London ০১:০১ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ঢাকা জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে আমীরে জামায়াত

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

নির্বাচনের সুষ্পষ্ট ঘোষণা হলে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে- Dr. Shafiqur Rahman

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্পষ্ট ঘোষণা দেয়ার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সরকার নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুস্পষ্ট কথা এখনো বলেননি। সংস্কারকে দ্রæত এগিয়ে নিন। ক্রমান্বয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষণাটাও দিয়ে দিন। ঘোষণাটা হলে মানুষের মধ্যে একটি আস্থা তৈরী হবে। এই সরকার আবার মইন ইউ সরকারের মতো নতুন দল গঠন করে ক্ষমতায় আসার অভিলাস প্রকাশ করবে না। এ সরকারের কেউ যদি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হতে চান, তাহলে তাদেরকে এ সরকার থেকে চলে যাওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিবেশীদের প্রতি অন্যায়ের হাত বাড়াতে চাই না। প্রতিবেশীরাও আমাদের প্রতি হাত বাড়ালে বরদাশত করা হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। চাঁদাবাজি বন্ধ করা ও বাজার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে কেরানীগঞ্জে ইকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আফজাল হোসাইনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল মান্নান, এডভোকেট মশিউল আলম, নারায়নগঞ্জ মহানগর আমীর আব্দুল জাব্বার, নরসিংদী জেলা আমীর মাওলানা মোছলেহ উদ্দিন, মুন্সিগঞ্জ জেলা আমীর আজম রুহুল কুদ্দুস, ঢাকা জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ শাহিনুল ইসলাম, ঢাকা জেলা জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ কামাল হোসাইন, মো: শাহাদাত হোসাইন, কবিরুজ্জামান, হাসান মাহবুব, অধ্যক্ষ হারুন অর রশদি, দেলোয়ার হোসাইন, আব্দুর রহিম মজুমদার, মাহবুবুর রহমান, আবু সুফিয়ান প্রমুখ। সস্মেলনে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ও ¯েøাগানে মুখরিত ছিল। সকাল থেকেই নেতাকর্মী বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে মিছিলসহকারে হাজির হয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, বিগত সাড়ে ১৭ বছর জাতি ফ্যাসিবাদি শাসনের অধীনে ছিল। ফ্যাসিবাদের যখন পতন হয় তখন মজলুম মানুষ আর তাদেরকে গ্রহণ করে না। দেশের বুকে তখন তাদের থাকার সৎ সাহস হয় না। মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা পালিয়ে গেছে। এর পরে যারা এসেছিল তারাও পালিয়ে গেছে। যারা অসংখ্য অপকর্ম করে, তাদের নৈতিক কোন সাহস থাকে না মানুষের সামনে দাঁড়ানোর। তারা পালায়। তাদের পতন হয় অত্যন্ত অপমানজনকভাবে।

তিনি বলেন, জনগণ একটি পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে। তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিয়েছে। সমাজ বৈষম্যে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বিগত ১৭ বছরের জঞ্জালের একটিও এখনো যায়নি। কেন? স্বৈরাচার তো পালিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কেন মুক্ত হতে পারলাম না। এর জবাব ১৮ কোটি মানুষের সামনে আছে। আমাদের দুই হাজারের মতো সন্তান জীবন দিয়েছেন। আমাদের সন্তানেরা রাস্তায় নেমেছিল, চাঁদাবাজি, দখলদারী ও জুলুম বন্ধ করতে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি কি বন্ধ হয়েছে? হয়নি। তা বন্ধ করতে হবে। থামাতে হবে। আমাদের সন্তানরা কারো ফলস জমিদারি তৈরী করার জন্য রক্ত দেয় নাই। চাঁদাবাজি ও দখলবাজীর চেয়ে ভিক্ষা করা উত্তম বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। এ জন্য সরকার সহযোগিতা চাইলে জামায়াত সহযোগিতা করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশী মজলুম সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর উপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে। সকল অফিস বন্ধ করা হয়েছে। অসংখ্য নেতকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, পঙ্গু করা হয়েছে। অবশেষে নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমরা ধৈর্য ধরেছি। আল্লাহ ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে আমাদের নেয়ামত দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিলে আমরা সেবক হবো। মালিক হবো না। আমরা অতীতে প্রমাণ দেখিয়েছি। বিগত ৫৩ বছরের ইতিহাসে আমাদের দুইজন মন্ত্রী এমন ছিলেন তাদেরকে টেলিস্কোপ দিয়ে কোন দুর্নীতি ও অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। তাদের দুজনের ৪ হাতের ২০টি আঙ্গুল ছিল পরিচ্ছন্ন।

জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা কোন প্রতিবেশীর হক নষ্ট করতে চাই না। কোন প্রতিবেশীর প্রতি অন্যায়ের ও জুলুমের হাত বাড়াতে চাই না। সন্ত্রাসীর হাত বাড়াতে চাই না। আমরা এটাও অপছন্দ করি, কেউ যেন আমাদের দিকেও হাত না বাড়ায়। আমরা কখনো এটা বরদাশত করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। জামায়াতই একমাত্র দল, যারা কখনো কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করে নাই। যারা আল্লাহকে সেজদা দেয় তারা অন্য কারো কাছে মাথা নত করে না।

অন্তর্বর্তী সরকারকে আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যারা আছেন তারা নিজেরা ক্ষমতায় বসেননি। তারা বিপ্লবের ফসল। তাদেরকে মজলুম জনগণ এখানে বসিয়েছেন। আপনারা আল্লাহকে ভয় করে স্বচ্ছ থাকুন। জনগণকে হতাশ করবেন না। দুই নাম্বার আহবান, যা কিছু ন্যায্য ন্যায়সঙ্গত তা কোন সংকোচ ছাড়াই করে যান। জনগণ আপনাদের পেছনে আছেন। দেশ হোক বিদেশ হোক কারো কোন চাপ ও চোখ রাঙানিকে পাত্তাই দেবেন না। কিন্তু এগুলোকে পাত্তা দিয়ে জনগণের আমানত নষ্ট করলে জনগণও আপনাদেরকে ছাড় দেবে না। জায়গায় জায়গায় এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের ছাড় দেয়া যাবে না।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সাড়ে ১৭ বছর ধৈর্য ধরেছি। জাতির স্বার্থে আরেকটু ধৈর্য ধরার জন্য প্রস্তুত আছি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের ভেতরে অস্থিরতা নেই। ক্ষমতা হলো আমানতের বিষয়। সাড়ে ১৭ বছরে যে জঞ্জাল তৈরী হয়েছে তা দূর না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমরা যেনতেন নির্বাচন চাই না। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা লাঠি, মাসেল ও মানি প্রভাবিত কোন নির্বাচন চাই না।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরাও জুলুমের শিকার হয়েছেন। আশা করি মজলুম হিসেবে তারা দেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মান করবেন। যৌক্তিক সময়ের চেয়ে একটি মিনিটও বেশি নেবেন না। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বছরের শেষে ও পরের বছরের মধ্যখানে নির্বাচন হতে পারে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। আর তিনি নির্বাচনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুস্পষ্ট কথা এখনো বলেননি। আমরা বলবো সংস্কারকে দ্রæত এগিয়ে নিন। ক্রমান্বয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষনাটাও দিয়ে দিন। আজকেই দাবি করছি না, তবে ঘোষণাটা হলে মানুষের মধ্যে একটি আস্থা তৈরী হবে। এই সরকার আবার মইন ইউ সরকারের মতো নতুন দল গঠন করে ক্ষমতায় সবার অভিলাস প্রকাশ করবে না। এ সরকারের কেউ যদি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হতে চান, তাহলে তাদের দায়িত্ব হবে এ সরকার থেকে চলে যাওয়া। তারা সরকার থেকে চলে গিয়ে দল গঠন করলে সেটি হবে স্বচ্ছতা। কারণ এ সরকারে দলবাজ কেউ থাকুক এটা আমরা চাই না। আমরা চাই এটা হোক জনমানুষের সরকার। এরপরে জনগণের ভোটে যারা আসবে তারা হবে দলীয় সরকার। দলীয় সরকার আসবে কিন্তু দায়িত্ব পালন করবে জনগণের।

বাজার সিন্ডিকেট সর্ম্পকে তিনি বলেন, এখনো সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও ভাঙতে হবে। যদি হাত বদল হয়ে থাকে তাহলে তা অবশ করে দেয়া হোক। তারা জনগণের দুশমন। এদেশের মানুষ আর কারো ভাড়াটিয়া হবে না। মানুষ সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে।

