London ০২:৪৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দারিদ্র্য জয় করে শত নারীর অনুপ্রেরণা হয়েছেন রুবি

নিজস্ব প্রতিবেদক:

বাবার অভাব-অনটনের সংসারে বয়স না হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিলো বরগুনা পাথরঘাটার রুবি আফরোজের। দুই সন্তান ও দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে অভাব অনটনে কাটতো তাদের সংসার। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামী জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয় রুবি আফরোজের। যেখানে অন্যের বাসায় কাজ করে নিজের সংসারে হাল ধরতে হত রুবির, সেখানে নিজের উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন গ্রামের শত শত নারীর অনুপ্রেরণা। এক টুকরো বসত বাড়ি ছিল রুবির সম্বল, ছিল না চাষাবাদের কোন জমি। সেই বসতবাড়িতে জলবায়ু সহনশীল বিভিন্ন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন তিনি। তার এই উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে দিন দিন বদলে যাচ্ছে তার ভাগ্যের চাকা। আয় করছে বছরে লাখ লাখ টাকা।

রুবি আফরোজ (৩৫) বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বিয়ের পিঁড়িতে বসায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া আর হয়ে ওঠেনি তার।

রুবি আফরোজ বলেন, অনেক ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করে চাকরি করবো। কিন্তু বাবা-মা বিয়ে দেওয়ায় সে আশা আর পূরণ হয়নি। তবে ছোটবেলা থেকেই নিজে উপার্জন করার আগ্রহ ছিল তীব্র। অসুস্থ স্বামীর অভাবের সংসার একার পক্ষে পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় নিজেই কৃষি কাজে মনযোগী হই। স্বামীর কৃষিজমি না থাকায় বাড়ির মধ্যেই শুরু করি পারিবারিক কৃষি কাজ। জলবায়ু সহনশীল বিভিন্ন পদ্ধতি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ শুরু করি। যেমন- বস্তা পদ্ধতি, টাওয়ার পদ্ধতি, ঝুলন্ত ও সিঁড়ি পদ্ধতিতে বোম্বে মরিচ, লাউ, কুমড়া, শসা, করলাসহ রবি শস্য। এছাড়া গরু পালন করি। সবজি উৎপাদনে করে নিজের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে বছরে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা আয় করে থাকি। এছাড়াও গরুর গোবর দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৫০ কেজি বিক্রি করি এবং কেঁচো উৎপাদন করে তাও বিক্রি করি। শুধু সিজনে বোম্বে মরিচ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করে লাভবান হই।

তিনি আরও বলেন, আমি সিসিডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের দক্ষতা অর্জন করেছি এবং বিভিন্ন সংস্থার মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করি। আমি কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনা দেখলে তার প্রতিবাদ করি। আইনি সহায়তাসহ অনেকেই আমার কাছে বিভিন্ন পরামর্শের জন্য আসলে চেষ্টা করি সহযোগিতা করার জন্য।

স্থানীয় নারী হালিমা বলেন, অভাব অনটনে কাটতো রুবি সংসার। কিন্তু তার বাড়ির জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করে প্রতি মাসে ভালো টাকা আয় করে। তাকে দেখে অনেক নারীরা পতিত জমিতে সবজি চাষ করছি এবং তার কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছি।

সিসিডিবি’র ইনগেজ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার অভিজিৎ মজুমদার রতন বলেন, একটা সময় রুবিকে কেউ চিনতো না, তিনি মানুষের সামনে কথাও বলতে পারতেন না। বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে কথা বলতে পারছেন এখন নিজেই প্রশিক্ষক। রুবি একজন সফল কৃষক এবং উদ্যোক্তা। একজন নারী হয়েও এতো পরিশ্রম করতে পারেন তা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, প্রতি ঘরে রুবির মতো নারী উদ্যোক্তা দরকার। তাহলে কোনো অভাব থাকবে না। এমন নারীদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:২২:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫
১৪
Translate »

