London ০১:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ জানুয়ারী ২০২৫, ১৭ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
খাদের কিনারা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্লে-অফে ম্যানসিটি দহগ্রাম সীমান্তে সেই কাঁটাতারের বেড়া ঘিরে আবারও বিএসএফের তৎপরতা সেই অভিনেত্রীর কাছে অবশেষে ক্ষমা চাইলেন বালডোনি পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন উপদেষ্টা নাহিদ-আসিফ যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রীবাহী প্লেনের সঙ্গে হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ, বহু হতাহতের শঙ্কা আইন পর্যালোচনায় একগুচ্ছ আলোচ্যসূচি নিয়ে আজ বসছে ইসি আটালান্টাকে প্লে-অফ খেলতে বাধ্য করলো বার্সা দ্য ইকোনমিস্টের প্রতিবেদন চীনের ডিপসিকের সাফল্যে কাঁপছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি বাজার দু:খ প্রকাশ করে সেই বিতর্কিত প্রবন্ধটি প্রত্যাহার করল শিবিরের ‘ছাত্র সংবাদ’ গুম ও আইনবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার চায় এইচআরডব্লিউ

চাকরির পিছনে না ছুটে কৃষি উদ্যোক্তায় সফল মৃণাল চন্দ্র পঙ্কজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ তরুন বা যুবকেরা লেখাপড়া শেষে চাকরির পিছনে ছুটাছুটি করতে একটা লম্বা সময় কাটিয়ে দেন। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুজি করে চাকরি না পেয়ে হতাশায় তাদের দিন কাটে। এরকমই পরিস্থিতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে সফল হয়েছেন লালমনিরহাটের মৃণাল চন্দ্র পঙ্কজ। মাত্র ৩৬ বছর বয়সী এই যুবক স্বল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন একজন কৃষি উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে দুই একর কৃষি জমিতে ড্রাগন ফল, আম, কমলার বাগানের পাশাপাশি (ভ্যানিলা) চাষেও সফলতা কুড়িয়েছেন। গত ৫ বছর ধরে গড়ে তোলা বাগান থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করেছেন তিনি।

কৃষি উদ্যোক্তা মৃণাল লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের খাতাপাড়া গ্রামের নরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সাত ভাই বোনের মধ্যে পঙ্কজ সবার ছোট। সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে রাজারহাটের মীর ইসমাইল ডিগ্রী কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে চাকরির পিছনে অনেক সময় ব্যয় করেছেন। কিন্তু চাকরি না পেয়ে একসময় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু তার এই হতাশা বেশি দিন ঠিকে থাকতে পারে নি। ইচ্ছে ছিল চাকরি না পেলে একজন উদ্যোক্তা হবেন। পরে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে কৃষি উদ্যোক্তাদের নানান প্রজেক্ট সম্পর্কে অবগত হয়ে স্বল্প পরিসরে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। এতেও যেন তার মন পরিতৃপ্ত হচ্ছিল না। এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গত চার বছর আগে নাটোরে এক উদ্যোক্তার ড্রাগন বাগান দেখতে যান। সেখানে তিনি একই বাগানে হরেক রকমের ফল দেখতে পান। অস্ট্রেলিয়ান জাতের কমলা , ড্রাগন ও বেদানা বাগান দেখে আরো অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেও আবারো ব্যাপক আকারে চাষের পরিকল্পনা করেন। তার নিজের ড্রাগন ফলের বাগানের আয় থেকে সঞ্চিত প্রায় ২ লাখ টাকা দিয়ে কমলা, আম ও ভ্যানিলা গাছ রোপন করেন। সাথী ফসল হিসেবে তার বাগানে ঠাঁই পেয়েছে বেদানা। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও অভিজ্ঞ কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে সেটি তার বাগানে কাজে লাগিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় দুই একর জায়গার উপর বিভিন্ন ফলজ গাছ লাগিয়ে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৩ লাখ টাকা আয় করেছেন। চলতি মৌসুমেও তিনি এ উপার্জিত আয়ের দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মৃণাল চন্দ্র রায় পঙ্কজের বাগানে বারোমাসি আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। রয়েছে কমলা বাগান, ড্রাগন, বেদানা, ভ্যানিলা। দেখা যায়, বাগানে বারোমাসি আমগুলোর বেশি ভাগই পেকে গেছে। ইতোমধ্যে তিনি আম বাজারজাত করা শুরু করেছেন। বাগানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক মজুরি খাটছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উৎসাহী তরুণ ও চাষিরা তার বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন ও পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে আম ও কমলা চাষে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। বাজারে ভেজাল সার ও কীটনাশকের দৌরাত্ম্য ও সিন্ডিকেট দূর করার দাবি জানান এই তরুন উদ্যোক্তা।

