উখিয়ায় রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে ঘরে ঢুকে সন্ত্রাসীদের গুলি, বাবা ও দুই সন্তান নিহত
![](https://londonbdtv.co.uk/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
কক্সবাজারের উখিয়ার আশ্রয়শিবির ফাইল ছবি
কক্সবাজারের উখিয়ার ময়নারঘোনা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১৭) রোহিঙ্গা পরিবারের ঘরে ঢুকে গুলি করে বাবা-ছেলে–মেয়েসহ তিনজনকে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। আজ সোমবার ভোরে আশ্রয়শিবিরের লালপাহাড়–সংলগ্ন এস-৪ ব্লকে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তিরা হলেন আহমেদ হোসেন (৬০), তাঁর ছেলে সৈয়দুল আমিন (২৮) ও মেয়ে আসমা বেগম (১৩)।
সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক পরিবারের তিনজন নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৪ এপিবিএন অধিনায়ক ও অতিরিক্ত জিআইজি মো. ইকবাল।
আশ্রয়শিবিরের রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে মো. ইকবাল বলেন, আজ ভোর ৫টার দিকে ১৫ থেকে ২০ জনের একটি সশস্ত্র দুর্বৃত্ত আশ্রয়শিবিরের লালপাহাড় এলাকার রোহিঙ্গা আহমেদ হোসেনের ঘরে ঢুকে গুলি চালায়। আহমেদ হোসেনসহ তাঁর দুই ছেলে–মেয়ে নিহত হন। সৈয়দুল আমিন দীর্ঘদিন ধরে আরসার সঙ্গে যুক্ত থেকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকায় এবং পূর্বশত্রুতার জেরে দুর্বৃত্তরা গুলি করে তাঁকে হত্যা করে। সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযার চালাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
ওই আশ্রয়শিবিরে ৪৭ হাজার রোহিঙ্গার বসবাস। হত্যাকাণ্ডের পর আশ্রয়শিবিরে সাধারণ রোহিঙ্গার মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়শিবিরের এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, নিহত সৈয়দুল আমিন সাত-আট মাস আগে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) ছেড়ে আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মিতে (আরসা) যোগ দেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আরএসও সদস্যরা। প্রতিশোধ নিতে আরএসওর ১৫ থেকে ২০ জন সন্ত্রাসী আজ ভোর ৫টার দিকে আহমেদ হোসেনের ঘরে ঢুকে গুলি করে। ঘটনাস্থলে আহমেদ হোসেন ও সৈয়দুল আমিন মারা যান। গুলিবিদ্ধ আসমাকে উদ্ধার করে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফ হোছাইন বলেন, ময়নাতদন্তের জন্য নিহত তিনজনের মরদেহ কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, ২ অক্টোবর উখিয়ার হাকিমপাড়া ও জামতলী আশ্রয়শিবিরে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসা ও আরএসওর মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলিতে আবদুর রহমান (১০) নামের এক রোহিঙ্গা শিশু নিহত হয়। গুলিবিদ্ধ হয় আরও পাঁচ রোহিঙ্গা। আশ্রয়শিবিরে আধিপত্য বিস্তার ও মাদক চোরাচালানের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়। নিহত আবদুর রহমান হাকিমপাড়া আশ্রয়শিবিরের ই-২ ব্লকের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ছেলে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের ২১ অক্টোবর পর্যন্ত সাড়ে ৯ মাসে আশ্রয়শিবিরগুলোতে ৬৪টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৭২ জন রোহিঙ্গা খুন হয়। আরসার সঙ্গে আরএসও ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী হোসেনের বাহিনীর মধ্যে অধিকাংশ ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষে আরসার ২৫ ও আরএসওর ১১ সদস্য খুন হয়েছেন।
বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে ৮ লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পরের কয়েক মাসে। গত সাত বছরে একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয়নি।