London ০৪:৪৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫, ২৩ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক রাতে হয়ে গেলাম বাস্তুহারা: বাপ্পা মজুমদার

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলার সংগীত ভুবনের অন্যতম মেধাবী শিল্পী বাপ্পা মজুমদার। প্রশান্ত এই শিল্পীর শান্ত চরিত্র ধরা পড়ে তার সংগীতকর্মেও। সংগীতজ্ঞ বাবা বারীণ মজুমদারের সুযোগ্য সন্তান হিসেবে সংগীতে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন বাপ্পা। আজ (৩ মে) মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পারিবারিক একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন বাপ্পা। সেখানে তিনি লিখেছেন, এক রাতে হয়ে গেলাম বাস্তুহারা।

মায়ের স্মৃতিচারণ করে বাপ্পা মজুমদার লিখেছেন, ‘আমার ছোটবেলার সেই প্রিয় মিউজিক কলেজ থেকে যেদিন আমাদেরকে ফিল্মি স্টাইলে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল, সেই দিনটি আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে। বাবা মিউজিক কলেজের দোতলায়… এলোমেলো চুল… গায়ের সেই পরিচিত কোটটা নেই… টাইটা গলায় ঝুলছে… বাবা দোতলা থেকে চিৎকার করে আমাদের বলছেন… “তোমরা যাও… আমি আসছি…।” আর তখনকার আমি… সদ্য নার্সারিতে পড়ি…। একটা রিকশায় তুলে দেওয়া হলো আমাদের। মা ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছেন বাবার দিকে। দোতলা থেকে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে আমাদের ব্যবহৃত আসবাব আর সব কিছু। এক রাতে হয়ে গেলাম বাস্তুহারা!’

মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, দেশের একমাত্র সংগীত কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সংগীতাচার্য পণ্ডিত বারীণ মজুমদার। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি ১৯৮৪ সালে সরকারি হয়। বারীণ মজুমদারের উদ্যোগে কাকরাইলের মনোয়ারা কিন্ডার গার্টেন শ্রেণিকক্ষে এ প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে কলেজ অব মিউজিক নামে। শুরুতে অধ্যক্ষ ছিলেন বারীণ মজুমদার। পরে সেগুনবাগিচা, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, গ্রিন রোডসহ বিভিন্ন ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হয় সেটি। ১৯৯২ সালের শেষ দিকে কলেজটি আবার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব জমিতে ফিরে আসে।

বারীণ মজুমদারকে ওই কলেজ থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল। সেসময়ের স্মৃতি স্মরণ করে বাপ্পা লিখেছেন, ‘আমাদের আচমকা ঠিকানা হলো মগবাজারের একটি বাসায়। মেজদা, ফারুক কাকু আর বাবার কিছু ছাত্র-গুণগ্রাহীর সহায়তায়। বাবা সেই বাসায় আসার কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রেফতার হলেন মিথ্যা মামলায়। বাবা ফিরলেন ১৮ দিন পর। কাজকর্মহীন মানুষটি ভীষণ মানসিক যন্ত্রণায় হয়ে পড়লেন চরম হতাশ আর দিকহারা।’

পরিবারের ওই দুঃসময়ে হাল ধরেছিলেন বাপ্পার মা ইলা মজুমদার। বাপ্পা লিখেছেন, ‘মা দূর্গার মতো সব সামলে নিতে পা বাড়ালেন ইলা মজুমদার। সংসারটাকে বাঁচাতে মরণপর যুদ্ধে নামলেন সেই অতিমানবী। চাকরি নিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। সব যুদ্ধ জয় করলেন সেই মানুষটি। এক ভয়ংকর যুদ্ধে সব সামলে ধরলেন সংসারের হাল। আজ আমাদের অস্তিত্ব যদি টিকে থাকে, তার সর্বময় কৃতিত্ব আমার মায়ের, যার নাম ইলা মজুমদার। ইলা মজুমদার শুধু একটি নাম নয়, তিনি একজন উদাহরণ। তিনি শুধু একজন স্ত্রী বা মা নন বরং তার চেয়েও বড় একজন মানুষ, যিনি সবকিছু তুচ্ছ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি কতটা শক্তিশালী। তিনি একজন সুপার হিউম্যান। এবং আমি প্রাউডলি বলি, আমি ইলা মজুমদারের ছেলে।’

সংগীতচর্চা পরিবার থেকেই পেয়েছিলেন বাপ্পা মজুমদার। সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে দেশের প্রথম দ্বিসদদ্যের ব্যান্ড গঠন করেছিলেন তিনি। সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ সব গান। বর্তমানে সংগীতসফরে বিভিন্ন দেশ ঘুরছেন বাংলা গান নিয়ে। বাপ্পার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘পরী’।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:০৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫
Translate »