পঙ্কজ জানায়, বাজারে বারোমাসি আম ও কমলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করা নিয়ে চিন্তা হয়নি। ইতোমধ্যে বাগানে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছর প্রতি মণ আম ৮ থেকে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৫ লাখ টাকার আম ও কমলা বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, আগামীতে ২-৩ বিঘা জমিতে ভ্যানিলা বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অত্র এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানায়, উদ্যোক্তা পঙ্কজের ড্রাগন ফলের বাগানসহ অন্যান্য ফলের বাগানগুলো আমরা সরেজমিনে দেখে কার্যকারী পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, পঙ্কজের মত তরুন উদ্যোক্তাদের আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রত্যেকটি এলাকায় যদি এরকম উদ্যোক্তা তৈরি হয় তাহলে বেকারত্ব যেমন দূর হবে সেই সাথে কৃষি ক্ষেত্রেও তা সফলতা বয়ে আনবে।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইফুল আরিফিন জানান, পঙ্কজ একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি সমগ্র জেলার কৃষকদের জন্য উদাহরণ স্বরুপ। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, যে কেউ বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ করেও সফলতা অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে দেখে অনেক নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এ অঞ্চলে। এটি ইতিবাচক কৃষির উদাহরণ বহন করে বলেও মনে করেন এ কৃষিবিদ।

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১০:৪৯:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫
Translate »

চাকরির পিছনে না ছুটে কৃষি উদ্যোক্তায় সফল মৃণাল চন্দ্র পঙ্কজ

আপডেট : ১০:৪৯:৩২ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ জানুয়ারী ২০২৫

বর্তমান সমাজের বেশিরভাগ তরুন বা যুবকেরা লেখাপড়া শেষে চাকরির পিছনে ছুটাছুটি করতে একটা লম্বা সময় কাটিয়ে দেন। কিন্তু বিভিন্ন জায়গায় অনেক খোঁজাখুজি করে চাকরি না পেয়ে হতাশায় তাদের দিন কাটে। এরকমই পরিস্থিতিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে কৃষি উদ্যোক্তা হয়ে সফল হয়েছেন লালমনিরহাটের মৃণাল চন্দ্র পঙ্কজ। মাত্র ৩৬ বছর বয়সী এই যুবক স্বল্প সময়ের ব্যবধানে হয়ে উঠেছেন একজন কৃষি উদ্যোক্তা। ইতোমধ্যে দুই একর কৃষি জমিতে ড্রাগন ফল, আম, কমলার বাগানের পাশাপাশি (ভ্যানিলা) চাষেও সফলতা কুড়িয়েছেন। গত ৫ বছর ধরে গড়ে তোলা বাগান থেকে প্রায় ১৩ লক্ষ টাকারও বেশি উপার্জন করেছেন তিনি।

