প্রতিবেদনেও ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে। কমিটি একগুচ্ছ সুপারিশও দিয়েছে।

উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো তেলবাহী সব ট্যাংকারের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাইয়ের জন্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। জাহাজ ও জেটিতে দাহ্যবস্তু যথাযথ নিয়ম মেনে রাখা।

বিপিসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল খালাস করা হচ্ছে। জেটি ও ট্যাংকারে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। গ্যাস চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থাপনাও নেই। প্রকল্প চালু হলে ঝুঁকি কমে যেত। তবে ঠিকাদার নিয়োগে এখন আটকে আছে প্রকল্পটি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৪২:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪
৭১
Translate »

তবু ঝুঁকি নিয়ে জ্বালানি তেল খালাস

আপডেট : ০৪:৪২:১০ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৭ অক্টোবর ২০২৪

গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দরে ট্যাংকার ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ থেকে তেল খালাসের সময় বিস্ফোরণে তিনজন নিহত হনফাইল ছবি

সাগরে বড় ট্যাংকার থেকে পাইপের মাধ্যমে জ্বালানি তেল খালাসের জন্য একটি প্রকল্প নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। দুই মাস আগে এই প্রকল্পের কাজ শেষও হয়েছে। তবে পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ঠিকাদার নিয়োগ না হওয়ায় জ্বালানি সরবরাহ শুরু হয়নি। এখনো সনাতন পদ্ধতিতে ছোট ট্যাংকারে তেল সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে সময় ও খরচের পাশাপাশি ঝুঁকি বাড়ছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের (বিএসসি) তেল পরিবহনের ট্যাংকার ‘এমটি বাংলার জ্যোতি’ থেকে তেল খালাসের সময় বিস্ফোরণ থেকে আগুনের ঘটনায় তিনজন নিহত হন। এ ঘটনা পাইপলাইনে জ্বালানি তেল খালাসের প্রকল্প শেষ হওয়ার পরও চালু না হওয়ার বিষয়টি আবার সামনে এনেছে। দুর্ঘটনার পর গঠিত বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের তদন্ত কমিটির প্রাথমিক প্রতিবেদনেও এই প্রকল্প দ্রুত চালু করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে গভীর সাগরে ভাসমান মুরিং (বিশেষায়িত বয়া) বসানো হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক হয়ে আবার পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে।

আগস্টে শেষ হয় প্রকল্পের কাজ

তেল খালাসে খরচ ও সময় সাশ্রয় করতে ‘সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং উইথ ডাবল পাইপলাইন’ বা ভাসমান জেটি নির্মাণের এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের ৩০ আগস্ট। এরপর চার দফা মেয়াদ বাড়ে। আর ব্যয় ৫ হাজার কোটি থেকে বেড়ে ৮ হাজার ২৯৮ কোটিতে উন্নীত হয়। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে (জিটুজি) চুক্তির ভিত্তিতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছিল। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) পক্ষে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)।

প্রকল্পের আওতায় মহেশখালী দ্বীপের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশে গভীর সাগরে ভাসমান মুরিং (বিশেষায়িত বয়া) বসানো হয়েছে। সেখান থেকে সাগরের তলদেশ দিয়ে মহেশখালী স্টোরেজ ট্যাংক হয়ে আবার পতেঙ্গার ইস্টার্ন রিফাইনারি পর্যন্ত ১১০ কিলোমিটার পাইপলাইন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া পাম্পিং স্টেশন, তিনটি করে অপরিশোধিত তেল ও ডিজেল ট্যাংক, বুস্টার পাম্প, জেনারেটর নির্মাণ করা হয়েছে।

বিপিসি সূত্র জানায়, নির্মাণকাজ শেষে গত বছরের জুলাইয়ে প্রথমবারের মতো সাগরের তলদেশে পাইপলাইনে তেল খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। তখন জাহাজের ভারসাম্য ঠিক রাখতে না পারায় তেল খালাসের সংযোগকারী ভাসমান পাইপ ছিঁড়ে যায়। এরপর চীন থেকে টাগবোট এনে ওই বছরের ডিসেম্বরে আবারও পরীক্ষামূলকভাবে জ্বালানি তেল খালাসের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সফলভাবে ওই কার্যক্রম শেষ হয়েছিল।

সনাতন পদ্ধতিতে সাগরে বড় জাহাজ থেকে ছোট ট্যাংকারে প্রথমে তেল স্থানান্তর করা হয়। এরপর ছোট ট্যাংকার জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৩৮ বছরের পুরোনো দুটি ট্যাংকারের মাধ্যমে তেল পরিবহন ও খালাসের কাজ করা হয়।

পাইপে তেল খালাস শুরু না হওয়ার বিষয়ে প্রকল্পটির পরিচালক (পিডি) ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শরীফ হাসনাত প্রথম আলোকে বলেন, নির্মাণকাজ শেষে প্রকল্পটি বিপিসিকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজ বুঝে নেওয়ার পর গত ৮ আগস্ট নির্মাণ (ইপিসি) ঠিকাদারকে সনদ প্রদান করা হয়েছে। এখন বিপিসিই পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদার নিয়োগ করবে।

