শরীর ও মনকে রমজানের জন্য প্রস্তুত করুন এই উপায়ে

রমজান শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকার নাম নয়। বরং এটি তাকওয়া অর্জনের মাস। এই মাস আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক তৈরির মাস। প্রতি বছরই রমজান আসে এবং নির্ধারিত সময়ে চলে যায়। প্রায় প্রতিটি রমজানই গতানুগতিকভাবে কেটে যায়। জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। এবারের রমজানটি যদি আপনার জীবনে কোনো পরিবর্তন ঘটায় তাহলে কেমন হবে?
রমজানকে পরিবর্তনের মাসে রূপান্তরিত করতে রমজানের আগেই শারীরিক ও মানসিকভাবে কিছু প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণের ৯টি উপায়—
১. এখন থেকেই কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন।
রমজান মাসের প্রাণ পবিত্র রমজান। এই মাসে প্রায় প্রত্যেক মুসলমানই কোরআন তিলাওয়াত করেন, অনেকেই এই মাসের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কোরআন মুখস্ত করেন। তবে রমজান শুরু হওয়ার অপেক্ষা না করে আজ থেকেই পবিত্র কোরআনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করুন।
- প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াতের একটি রুটিন তৈরি করুন। দিনে অন্তত এক পৃষ্ঠা অথবা পাঁচ মিনিট হলেও কোরআন তিলাওয়াত করুন। মূলত ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি।
- তিলাওয়াতের সময় অর্থের প্রতি খেয়াল করুন। প্রয়োজনে অনুবাদ ও তাফসির গ্রন্থের সাহায্য গ্রহণ করুন।
- কোরআনের ছোট অংশ, ছোট সূরা বা আয়াত মুখস্ত করার চেষ্টা করুন। যা আপনি চাইলে পরবর্তীতে নামাজে তিলাওয়াত করতে পারবেন।
এখন থেকেই এই অভ্যাগ গড়ে তুললে আপনি কোরআনের সঙ্গে একটি সুন্দর সম্পর্কের মাধ্যমে রমজান মাস শুরু করতে পারবেন। যা এই মাসে কোরআনের সঙ্গে আপনার সর্ম্পক গভীর করতে সাহায্য করবে।
২. অভ্যাস ও আচরণ উন্নয়নের চেষ্টা করুন ।
রমজান মাস শুধু খাবার ও পানীয় পরিহারের মাস নয়। একইসঙ্গে এই মাসে মন্দ স্বভাব পরিহার ও ইতিবাচক কিছু শেখার মাস। নিজের মাঝে পরিবর্তন আনা এবং রবের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির মাস।
- সময়ের অপচয় কমিয়ে দিন : সোশ্যাল মিডিয়া, স্ক্রীন এবং এমন কাজে সময় কম ব্যবহার করুন যেটা আপনার জন্য অপ্রয়োজনীয়।
- ধৈর্য ধারণের অভ্যাস গড়ে তুলুন : রাগ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন, পরনিন্দা এড়িয়ে চলুন এবং অন্যদের সাথে সদয়ভাবে কথা বলুন।
- একটি কার্যকরী রুটিন তৈরি করুন : রুটিন অনুয়াযী প্রতিদিন ইবাদত করুন, পরিবারকে সময় দিন এবং বিশ্রাম করুন।
এই ছোট পরিবর্তনগুলো আপনাকে রমজানে প্রয়োজনীয় ও সুশৃঙ্খল জীবনযাপনে সহায়তা করবে।
৩. নামাজে গুরুত্ব দিন এখন থেকেই।
রমজানের প্রস্তুতির জন্য এখন থেকেই নামাজের প্রতি গুরুত্ব দিন। নামাজ ছাড়ার অভ্যাস পরিহার করুন। রমজানে ফরজ ছাড়াও অন্যান্য সুন্নত, নফল নামাজের (যেমন, তারাবি, তাহাজ্জুদ) পরিকল্পনা রাখুন এখন থেকেই।
- রমজানে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত ফরজ নামাজ জামাতে আদায়ের প্রত্যয় রাখুন। জামাতে নামাজে অবহেলা থাকলে এখন থেকেই অভ্যাসে পরিবর্তন আনুন।
- দোয়া শিখুন। রমজানে আমল করার জন্য বিভিন্ন দোয়া এখন থেকেই শিখে নিন। একইসঙ্গে রোজার বিভিন্ন মাসয়ালা, রোজা ভঙ্গের কারণগুলো জেনে নিন।
