ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল যুক্তরাষ্ট্র, রাস্তায় হাজারো মানুষ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ জানাতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে এসে বিক্ষোভ করেছে। স্থানীয় সময় শনিবার (১৯ এপ্রিল) এ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। খবর বিবিসির।
“৫০৫০১” নামে পরিচিত এই বিক্ষোভ, যার অর্থ “৫০ রাজ্যে ৫০ বিক্ষোভ, একটি আন্দোলন”—এই বিক্ষোভগুলো আয়োজন করা হয়েছিল আমেরিকান বিপ্লবী যুদ্ধ শুরু হওয়ার ২৫০তম বার্ষিকী উপলক্ষে।
হোয়াইট হাউস, টেসলা শোরুম ও বিভিন্ন শহরের কেন্দ্রস্থলে সমবেত বিক্ষোভকারীরা নানা দাবি ও অভিযোগ তুলে ধরেন। অনেকেই কিলমার আব্রেগো গার্সিয়াকে ফিরিয়ে আনার দাবি জানান, যাকে ভুলবশত এল সালভাদরে নির্বাসিত করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক বিক্ষোভের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এপ্রিলের শুরুতে “হ্যান্ডস অফ” নামে হওয়া বিক্ষোভগুলোয় বিপুলসংখ্যক মানুষ অংশ নেন। সাম্প্রতিক জরিপগুলো ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা হ্রাস পাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছে।
শনিবারের বিক্ষোভে ট্রাম্পের বিভিন্ন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানানো হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘ডিপার্টমেন্ট অব গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি’ (ডিওজিই) নামের একটি প্রকল্প, যার মাধ্যমে সরকারি খরচ ও চাকরি কমানো হচ্ছে। এ ছাড়া, গার্সিয়াকে ফেরত আনার ক্ষেত্রে প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তাও ছিল প্রতিবাদের অন্যতম বিষয়।
গিয়াদ এলগেন্ডি সিএনএনকে বলেন, তিনি হোয়াইট হাউসের সামনে বিক্ষোভে যোগ দিয়েছেন কিলমার গার্সিয়ার বিতাড়নের প্রতিবাদে। তার মতে, ট্রাম্প চাইলে এল সালভাদরের ওপর কূটনৈতিক চাপ দিয়ে তাকে ফিরিয়ে আনতে পারতেন।
বিক্ষোভগুলো সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণ ছিল। তবে কংগ্রেসম্যান সুহাস সুব্রামানিয়াম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও পোস্ট করেন, যেখানে একজন ব্যক্তি ট্রাম্পের পোস্টার হাতে জনতার মধ্য দিয়ে এগিয়ে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
বিক্ষোভকারীদের অনেকের হাতে ছিল “নো কিংস” লেখা প্ল্যাকার্ড, যা ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মার্কিন বিপ্লবের স্মরণে প্রদর্শন করা হয়।
ম্যাসাচুসেটসে লেক্সিংটন ও কনকর্ডের যুদ্ধ এবং পল রিভিয়ারের ঐতিহাসিক ঘোড়ায় চড়ে বার্তা পৌঁছে দেওয়ার ঘটনাকে স্মরণ করে হওয়া উৎসবে অনুরূপ বার্তা দেখা যায়। শনিবার বোস্টনেও একটি ৫০৫০১ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়।
বোস্টনে উপস্থিত থমাস ব্যাসফোর্ড অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে বলেন, “এটি আমেরিকার স্বাধীনতার জন্য খুবই বিপজ্জনক সময়। আমি চাইছিলাম আমার নাতিরা জানুক যে, মাঝে মাঝে স্বাধীনতা রক্ষায় সংগ্রাম করতে হয়।”
গ্যালাপের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের প্রথম কোয়ার্টারে ৪৫ শতাংশ ভোটার তার কার্যক্রমকে সমর্থন করছেন, যা তার আগের প্রশাসনের একই সময়ের চেয়ে কিছুটা বেশি (৪১ শতাংশ) হলেও এখনও ঐতিহাসিক গড় (৬০ শতাংশ) থেকে অনেকটাই কম।
রয়টার্স/ইপসোসের এক জরিপে দেখা গেছে, ট্রাম্পের সামগ্রিক অনুমোদনের হার ৪৭ শতাংশ থেকে কমে ৪৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অর্থনীতির ক্ষেত্রে তার অনুমোদন হার ৩৭ শতাংশ, যা অভিষেকের সময় ছিল ৪২ শতাংশ।
এপ্রিলের শুরুতে দেশের ৫০টি অঙ্গরাজ্যের এক হাজার ২০০টিরও বেশি স্থানে হওয়া বিশাল প্রতিবাদ ছিল ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার পর যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বড় গণবিক্ষোভ। সেগুলো শনিবারের চেয়েও বড় পরিসরে সংঘটিত হয়।