London ০৯:২১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গাজায় দুর্ভোগ বাড়াবে ইসরায়েলের ‘রূঢ় কৌশল’

অনলাইন ডেস্ক:

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা গত ৫ মে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। তারা ঘোষণা করেছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও সামরিক অভিযান ‘বিস্তৃত’ করা হবে এবং একইসঙ্গে নতুন ত্রাণ বিতরণ পরিকল্পনা চালু করা হবে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থিরা গাজা ভূখণ্ড স্থায়ীভাবে পুনর্দখলের পথ খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে করছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) বলছে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে হামাসের অবশিষ্ট শক্তিকে দমন করা সম্ভব হবে। তবে সমালোচকদের মতে, এতে গাজার সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও প্রাণহানির মাত্রা আরও বাড়বে।

ইসরায়েলের এই অবস্থান পরিবর্তন এমন সময়ে হলো যখন ১৩-১৬ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলো সফর করবেন এবং গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ

গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল গাজায় পূর্ণ অবরোধ জারি রেখেছে। খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুৎ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় পানিশোধন কেন্দ্র ও পাম্পগুলো কার্যকরভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হত্যাযজ্ঞের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে দীর্ঘতম অবরোধ। সামরিক দিক থেকে মার্চের শেষের দিকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর গাজা এক ধরনের অচলাবস্থায় রয়েছে।

মানবিক সহায়তা না থাকায় গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন ফিলিস্তিনিরা ও সাহায্য সংস্থাগুলো। সেখানে খাদ্যকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল।

অবস্থাগতভাবে, গাজার বাস্তবতা ভয়াবহ। দোকানগুলো খালি, বেকারি বন্ধ, কমিউনিটি কিচেনে প্রতিদিন একবেলার খাবারের জন্য হাজারও মানুষ ভিড় করছেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র ওলগা চেরেভকো জানিয়েছেন, ‘আমাদের প্রধান খাদ্যগুদাম ফাঁকা হয়ে গেছে।’ অন্য এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘পানি আমরা বারবার পুনর্ব্যবহার করি।’ পচা আবর্জনার পাশে তাঁবুতে মানুষ বসবাস করছে।

খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে, কিছু খাদ্যপণ্যের দাম ৭০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক বস্তা ময়দা যা আগে ৫০ শেকেল (১৪ ডলার) ছিল, এখন তা ১ হাজার ২০০ শেকেলে (৩৩০ ডলার) পৌঁছেছে। ২৫ এপ্রিল সংস্থাটি তাদের শেষ খাদ্য বিতরণ করেছে।

গাজার কৃষিজমিগুলো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, ৭৮ শতাংশ গ্রিনহাউজ ধ্বংস হয়ে গেছে, ৭২ শতাংশ মাছ ধরার নৌকা অকার্যকর এবং মাত্র এক শতাংশ মুরগি বেঁচে আছে। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫৭ জন অনাহারে মারা গেছে।

ত্রাণ নিয়ে নতুন পরিকল্পনা

এ অবস্থায় ইসরায়েল এক নতুন বিতরণ পরিকল্পনা আনছে, যাতে মার্কিন সমর্থন রয়েছে। গাজার কিছু এলাকায় ‘বিতরণ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হবে, যেখানে প্রতিটি পরিবার একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দুই সপ্তাহের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবে। এই কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা দেবে আইডিএফ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে মার্কিন ঠিকাদাররা (যাদের অনেকে ভাড়াটে সেনা)। জাতিসংঘসহ এনজিওগুলো একে বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করেছে।

এই পরিকল্পনায় হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির কীভাবে সহায়তা পাবে তা স্পষ্ট নয়। একটি অজ্ঞাত আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন এই সহায়তা কার্যক্রমে অর্থ দিচ্ছে, যার অর্থদাতাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১১:১১:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫
Translate »

গাজায় দুর্ভোগ বাড়াবে ইসরায়েলের ‘রূঢ় কৌশল’

