London ০৩:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ২৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ট্রাম্পের ‘ট্রাইফ্যাক্টা’ কি সম্ভব

ডোনাল্ড ট্রাম্পছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি মাত্র দুই সপ্তাহ। এখন পর্যন্ত জনমত জরিপে কোনো পরিষ্কার বিজয়ীর নাম উঠে আসেনি। সোমবার (২১ অক্টোবর) ওয়াশিংটন পোস্ট–এ প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ অনুসারে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন ৪৭: ৪৭ শতাংশ। যে সাতটি অমীমাংসিত (ব্যাটলগ্রাউন্ড) অঙ্গরাজ্যের কথা আমরা বারবার বলেছি, সেখানেও অবস্থা কার্যত অপরিবর্তিত। একটি অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে ট্রাম্প, চারটিতে এগিয়ে কমলা, একটিতে ফলাফল ‘টাই’, অর্থাৎ দুজনেই সমান–সমান; কিন্তু সব ক্ষেত্রেই ব্যবধানের মাত্রা অতি সামান্য, চূড়ান্ত ফল যেকোনো দিকেই হেলে পড়তে পারে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের হিসাব এখনো পরিষ্কার না হলেও সিনেট নিয়ে তেমন কোনো ধোঁয়াশা নেই। খুব নাটকীয় কিছু না ঘটলে এবারের নির্বাচনে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে রিপাবলিকানদের হাতে। বর্তমানে ৫১-৪৯ আসনের ব্যবধানে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন ডেমোক্র্যাটরা। তাঁদের মধ্যে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার মধ্যপন্থী জো ম্যানশিন ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না। ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী জিম জাস্টিসের জয়ের সম্ভাবনা; জরিপকারীদের হিসাবে ৯৯ শতাংশ। বিপদের মুখে রয়েছেন মন্টানার ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর জন টেস্টার, তাঁর বিরুদ্ধে রিপাবলিকান টিম শিহির জয়ের সম্ভাবনা ৭৪ শতাংশ।

মিশিগান ও ওহাইওতেও সিনেট আসন হারাতে পারেন ডেমোক্র্যাটরা। মিশিগানে ডেমোক্র্যাটদের ভাগ্য জড়িয়ে আছে কমলার ভাগ্যের সঙ্গে। এখানে মুসলিম ও আরব অসন্তোষের কারণে তিনি বিপদে আছেন। কমলার ভাগ্য বিপর্যয় হলে মিশিগানে ডেমোক্র্যাট সিনেট প্রার্থী এলিসা স্লটকিনের একই দশা হতে পারে। স্লটকিন নিজে বলেছেন, মিশিগানে তাঁর দল এই মুহূর্তে ‘জলের নিচে’। ওহাইওর মধ্যপন্থী সিনেটর শ্যারড ব্রাউনের অবস্থাও তথৈবচ।

প্রেসিডেন্ট ও সিনেট নির্বাচনের ফলাফল প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের মোট ভোটের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। জাতীয় পর্যায়ে জনমতে যে দল বা দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী স্বস্তিকর ব্যবধানে এগিয়ে, কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই তাদের ভালো করার কথা। অর্থাৎ কমলা যদি জনমতে ৫ বা ৭ শতাংশে এগিয়ে থাকতেন, তাহলে মোটামুটি আস্থার সঙ্গে বলা যেত, তিনি জিতবেন এবং তাঁর জয়ের প্রভাবে সিনেটেও তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টি সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে।

একই কথা অবশ্য প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ে বলা যাবে না। এখানে ভোটের ফলাফল নির্ভর করবে স্থানীয় ভোটারদের সিদ্ধান্তের ওপর। একই অঙ্গরাজ্যের একাংশে ডেমোক্র্যাট, অন্য অংশে রিপাবলিকান প্রভাব থাকা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। যেমন নিউইয়র্কে প্রতিনিধি পরিষদে মোট ২৬টি আসন রয়েছে, যার অধিকাংশ শহুরে ও মিশ্র বর্ণের এলাকা হওয়ায় সেখানে ডেমোক্রেটিক সমর্থন প্রায় নিরঙ্কুশ; কিন্তু এই অঙ্গরাজ্যের গ্রামীণ, কৃষিপ্রধান অঞ্চলে পাঁচ-ছয়টি আসন রয়েছে, যেখানে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের একটি বড় অংশ রক্ষণশীল ও খ্রিষ্টীয় ভাবধারায় প্রভাবিত। ফলে তাঁদের ভোটে এসব আসনে রিপাবলিকানদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।