তিনি ইসলামী দলগুলো সর্ম্পকে বলেন, সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে ইসলামী দলগুলো। হেফাজতের নেতাকর্মীদেরকে কিভাবে হত্যা করেছে জনগন তা দেখেছে। ৫ আগষ্টের পর ৪দিন কোন সরকার ছিল না। এই চারদিন ইসলামী দলের নেত কর্মীরা জনগনকে পাহারা দিয়ে প্রমাণ দিয়েছে। ইসলামী দলের নেতকর্মীরা কোথাও কারো কাছে চাঁদাবাজি করে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সবাই সমান অধিকার পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীরা সবাই সম্মান পাবে। কারো উপর কোন পোশাক চাপিয়ে দেয়া হবে না। একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন হবে। তিনি নেতাকর্মীদেরকে সকল কাজ সহিহ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা, জ্ঞান অর্জন করা, সকল চ্যালেঞ্জ আল্লাহর উপর ভরসা করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মোকাবেলা করার জন্য তৈরী হতে আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, অন্যায় অবিচার বন্ধ করতে চাইলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে হবে। ন্যায় ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে পারে এক মাত্র ইসলাম। সকল তন্ত্র মন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে আযানে শব্দে। তারা কুরআনের শাসন চায়। কুরআনের শাসন কায়েম হলে মানুষ মুক্তি পাবে। নারীরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে।

তিনি আরো বলেন, এখনো স্বৈরাচার তাদের হাল ছেড়ে দেয়নি। এদেশের জনগনকে অতন্ত্র প্রহরীর মতো দেশ পাহারা দিতে হবে যাতে করে ওরা আর ফিরে আসতে না পারে

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৪৬:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
১৭
Translate »

ঢাকা জেলা জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে আমীরে জামায়াত

আপডেট : ০২:৪৬:৪৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

 

নির্বাচনের সুষ্পষ্ট ঘোষণা হলে মানুষের মধ্যে আস্থা তৈরি হবে- Dr. Shafiqur Rahman

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সুষ্পষ্ট ঘোষণা দেয়ার আহবান জানিয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, সরকার নির্বাচনের ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুস্পষ্ট কথা এখনো বলেননি। সংস্কারকে দ্রæত এগিয়ে নিন। ক্রমান্বয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষণাটাও দিয়ে দিন। ঘোষণাটা হলে মানুষের মধ্যে একটি আস্থা তৈরী হবে। এই সরকার আবার মইন ইউ সরকারের মতো নতুন দল গঠন করে ক্ষমতায় আসার অভিলাস প্রকাশ করবে না। এ সরকারের কেউ যদি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হতে চান, তাহলে তাদেরকে এ সরকার থেকে চলে যাওয়ার জন্য তিনি আহবান জানান। তিনি আরো বলেন, আমরা প্রতিবেশীদের প্রতি অন্যায়ের হাত বাড়াতে চাই না। প্রতিবেশীরাও আমাদের প্রতি হাত বাড়ালে বরদাশত করা হবে না বলে তিনি হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করেন। চাঁদাবাজি বন্ধ করা ও বাজার সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহবান জানান।

গতকাল শুক্রবার ঢাকা জেলা জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে কেরানীগঞ্জে ইকুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ঢাকা জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি মাওলানা আফজাল হোসাইনের পরিচালনায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আব্দুল মান্নান, এডভোকেট মশিউল আলম, নারায়নগঞ্জ মহানগর আমীর আব্দুল জাব্বার, নরসিংদী জেলা আমীর মাওলানা মোছলেহ উদ্দিন, মুন্সিগঞ্জ জেলা আমীর আজম রুহুল কুদ্দুস, ঢাকা জেলা নায়েবে আমীর অধ্যক্ষ শাহিনুল ইসলাম, ঢাকা জেলা জামায়াত নেতা অধ্যক্ষ কামাল হোসাইন, মো: শাহাদাত হোসাইন, কবিরুজ্জামান, হাসান মাহবুব, অধ্যক্ষ হারুন অর রশদি, দেলোয়ার হোসাইন, আব্দুর রহিম মজুমদার, মাহবুবুর রহমান, আবু সুফিয়ান প্রমুখ। সস্মেলনে হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ও ¯েøাগানে মুখরিত ছিল। সকাল থেকেই নেতাকর্মী বিভিন্ন ব্যানার নিয়ে মিছিলসহকারে হাজির হয়েছে।

ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, বিগত সাড়ে ১৭ বছর জাতি ফ্যাসিবাদি শাসনের অধীনে ছিল। ফ্যাসিবাদের যখন পতন হয় তখন মজলুম মানুষ আর তাদেরকে গ্রহণ করে না। দেশের বুকে তখন তাদের থাকার সৎ সাহস হয় না। মঈন উদ্দিন-ফখরুদ্দিনরা পালিয়ে গেছে। এর পরে যারা এসেছিল তারাও পালিয়ে গেছে। যারা অসংখ্য অপকর্ম করে, তাদের নৈতিক কোন সাহস থাকে না মানুষের সামনে দাঁড়ানোর। তারা পালায়। তাদের পতন হয় অত্যন্ত অপমানজনকভাবে।

