London ০৯:১২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় একদিনে নিহত ৬৪

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অভিযানে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৪ জন এবং আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫১ হাজার। সেই সঙ্গে আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

গতকাল যারা নিহত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশিই গাজার প্রধান শহর গাজা সিটি এবং উত্তর গাজার বাসিন্দা। তবে গতকাল মধ্য,উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল— অর্থাৎ সর্বত্র ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী।

বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই দুই ঘাঁটি থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে সর্বশেষ এই হামলা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ফের জানিয়েছেন, ইসরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বদ্ধপরিকর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করা—ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এখন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে এগোচ্ছে।”

গতকাল শুক্রবার ছিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দিন গুড ফ্রাইডে। ইসরায়েলের ব্যাপক হামলার মধ্যেই স্থানীয় গির্জাগুলোতে অনাড়ম্বরহীনভাবে ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছেন গাজার খ্রিস্টানরা।

গাজার স্থানীয় একটি চার্চ থেকে ইহাব আয়াদ নামের এক ব্যক্তি আলজাজিরাকে বলেন, “বিগত বছরগুলোতে গুড ফ্রাইডের দিন আমরা সবাই পরিবার-পরিজনসহ গির্জায় আসতাম। সবার সঙ্গে সবার দেখা-সাক্ষাৎ হতো। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আসা-যাওয়া হতো।”

“কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি নেই। আমি নিজে আমার কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাইনি। কারণ দখলদার (ইসরায়েলি) বাহিনীর হামলায় আমার অধিকাংশ বন্ধু,প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।

জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত ১ মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক।

যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ ঘোষণা দিয়েছে যে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা হবে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও যুদ্ধবন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।

সূত্র : আলজাজিরা

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৫০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫
Translate »

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় একদিনে নিহত ৬৪

আপডেট : ০২:৫০:৪০ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের বিমান বাহিনীর অভিযানে গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে রাত পর্যন্ত নিহত হয়েছেন অন্তত ৬৪ জন এবং আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।

২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ। শুক্রবারের অভিযানের পর গত দেড় বছরে উপত্যকায় মোট নিহত ও আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫১ হাজার। সেই সঙ্গে আহতের সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ১ লাখ ১৭ হাজার জনে। এই নিহত এবং আহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

গতকাল যারা নিহত হয়েছেন, তাদের অধিকাংশিই গাজার প্রধান শহর গাজা সিটি এবং উত্তর গাজার বাসিন্দা। তবে গতকাল মধ্য,উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চল— অর্থাৎ সর্বত্র ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলের বিমানবাহিনী।

বর্তমানে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফার কাছে শাবৌর এবং তেল আস সুলতান এলাকায় ঘাঁটি গেড়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। সূত্রের বরাতে জানা গেছে, এই দুই ঘাঁটি থেকেই পরিচালনা করা হয়েছে সর্বশেষ এই হামলা।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ফের জানিয়েছেন, ইসরায়েল তার যুদ্ধের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বদ্ধপরিকর। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, “জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসকে পরাজিত করা—ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এখন চূড়ান্ত বিজয়ের পথে এগোচ্ছে।”

গতকাল শুক্রবার ছিল খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের পবিত্র দিন গুড ফ্রাইডে। ইসরায়েলের ব্যাপক হামলার মধ্যেই স্থানীয় গির্জাগুলোতে অনাড়ম্বরহীনভাবে ধর্মীয় আচার-আনুষ্ঠানিকতা পালন করেছেন গাজার খ্রিস্টানরা।

গাজার স্থানীয় একটি চার্চ থেকে ইহাব আয়াদ নামের এক ব্যক্তি আলজাজিরাকে বলেন, “বিগত বছরগুলোতে গুড ফ্রাইডের দিন আমরা সবাই পরিবার-পরিজনসহ গির্জায় আসতাম। সবার সঙ্গে সবার দেখা-সাক্ষাৎ হতো। প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে আসা-যাওয়া হতো।”

“কিন্তু এবার সেই পরিস্থিতি নেই। আমি নিজে আমার কোনো বন্ধু বা আত্মীয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাইনি। কারণ দখলদার (ইসরায়েলি) বাহিনীর হামলায় আমার অধিকাংশ বন্ধু,প্রতিবেশী ও আত্মীয়ের বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে।”

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের ভূখণ্ডে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা।

জিম্মিদের মুক্ত করতে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বাহিনী। ১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরায়েল। কিন্তু বিরতির দু’মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে আইডিএফ। দ্বিতীয় দফার এ অভিযানে গত ১ মাসে গাজায় নিহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন আরও বহুসংখ্যক।

যে ২৫১ জন জিম্মিকে হামাসের যোদ্ধারা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তাদের মধ্যে এখনও অন্তত ৩৫ জন জীবিত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ ঘোষণা দিয়েছে যে সামরিক অভিযানের মাধ্যমে তাদের উদ্ধার করা হবে।

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এ পর্যন্ত বেশ কয়েকবার গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে আহ্বান জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের আদালত নামে পরিচিত ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে (আইসিজে) ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও যুদ্ধবন্ধ করে জিম্মিদের মুক্তির ব্যাপারটিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন শুরু হয়েছে।

তবে নেতানিয়াহু স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, হামাসকে পুরোপুরি দুর্বল ও অকার্যকর করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা এই অভিযানের লক্ষ্য এবং লক্ষ্য পূরণ না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে গাজায়।

সূত্র : আলজাজিরা