উইসকনসিনে গত সোমবার নির্বাচনী প্রচারে কমলা হ্যারিস

উইসকনসিনে গত সোমবার নির্বাচনী প্রচারে কমলা হ্যারিসছবি: এএফপি

গত সপ্তাহে আমি রিপাবলিকান প্রভাবাধীন হিসেবে বিবেচিত নিউইয়র্কের কয়েকটি কাউন্টিতে ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলাম। কোন দল বা প্রার্থী কেমন করছে তা বোঝার একটা উপায় হলো—কোন আঙিনায় কার নামফলক পোঁতা হয়েছে, তার হিসাব নেওয়া। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এমন এলাকা বাদ দিলে এসব এলাকার খুব কম জায়গাতেই কমলা হ্যারিসের প্রচারের কোনো ‘ইয়ার্ড সাইন’ আমার নজরে এসেছে।

একই অবস্থা ক্যালিফোর্নিয়ায়। এখানে পাম স্প্রিংস, অরেঞ্জ কাউন্টি ও সেন্ট্রাল ভ্যালির তিন বা চারটি আসনে রিপাবলিকানদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় হিস্পানিক ভোটারদের প্রাধান্য, যাঁরা অনেকেই তুলনামূলকভাবে অধিক রক্ষণশীল। তাঁরাও রিপাবলিকান দল ও ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছেন, সে কথার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অন্য কথায়, প্রবল রকম ‘নীল’ বা ডেমোক্রেটিক পার্টি হিসেবে পরিচিত এই দুই অঙ্গরাজ্যই হয়তো ‘লাল’ বা রিপাবলিকানদের ভাগ্যের দরজা খুলে দেবে।

ফ্লোরিডায় লাতিন সম্প্রদায়ের ভোটারদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প

ফ্লোরিডায় লাতিন সম্প্রদায়ের ভোটারদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পছবি: রয়টার্স

মজার ব্যাপার হলো নিজেদের গা বাঁচাতে বিপদগ্রস্ত সিনেটর বা কংগ্রেস সদস্য—তা তারা রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট যা–ই হোন, তাঁদের নিজ দলের ঘোষিত অবস্থান থেকে সম্মানজনক দূরত্বে রাখার চেষ্টা করছেন। মন ঠিক করে ওঠেননি এমন ডেমোক্র্যাটদের কাছে টানতে রিপাবলিকান প্রার্থীরা ট্রাম্পের বা নিজ দলের নাম ভুলেও মুখে আনছেন না। একইভাবে রিপাবলিকান ভোটারদের কাছে নিজের ‘ইমেজ’ কিছুটা নমনীয় করতে ডেমোক্রেটিক পার্টির কোনো কোনো প্রার্থী কমলার নাম মুখে আনা বাদ দিয়েছেন।

এই রণকৌশলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দলীয় প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা বিভিন্ন প্রশ্নে নিজেদের ‘স্বাতন্ত্র্য’ অবস্থানের কথা ভোটারদের জানাতে চান। এতে যদি দু-চারটে অতিরিক্ত ভোট পাওয়া যায়। নিউইয়র্কের গ্রামীণ ও কম শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা গর্ভপাত ও অভিবাসনবিরোধী। ফলে ভোট পেতে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রার্থীরাই নিজেদের গর্ভপাত ও অভিবাসনবিরোধী হিসেবে প্রমাণে ব্যস্ত। আবার ক্যালিফোর্নিয়ায় রিপাবলিকান প্রার্থীরা নিজেদের ট্রাম্পের তুলনায় অনেক নমনীয় ও মধ্যপন্থী প্রমাণে ব্যস্ত। এই রণকৌশল যে কাজে দেয়, তার প্রমাণ আমরা নিউইয়র্কে দেখেছি। এখানে বাইডেন বেশ বড় ব্যবধানে জিতেছেন এমন একাধিক আসনে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নেন ‘মধ্যপন্থী’ রিপাবলিকানরা। এবারেও সেই একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাম্প যদি সামান্য ব্যবধানেও হোয়াইট হাউস জিতে নেন, তার প্রভাবে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ দুটিই রিপাবলিকানদের কবজায় যাওয়ার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্য কথায়, সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিটি কেন্দ্রেই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ হতে পারে। আর এটি হবে ট্রাম্পের ‘ট্রাইফ্যাক্টা’।