দারিদ্র্য জয় করে শত নারীর অনুপ্রেরণা হয়েছেন রুবি

আপডেট : ১২:২২:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারী ২০২৫

বাবার অভাব-অনটনের সংসারে বয়স না হতেই বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিলো বরগুনা পাথরঘাটার রুবি আফরোজের। দুই সন্তান ও দিনমজুর স্বামীকে নিয়ে অভাব অনটনে কাটতো তাদের সংসার। সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামী জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ায় সংসারের হাল ধরতে হয় রুবি আফরোজের। যেখানে অন্যের বাসায় কাজ করে নিজের সংসারে হাল ধরতে হত রুবির, সেখানে নিজের উদ্যোগকে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন গ্রামের শত শত নারীর অনুপ্রেরণা। এক টুকরো বসত বাড়ি ছিল রুবির সম্বল, ছিল না চাষাবাদের কোন জমি। সেই বসতবাড়িতে জলবায়ু সহনশীল বিভিন্ন পদ্ধতিতে চাষাবাদ করছেন তিনি। তার এই উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে দিন দিন বদলে যাচ্ছে তার ভাগ্যের চাকা। আয় করছে বছরে লাখ লাখ টাকা।

রুবি আফরোজ (৩৫) বরগুনার পাথরঘাটা পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। বিয়ের পিঁড়িতে বসায় নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর লেখাপড়া আর হয়ে ওঠেনি তার।

রুবি আফরোজ বলেন, অনেক ইচ্ছা ছিল লেখাপড়া করে চাকরি করবো। কিন্তু বাবা-মা বিয়ে দেওয়ায় সে আশা আর পূরণ হয়নি। তবে ছোটবেলা থেকেই নিজে উপার্জন করার আগ্রহ ছিল তীব্র। অসুস্থ স্বামীর অভাবের সংসার একার পক্ষে পরিচালনা করা কষ্টসাধ্য হওয়ায় নিজেই কৃষি কাজে মনযোগী হই। স্বামীর কৃষিজমি না থাকায় বাড়ির মধ্যেই শুরু করি পারিবারিক কৃষি কাজ। জলবায়ু সহনশীল বিভিন্ন পদ্ধতি দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ শুরু করি। যেমন- বস্তা পদ্ধতি, টাওয়ার পদ্ধতি, ঝুলন্ত ও সিঁড়ি পদ্ধতিতে বোম্বে মরিচ, লাউ, কুমড়া, শসা, করলাসহ রবি শস্য। এছাড়া গরু পালন করি। সবজি উৎপাদনে করে নিজের পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করে বছরে দেড় লাখ থেকে দুই লাখ টাকা আয় করে থাকি। এছাড়াও গরুর গোবর দিয়ে ভার্মি কম্পোস্ট সার উৎপাদন করে প্রতি মাসে ৩৫ থেকে ৫০ কেজি বিক্রি করি এবং কেঁচো উৎপাদন করে তাও বিক্রি করি। শুধু সিজনে বোম্বে মরিচ ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা বিক্রি করে লাভবান হই।

তিনি আরও বলেন, আমি সিসিডিবিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নিজের দক্ষতা অর্জন করেছি এবং বিভিন্ন সংস্থার মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষণে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মশালায় অংশগ্রহণ করি। আমি কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনা দেখলে তার প্রতিবাদ করি। আইনি সহায়তাসহ অনেকেই আমার কাছে বিভিন্ন পরামর্শের জন্য আসলে চেষ্টা করি সহযোগিতা করার জন্য।

স্থানীয় নারী হালিমা বলেন, অভাব অনটনে কাটতো রুবি সংসার। কিন্তু তার বাড়ির জমিতে বিভিন্ন সবজি চাষ করে প্রতি মাসে ভালো টাকা আয় করে। তাকে দেখে অনেক নারীরা পতিত জমিতে সবজি চাষ করছি এবং তার কাছ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ নিচ্ছি।

সিসিডিবি’র ইনগেজ প্রকল্পের প্রোগ্রাম অফিসার অভিজিৎ মজুমদার রতন বলেন, একটা সময় রুবিকে কেউ চিনতো না, তিনি মানুষের সামনে কথাও বলতে পারতেন না। বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে কথা বলতে পারছেন এখন নিজেই প্রশিক্ষক। রুবি একজন সফল কৃষক এবং উদ্যোক্তা। একজন নারী হয়েও এতো পরিশ্রম করতে পারেন তা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

পাথরঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রোকনুজ্জামান খান বলেন, প্রতি ঘরে রুবির মতো নারী উদ্যোক্তা দরকার। তাহলে কোনো অভাব থাকবে না। এমন নারীদের আরও প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি করা দরকার। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহযোগিতা থাকবে।