আপডেট : ১১:১১:৩০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৬ মে ২০২৫

ইসরায়েলের মন্ত্রিসভা গত ৫ মে গাজা পরিস্থিতি নিয়ে তাদের অবস্থানে নাটকীয় পরিবর্তন এনেছে। তারা ঘোষণা করেছে, অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় আবারও সামরিক অভিযান ‘বিস্তৃত’ করা হবে এবং একইসঙ্গে নতুন ত্রাণ বিতরণ পরিকল্পনা চালু করা হবে। এর মাধ্যমে ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থিরা গাজা ভূখণ্ড স্থায়ীভাবে পুনর্দখলের পথ খুঁজে পাচ্ছে বলে মনে করছে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনী (আইডিএফ) বলছে, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে হামাসের অবশিষ্ট শক্তিকে দমন করা সম্ভব হবে। তবে সমালোচকদের মতে, এতে গাজার সাধারণ মানুষের দুঃখ-কষ্ট ও প্রাণহানির মাত্রা আরও বাড়বে।

ইসরায়েলের এই অবস্থান পরিবর্তন এমন সময়ে হলো যখন ১৩-১৬ মে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উপসাগরীয় দেশগুলো সফর করবেন এবং গাজা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।

গাজার পরিস্থিতি ভয়াবহ

গত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরায়েল গাজায় পূর্ণ অবরোধ জারি রেখেছে। খাদ্য, ওষুধ ও বিদ্যুৎ প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করায় পানিশোধন কেন্দ্র ও পাম্পগুলো কার্যকরভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। এটি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের হত্যাযজ্ঞের পর শুরু হওয়া যুদ্ধে দীর্ঘতম অবরোধ। সামরিক দিক থেকে মার্চের শেষের দিকে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর গাজা এক ধরনের অচলাবস্থায় রয়েছে।

মানবিক সহায়তা না থাকায় গাজায় দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা করছেন ফিলিস্তিনিরা ও সাহায্য সংস্থাগুলো। সেখানে খাদ্যকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল।

অবস্থাগতভাবে, গাজার বাস্তবতা ভয়াবহ। দোকানগুলো খালি, বেকারি বন্ধ, কমিউনিটি কিচেনে প্রতিদিন একবেলার খাবারের জন্য হাজারও মানুষ ভিড় করছেন। জাতিসংঘের মুখপাত্র ওলগা চেরেভকো জানিয়েছেন, ‘আমাদের প্রধান খাদ্যগুদাম ফাঁকা হয়ে গেছে।’ অন্য এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘পানি আমরা বারবার পুনর্ব্যবহার করি।’ পচা আবর্জনার পাশে তাঁবুতে মানুষ বসবাস করছে।

খাদ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থা বলছে, কিছু খাদ্যপণ্যের দাম ৭০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এক বস্তা ময়দা যা আগে ৫০ শেকেল (১৪ ডলার) ছিল, এখন তা ১ হাজার ২০০ শেকেলে (৩৩০ ডলার) পৌঁছেছে। ২৫ এপ্রিল সংস্থাটি তাদের শেষ খাদ্য বিতরণ করেছে।

গাজার কৃষিজমিগুলো ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে, ৭৮ শতাংশ গ্রিনহাউজ ধ্বংস হয়ে গেছে, ৭২ শতাংশ মাছ ধরার নৌকা অকার্যকর এবং মাত্র এক শতাংশ মুরগি বেঁচে আছে। শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ বলছে, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৫৭ জন অনাহারে মারা গেছে।

ত্রাণ নিয়ে নতুন পরিকল্পনা

এ অবস্থায় ইসরায়েল এক নতুন বিতরণ পরিকল্পনা আনছে, যাতে মার্কিন সমর্থন রয়েছে। গাজার কিছু এলাকায় ‘বিতরণ কেন্দ্র’ গড়ে তোলা হবে, যেখানে প্রতিটি পরিবার একজন প্রতিনিধি পাঠিয়ে দুই সপ্তাহের খাদ্য ও স্বাস্থ্যসামগ্রী সংগ্রহ করতে পারবে। এই কেন্দ্রগুলোর নিরাপত্তা দেবে আইডিএফ এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে মার্কিন ঠিকাদাররা (যাদের অনেকে ভাড়াটে সেনা)। জাতিসংঘসহ এনজিওগুলো একে বিপজ্জনক বলে আখ্যায়িত করেছে।

এই পরিকল্পনায় হাসপাতাল, শরণার্থী শিবির কীভাবে সহায়তা পাবে তা স্পষ্ট নয়। একটি অজ্ঞাত আন্তর্জাতিক ফাউন্ডেশন এই সহায়তা কার্যক্রমে অর্থ দিচ্ছে, যার অর্থদাতাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি।