শিশু সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা হয়রানির শিকার
সিলেটের পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপি নেতা আসামী!
শশুর বাড়ি কসবায় বসবাসরত স্ত্রী-সন্তানের কাছে মোঃ তাজুল ইসলাম এর সন্ধান চালাচ্ছে পুলিশ (বামে)। কানলি গ্রামের বাড়ির রাস্তায় টিনসেড ঘর তৈরি করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে আওয়ামী লীগের দখলবাজরা (ডানে)।
বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক বর্তমানে যুক্তরাজ্য প্রবাসী বিএনপি নেতা মোঃ তাজুল ইসলাম কে স¤প্রতি সিলেটে সংঘটিত একটি ঘটনায় দায়েরকৃত পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় আসামী করা হয়েছে! গত ৬ আগস্ট সিলেট শহরের আখালিয়াস্থ সিলেট আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে পুলিশের উপর হামলা, ভাংচুর ও গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় দায়েরকৃত পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় তাকে আসামী করা হয়! উক্ত মামলায় তাকে গ্রেফতারের জন্য তার নিজবাড়ি ও আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। এ অবস্থায় দেশে থাকা তার স্ত্রী, শিশু সন্তান ও পরিবারের সদস্যরা পুলিশী হয়রানির শিকার হয়ে আতংকের মধ্যে দিনাতিপাত করছেন। রাজনৈতিক পূর্ব বিরুধের জের ধরে তাকে ফাঁসানোর জন্য স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে ঐ মামলায় মোঃ তাজুল ইসলাম কে আসামী করিয়েছেন বলে পরিবারের অভিযোগ।
জানা যায়, বিয়ানীবাজার উপজেলার লাউতা ইউনিয়নস্থ কানলি গ্রামের মৌলভী আব্দুর রাজ্জাক এর পুত্র মোঃ তাজুল ইসলাম ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যে গমণ করেন এবং অধ্যাবদি পর্যন্ত তিনি সেখানেই বসবাস করছেন। গত ৬ আগস্ট মধ্যরাতে সিলেট শহরের আখালিয়া ধানুহাটার পাড়াস্থ সিলেট আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজ নামক প্রতিষ্ঠানে পবিত্র কোরআন শরিফ পোড়ানোকে কেন্দ্র করে এলাকায় উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে কোতোয়ালী মডেল থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। পুলিশ দুজনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসতে চাইলে পুলিশ ও উপস্থিত জনতার মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বিক্ষুব্ধ জনগণ পুলিশের উপর হামলা, ভাংচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশ গুলি, টিয়ারসেল, সাউন্ড গ্রেনেড চালায়। এতে পুলিশসহ বেশ কিছু লোকজন আহত হয়। এ ঘটনায় কোতোয়ালী মডেল, এসএমপি থানাধীন লামাবাজার পুলিশ ফাঁড়ির এসআই অঞ্জন কুমার দেবনাথ বাদী হয়ে গ্রেফতারকৃত দুজন সহ অজ্ঞাতনামা ২০০/৩০০ জনকে আসামী করে কোতোয়ালী মডেল থানায় একটি পুলিশ এ্যাসল্ট মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ১৫/৪৫২, তারিখ ৭/৮/২০২৩ইং। উক্ত মামলায় যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বিএনপি নেতা মোঃ তাজুল ইসলাম কে আসামী করা হয়েছে। এই মামলার আসামী হিসেবে তাকে গ্রেফতার করতে বিয়ানীবাজার থানা পুলিশ প্রায়ই তার গ্রামের বাড়ি কানলি এবং শশুর বাড়ি বিয়ানীবাজার পৌরসভার কসবা গ্রামে অভিযান চালাচ্ছে। এতে করে তার গ্রামের বাড়িতে থাকা আত্মীয় স্বজন ও শশুর বাড়িতে থাকা স্ত্রী, শিশু সন্তান নানা ভাবে পুলিশী হয়ারানির শিকার হয়ে আতংকের মধ্যে রয়েছেন। তার শিশু সন্তান ভয়ে স্কুলে যাওয়া ও খাওয়া-ধাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে বলে পরিবার সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে মোঃ তাজুল ইসলাম এর স্ত্রী ফাতিমা বেগম বলেন, আমার স্বামী প্রায় ৫ বছর থেকে যুক্তরাজ্যে বসবাস করছেন। অথচ ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে গত আগস্ট মাসে অনুষ্ঠিত সিলেট শহরের একটি ঘটনায় তাকে আসামী করা হয়েছে! বিষয়টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মী রাজনৈতিক শত্র“তাবসত ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে তাকে ফাসানো এবং আমাদেরকে হয়ারানির উদ্দেশ্যে করেছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ভয়ে আমি শিশু সন্তানকে নিয়ে একধরনের পালিয়ে জীবন যাপন করছি, কখনো স্বজনদের বাড়ি কখনো পিত্রালয়ে। পুলিশ আমার পিত্রালয়ে এসে আমার স্বামীকে সন্ধানের নামে আমি এবং আমার শিশু সন্তানকে নানা ভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানি করছে। আমার শিশু সন্তান তাদের বাবাকে গ্রেফতার করতে পুলিশ খোঁজছে জেনে ও পুলিশী টর্চারিংয়ে আতংকে মুষড়ে পড়েছে। আতংক ও ভয়ে তার শিশু মনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। স্কুলে যাওয়া আসা ও স্বাভাবিক খাওয়া-ধাওয়া এমনকি খেলাধুলা-ঘুরাফেরা বন্ধ করে দিয়েছে। আমরা পরিবারের সবাই মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে নিরাপত্তাহীনতায় আতংকের মধ্যে রয়েছি। ফাতেমা বেগম ক্ষোভের সাথে আরো বলেন, আমি আইডিয়াল কলেজিয়েট স্কুলের শিক্ষিকা ছিলাম। আমার স্বামী দেশ ত্যাগের পর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগের ঐ সকল বখাটে সন্ত্রাসীদের প্রতিনিয়ত ইভটিজিং ও হুমকির কারনে আমি শিক্ষকতার পেশা ছাড়তে বাধ্য হয়েছি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মোঃ তাজুল ইসলাম দেশে থাকাবস্থায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর আদর্শিক রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি বিএনপির অঙ্গসংগঠন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ শাখার প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে বিয়ানীবাজার উপজেলা ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়কের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি সিলেট ল কলেজ ছাত্রদলের প্রথম সারির একজন নেতা ছিলেন। বিয়ানীবাজার ছাত্রদলের একজন প্রভাবশালী নেতা হিসেবে ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালিন সময়ে তিনি নিজ এলাকা লাউতা ইউনিয়নে নিজ প্রচেষ্ঠায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করেন। এতেকরে এলাকাসহ গোটা উপজেলা জুড়ে একজন জনপ্রিয় ছাত্রনেতায় পরিণত হন মোঃ তাজুল ইসলাম। সেই সময় থেকেই তার পার্শ্ববর্তী গ্রাম কালাইউরার অধিবাসী বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আতিকুর রহমান আতিক সহ স্থানীয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন তিনি। ২০০৯ সাল থেকে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকার সুবাধে ছাত্রলীগ নেতা আতিকুর রহমান আতিক গংরা ক্ষমতার দাপটে নানা ভাবে মোঃ তাজুল ইসলাম কে ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানি করে। তার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে জনমানুষের কাছে কুলষিত করতে নানা সময়ে ক্ষমতার অপব্যবহার করে ষড়যন্ত্রমূলক ভাবে মিথ্যা অপবাদ ও হয়রানি করেছে তারা। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী মোঃ আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা টিমের অন্যতম শীর্ষ নেতা হিসেবে তৎকালিন সিলেট ল কলেজ ছাত্রদল নেতা মোঃ তাজুল ইসলাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ঐ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বিজয়ী হন। ভোটের দিন রাতে বিজয় মিছিল শেষে উপশহরস্থ বাসায় ফেরার পথে আতিকুর রহমান আতিকের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী প্রাণনাশের উদ্দেশ্যে মোঃ তাজুল ইসলাম এর উপর হামলা চালায়। সন্ত্রাসী হামলা থেকে প্রাণ রক্ষার্থে চিৎকার দিলে স্থানীয় পথচারী লোকজন ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে রক্তাক্ত আহত অবস্থায় দলীয় নেতাকর্মীরা এসে তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এ সময় ছাত্রলীগের বিক্ষুব্ধ ঐ সন্ত্রাসীরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে শহরের বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সন্ধান চালায়। ফলে গোপনে চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হওয়ার পর প্রাণ রক্ষার্থে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি দেন মোঃ তাজুল ইসলাম। পরবর্তীতে এই খবর জানতে পেরে ছাত্রলীগ নেতা আতিকের নেতৃত্বে স্থানীয় আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসী হাসান, হোসাইন, মাসুক গংরা মোঃ তাজুল ইসলাম এর গ্রামের বাড়ি কানলিতে হামলা চালিয়ে বসতঘর ভাংচুর করে এবং পরিবারের সদস্যদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়ে ঘরবাড়ি জবর দখল করে নিয়েছে। ভয়ে তার স্ত্রী, সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বাড়ি ছেড়ে নিজ পিত্রালয়ে চলে যান।