কৃষি উদ্যোক্তা মৃণাল লালমনিরহাট সদর উপজেলার পঞ্চগ্রাম ইউনিয়নের খাতাপাড়া গ্রামের নরেশ চন্দ্র রায়ের ছেলে। মধ্যবিত্ত পরিবারের সাত ভাই বোনের মধ্যে পঙ্কজ সবার ছোট। সংসারে আর্থিক অনটনের কারণে রাজারহাটের মীর ইসমাইল ডিগ্রী কলেজ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করে চাকরির পিছনে অনেক সময় ব্যয় করেছেন। কিন্তু চাকরি না পেয়ে একসময় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু তার এই হতাশা বেশি দিন ঠিকে থাকতে পারে নি। ইচ্ছে ছিল চাকরি না পেলে একজন উদ্যোক্তা হবেন। পরে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিভিন্ন ইউটিউব চ্যানেলে কৃষি উদ্যোক্তাদের নানান প্রজেক্ট সম্পর্কে অবগত হয়ে স্বল্প পরিসরে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু করেন। এতেও যেন তার মন পরিতৃপ্ত হচ্ছিল না। এই আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গত চার বছর আগে নাটোরে এক উদ্যোক্তার ড্রাগন বাগান দেখতে যান। সেখানে তিনি একই বাগানে হরেক রকমের ফল দেখতে পান। অস্ট্রেলিয়ান জাতের কমলা , ড্রাগন ও বেদানা বাগান দেখে আরো অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেও আবারো ব্যাপক আকারে চাষের পরিকল্পনা করেন। তার নিজের ড্রাগন ফলের বাগানের আয় থেকে সঞ্চিত প্রায় ২ লাখ টাকা দিয়ে কমলা, আম ও ভ্যানিলা গাছ রোপন করেন। সাথী ফসল হিসেবে তার বাগানে ঠাঁই পেয়েছে বেদানা। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ না থাকলেও অভিজ্ঞ কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে পরামর্শ ও ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জন করে সেটি তার বাগানে কাজে লাগিয়েছেন। এরপর তাকে আর ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় দুই একর জায়গার উপর বিভিন্ন ফলজ গাছ লাগিয়ে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ১৩ লাখ টাকা আয় করেছেন। চলতি মৌসুমেও তিনি এ উপার্জিত আয়ের দ্বিগুণ লাভের স্বপ্ন দেখছেন।

সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মৃণাল চন্দ্র রায় পঙ্কজের বাগানে বারোমাসি আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। রয়েছে কমলা বাগান, ড্রাগন, বেদানা, ভ্যানিলা। দেখা যায়, বাগানে বারোমাসি আমগুলোর বেশি ভাগই পেকে গেছে। ইতোমধ্যে তিনি আম বাজারজাত করা শুরু করেছেন। বাগানে প্রতিদিন ৪ থেকে ৫ জন শ্রমিক মজুরি খাটছেন। বিভিন্ন স্থান থেকে আসা উৎসাহী তরুণ ও চাষিরা তার বাগান দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন ও পরামর্শ নিচ্ছেন। তবে আম ও কমলা চাষে সার ও কীটনাশকের প্রয়োজন হয়। বাজারে ভেজাল সার ও কীটনাশকের দৌরাত্ম্য ও সিন্ডিকেট দূর করার দাবি জানান এই তরুন উদ্যোক্তা।

পঙ্কজ জানায়, বাজারে বারোমাসি আম ও কমলার ব্যাপক চাহিদা থাকায় বিক্রি করা নিয়ে চিন্তা হয়নি। ইতোমধ্যে বাগানে আড়াই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চলতি বছর প্রতি মণ আম ৮ থেকে ১১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব মিলিয়ে চলতি মৌসুমে ৫ লাখ টাকার আম ও কমলা বিক্রির আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

তিনি আরও জানান, আগামীতে ২-৩ বিঘা জমিতে ভ্যানিলা বাগান সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও রয়েছে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারলে নিজে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি অত্র এলাকার বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা খন্দকার সোহায়েল আহমেদ জানায়, উদ্যোক্তা পঙ্কজের ড্রাগন ফলের বাগানসহ অন্যান্য ফলের বাগানগুলো আমরা সরেজমিনে দেখে কার্যকারী পরামর্শ দিয়েছি। তিনি আরো বলেন, পঙ্কজের মত তরুন উদ্যোক্তাদের আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকি। প্রত্যেকটি এলাকায় যদি এরকম উদ্যোক্তা তৈরি হয় তাহলে বেকারত্ব যেমন দূর হবে সেই সাথে কৃষি ক্ষেত্রেও তা সফলতা বয়ে আনবে।

এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মোঃ সাইফুল আরিফিন জানান, পঙ্কজ একজন সফল কৃষি উদ্যোক্তা। তিনি সমগ্র জেলার কৃষকদের জন্য উদাহরণ স্বরুপ। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, যে কেউ বাণিজ্যিকভাবে কৃষিকাজ করেও সফলতা অর্জন করতে পারে। অন্যদিকে এই অঞ্চলের কৃষকদের জন্যও তিনি দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাকে দেখে অনেক নতুন নতুন কৃষি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে এ অঞ্চলে। এটি ইতিবাচক কৃষির উদাহরণ বহন করে বলেও মনে করেন এ কৃষিবিদ।