এখানেই ভয়। এই ট্রাইফ্যাক্টার প্রভাবে ট্রাম্পকে ঠেকানোর আর কেউ থাকবে না। এমনকি শেষ আশা যে সুপ্রিম কোর্ট, সেখানেও তাঁর সমর্থকে ঠাসা। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, তিনি এক দিনের জন্য হলেও ‘ডিক্টেটর’ হতে চান। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এবং সব বিরুদ্ধতা ঠেকাতে প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবে, এমন কথাও তিনি বলেছেন। মুখে বলেননি কিন্তু আমরা অনুমান করতে পারি, নির্বাচিত হলে প্রথম দিনই তাঁর বিরুদ্ধে এখনো বহাল রয়েছে, এমন সব মামলা তিনি খালাসের নির্দেশ দেবেন। পাশাপাশি মামলা ঠুকবেন সেই সব ডেমোক্র্যাটের বিরুদ্ধে, যাঁরা তাঁর অভিশংসনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

একজন ভাষ্যকার এমন সম্ভাব্য চিত্রকে ‘অভাবনীয় এক গজব’ বলে বর্ণনা করেছেন। এই গজব ঠেকানোর একটাই পথ—ব্যালটে ট্রাম্প ও তাঁর দলকে পরাস্ত করা।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:৫৬:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪
২৪
Translate »

ট্রাম্পের ‘ট্রাইফ্যাক্টা’ কি সম্ভব

আপডেট : ০৩:৫৬:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪

ডোনাল্ড ট্রাম্পছবি: এএফপি

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের বাকি মাত্র দুই সপ্তাহ। এখন পর্যন্ত জনমত জরিপে কোনো পরিষ্কার বিজয়ীর নাম উঠে আসেনি। সোমবার (২১ অক্টোবর) ওয়াশিংটন পোস্ট–এ প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ অনুসারে কমলা হ্যারিস ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন ৪৭: ৪৭ শতাংশ। যে সাতটি অমীমাংসিত (ব্যাটলগ্রাউন্ড) অঙ্গরাজ্যের কথা আমরা বারবার বলেছি, সেখানেও অবস্থা কার্যত অপরিবর্তিত। একটি অঙ্গরাজ্যে এগিয়ে ট্রাম্প, চারটিতে এগিয়ে কমলা, একটিতে ফলাফল ‘টাই’, অর্থাৎ দুজনেই সমান–সমান; কিন্তু সব ক্ষেত্রেই ব্যবধানের মাত্রা অতি সামান্য, চূড়ান্ত ফল যেকোনো দিকেই হেলে পড়তে পারে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের হিসাব এখনো পরিষ্কার না হলেও সিনেট নিয়ে তেমন কোনো ধোঁয়াশা নেই। খুব নাটকীয় কিছু না ঘটলে এবারের নির্বাচনে সিনেটের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে রিপাবলিকানদের হাতে। বর্তমানে ৫১-৪৯ আসনের ব্যবধানে নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন ডেমোক্র্যাটরা। তাঁদের মধ্যে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার মধ্যপন্থী জো ম্যানশিন ভোটে দাঁড়াচ্ছেন না। ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক হিসেবে পরিচিত এই অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী জিম জাস্টিসের জয়ের সম্ভাবনা; জরিপকারীদের হিসাবে ৯৯ শতাংশ। বিপদের মুখে রয়েছেন মন্টানার ডেমোক্রেটিক পার্টির সিনেটর জন টেস্টার, তাঁর বিরুদ্ধে রিপাবলিকান টিম শিহির জয়ের সম্ভাবনা ৭৪ শতাংশ।