স¤প্রতি সরজমিন মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এর গ্রামের বাড়ি কানলিতে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগের স্থানীয় ক্যাডার আতিক ও হাসান গংদের দখলে থাকা তার বসতঘরের প্রধান ফটকে থালা ঝুলানো রয়েছে। দীর্ঘদিন থেকে এই ঘরে কেউ বসবাস না করায় দরজা, জানালাসহ ঘরের বাহিরের দিকের দেয়ালে মাকড়সা ও পোকামাকড় বসতি গড়ে আছে। যাতায়াতের সড়কের উপর টিন সেডের ঘর তৈরী করে রাস্তা বন্ধ করে দিয়েয়ে দখলবাজরা। ক্ষমতাসীন দখলবাজদের ভয়ে মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম এর আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের কেউই প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছেন না।
এদিকে, মোঃ তাজুল ইসলাম যুক্তরাজ্য গমণের পর সেখানকার বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং বর্তমানে যুক্তরাজ্য বিএনপির একজন জনপ্রিয় নেতা হিসেবে কাজ করছেন। পাশাপাশি তিনি যুক্তরাজ্যে বিভিন্ন মানবাধিকার এবং সামাজিক সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছেন এবং বাঙ্গালী কমিউনিটিতে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। গত ২ ও ৩ অক্টোবর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য গমণকালে সেখানকার বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থানীয় তাজ হোটেলের সম্মুখে বিক্ষোভ প্রদর্শন এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে নানা কটুক্তিকর বক্তব্য প্রদান করা হয় ফেসবুক সহ বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায়। এ সময় বিএনপি নেতা মোঃ তাজুল ইসলামও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুক ও অনলাইন মিডিয়ায় কটুক্তিকর বক্তব্য প্রদান করেন। তার এই কটুক্তিকর বক্তব্যের ফলে বিয়ানীবাজার আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনার প্রতিবাদে গত ৫ অক্টোবর তারিখে বিয়ানীবাজার যুবলীগ ও ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে পৌর শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কটুক্তির দায়ে মোঃ তাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়ে তাকে বিয়ানীবাজারে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয় এবং তাকে যেখানে পাওয়া যাবে সেখানেই গণধোলাই দেয়াসহ প্রকাশ্যে নানা হুমকি দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও প্রকাশ্য সভায় পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন মোঃ তাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। এই নির্দেশনার কিছুদিন পরই তদন্ত চলমান থাকা সিলেট শহরের পুলিশ জনতার সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় অজ্ঞাত আসামীর অপশনে মোঃ তাজুল ইসলাম কে আসামী করা হয়েছে বলে তার পরিবার ও স্থানীয় বিএনপি নেতৃবৃন্দের অভিযোগ।
এ বিষয়ে বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ দেব দুলাল ধর বলেন, বিষটি কতোয়ালী থানার, সেখানে দায়েরকৃত পুলিশ এ্যাসল্ট মামলায় মোঃ তাজুল ইসলামকে আসামী করা হয়েছে। আমাদের কাছে নির্দেশনা এসেছে তাকে গ্রেফতার করার জন্য। তাই পুলিশ আইনানুগ দায়িত্ব পালন করছে। তিনি বলেন, তাজুল ইসলাম মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়েও কটুক্তি করেছে। এই অবস্থায় তার বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নিতে স্থানীয় এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ সহ আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ এবং প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা রয়েছে।