এক রাতে হয়ে গেলাম বাস্তুহারা: বাপ্পা মজুমদার

আপডেট : ১২:০৩:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৩ মে ২০২৫

বাংলার সংগীত ভুবনের অন্যতম মেধাবী শিল্পী বাপ্পা মজুমদার। প্রশান্ত এই শিল্পীর শান্ত চরিত্র ধরা পড়ে তার সংগীতকর্মেও। সংগীতজ্ঞ বাবা বারীণ মজুমদারের সুযোগ্য সন্তান হিসেবে সংগীতে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন বাপ্পা। আজ (৩ মে) মায়ের মৃত্যুবার্ষিকীতে তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পারিবারিক একটি ঘটনা তুলে ধরেছেন বাপ্পা। সেখানে তিনি লিখেছেন, এক রাতে হয়ে গেলাম বাস্তুহারা।

মায়ের স্মৃতিচারণ করে বাপ্পা মজুমদার লিখেছেন, ‘আমার ছোটবেলার সেই প্রিয় মিউজিক কলেজ থেকে যেদিন আমাদেরকে ফিল্মি স্টাইলে রাস্তায় ছুঁড়ে ফেলা হয়েছিল, সেই দিনটি আজও আমার স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে। বাবা মিউজিক কলেজের দোতলায়… এলোমেলো চুল… গায়ের সেই পরিচিত কোটটা নেই… টাইটা গলায় ঝুলছে… বাবা দোতলা থেকে চিৎকার করে আমাদের বলছেন… “তোমরা যাও… আমি আসছি…।” আর তখনকার আমি… সদ্য নার্সারিতে পড়ি…। একটা রিকশায় তুলে দেওয়া হলো আমাদের। মা ব্যাকুল চোখে তাকিয়ে আছেন বাবার দিকে। দোতলা থেকে ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে আমাদের ব্যবহৃত আসবাব আর সব কিছু। এক রাতে হয়ে গেলাম বাস্তুহারা!’

মনে করিয়ে দেওয়া দরকার, দেশের একমাত্র সংগীত কলেজটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন সংগীতাচার্য পণ্ডিত বারীণ মজুমদার। ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত কলেজটি ১৯৮৪ সালে সরকারি হয়। বারীণ মজুমদারের উদ্যোগে কাকরাইলের মনোয়ারা কিন্ডার গার্টেন শ্রেণিকক্ষে এ প্রতিষ্ঠান যাত্রা শুরু করে কলেজ অব মিউজিক নামে। শুরুতে অধ্যক্ষ ছিলেন বারীণ মজুমদার। পরে সেগুনবাগিচা, লালমাটিয়া, মোহাম্মদপুর, ধানমন্ডি, গ্রিন রোডসহ বিভিন্ন ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হয় সেটি। ১৯৯২ সালের শেষ দিকে কলেজটি আবার আগারগাঁওয়ে নিজস্ব জমিতে ফিরে আসে।

বারীণ মজুমদারকে ওই কলেজ থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল। সেসময়ের স্মৃতি স্মরণ করে বাপ্পা লিখেছেন, ‘আমাদের আচমকা ঠিকানা হলো মগবাজারের একটি বাসায়। মেজদা, ফারুক কাকু আর বাবার কিছু ছাত্র-গুণগ্রাহীর সহায়তায়। বাবা সেই বাসায় আসার কিছুক্ষণের মধ্যে গ্রেফতার হলেন মিথ্যা মামলায়। বাবা ফিরলেন ১৮ দিন পর। কাজকর্মহীন মানুষটি ভীষণ মানসিক যন্ত্রণায় হয়ে পড়লেন চরম হতাশ আর দিকহারা।’

পরিবারের ওই দুঃসময়ে হাল ধরেছিলেন বাপ্পার মা ইলা মজুমদার। বাপ্পা লিখেছেন, ‘মা দূর্গার মতো সব সামলে নিতে পা বাড়ালেন ইলা মজুমদার। সংসারটাকে বাঁচাতে মরণপর যুদ্ধে নামলেন সেই অতিমানবী। চাকরি নিলেন উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুলে। সব যুদ্ধ জয় করলেন সেই মানুষটি। এক ভয়ংকর যুদ্ধে সব সামলে ধরলেন সংসারের হাল। আজ আমাদের অস্তিত্ব যদি টিকে থাকে, তার সর্বময় কৃতিত্ব আমার মায়ের, যার নাম ইলা মজুমদার। ইলা মজুমদার শুধু একটি নাম নয়, তিনি একজন উদাহরণ। তিনি শুধু একজন স্ত্রী বা মা নন বরং তার চেয়েও বড় একজন মানুষ, যিনি সবকিছু তুচ্ছ করে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি কতটা শক্তিশালী। তিনি একজন সুপার হিউম্যান। এবং আমি প্রাউডলি বলি, আমি ইলা মজুমদারের ছেলে।’

সংগীতচর্চা পরিবার থেকেই পেয়েছিলেন বাপ্পা মজুমদার। সঞ্জীব চৌধুরীর সঙ্গে দেশের প্রথম দ্বিসদদ্যের ব্যান্ড গঠন করেছিলেন তিনি। সৃষ্টি করেছেন অসাধারণ সব গান। বর্তমানে সংগীতসফরে বিভিন্ন দেশ ঘুরছেন বাংলা গান নিয়ে। বাপ্পার জনপ্রিয় গানগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘পরী’।