London ০৯:৩০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

চীন-তাইওয়ান পুনর্মিলন কেউ ঠেকাতে পারবে না

নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘তাইওয়ান প্রণালির উভয় প্রান্তে থাকা চীনা জনগণ একই পরিবারের অংশ। আমাদের রক্তের
সম্পর্ক কেউ ছিন্ন করতে পারবে না এবং মাতৃভূমির পুনর্মিলনের ঐতিহাসিক প্রবণতাকে
কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নববর্ষের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ
দেওয়ার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাইওয়ানকে হুমকি দিয়ে এমন দাবি করেন।
ধির্ঘদিন ধরে বেইজিং দাবি করে আসছে যে, তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ দাবির
পক্ষে দেশটি আকাশ ও সমুদ্রপথে সামরিক মহড়া চালিয়ে দৃশ্যমান শক্তিমত্তা প্রদর্শন
করেছে।প্রেসিডেন্ট সির এই বক্তব্য এমন সময়ে এল, যার মাত্র তিন সপ্তাহ পর ডোনাল্ড
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।বেইজিং ও তাইপে দুটি ভিন্নধর্মী
জীবনধারার প্রতিনিধিত্ব করে। তাইওয়ান গণতান্ত্রিক দেশ এবং চীন একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র।
সাম্প্রতিক সময়ে বেইজিং তাইপের ওপর চাপ বাড়িয়েছে এবং দ্বীপরাষ্ট্রটিকে বিশ্বের বাকি
অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।তাইওয়ানে গত মে
মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষে লাই চিং-তের ক্ষমতায় আসার পর চীন দ্বীপদেশটিকে ঘিরে
তিন দফায় বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এই নির্বাচনে ক্ষুব্ধ হয়ে বেইজিং
জানিয়েছে, তাইওয়ানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের
পথ বেছে নেবে। ডিসেম্বরের শুরুতে পরিচালিত সর্বশেষ সামরিক মহড়াটি তাইওয়ানের
কর্মকর্তাদের মতে সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল। এ ছাড়া, চীন বারবার
তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।তাইওয়ান বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিরোধের বিষয়। তাইওয়ান এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র এবং ওয়াশিংটন
তাইপের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। গণতন্ত্রকে কমিউনিজমের ওপর প্রাধান্য দেওয়া
যুক্তরাষ্ট্রের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত।চীন এবং তাইওয়ান তাইওয়ান প্রণালি দ্বারা পৃথক, যা
দক্ষিণ চীন সাগরকে পূর্ব চীন সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লবের
আগে দেশটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল। তখন এটি ‘রিপাবলিক অব চায়না’
নামে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমান তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নাম এটি। ১৯১২ সালে মাঞ্চু
নেতৃত্বাধীন কিং রাজবংশ পতনের পর রিপাবলিক অব চায়না একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত
হয়।১৯১২ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত চীনে চারটি সরকার ছিল। ১৯১২ সালের অন্তর্বর্তী সরকার
, ১৯১২ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত সামরিক নেতৃত্বে বেইয়াং সরকার, ১৯২৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কুয়োমিনটাং পরিচালিত জাতীয়তাবাদী সরকার এবং ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত
সাংবিধানিক সরকার। সাংবিধানিক সরকারটি চীনের গৃহযুদ্ধে পরাজিত হয়। কমিউনিস্ট
পার্টি মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।১৯২০-এর
দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৩০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত কুয়োমিনটাং মূল চীনকে একত্রিত
করেছিল (যেখানে তিব্বত, পূর্ব তুর্কিস্তান প্রজাতন্ত্রের অংশ জিনজিয়াং এবং উত্তর কোরিয়া
সংলগ্ন ইনার মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার মধ্যবর্তী মাঞ্চুরিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল না)। রুশ-জাপান যুদ্ধের
ফলে ১৯০৫ সালে রাশিয়া মাঞ্চুরিয়ার দক্ষিণ অংশ জাপানের কাছে ছেড়ে দেয় এবং ১৯৩১
সালে জাপান পুরো মাঞ্চুরিয়া দখল করে। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান চীন আক্রমণ
করে।কুয়োমিনতাংয়ের নেতা চিয়াং কাইশেক ছিলেন রিপাবলিক অব চায়নার প্রেসিডেন্ট।
মাও সেতুংয়ের বিপ্লব তাদের তাইওয়ানে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। সেখানে ১৯৪৯ সালে তারা
নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে। জাতিসংঘ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চিয়াং কাইশেকের সরকারকে
চীনের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী আসনও
মূলত চিয়াং কাইশেকের রিপাবলিক অব চায়না (তাইওয়ান) পেয়েছিল।তাইওয়ান গণতান্ত্রিক
দেশ হলেও বিশ্বের অনেক দেশ চীনের চাপে তাইপের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে না।
১৯৪৯ সাল থেকে মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বাধীন চীন বর্তমানে সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে
পরিচালিত হচ্ছে।
Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:৩৬:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫
১২
Translate »