দেরিতে কাজ শুরু ও ব্যয় বাড়ার বিষয়ে মো. শরীফ হাসনাত বলেন, প্রকল্পটি ২০১৫ সালের ৮ ডিসেম্বর একনেকের সভায় অনুমোদন পায়। এক বছর পর দাতা সংস্থার সঙ্গে বাণিজ্যিক চুক্তি সই হয়। এরপর প্রকল্পের নকশা, কারিগরি ও প্রকৌশল দিক যাচাই-বাছাই করা, ঋণচুক্তিসহ যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করতে গিয়ে তিন বছর সময় লেগেছে। অবশ্য প্রকল্পের শুরুর দিকে মেয়াদ ছিল তিন বছর। এরপর ধাপে ধাপে চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়।

অন্যদিকে শুরুর চুক্তিমূল্যের পরিবর্তন, জমির মূল্যবৃদ্ধি, নকশা পরিবর্তন করে মাতারবাড়ী চ্যানেল অংশে পাইপলাইন গভীরে স্থাপন করা, ডলার–সংকটসহ বেশ কিছু কারণে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

শেষ হলেও প্রকল্প চালুর সময় নিয়ে অনিশ্চয়তা

এই প্রকল্পের নির্মাণ (ইপিসি) ঠিকাদার ছিল চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড (সিপিপিইসি)। প্রকল্পের পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদার হিসেবে সিপিপিইসিকে নিয়োগ দেওয়ার কথা ছিল। এ বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা এগিয়ে গিয়েছিল। তবে সরকারের পটপরিবর্তনের পর নতুন করে প্রক্রিয়া শুরু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান বলেন, প্রকল্পটি বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের আওতায় প্রক্রিয়াকরণ করা হয়েছিল। তবে বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি স্থগিত করা হয়েছে। এর পরিবর্তে সরকারি ক্রয়নীতি (পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস বা পিপিআর) অনুযায়ী ঠিকাদার নিয়োগ দিতে হবে। এ জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ চাওয়া হয়েছে। শিগগিরই পরামর্শ অনুযায়ী ঠিকাদার নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হবে।

মো. আমিন উল আহসান বলেন, নির্মাণ ঠিকাদার চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন এই প্রকল্পের নির্মাণকাজ করেছে। তারা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে ওয়াকিবহাল। এ কারণে প্রাথমিকভাবে পরিচালনার দায়িত্ব তাদের দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। কিন্তু চুক্তি হয়নি। এখন নতুন করে আবার প্রক্রিয়া শুরু হবে। এতে কত দিন সময় লাগবে, তা নিশ্চিত করে এখনই বলা যাচ্ছে না।

একটি ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর ঝুঁকির বিষয় নিয়ে পুরোনো আলোচনা আবার শুরু হয়। কারণ, ট্যাংকার দুটিই পুরোনো। এ ঘটনায় গঠিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের তদন্ত প্রতিবেদনেও ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে। কমিটি একগুচ্ছ সুপারিশও দিয়েছে।

সনাতন পদ্ধতিতে ঝুঁকি বাড়ছে

প্রকল্প চালু হলে এক লাখ মেট্রিক টন জ্বালানি তেলবাহী ট্যাংকার থেকে তেল খালাসে ২৪ ঘণ্টা সময় লাগত। যেটি এখন সনাতন পদ্ধতিতে ১০-১১ দিন সময় লাগছে।

সনাতন পদ্ধতিতে সাগরে বড় জাহাজ থেকে ছোট ট্যাংকারে প্রথমে তেল স্থানান্তর করা হয়। এরপর ছোট ট্যাংকার জেটিতে এনে পাইপের মাধ্যমে তেল খালাস করা হয়। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের ৩৮ বছরের পুরোনো দুটি ট্যাংকারের মাধ্যমে তেল পরিবহন ও খালাসের কাজ করা হয়। গত সপ্তাহে একটি ট্যাংকারে বিস্ফোরণের পর ঝুঁকির বিষয় নিয়ে পুরোনো আলোচনা আবার শুরু হয়। কারণ, ট্যাংকার দুটিই পুরোনো। এ ঘটনায় গঠিত ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের তদন্ত প্রতিবেদনেও ঝুঁকির বিষয়টি উঠে এসেছে। কমিটি একগুচ্ছ সুপারিশও দিয়েছে।

উল্লেখযোগ্য সুপারিশ হলো তেলবাহী সব ট্যাংকারের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা যাচাইয়ের জন্য তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে নিরীক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা। জাহাজ ও জেটিতে দাহ্যবস্তু যথাযথ নিয়ম মেনে রাখা।

বিপিসির দুজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ পদ্ধতিতে জ্বালানি তেল খালাস করা হচ্ছে। জেটি ও ট্যাংকারে পর্যাপ্ত অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। গ্যাস চিহ্নিতকরণ ব্যবস্থাপনাও নেই। প্রকল্প চালু হলে ঝুঁকি কমে যেত। তবে ঠিকাদার নিয়োগে এখন আটকে আছে প্রকল্পটি।