অনলাইনে আওয়ামী লীগের প্রচারণা, চিঠি পেলে ব্যবস্থা নেবে বিটিআরসি

সন্ত্রাসবিরোধী আইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সাইবার স্পেস বা অনলাইন সব প্ল্যাটফর্মেও দলটির সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব জানিয়েছিলেন, প্রজ্ঞাপন জারি হলে সাইবার জগতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বন্ধে তারা প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন।
তবে এ বিষয়ে এখনও দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। সচল রয়েছে আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেল, এক্স-হ্যান্ডেল (সাবেক টুইটার), টিকটক, ইনস্টাগ্রাম।
উলটো নিষিদ্ধ ঘোষণার পর দলটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বক্তব্য-বিবৃতি, উসকানিমূলক তথ্য ও সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে পেজগুলো থেকে। তাছাড়া ভারতে পালিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অডিও বক্তব্য দিয়েছেন, তা দলটির ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে একযোগে প্রচারিত হয়েছে।
কী করছে বিটিআরসি
সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করায় নিয়ম অনুযায়ী—ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম পেজ বন্ধে মেটাকে ই-মেইলে চিঠি পাঠানোর কথা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি)। তবে মঙ্গলবার (১৩ মে) সকাল ১০টা পর্যন্ত বিশেষ কোনো ব্যবস্থাই নেয়নি নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
বিষয়টি নিয়ে বিটিআরসির শীর্ষ পর্যায়ের অন্তত তিনজন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা এ নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে চান না বলে জানান।
তাদের মধ্যে একজন কর্মকর্তা নাম-পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে জাগো নিউজকে বলেন, বিটিআরসি কোনো ব্যবস্থা এখনও নেয়নি। আজকে (মঙ্গলবার) চিঠি পেলে আগামীকাল (বুধবার) হয়ত আমরা মেটা, টিকটক, ইউটিউব কর্তৃপক্ষকে পেজ ও ইউটিউব চ্যানেল বন্ধ করতে ই-মেইল করতে পারবো। আমরা ই-মেইল বার্তা পাঠালে মেটা বা টিকটক কিংবা ইউটিউব কবে সাড়া দেবে, তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়।
ওই কর্মকর্তার ভাষ্যমতে, প্রজ্ঞাপন হলেই বিটিআরসি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে না। নিয়ম অনুযায়ী—সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে এ প্রজ্ঞাপন-সংক্রান্ত বিষয় জানিয়ে চিঠি দিতে হবে। সেই চিঠি জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি হয়ে বিটিআরসিতে আসবে। তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অনলাইনে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম ঠেকানো ‘দুরূহ’
বাংলাদেশে ফেসবুক, ইউটিউব ও এক্সের (সাবেক টুইটার) মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোর অফিস না থাকায় সহসাই অনলাইনে নিষিদ্ধ যে কোনো দলের কার্যক্রম থামানো দুরূহ বলে মনে করছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা।
বেসিসের সাবেক সভাপতি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ ফাহিম মাশরুর বলেন, ফেসবুক, টিকটক, ইউটিউবের মতো বিদেশি প্ল্যাটফর্মগুলোর বাংলাদেশে কোনো অফিস না থাকায় তারা আমাদের আইন মানতে বাধ্য নয়। তাছাড়া চিহ্নিত কিছু পেজ, গ্রুপ, চ্যানেল বন্ধ করা গেলেও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে এটা প্রতিরোধ করা সম্ভব নয়।
কেন সম্ভব নয়, সেই কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ফেসবুক-ইউটিউবের লোকাল ক্যাশ সার্ভার বাংলাদেশ থাকলেও মূল সার্ভার ভারতের কলকাতায়। সঙ্গত কারণেই এর আগে ঘোষণা দিয়েও অনলাইনে পর্নোগ্রাফি, জুয়া বন্ধ করা যায়নি। তাছাড়া রাজনৈতিক প্রচারণা এবং ব্যক্তিগত মতামত এ দুটোকে আলাদা করাটাও দুরূহ। বিষয়গুলো ব্যবহারকারীদেরই বুঝে নিতে হবে। তাদের আইনের প্রতি যত্নশীল হতে হবে।
ফেসবুকে ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ’ নামে দলটির একটি ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ রয়েছে। পেজটিতে বর্তমানে ফলোয়ার প্রায় চার মিলিয়ন (৪০ লাখ)। আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী যুবলীগের আরও দুটি ভেরিফায়েড পেজ রয়েছে।
স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও যুবলীগের ওয়েবপেজ বন্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক ওয়েবসাইট এখন নিউজ পোর্টালে রূপ দেওয়া হয়েছে। বেশ সক্রিয় রয়েছে আওয়ামী লীগের এক্স-হ্যান্ডেল, টিকটক ও ইনস্টাগ্রাম।
এছাড়া ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নামে অনেকগুলো আন-অফিশিয়াল পেজ ও গ্রুপ রয়েছে। গ্রুপের পাশাপাশি ম্যাসেঞ্জার ও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যানেলে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। একইসঙ্গে টেলিগ্রাম, টিকটক ও ইউটিউবে বেশ সক্রিয় রয়েছে সদ্য নিষিদ্ধ দলটি। উলটো অনলাইনেই এখন আরও বেশি সক্রিয় হয়ে উঠছেন দলের বিভিন্ন পদধারী নেতাকর্মীরা।
এর আগে সোমবার (১২ মে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে বিচার সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
প্রজ্ঞাপনের শেষাংশে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারকার্য সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সকল অঙ্গসংগঠন, সহযোগী সংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন কর্তৃক যে কোনো ধরনের প্রকাশনা, গণমাধ্যম, অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যে কোনো ধরনের প্রচারণা, মিছিল, সভা-সমাবেশ, সম্মেলন আয়োজনসহ যাবতীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলো।’