মিশিগান ও ওহাইওতেও সিনেট আসন হারাতে পারেন ডেমোক্র্যাটরা। মিশিগানে ডেমোক্র্যাটদের ভাগ্য জড়িয়ে আছে কমলার ভাগ্যের সঙ্গে। এখানে মুসলিম ও আরব অসন্তোষের কারণে তিনি বিপদে আছেন। কমলার ভাগ্য বিপর্যয় হলে মিশিগানে ডেমোক্র্যাট সিনেট প্রার্থী এলিসা স্লটকিনের একই দশা হতে পারে। স্লটকিন নিজে বলেছেন, মিশিগানে তাঁর দল এই মুহূর্তে ‘জলের নিচে’। ওহাইওর মধ্যপন্থী সিনেটর শ্যারড ব্রাউনের অবস্থাও তথৈবচ।

প্রেসিডেন্ট ও সিনেট নির্বাচনের ফলাফল প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের মোট ভোটের ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়। জাতীয় পর্যায়ে জনমতে যে দল বা দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী স্বস্তিকর ব্যবধানে এগিয়ে, কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই তাদের ভালো করার কথা। অর্থাৎ কমলা যদি জনমতে ৫ বা ৭ শতাংশে এগিয়ে থাকতেন, তাহলে মোটামুটি আস্থার সঙ্গে বলা যেত, তিনি জিতবেন এবং তাঁর জয়ের প্রভাবে সিনেটেও তাঁর দল ডেমোক্রেটিক পার্টি সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে।

একই কথা অবশ্য প্রতিনিধি পরিষদ নিয়ে বলা যাবে না। এখানে ভোটের ফলাফল নির্ভর করবে স্থানীয় ভোটারদের সিদ্ধান্তের ওপর। একই অঙ্গরাজ্যের একাংশে ডেমোক্র্যাট, অন্য অংশে রিপাবলিকান প্রভাব থাকা মোটেও অস্বাভাবিক নয়। যেমন নিউইয়র্কে প্রতিনিধি পরিষদে মোট ২৬টি আসন রয়েছে, যার অধিকাংশ শহুরে ও মিশ্র বর্ণের এলাকা হওয়ায় সেখানে ডেমোক্রেটিক সমর্থন প্রায় নিরঙ্কুশ; কিন্তু এই অঙ্গরাজ্যের গ্রামীণ, কৃষিপ্রধান অঞ্চলে পাঁচ-ছয়টি আসন রয়েছে, যেখানে শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের একটি বড় অংশ রক্ষণশীল ও খ্রিষ্টীয় ভাবধারায় প্রভাবিত। ফলে তাঁদের ভোটে এসব আসনে রিপাবলিকানদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে।

উইসকনসিনে গত সোমবার নির্বাচনী প্রচারে কমলা হ্যারিস

উইসকনসিনে গত সোমবার নির্বাচনী প্রচারে কমলা হ্যারিসছবি: এএফপি

গত সপ্তাহে আমি রিপাবলিকান প্রভাবাধীন হিসেবে বিবেচিত নিউইয়র্কের কয়েকটি কাউন্টিতে ভ্রমণের সুযোগ পেয়েছিলাম। কোন দল বা প্রার্থী কেমন করছে তা বোঝার একটা উপায় হলো—কোন আঙিনায় কার নামফলক পোঁতা হয়েছে, তার হিসাব নেওয়া। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে এমন এলাকা বাদ দিলে এসব এলাকার খুব কম জায়গাতেই কমলা হ্যারিসের প্রচারের কোনো ‘ইয়ার্ড সাইন’ আমার নজরে এসেছে।

একই অবস্থা ক্যালিফোর্নিয়ায়। এখানে পাম স্প্রিংস, অরেঞ্জ কাউন্টি ও সেন্ট্রাল ভ্যালির তিন বা চারটি আসনে রিপাবলিকানদের জেতার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কোনো নির্বাচনী এলাকায় হিস্পানিক ভোটারদের প্রাধান্য, যাঁরা অনেকেই তুলনামূলকভাবে অধিক রক্ষণশীল। তাঁরাও রিপাবলিকান দল ও ট্রাম্পের দিকে ঝুঁকছেন, সে কথার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অন্য কথায়, প্রবল রকম ‘নীল’ বা ডেমোক্রেটিক পার্টি হিসেবে পরিচিত এই দুই অঙ্গরাজ্যই হয়তো ‘লাল’ বা রিপাবলিকানদের ভাগ্যের দরজা খুলে দেবে।

ফ্লোরিডায় লাতিন সম্প্রদায়ের ভোটারদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্প

ফ্লোরিডায় লাতিন সম্প্রদায়ের ভোটারদের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পছবি: রয়টার্স

মজার ব্যাপার হলো নিজেদের গা বাঁচাতে বিপদগ্রস্ত সিনেটর বা কংগ্রেস সদস্য—তা তারা রিপাবলিকান বা ডেমোক্র্যাট যা–ই হোন, তাঁদের নিজ দলের ঘোষিত অবস্থান থেকে সম্মানজনক দূরত্বে রাখার চেষ্টা করছেন। মন ঠিক করে ওঠেননি এমন ডেমোক্র্যাটদের কাছে টানতে রিপাবলিকান প্রার্থীরা ট্রাম্পের বা নিজ দলের নাম ভুলেও মুখে আনছেন না। একইভাবে রিপাবলিকান ভোটারদের কাছে নিজের ‘ইমেজ’ কিছুটা নমনীয় করতে ডেমোক্রেটিক পার্টির কোনো কোনো প্রার্থী কমলার নাম মুখে আনা বাদ দিয়েছেন।

এই রণকৌশলের উদ্দেশ্য হচ্ছে, দলীয় প্রার্থী হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা বিভিন্ন প্রশ্নে নিজেদের ‘স্বাতন্ত্র্য’ অবস্থানের কথা ভোটারদের জানাতে চান। এতে যদি দু-চারটে অতিরিক্ত ভোট পাওয়া যায়। নিউইয়র্কের গ্রামীণ ও কম শিক্ষিত শ্বেতাঙ্গ ভোটাররা গর্ভপাত ও অভিবাসনবিরোধী। ফলে ভোট পেতে ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান উভয় দলের প্রার্থীরাই নিজেদের গর্ভপাত ও অভিবাসনবিরোধী হিসেবে প্রমাণে ব্যস্ত। আবার ক্যালিফোর্নিয়ায় রিপাবলিকান প্রার্থীরা নিজেদের ট্রাম্পের তুলনায় অনেক নমনীয় ও মধ্যপন্থী প্রমাণে ব্যস্ত। এই রণকৌশল যে কাজে দেয়, তার প্রমাণ আমরা নিউইয়র্কে দেখেছি। এখানে বাইডেন বেশ বড় ব্যবধানে জিতেছেন এমন একাধিক আসনে ২০২২ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয় ছিনিয়ে নেন ‘মধ্যপন্থী’ রিপাবলিকানরা। এবারেও সেই একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

ট্রাম্প যদি সামান্য ব্যবধানেও হোয়াইট হাউস জিতে নেন, তার প্রভাবে সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ দুটিই রিপাবলিকানদের কবজায় যাওয়ার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেওয়া যায় না। অন্য কথায়, সে ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রক্ষমতার প্রতিটি কেন্দ্রেই রিপাবলিকানদের নিয়ন্ত্রণ নিরঙ্কুশ হতে পারে। আর এটি হবে ট্রাম্পের ‘ট্রাইফ্যাক্টা’।

এখানেই ভয়। এই ট্রাইফ্যাক্টার প্রভাবে ট্রাম্পকে ঠেকানোর আর কেউ থাকবে না। এমনকি শেষ আশা যে সুপ্রিম কোর্ট, সেখানেও তাঁর সমর্থকে ঠাসা। ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন, তিনি এক দিনের জন্য হলেও ‘ডিক্টেটর’ হতে চান। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এবং সব বিরুদ্ধতা ঠেকাতে প্রয়োজনে সামরিক বাহিনী ব্যবহার করবে, এমন কথাও তিনি বলেছেন। মুখে বলেননি কিন্তু আমরা অনুমান করতে পারি, নির্বাচিত হলে প্রথম দিনই তাঁর বিরুদ্ধে এখনো বহাল রয়েছে, এমন সব মামলা তিনি খালাসের নির্দেশ দেবেন। পাশাপাশি মামলা ঠুকবেন সেই সব ডেমোক্র্যাটের বিরুদ্ধে, যাঁরা তাঁর অভিশংসনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন।

একজন ভাষ্যকার এমন সম্ভাব্য চিত্রকে ‘অভাবনীয় এক গজব’ বলে বর্ণনা করেছেন। এই গজব ঠেকানোর একটাই পথ—ব্যালটে ট্রাম্প ও তাঁর দলকে পরাস্ত করা।