London ০১:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

আসলেই কি পাখির আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে দ. কোরীয় উড়োজাহাজটি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

দক্ষিণ কোরিয়ার বেসরকারি বিমান সংস্থা জেজু এয়ারের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে অন্তত ১৭৯ জন আরোহীর প্রাণহানি ঘটেছে। দেশটির প্রশাসন ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা উড়োজাহাজটির বিধ্বস্তের পেছনে পাখির আঘাতকে কারণ হিসাবে জানালেও তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাণঘাতী এই বিমান দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণের সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের অনুপস্থিতি, দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ৭৩৭-৮০০ বোয়িংয়ের বেলি-ল্যান্ডিং এবং সম্ভাব্য পাখির আঘাতের ঘটনা ঘিরে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তার জবাব এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে উড়োজাহাজটির রানওয়েতে অবতরণের সময় ল্যান্ডিং গিয়ার দেখা যায়নি। রানওয়েতে দ্রুতগতিতে চলা উড়োজাহাজটিকে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়তে দেখা যায়। এর পরপরই সেটি রানওয়ের প্রাচীরে সজোরে আঘাত হানে। এতে মুহূর্তের মধ্যে উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় সামনের অংশ।

dhakapost

রোববার থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় উদ্দেশে ১৮১ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল জেজু এয়ারের ফ্লাইট ৭সি২২১৬। জেজু এয়ারের এই উড়োজাহাজে ১৭৫ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উড়োজাহাজটি। এতে ১৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দু’জনকে জীবিত উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এয়ারলাইন নিউজের সম্পাদক জিওফ্রে থমাস বলেন, ‘‘কেন দমকল কর্মীরা রানওয়েতে ফোম ফেললেন না? উড়োজাহাজটি যখন রানওয়ে ছুঁয়েছিল, তখন কেন তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না? উড়োজাহাজটি কেন রানওয়ের এতটা নিচে নেমে গিয়েছিল? এবং কেন রানওয়ের শেষের দিকে ইটের প্রাচীর ছিল?’’

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্তে সম্ভাব্য পাখির আঘাতসহ অন্যান্য বিষয়কে আমলে নেওয়া হচ্ছে।

দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, উড়োজাহাজের ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডারটি দুর্ঘটনার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১১টায় এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডারটি দুপুর ২টা ২৪মিনিটে পাওয়া গেছে।

থমাস বলেন, এর ফলে উড়োজাহাজের সব ধরনের ব্যবস্থাপনার তথ্য পাওয়া যাবে। উড়োজাহাজের হার্টবিট ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডারে থাকে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় কী ঘটেছে তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিশ্লেষণ মিলবে ভয়েস রেকর্ডারে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এর এক মিনিটের মধ্যে পাইলটরা মেডে ঘোষণা এবং জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেন। যদিও উড়োজাহাজটি কোনও পাখিকে আঘাত করেছিল কি না, সেটি স্পষ্ট নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পাখির আঘাতের কারণে ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম বলেই মনে হচ্ছে। থমাস বলেন, উড়োজাহাজে পাখির আঘাত অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া আন্ডারক্যারেজ সমস্যাও অস্বাভাবিক নয়। উড়োজাহাজে প্রায়ই পাখির আঘাত ঘটে। সাধারণত পাখির আঘাত উড়োজাহাজের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয় না।

dhakapost

অস্ট্রেলিয়ার এয়ারলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে ডেল বলেন, ‘‘আমি কখনই পাখির আঘাতের কারণে ল্যান্ডিং গিয়ার আটকে যেতে দেখিনি।’’ অস্ট্রেলিয়ান বিমানবিষয়ক পরামর্শক ট্রেভর জেনসেন বলেছেন, দমকল ও জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলো সাধারণত উড়োজাহাজের বেলি-ল্যান্ডিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে। যে কারণে এটি অপরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে।

জিওফ্রে ডেল বলেন, পাখির আঘাত উড়োজাহাজের সিএএফএম ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে; যদি ইঞ্জিনের বাতাসের টানে পাখির ঝাঁক সেখানে ঢুকে যায়। এটি সরাসরি ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে পারে না। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পাইলটরা কিছুটা সময় পান।

অস্ট্রেলীয় এই দুই বিশেষজ্ঞ বলেন, রানওয়ে ছুঁয়ে ফেলার পর কেন বিমানটির গতি কমেনি তা স্পষ্ট নয়। থমাস বলেন, সাধারণত বেলি-ল্যান্ডিংয়ের সময় উড়োজাহাজ ইঞ্জিনের ওপর ভর করে অবতরণ করে। এর মানে উড়োজাহাজটি বিপর্যয়ের মাঝে অবতরণ করতে যাচ্ছে।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৩:১৬:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪
১৭
Translate »

আসলেই কি পাখির আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে দ. কোরীয় উড়োজাহাজটি?

