পর্যটকে ভরপুর কক্সবাজার, খালি নেই হোটেল
দীর্ঘদিন পর স্বরূপে ফিরেছে কক্সবাজারের পর্যটন। পর্যটকে ভরপুর গোটা সৈকত। খালি নেই হোটেল-মোটেল। অনেকটা ফুরফুরে মেজাজে রয়েছেন পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত কক্সবাজারে এমন পর্যটক অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, তারকা মানের হোটেলসহ নানা ক্যাটাগরির পাঁচ শতাধিক হোটেল রয়েছে। এসব আবাসনে দৈনিক এক লাখ ৩০ হাজার পর্যটক থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। বৃহস্পতিবার থেকে গড়ে সোয়া লাখ পর্যটক কক্সবাজার অবস্থান করছেন। আগামী ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পর্যটকের এমন উপস্থিতি আশা করা যায়।
ট্যুর অপারেটর ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) সভাপতি মো. রেজাউল করিম বলেন, সমুদ্র সৈকত ছাড়াও কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ, দরিয়ানগর পর্যটন স্পট, হিমছড়ির ঝরনা, পাথুরে সৈকত ইনানী-পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সমুদ্রসৈকত, প্রেমের নিদর্শন মাথিন কূপ, নেচার পার্ক, ডুলাহাজারা সাফারি পার্ক, রামুর বৌদ্ধ বিহারসহ বিনোদন কেন্দ্রগুলো পর্যটকে সরগরম।
সকালে সুগন্ধা পয়েন্টে এবং বিকেলে ইনানী ও অন্য পয়েন্টে গিয়ে দেখা গেছে, কুয়াশার মাঝেও বেলাভূমিতে মানুষের পদচারণা প্রচুর। শীত উপেক্ষা করে নোনা জলে গা ভিজাচ্ছেন অনেকে। কেউ জেট স্কি নিয়ে ঢেউ মাড়াচ্ছেন। ঘোড়ার পিঠে বেলাভূমির এদিক-সেদিক ঘুরছেন কেউ কেউ। বিচ বাইকে চক্কর মারছেন অনেকে। উপস্থিত পর্যটকদের নিরাপত্তায় সতর্ক দৃষ্টি রাখছেন টুরিস্ট পুলিশের সদস্যরা।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোট থেকে আসা ফরিদ উদ্দিন (৪৩) বলেন, অনেক বছর পর পরিবার নিয়ে কক্সবাজার এসেছি। এদিন বিকেলে এবং সোমবার সকাল হতে সৈকতে ভ্রমণ পিয়াসীদের ভিড় লেগে আছে। যারা অগ্রিম হোটেল বুকিং না দিয়ে এসেছে তারা পরিবার নিয়ে বিপদে পড়েছে। নিয়মের চেয়ে বেশি ভাড়া দিতে চেয়েও অনেকেই রুম ভাড়া পাচ্ছেন না।
নারায়ণগঞ্জের আয়েশা ফারুকী (২৫) বলেন, ছুটির দিনে পর্যটকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় হোটেলের রুম ভাড়ায় তেমন ছাড় মেলেনি। রেস্তোরাঁসহ সবখানেই জ্যাম। তাই দামের ক্ষেত্রে কেউ ছাড় দিচ্ছেন না।
পর্যটন উদ্যোক্তা আব্দুর রহমান বলেন, মিয়ানমারের রাখাইনে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকি থাকায় টেকনাফ-সেন্ট মার্টিন নৌপথে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। তবে, কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ-জেটি ঘাট থেকে একাধিক জাহাজে দৈনিক দুই হাজার পর্যটক সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ভ্রমণে যাচ্ছেন। জাহাজের টিকেট নিশ্চিত করলেই অনলাইন নিবন্ধন সম্পন্ন করে ভ্রমণ পাস মিলছে।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের ম্যানেজার (ফ্রন্ট অফিস) আবদুল হান্নান বলেন, চলতি সপ্তাহের শুরু হতে শহরের হোটেল-মোটেল রিসোর্ট ও কটেজে রুমের চাহিদা বেড়েছে। গত আটমাস একপ্রকার শূন্য যাওয়া পর্যটন ব্যবসায় বিগত কয়েকদিন ধরে প্রাণ ফিরেছে। এরপরও আমরা রুম ভাড়ায় এখনো সাধ্যমতো ছাড় দিচ্ছি। তবে, আমাদের অনেক পর্যটক আগাম বুকিং দিয়েই এসেছেন। তাই, এখন এসে রুম চাইলে দুঃখপ্রকাশ ছাড়া কিছুই করা থাকছে না।
তারকা হোটেল কক্স-টু ডের সহকারী মহাব্যবস্থাপক আবু তালেব শাহ বলেন, হোটেল কক্ষ খালি যাচ্ছে না। এ অবস্থা আরও সপ্তাহ-দশ দিন থাকবে।
একই অবস্থা লাবনী পয়েন্টের হোটেল মিশুক, মিডিয়া ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল কল্লোল, অভিসার, তারকা হোটেল সি-গাল, সুগন্ধা পয়েন্টের লেগুনা বিচ, সি-নাইট, অস্টার ইকো, ইউনিক রিসোর্ট, ডায়মন্ড প্যালেস, ইকরা বিচ রিসোর্ট, কলাতলীর সায়মান বিচ রিসোর্টসহ পাঁচ শতাধিক হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউস-রিসোর্ট ও কটেজের। কলাতলী ছাড়াও মেরিন ড্রাইভের কিনারে গড়ে তোলা হোটেল-কটেজেও কক্ষ ভাড়ায় কোনো ছাড় দেওয়া কিংবা ওয়াকিং পর্যটকরা রুম পাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার হোটেল-রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের মুখপাত্র সহকারী পুলিশ সুপার আবুল কালাম বলেন, লাখো পর্যটকের নিরাপত্তা নিশ্চিতে টুরিস্ট পুলিশের ৮৫ জন সদস্যকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সবার সতর্কতার কারণে এখনো পর্যন্ত কোনো হয়রানি কিংবা দুর্ঘটনার খবর আসেনি।
জেলা পুলিশের মুখপাত্র ও ট্র্যাফিক পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পর্যটকবাহী কয়েক হাজার যানবাহন (বাস, মাইক্রো, কার-জিপ) শহরে অবস্থান করায় কলাতলী ডলফিন মোড়, বাইপাস সড়ক, প্রধান সড়কের বাজারঘাটে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। যানজট নিরসনে কাজ করছেন অর্ধশতাধিক পুলিশ।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন বলেন, পর্যটকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত কক্ষ ভাড়া কিংবা খাবারের মূল্য আদায়ের অভিযোগ পেলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব বিষয় তদারকি করতে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত মাঠে রয়েছে।