চীন-তাইওয়ান পুনর্মিলন কেউ ঠেকাতে পারবে না

আপডেট : ০৪:৩৬:২৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২ জানুয়ারী ২০২৫
‘তাইওয়ান প্রণালির উভয় প্রান্তে থাকা চীনা জনগণ একই পরিবারের অংশ। আমাদের রক্তের
সম্পর্ক কেউ ছিন্ন করতে পারবে না এবং মাতৃভূমির পুনর্মিলনের ঐতিহাসিক প্রবণতাকে
কেউ ঠেকাতে পারবে না।’ স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নববর্ষের প্রাক্কালে জাতির উদ্দেশে ভাষণ
দেওয়ার চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং তাইওয়ানকে হুমকি দিয়ে এমন দাবি করেন।
ধির্ঘদিন ধরে বেইজিং দাবি করে আসছে যে, তাইওয়ান চীনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এ দাবির
পক্ষে দেশটি আকাশ ও সমুদ্রপথে সামরিক মহড়া চালিয়ে দৃশ্যমান শক্তিমত্তা প্রদর্শন
করেছে।প্রেসিডেন্ট সির এই বক্তব্য এমন সময়ে এল, যার মাত্র তিন সপ্তাহ পর ডোনাল্ড
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন।বেইজিং ও তাইপে দুটি ভিন্নধর্মী
জীবনধারার প্রতিনিধিত্ব করে। তাইওয়ান গণতান্ত্রিক দেশ এবং চীন একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র।
সাম্প্রতিক সময়ে বেইজিং তাইপের ওপর চাপ বাড়িয়েছে এবং দ্বীপরাষ্ট্রটিকে বিশ্বের বাকি
অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে সম্ভাব্য সব ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।তাইওয়ানে গত মে
মাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষে লাই চিং-তের ক্ষমতায় আসার পর চীন দ্বীপদেশটিকে ঘিরে
তিন দফায় বড় ধরনের সামরিক মহড়া চালিয়েছে। এই নির্বাচনে ক্ষুব্ধ হয়ে বেইজিং
জানিয়েছে, তাইওয়ানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা প্রয়োজনে শক্তি প্রয়োগের
পথ বেছে নেবে। ডিসেম্বরের শুরুতে পরিচালিত সর্বশেষ সামরিক মহড়াটি তাইওয়ানের
কর্মকর্তাদের মতে সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ছিল। এ ছাড়া, চীন বারবার
তাইওয়ানের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।তাইওয়ান বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে একটি
গুরুত্বপূর্ণ বিরোধের বিষয়। তাইওয়ান এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র এবং ওয়াশিংটন
তাইপের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী। গণতন্ত্রকে কমিউনিজমের ওপর প্রাধান্য দেওয়া
যুক্তরাষ্ট্রের একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত।চীন এবং তাইওয়ান তাইওয়ান প্রণালি দ্বারা পৃথক, যা
দক্ষিণ চীন সাগরকে পূর্ব চীন সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। চীনে কমিউনিস্ট বিপ্লবের
আগে দেশটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ছিল। তখন এটি ‘রিপাবলিক অব চায়না’
নামে পরিচিত ছিল। তবে বর্তমান তাইওয়ানের আনুষ্ঠানিক নাম এটি। ১৯১২ সালে মাঞ্চু
নেতৃত্বাধীন কিং রাজবংশ পতনের পর রিপাবলিক অব চায়না একটি সার্বভৌম রাষ্ট্রে পরিণত
হয়।১৯১২ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত চীনে চারটি সরকার ছিল। ১৯১২ সালের অন্তর্বর্তী সরকার
, ১৯১২ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত সামরিক নেতৃত্বে বেইয়াং সরকার, ১৯২৫ থেকে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত কুয়োমিনটাং পরিচালিত জাতীয়তাবাদী সরকার এবং ১৯৪৮ থেকে ১৯৪৯ সাল পর্যন্ত
সাংবিধানিক সরকার। সাংবিধানিক সরকারটি চীনের গৃহযুদ্ধে পরাজিত হয়। কমিউনিস্ট
পার্টি মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বে বিপ্লবের মাধ্যমে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে।১৯২০-এর
দশকের মাঝামাঝি থেকে ১৯৩০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত কুয়োমিনটাং মূল চীনকে একত্রিত
করেছিল (যেখানে তিব্বত, পূর্ব তুর্কিস্তান প্রজাতন্ত্রের অংশ জিনজিয়াং এবং উত্তর কোরিয়া
সংলগ্ন ইনার মঙ্গোলিয়া ও রাশিয়ার মধ্যবর্তী মাঞ্চুরিয়া অন্তর্ভুক্ত ছিল না)। রুশ-জাপান যুদ্ধের
ফলে ১৯০৫ সালে রাশিয়া মাঞ্চুরিয়ার দক্ষিণ অংশ জাপানের কাছে ছেড়ে দেয় এবং ১৯৩১
সালে জাপান পুরো মাঞ্চুরিয়া দখল করে। পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান চীন আক্রমণ
করে।কুয়োমিনতাংয়ের নেতা চিয়াং কাইশেক ছিলেন রিপাবলিক অব চায়নার প্রেসিডেন্ট।
মাও সেতুংয়ের বিপ্লব তাদের তাইওয়ানে পালিয়ে যেতে বাধ্য করে। সেখানে ১৯৪৯ সালে তারা
নির্বাসিত সরকার প্রতিষ্ঠা করে। জাতিসংঘ ১৯৭১ সাল পর্যন্ত চিয়াং কাইশেকের সরকারকে
চীনের বৈধ সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী আসনও
মূলত চিয়াং কাইশেকের রিপাবলিক অব চায়না (তাইওয়ান) পেয়েছিল।তাইওয়ান গণতান্ত্রিক
দেশ হলেও বিশ্বের অনেক দেশ চীনের চাপে তাইপের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখে না।
১৯৪৯ সাল থেকে মাও সেতুংয়ের নেতৃত্বাধীন চীন বর্তমানে সি চিন পিংয়ের নেতৃত্বে
পরিচালিত হচ্ছে।