তিনি বলেন, জনগণ একটি পরিবর্তনের জন্য জীবন দিয়েছে। তারা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য বৈষম্য দূর করার জন্য জীবন দিয়েছে। সমাজ বৈষম্যে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। বিগত ১৭ বছরের জঞ্জালের একটিও এখনো যায়নি। কেন? স্বৈরাচার তো পালিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা কেন মুক্ত হতে পারলাম না। এর জবাব ১৮ কোটি মানুষের সামনে আছে। আমাদের দুই হাজারের মতো সন্তান জীবন দিয়েছেন। আমাদের সন্তানেরা রাস্তায় নেমেছিল, চাঁদাবাজি, দখলদারী ও জুলুম বন্ধ করতে। চাঁদাবাজি, দখলবাজি কি বন্ধ হয়েছে? হয়নি। তা বন্ধ করতে হবে। থামাতে হবে। আমাদের সন্তানরা কারো ফলস জমিদারি তৈরী করার জন্য রক্ত দেয় নাই। চাঁদাবাজি ও দখলবাজীর চেয়ে ভিক্ষা করা উত্তম বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি চাঁদাবাজি বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান। এ জন্য সরকার সহযোগিতা চাইলে জামায়াত সহযোগিতা করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশী মজলুম সংগঠন উল্লেখ করে তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামীর উপর সবচেয়ে বেশি জুলুম করা হয়েছে। শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছে। সকল অফিস বন্ধ করা হয়েছে। অসংখ্য নেতকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, পঙ্গু করা হয়েছে। অবশেষে নিবন্ধন ও প্রতীক কেড়ে নিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। আমরা ধৈর্য ধরেছি। আল্লাহ ৫ আগস্ট স্বৈরাচারের পতনের মাধ্যমে আমাদের নেয়ামত দিয়েছেন।

তিনি আরো বলেন, আল্লাহ আমাদেরকে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ দিলে আমরা সেবক হবো। মালিক হবো না। আমরা অতীতে প্রমাণ দেখিয়েছি। বিগত ৫৩ বছরের ইতিহাসে আমাদের দুইজন মন্ত্রী এমন ছিলেন তাদেরকে টেলিস্কোপ দিয়ে কোন দুর্নীতি ও অপরাধ প্রমাণ করতে পারেনি। তাদের দুজনের ৪ হাতের ২০টি আঙ্গুল ছিল পরিচ্ছন্ন।

জামায়াতের আমীর বলেন, আমরা কোন প্রতিবেশীর হক নষ্ট করতে চাই না। কোন প্রতিবেশীর প্রতি অন্যায়ের ও জুলুমের হাত বাড়াতে চাই না। সন্ত্রাসীর হাত বাড়াতে চাই না। আমরা এটাও অপছন্দ করি, কেউ যেন আমাদের দিকেও হাত না বাড়ায়। আমরা কখনো এটা বরদাশত করিনি, ভবিষ্যতেও করবো না। জামায়াতই একমাত্র দল, যারা কখনো কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করে নাই। যারা আল্লাহকে সেজদা দেয় তারা অন্য কারো কাছে মাথা নত করে না।

অন্তর্বর্তী সরকারকে আহŸান জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার যারা আছেন তারা নিজেরা ক্ষমতায় বসেননি। তারা বিপ্লবের ফসল। তাদেরকে মজলুম জনগণ এখানে বসিয়েছেন। আপনারা আল্লাহকে ভয় করে স্বচ্ছ থাকুন। জনগণকে হতাশ করবেন না। দুই নাম্বার আহবান, যা কিছু ন্যায্য ন্যায়সঙ্গত তা কোন সংকোচ ছাড়াই করে যান। জনগণ আপনাদের পেছনে আছেন। দেশ হোক বিদেশ হোক কারো কোন চাপ ও চোখ রাঙানিকে পাত্তাই দেবেন না। কিন্তু এগুলোকে পাত্তা দিয়ে জনগণের আমানত নষ্ট করলে জনগণও আপনাদেরকে ছাড় দেবে না। জায়গায় জায়গায় এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা বসে আছে। তাদের বিতাড়িত করতে হবে। তারা এখনো ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ষড়যন্ত্রকারীদের ছাড় দেয়া যাবে না।

নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা সাড়ে ১৭ বছর ধৈর্য ধরেছি। জাতির স্বার্থে আরেকটু ধৈর্য ধরার জন্য প্রস্তুত আছি। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমাদের ভেতরে অস্থিরতা নেই। ক্ষমতা হলো আমানতের বিষয়। সাড়ে ১৭ বছরে যে জঞ্জাল তৈরী হয়েছে তা দূর না করলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব নয়। আমরা যেনতেন নির্বাচন চাই না। আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা লাঠি, মাসেল ও মানি প্রভাবিত কোন নির্বাচন চাই না।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্বশীলরাও জুলুমের শিকার হয়েছেন। আশা করি মজলুম হিসেবে তারা দেশের ১৮ কোটি মানুষকে সম্মান করবেন। যৌক্তিক সময়ের চেয়ে একটি মিনিটও বেশি নেবেন না। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, আগামী বছরের শেষে ও পরের বছরের মধ্যখানে নির্বাচন হতে পারে। ইতোমধ্যে নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। আর তিনি নির্বাচনের বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়েছেন। সুস্পষ্ট কথা এখনো বলেননি। আমরা বলবো সংস্কারকে দ্রæত এগিয়ে নিন। ক্রমান্বয়ে সুষ্পষ্ট ঘোষনাটাও দিয়ে দিন। আজকেই দাবি করছি না, তবে ঘোষণাটা হলে মানুষের মধ্যে একটি আস্থা তৈরী হবে। এই সরকার আবার মইন ইউ সরকারের মতো নতুন দল গঠন করে ক্ষমতায় সবার অভিলাস প্রকাশ করবে না। এ সরকারের কেউ যদি রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত হতে চান, তাহলে তাদের দায়িত্ব হবে এ সরকার থেকে চলে যাওয়া। তারা সরকার থেকে চলে গিয়ে দল গঠন করলে সেটি হবে স্বচ্ছতা। কারণ এ সরকারে দলবাজ কেউ থাকুক এটা আমরা চাই না। আমরা চাই এটা হোক জনমানুষের সরকার। এরপরে জনগণের ভোটে যারা আসবে তারা হবে দলীয় সরকার। দলীয় সরকার আসবে কিন্তু দায়িত্ব পালন করবে জনগণের।

বাজার সিন্ডিকেট সর্ম্পকে তিনি বলেন, এখনো সিন্ডিকেট ভাঙা সম্ভব হয়নি। এটাও ভাঙতে হবে। যদি হাত বদল হয়ে থাকে তাহলে তা অবশ করে দেয়া হোক। তারা জনগণের দুশমন। এদেশের মানুষ আর কারো ভাড়াটিয়া হবে না। মানুষ সবাই সমান অধিকার ভোগ করবে।

তিনি ইসলামী দলগুলো সর্ম্পকে বলেন, সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে ইসলামী দলগুলো। হেফাজতের নেতাকর্মীদেরকে কিভাবে হত্যা করেছে জনগন তা দেখেছে। ৫ আগষ্টের পর ৪দিন কোন সরকার ছিল না। এই চারদিন ইসলামী দলের নেত কর্মীরা জনগনকে পাহারা দিয়ে প্রমাণ দিয়েছে। ইসলামী দলের নেতকর্মীরা কোথাও কারো কাছে চাঁদাবাজি করে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।

জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় গেলে সবাই সমান অধিকার পাবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নারীরা সবাই সম্মান পাবে। কারো উপর কোন পোশাক চাপিয়ে দেয়া হবে না। একটি ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন হবে। তিনি নেতাকর্মীদেরকে সকল কাজ সহিহ নিয়তে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করা, জ্ঞান অর্জন করা, সকল চ্যালেঞ্জ আল্লাহর উপর ভরসা করে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে মোকাবেলা করার জন্য তৈরী হতে আহবান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাইফুল আলম খান মিলন বলেন, অন্যায় অবিচার বন্ধ করতে চাইলে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে হবে। ন্যায় ভিত্তিক সমাজ কায়েম করতে পারে এক মাত্র ইসলাম। সকল তন্ত্র মন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। এদেশের মানুষের ঘুম ভাঙে আযানে শব্দে। তারা কুরআনের শাসন চায়। কুরআনের শাসন কায়েম হলে মানুষ মুক্তি পাবে। নারীরা তাদের অধিকার ফিরে পাবে।

তিনি আরো বলেন, এখনো স্বৈরাচার তাদের হাল ছেড়ে দেয়নি। এদেশের জনগনকে অতন্ত্র প্রহরীর মতো দেশ পাহারা দিতে হবে যাতে করে ওরা আর ফিরে আসতে না পারে