বান্দরবানে বলসুন্দরী বরই চাষে ভাগ্য ফিরেছে দীপ্তিময় তঞ্চগ্যাসহ তিন ভাইয়ের। দীপ্তিময় এবছর ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রির প্রত্যাশা করছেন।
২০১১ সালে এসএসসি পাশের পর পড়ালেখার পাঠ চুকিয়ে বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের জুমচাষে সহায়তা করতেন। পরে তার বড় ভাই রাজু ময় তঞ্চঙ্গ্যা, মেজো ভাই সাজু ময় তঞ্চঙ্গ্যা ও তিনি নিজে তিন ভাই আলোচনা করে ২০২৩ সালের শুরুর দিকে বান্দরবান সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নের রেইচা সাতকমল পাড়ার কাছে পৈতৃক ৫ একর পাহাড়ি জমিতে ৯০০ বলসুন্দরী বরইয়ের কলম চারা রোপণ করেন। যা খুলনার পাইকগাছা থেকে অনলাইনে অর্ডার করে আনা হয়েছিল। গত বছর প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে বাগান যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও ৬ লাখ টাকার বরই বিক্রিয় করা হয়েছিল। এবছর পরিবেশ অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় ৪ গুণ বেশি ফলন হয়েছে। যার ফলে এবারে এই বাগান থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রি করতে পারবেন বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।
বান্দরবান সদর উপজেলা সদর ইউনিয়নের রেইচা সাত কমল পাড়া থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে সম্প্রতি সরেজমিনে বরই বাগান পরিদর্শনে গেলে দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা ঢাকা মেইলকে বলেন, পাঁচ একর জায়গায় গত বছর সাড়ে ৯০০ বলসুন্দরী, কাশ্মীরি বরই চারা রোপণ করা হয়। কলম চারা হওয়ায় রোপণ করার প্রথম বছরেই ফলন আসে এবং ওই বছরই ছয় লাখ টাকার বরই বিক্রি করেছি। মোট খরচ হয়েছিল আড়াই লাখ টাকা। চলতি বছর আরও ৮৫০ বল সুন্দরী বরই কলম চারা লাগানো হয়েছে সেগুলোতেও গত বছরের তুলনায় এবছর চারগুণ বেশি ভালো ফলন এসেছে। এই ৫ একর জায়গায় বর্তমানে প্রায় ১ হাজার ৮০০ মণ সুন্দরী বরই গাছ আছে। ফলনও ভালো হয়েছে।
ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে বরই ব্যবসায়ীরা বাগান থেকে বরই কিনতে ও দেখতে আসছেন। এবার এই বাগান থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রি করা যাবে বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, খুলনা পাইকগাছা থেকে প্রথমে অনলাইনে ৯৫০টি কলম চারা ক্রয় করা হয়েছিল। বাগানে পৌঁছানো পর্যন্ত প্রতি চারা ৫০ টাকা হিসেবে ৪৫ হাজার ৫০০ টাকা খরচ হয়েছিল। লাগানো, সার ও পরিচর্যাসহ সব মিলে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছিল। বর্তমানে তাদের বাগানে ২ হাজারেরও বেশি বলসুন্দরী জাতের বরই গাছ রয়েছে। যার মধ্যে ১ হাজার ৮৫০টি গাছে ফলন এসেছে। গত বছর ২০০ টাকা কেজি দরে পাকা বরই ও ৩০০ টাকা কেজি দরে শুকনো বরই বিক্রি করা হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে এবার এই বাগান থেকে প্রায় ২২ লাখ টাকার বরই বিক্রয় করা যাবে বলে প্রত্যাশা করছেন তিনি।
বরই ব্যবসায়ী মো. বেলাল হোসেন জানান, এই বরই খুবই সুস্বাদু মিষ্টি হওয়ায় বাজারে বেশ চাহিদা রয়েছে। এর আগেও তিনি দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যার বরই বাগান থেকে বরই পাইকারি দরে কিনে নিয়ে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করে লাভবান হয়েছেন তাই এবছরও বরই বাগান দেখতে এসেছেন বলে জানান তিনি।
আরেক ব্যবসায়ী আলী আহমদ বলেন, দীপ্তি ময় তঞ্চঙ্গ্যাদের বরই বাগান দেখতে দরদামে মিলে গেলে পুরো বরই বাগানই কিনে নিবেন বলে জানান তিনি।
প্রতিবেশী মংক্য চিং মারমা বলেন, তিনি নিজেও বাগান চাষি, এলাকার সবাই দীপ্তি ময় তঞ্চঙ্গ্যাদের বরই বাগানের প্রশংসা করতে শুনেছেন। তাই নিজে দেখতে এসেছেন। তিনি দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যাদের বরই বাগান দেখে নিজেও উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
তিনি বলেন, পাহাড়ের পতিত জায়গায় ফলদ বাগান করলে যুবকেরা যেমন লাভবান হচ্ছেন ঠিক তেমনি পরিবারের অর্থনৈতিক সচ্ছলতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ এমএম শাহ নেয়াজ ঢাকা মেইলকে বলেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলায় জুম চাষের পাশাপাশি এখন ব্যাপকভাবে ফলদ বাগান করা হচ্ছে বর্তমান মৌসুমে কুল বরই প্রচুর আবাদ হচ্ছে। এই ফল এখানকার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সরবরাহ করা হচ্ছে। জেলায় বল সুন্দরী,আপেল কুল, কাশ্মীরি কুল, নারিকেল কুল প্রজাতির বরইয়ের বেশ আবাদ হচ্ছে। এবার জেলায় ১৫শত হেক্টর জায়গায় কুল বরই আবাদ হয়েছে। এতে অর্থনৈতিকভাবে স্থানীয় কৃষকরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন। একেকজন কৃষক যদি বছরে ১০ লাখ থেকে ২০ লাখ টাকা যদি এ ফলদ বাগান থেকে আয় হয় তাহলে এটা এখন অর্থকরী ফসল হিসেবে প্রতীয়মান হচ্ছে। এছাড়া তিনি ফলদ বাগান লিজ না দিতে কৃষকদেরকে অনুরোধ করেছেন এবং বাগানের সুষ্ঠু পরিচর্যা করার পাশাপাশি নির্দিষ্ট সময়ের পরে বিক্রয়ের আগে বালাইনাশক স্প্রে না করার পরামর্শ প্রদান করেন।
বান্দরবান সদর উপজেলার সদর ইউনিয়নে রেইচা সাতকমল পাড়ায় নিজেদের বল সুন্দরী বরই বাগানে দীপ্তিময় তঞ্চঙ্গ্যা।