- তাহাজ্জুদ এবং রাত জেগে নামাজের অভ্যাস করুন। ফজর নামাজে আগে আগে উঠার চেষ্টা করুন এবং এখন থেকেই রাত জেগে নামাজ আদায়ের চেষ্টা করুন।
এখন থেকে এই অভ্যাসগুলো গড়ে তুললে রমজানের আগমনের সঙ্গে সঙ্গেই আপনার শরীর ও মন ইবাদতকে স্বাগত জানাবে সহজেই।
৪. পুষ্টিকর খাবারে গুরুত্ব দিন।
রমজানে দীর্ঘ সময় পানাহার থেকে বিরত থাকতে হয়। দীর্ঘ সময় অনাহারে থাকার ফলে শরীরে যেন কোনো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয় এবং ইবাদতে সমস্যা না হয়, তাই রমজানে পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করুন।
৫. রমজানের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানার চেষ্টা করুন।
রমজানের রোাজার বিধান আল্লাহ তায়ালা কেন দিয়েছেন এবং এর মাধ্যমে মুমিনদের কী শিক্ষা দেওয়া হয়েছে তা বোঝার এবং জানার চেষ্টা করতে হবে। তাহলে তা ইবাদতের মাহাত্ম্য বুঝতে সাহায্য করবে।
- রমজানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করুন। ফরজ ছাড়াও অতিরিক্ত সুন্নত ও নফল নামাজ আদায় করুন। দান করুন।
- রমজানে কোরআন খতম করতে চাইলে নির্দিষ্ট রুটিন তৈরি করুন। রুটিন অনুযায়ী প্রতিদিন কোরআন তিলাওয়াত করুন।
সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ আপনাকে সঠিকভাবে রমজানের ইবাদত পালনে সাহায্য করবে।
৬. রমজানের তাৎপর্য সম্পর্কে সচেতন হোন।
রমজানের ইতিহাস, গুরুত্ব ফজিলত এবং শিক্ষা বোঝার চেষ্টা করুন।
- রমজানের ফজিলত সম্পর্কিত হাদিস ও কোরআনের বর্ণনাগুলো জানার চেষ্টা করুন।
- রাসূল সা.-এর জীবনী জানার চেষ্টা করুন। তিনি কীভাবে রমজান পালন করেছেন, রমজানে ইবাদত করেছেন তা জানার চেষ্টা করুন।
- লাইলাতুল কদরে ইবাদত করুন। রমজানে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাস ইবাদতের থেকে উত্তম। রমজানের শেষ দশকে এই রাত খোঁজার চেষ্টা করুন।
এই বিষয়গুলো জানলে রমজানের ইবাদত পালন আপনার জন্য সহজ হবে।
৭. ইবাদত পালনের উপযোগী পরিবেশ তৈরি করুন।
মনোযোগের সঙ্গে ইবাদত পালনের জন্য উপযোগী পরিবেশ জরুরি।
- রমজানের আগেই বাসা-বাড়ি গুছিয়ে নিন। অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিস্কার করুন। ইবাদতের জন্য বাসা-বাড়ির কোনো একটি জায়গা নির্ধারণ করুন। অপ্রয়োজনীয় কাজ কমিয়ে দিন।
- ডিজিটাল ডিভাইস, যেগুলো আপনার ইবাদতে বিঘ্নতা ঘটাতে তা এড়িয়ে চলুন।
৮. পরিবারে সঙ্গে সুন্দর পরিকল্পনা সাজিয়ে নিন।
রমজানে পরিবারের সবাইকে ইবাদতে উদ্বুদ্ধ করুন। এখন থেকে রমজানের প্রস্তুতি গ্রহণে উৎসাহিত করুন। রমজানে সবাই একসঙ্গে সহযোগী হয়ে ইবাদত পালনের চেষ্টা করুন।
প্রতিবেশী এবং বন্ধুদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করুন। রমজানে সবাই একসঙ্গে ইফতার করার পরিকল্পনা করুন।
৯. অন্যকে ক্ষমা করুন এবং ভাঙা সম্পর্ক ঠিক করুন।
ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা অন্যকে ক্ষমা করা এবং অন্যের সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রাখা। কারো সঙ্গে কোনো কারণে মনোমালিন্য থাকলে আল্লাহ তায়ালার রহমত প্রাপ্তি আশায় রমজানের আগেই তা ঠিক করে ফেলুন।
আল্লাহর কাছে হেদায়েতের দোয়া করুন। এই রমজান যেন সুন্দরভাবে কাটে সেজন্য প্রার্থনা করুন।