আপডেট : ০৩:১৬:১৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৪

দক্ষিণ কোরিয়ার বেসরকারি বিমান সংস্থা জেজু এয়ারের একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্তে অন্তত ১৭৯ জন আরোহীর প্রাণহানি ঘটেছে। দেশটির প্রশাসন ও বিমানবন্দরের কর্মকর্তারা উড়োজাহাজটির বিধ্বস্তের পেছনে পাখির আঘাতকে কারণ হিসাবে জানালেও তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। এর ফলে দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাণঘাতী এই বিমান দুর্ঘটনার কারণ নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।

মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রানওয়েতে অবতরণের সময় ল্যান্ডিং গিয়ারের অনুপস্থিতি, দুই ইঞ্জিন বিশিষ্ট ৭৩৭-৮০০ বোয়িংয়ের বেলি-ল্যান্ডিং এবং সম্ভাব্য পাখির আঘাতের ঘটনা ঘিরে যেসব প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, তার জবাব এখনও পাওয়া যাচ্ছে না।

স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে উড়োজাহাজটির রানওয়েতে অবতরণের সময় ল্যান্ডিং গিয়ার দেখা যায়নি। রানওয়েতে দ্রুতগতিতে চলা উড়োজাহাজটিকে রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়তে দেখা যায়। এর পরপরই সেটি রানওয়ের প্রাচীরে সজোরে আঘাত হানে। এতে মুহূর্তের মধ্যে উড়োজাহাজটিতে আগুন ধরে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় সামনের অংশ।

dhakapost

রোববার থাইল্যান্ডের ব্যাংকক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় উদ্দেশে ১৮১ যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল জেজু এয়ারের ফ্লাইট ৭সি২২১৬। জেজু এয়ারের এই উড়োজাহাজে ১৭৫ জন যাত্রী ও ৬ জন ক্রু ছিলেন। দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে উড়োজাহাজটি। এতে ১৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। দু’জনকে জীবিত উদ্ধারের পর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

এয়ারলাইন নিউজের সম্পাদক জিওফ্রে থমাস বলেন, ‘‘কেন দমকল কর্মীরা রানওয়েতে ফোম ফেললেন না? উড়োজাহাজটি যখন রানওয়ে ছুঁয়েছিল, তখন কেন তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না? উড়োজাহাজটি কেন রানওয়ের এতটা নিচে নেমে গিয়েছিল? এবং কেন রানওয়ের শেষের দিকে ইটের প্রাচীর ছিল?’’

দক্ষিণ কোরিয়ার কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা এই উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্ত শুরু করেছেন। তদন্তে সম্ভাব্য পাখির আঘাতসহ অন্যান্য বিষয়কে আমলে নেওয়া হচ্ছে।

দেশটির পরিবহন মন্ত্রণালয় বলেছে, উড়োজাহাজের ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডারটি দুর্ঘটনার প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর সকাল সাড়ে ১১টায় এবং ককপিট ভয়েস রেকর্ডারটি দুপুর ২টা ২৪মিনিটে পাওয়া গেছে।

থমাস বলেন, এর ফলে উড়োজাহাজের সব ধরনের ব্যবস্থাপনার তথ্য পাওয়া যাবে। উড়োজাহাজের হার্টবিট ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডারে থাকে। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় কী ঘটেছে তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিশ্লেষণ মিলবে ভয়েস রেকর্ডারে।

কর্মকর্তারা বলেছেন, কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিমানবন্দরের কন্ট্রোল টাওয়ারের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজে পাখির আঘাতের বিষয়ে সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এর এক মিনিটের মধ্যে পাইলটরা মেডে ঘোষণা এবং জরুরি অবতরণের চেষ্টা করেন। যদিও উড়োজাহাজটি কোনও পাখিকে আঘাত করেছিল কি না, সেটি স্পষ্ট নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পাখির আঘাতের কারণে ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত কম বলেই মনে হচ্ছে। থমাস বলেন, উড়োজাহাজে পাখির আঘাত অস্বাভাবিক কিছু নয়। এছাড়া আন্ডারক্যারেজ সমস্যাও অস্বাভাবিক নয়। উড়োজাহাজে প্রায়ই পাখির আঘাত ঘটে। সাধারণত পাখির আঘাত উড়োজাহাজের ক্ষয়ক্ষতির কারণ হয় না।

dhakapost

অস্ট্রেলিয়ার এয়ারলাইন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জিওফ্রে ডেল বলেন, ‘‘আমি কখনই পাখির আঘাতের কারণে ল্যান্ডিং গিয়ার আটকে যেতে দেখিনি।’’ অস্ট্রেলিয়ান বিমানবিষয়ক পরামর্শক ট্রেভর জেনসেন বলেছেন, দমকল ও জরুরি পরিষেবা সংস্থাগুলো সাধারণত উড়োজাহাজের বেলি-ল্যান্ডিংয়ের জন্য প্রস্তুত থাকে। যে কারণে এটি অপরিকল্পিত বলে মনে হচ্ছে।

জিওফ্রে ডেল বলেন, পাখির আঘাত উড়োজাহাজের সিএএফএম ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনগুলোকে প্রভাবিত করতে পারে; যদি ইঞ্জিনের বাতাসের টানে পাখির ঝাঁক সেখানে ঢুকে যায়। এটি সরাসরি ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে পারে না। তবে পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য পাইলটরা কিছুটা সময় পান।

অস্ট্রেলীয় এই দুই বিশেষজ্ঞ বলেন, রানওয়ে ছুঁয়ে ফেলার পর কেন বিমানটির গতি কমেনি তা স্পষ্ট নয়। থমাস বলেন, সাধারণত বেলি-ল্যান্ডিংয়ের সময় উড়োজাহাজ ইঞ্জিনের ওপর ভর করে অবতরণ করে। এর মানে উড়োজাহাজটি বিপর্যয়ের মাঝে অবতরণ করতে যাচ্ছে।