আখাউড়ায় বিয়ের সাত দিনের মাথায় স্ত্রীর হাতে স্বামী খুন: প্রেমিকের জন্যই খুন, দাবি পরিবারের

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় বিয়ের মাত্র সাত দিনের মাথায় স্ত্রীর হাতে নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন মেহেদী হাসান (২৭) নামে এক তরুণ। গত শুক্রবার (১৬ মে) গভীর রাতে আখাউড়া পৌরসভার মসজিদপাড়ায় ঘটে যাওয়া এই ঘটনা এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্য তৈরি করেছে। নিহত মেহেদী কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার মৃত জলফু মিয়ার ছেলে। তিনি মাকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মসজিদপাড়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসমাইল হোসেনের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে বসবাস করতেন। পেশায় তিনি ছিলেন স্থানীয় একটি ওষুধের দোকানের কর্মচারী। শান্ত, নম্র ও পরিশ্রমী স্বভাবের মানুষ হিসেবে এলাকাবাসীর কাছে তার আলাদা পরিচিতি ছিল।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ মে মসজিদপাড়ার বাসিন্দা আল আমিন মিয়ার মেয়ে জান্নাত আক্তারের সঙ্গে মেহেদীর পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। নতুন দাম্পত্যজীবনের এক সপ্তাহ কাটতেই ঘটে গেলো এক করুণ ঘটনা, যা মেহেদীর পরিবারের জন্য রীতিমতো একটি দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। শুক্রবার রাতে মেহেদী স্বাভাবিকভাবেই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। রাত গভীর হলে হঠাৎ তার স্ত্রী জান্নাত ঘরের মালিককে ডেকে জানান, তার স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে বাড়ির মালিক ও আশপাশের লোকজন এসে মেহেদীকে ঘরের মেঝেতে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। দ্রুত তাকে আখাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য পুলিশ জান্নাত আক্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে স্বামীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। পুলিশ জানায়, জান্নাত তার স্বামীকে ঘুম না আসার অজুহাতে ঘুমের ওষুধ আনতে বলেন। মেহেদী দোকান থেকে ৬টি ঘুমের ট্যাবলেট এনে দেন। পরে সে কোকের সঙ্গে ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ায়। মেহেদী অচেতন হয়ে পড়লে জান্নাত বালিশচাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে।
নিহতের বড় ভাই আবুল কালাম দাবি করেন, জান্নাতের বিয়ের আগেই এক ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল, যা বিয়ের পরও অব্যাহত ছিল। তিনি বলেন, “আমার ভাই অত্যন্ত সহজ-সরল ছিল। সে কোনো কিছু নিয়ে বাড়াবাড়ি করতো না। বিয়ের পরে আমরা তার মুখে হাসি দেখেছি, কিন্তু কে জানতো সেই হাসিই হবে তার জীবনের শেষ আনন্দ।”
এই ঘটনার পর আখাউড়ার স্থানীয় জনগণের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই বলছেন, সমাজে মূল্যবোধ ও সম্পর্কের জায়গায় গভীর অবক্ষয় ঘটেছে, যার নির্মম প্রতিচ্ছবি দেখা গেলো এই নবদম্পতির মধ্যে। পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে পাঠিয়েছে। একই সঙ্গে হত্যাকাণ্ডের পেছনের নেপথ্য কারণ ও সম্ভাব্য সহযোগীদের শনাক্তে তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
এই নির্মম হত্যাকাণ্ড শুধুমাত্র একটি প্রাণ নিভিয়ে দেয়নি, এটি সমাজে ভালোবাসা, বিশ্বাস ও মূল্যবোধের ওপর এক গভীর
আঘাত হেনেছে। এমন একটি ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে সামাজিক সচেতনতা ও পারিবারিক বন্ধনের গুরুত্ব নতুন করে ভাবনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।