এক বাগানে ৫ জাতের কুলের বাম্পার ফলন

এক সময় নারিকেল-সুপারির জন্য পরিচিত বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলায় এখন কুল চাষের নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত খুলেছে। এখানকার উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়ার কারণে দেশি-বিদেশি পাঁচ জাতের কুলের বাম্পার ফলন হচ্ছে। কুল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা, বাড়ছে স্থানীয়দের আগ্রহ। কৃষি বিভাগ জানালেন আগ্রহী চাষিদের সহযোগিতা দেওয়ার কথা।
বাগেরহাটে কচুয়া উপজেলার বিষখালী গ্রামের সুজন গোলদার। তিনি ১৬ বিঘা জমিতে ৫ জাতের কুল চাষ করেছেন। দূর থেকে দেখে তার বাগানকে ফুলের বাগান ভেবে ভুল করলে, অবাক হওয়ার কিছু নেই। কাঁচা-পাকা ফলের ভারে মাটিতে নুইয়ে পড়া কুল বাগানের এমন চোখ জুড়ানো দৃশ্য মুগ্ধ করার মতো। চার বছর আগে সুস্বাদু বলসুন্দরী কুল চাষের উদ্যোগ নিয়ে এখন স্বাবলম্বী তিনি।
সুজন প্রথম বছরে ৩০০ কুল গাছ রোপণ করে চাষে লাভবান হলে, পরের বছর থেকে আরও জমিতে কুল চাষ বাড়ায়। বর্তমানে তিনি ১৬ বিঘা জমিতে বলসুন্দরী, রেড আপেল, ভারত সুন্দরী, চায়না টক মিষ্টি ও কাশ্মিরি কুল চাষ করছেন। ১২ শ্রমিকের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যরা কুলগাছগুলো পরিচর্চা করে থাকেন। এবার প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ১ থেকে দেড় মন কুল সংগ্রহ করা হচ্ছে। কাঁচা পাকা ফলের ভারে মাটিতে নুইয়ে পড়া কুলের দৃশ্য মুগ্ধ করার মতো।
প্রতিদিন প্রায় কুল বাগান থেকে ১৫ থেকে ২০ মণ কুল তুলে বিভিন্ন হাট বাজারে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। তাকে দেখে এলাকার অনেক চাষি কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে কুল চাষের পরিধি আরও বাড়ানো হবে বলে জানান সফল এই চাষি। বর্তমানে ১৬ বিঘা জমিতে ৫ ধরনের কুলের চাষ করছেন তিনি। এ বছর তার বাগানে ২০০০ মণ কুল উৎপাদনের আশা করা যাচ্ছে।
কুলবাগানের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম বলেন, এই বাগানে কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। এমন সুন্দর ফলন দেখে আনন্দ লাগে। বাগানের কাজ আমার জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকালে উঠে গাছগুলোর সঠিক পরিচর্যা করি, যাতে ফলন ভালো হয়। এই বাগান শুধু আমার জীবিকা নয়, আনন্দের উৎসও। কুলের গাছগুলো যখন ফল দিয়ে ভরে ওঠে, তখন মনে হয় সব শ্রম সার্থক হয়েছে।
প্রতিবেশী শাহিন মোল্লা বলেন, সুজন ভাইয়ের কুল বাগান দেখে আমি নিজেও কুল চাষ শুরু করেছি। তার মতো বড় এবং সুস্বাদু ফলন পেতে চাই। তার বাগান দেখে যে উৎসাহ পেয়েছি, তাতে আমি নিশ্চিত সফল হব। এমনভাবে কাজ করলে নিজের খামারেও একদিন সফলতা আসবে।
কুল বাগান মালিক সুজন গোলদার বলেন, আমি একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করি। তবে শখের বসে চার বছর আগে ইউটিউবে একটি ভিডিও দেখে কুল চাষ শুরু করি। শুরুতে ৩০০ গাছ লাগিয়েছিলাম, কিন্তু ভালো ফলন পেয়ে অনুপ্রাণিত হয়ে পতিত জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কুল চাষ শুরু করি। এখন আমার বাগানে দেশি-বিদেশি পাঁচ জাতের কুল উৎপাদিত হচ্ছে। এই চাষ শুধু আমার জীবিকার মাধ্যম নয়, বরং এলাকার তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের নতুন দরজাও খুলে দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমি মনে করি, তরুণদের শুধু চাকরির পেছনে না ছুটে কৃষিকাজের মতো সম্ভাবনাময় খাতের দিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি মোবাইল ফোনে কেবল সময় নষ্ট করার যন্ত্র নয়। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে এটি জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে পারে। ইউটিউব দেখে কুল চাষ শুরু করার মাধ্যমে আমি তা প্রমাণ করেছি। যদি কেউ কুল চাষে আগ্রহী হয়, আমি সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত। সরকারের সহায়তা পেলে এই চাষকে আরও বড় পরিসরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এভাবেই আমরা কৃষিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারি।
কচুয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আকাশ বৈরাগী বলেন, সুজন গোলদার আমাদের প্রদর্শন চাষি। তিনি আমাদের এসএসসি পরিকল্পভুক্ত একজন কুল চাষি তিনি প্রায় পাঁচ জাতের কুল চাষ করেছেন এবং এক বছরই তিনি সফলতার মুখ দেখেছেন। তাকে দেখে অনেক চাষির উদ্বুদ্ধ হচ্ছে এবং চাষ শুরু করেছে। ভবিষ্যতে যদি কেউ চাষ করতে চায় আমরা তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করব। মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় বাজারে এসব কুলের চাহিদা অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।