London ০২:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ১০ গুণীজন মেডিকেলে ভর্তির টাকা এখনো জোগাড় হয়নি ইমার যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেশার কুকারে রান্না করলেন সাবেক সৈনিক খোলাবাজার থেকে ১০ হাজার বিনামূল্যের পাঠ্যবই জব্দ, গ্রেপ্তার ২ শেরপুরে মাধ্যমিকের ৯ হাজার সরকারি বই জব্দ! আটক ১ মেডিকেলে চান্স পেয়েও অর্থের অভাবে ডাক্তারী লেখা পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রান্তি ও পরিবার খাগড়াছড়িতে একক আধিপত্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার, গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ নোয়াখালীতে শর্টসার্কিটের আগুনে পুড়ে ছাই ১১ দোকান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন উন্নত হচ্ছে : ইসি মাছউদ

কার ভাগ্যে হোয়াইট হাউজ ট্রাম্প না কমলা

জাতীয়ভাবে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার দৌড়ে পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছেন কমলা ও ট্রাম্প। মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর নির্বাচনের দিন হলেও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আগাম ভোট গ্রহণ আগেই শুরু হয়েছে এবং শনিবার রাত ৯টা নাগাদ প্রায় ৮ কোটি ভোট (সশরীরে কেন্দ্রে এবং ডাকযোগে) জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। আর এভাবেই এবারের নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা দৃশ্যমান হচ্ছে। কারণ, এ নির্বাচনের ফলাফলের ওপর মার্কিন গণতন্ত্রের গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হবে।

তথ্য-প্রযুক্তির জগতে যুক্তরাষ্ট্রের মুরুব্বিয়ানার সীমা-পরিসীমা সম্পর্কেও জানা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা এ নির্বাচনে ইতিহাস তৈরি হবে, হোয়াইট হাউজে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট অধিষ্ঠিত হলে, অথবা নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে ক্যাপিটল হিলে হামলাসহ গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ ব্যক্তি আবারো হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে ফৌজদারি আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি কারাগারের পরিবর্তে বিশ্বনেতার মুকুট পরিহিত হবেন বলে রাজনৈতিক ও সমাজ-বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে গণতন্ত্রের সত্যিকারের রূপ উদ্ভাসিত হবে বিশ্বচরাচরে এ প্রত্যাশা আমেরিকানদের।  কমলা এবং ট্রাম্প উভয়েই নিজের বিজয় নিশ্চিতের জন্য সভা-সমাবেশ করছেন। পাশাপাশি আগের মতো বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও উঠে আসছে জয়-পরাজয়ের নানা আভাস। যদিও গত কয়েকটি নির্বাচনে জরিপের ফলাফল শতভাগ দৃশ্যমান হয়নি, তবুও প্রার্থীগণকে তৎপরতায় উজ্জীবিত রাখতে জরিপগুলো অপরিসীম ভূমিকা রাখে। সর্বশেষ জরিপে রিপাবলিকান স্টেট আইওয়াতে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা এগিয়ে গেছেন। আইওয়ায় ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত ডে মইন রেজিস্টার ও মিডিয়াকমের জরিপে ৮০৮ জন সম্ভাব্য ভোটার অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ হ্যারিসের পক্ষে ও ৪৪ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন জানান। এই জরিপে সম্ভাব্য গ্রহণযোগ্য ভুলের মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর আগে সেপ্টেম্বরে আইওয়ায় পরিচালিত আরেকটি জরিপে ট্রাম্প ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বলে ডে মইন রেজিস্টার সংবাদপত্র জানিয়েছে। এ স্টেটে যে প্রার্থীই জয়ী হবেন অঙ্গরাজ্যের ছয়টি ইলেকটোরাল ভোট তার পক্ষে যাবে।

হোয়াইট হাউজে যেতে হলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে। বাংলাদেশের সিলেট সদরের মতো আইওয়া হচ্ছে এমন একটি স্টেট, যেখানে বিজয়ী প্রার্থীই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হয়ে আসছেন।  

নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তের প্রচারে উভয় দল দোদুল্যমান হিসেবে পরিচিত স্টেটগুলোতে বেশি জোর দিচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, মিশিগান, উইসকনসিন, অ্যারিজোনা ও নেভাদা- এ সাতটি স্টেট দোদুল্যমান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত মুসলিম আমেরিকান ভোটারের বড় একটি অংশের সমর্থন কমলা নিজের পক্ষে আনতে সক্ষম হননি। আগের প্রায় সবকটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা মুসলিম আমেরিকার সিংহভাগ ভোট পেয়েছেন। বাইডেন-কমলার গাজা ও লেবানন নীতিতে বিরাগভাজন হয়েছেন মুসলিম আমেরিকানরা। ফলে জাতীয়ভাবে জরিপে এগিয়ে থাকা কমলার পক্ষে দোদুল্যমান ৭ স্টেটের ইলেকটোরাল ভোট বাগিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে উঠেছে বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা মন্তব্য করেছেন। তবে উচ্চ শিক্ষিত এবং স্বনির্ভর বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ নারীর বড় একটি অংশ শেষ মুহূর্তে কমলার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন-একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা।  

এই ৭ স্টেটের ওপর পরিচালিত সর্বশেষ জরিপের ফলাফল অনুযায়ী (শনিবার) নেভাদা, জর্জিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিনে কমলা হ্যারিস এবং অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। পেনসিলভেনিয়া স্টেটে উভয় প্রার্থী সমানে সমান।  

নানাভাবে বিতর্কিত এবং সমালোচিত ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করা নিয়ে ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিসের কেন এতো দুশ্চিন্তা? কেন আমেরিকানদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় ঘটছে না সামগ্রিক অর্থে? কেন ট্রাম্পের বিজয়ের প্রত্যাশা ক্রমে জোরালো হচ্ছে? ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে মানুষের ভুলো মনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বের কয়েকটি দেশের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবির জের পড়তে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও-এমন একটি ধারণা পেয়ে বসেছে অনেককে। তাদের ধারণা ভোটাররা পরিবর্তনে প্রত্যাশী। নতুন কিছু পেতে চান সকলেই। এর উদাহরণ হচ্ছে ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান। ক্ষমতাসীন পার্টি জয় পায়নি এসব দেশের সর্বশেষ নির্বাচনে। চার বছর আগেও ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছেন। ফ্রেঞ্চ এবং কানাডার নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা জয়ী হবেন-তা অনেকে ভাবছেন না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে এমন আশঙ্কা সঠিক হয়েছে বলে শোনা যায়নি। তবে করোনার ধাক্কা সামলে নেয়ার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তথা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি সচেতন আমেরিকানরা সন্তুষ্ট নন এবং কমলা হ্যারিস বাইডেনের কর্মসূচিকেই প্রাধান্য দেয়ার কথা আকারে-ইঙ্গিতে বলছেন বলে ট্রাম্পের বিজয় ত্বরান্বিত হতে পারে-ভাবনা ভোটারের বড় একটি অংশের। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা এবং সীমান্তকে ওপেন করে ২২ লক্ষাধিক বিদেশীকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার অবিশ্বাস্য সুযোগ তৈরি করার খেসারত দিতে হচ্ছে কমলাকে-এমন মতামত অনেক জরিপে প্রকাশিত হয়েছে। ট্রাম্প আমলে অর্থনৈতিক অবস্থা গুরুত্ব পাচ্ছে স্বল্প ও মাঝারি আয়ের ভোটারের কাছে।  

এবারের নির্বাচনে মার্কিন মুল্লুকে অনেক আলোচিত-সমালোচিত ট্রাম্পের পরবর্তী জীবনের ভাগ্যও নির্ধারিত হবে। ট্রাম্পের ভাগ্য প্রেসিডেন্ট পদ ও কারাবাসের ঝুঁকির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। জিতলে তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন; আর হেরে গেলে তাকে কারাগারে যেতে হতে পারে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র কোডের অ্যাক্সেস পাওয়া প্রথম দোষী সাব্যস্ত অপরাধী। তার হোটেল ও ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ে নানা অভিযোগ আছে; তার বিরুদ্ধে আছে কর জালিয়াতির অভিযোগও। তাই যদি তিনি বিজয় থেকে ছিটকে পড়েন, তাহলে ৭৮ বছরের ট্রাম্পকে আরও অপমানজনক আদালতের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে; এমনকি কারাগারেও যেতে হতে পারে। এটি হবে তার মোহনীয় জীবনের সমাপ্তি, যে জীবনে তিনি সবসময় আইন ও জবাবদিহিতাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলা হচ্ছে, মঙ্গলবার দিনটি কার্যত ট্রাম্পের জন্য রায়ের দিন।  

বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের সর্বশেষ বিশ্লেষণ অনুযায়ী আমেরিকার উদ্যমী উদ্যোক্তার ভোট যে প্রার্থী বেশি পাবে তার ভাগ্যেই জুটবে বিজয় মুকুট। এক্ষেত্রে ৪০ বছরের কম বয়সী যুব সমাজের মনোভাব উপস্থাপনকালে ম্যাগাজিনটি বলেছে যে, গত নির্বাচনে জো বাইডেন এই শ্রেণীর পুরুষ ভোটারের সমর্থন পেয়েছিলেন। এবার সে চেষ্টা করছেন কমলা হ্যারিস। কিন্তু বাইডেনের দুর্বল এবং সিদ্ধান্তহীন অনেক পদক্ষেপে স্বনির্ভরতায় বিশ্বাসী পুরুষ যুবকেরা কমলার প্রতি আস্থা রাখতে চাচ্ছেন না।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ১২:৪৮:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪
২৬
Translate »

কার ভাগ্যে হোয়াইট হাউজ ট্রাম্প না কমলা

আপডেট : ১২:৪৮:৪৮ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩ নভেম্বর ২০২৪

জাতীয়ভাবে হোয়াইট হাউজে যাওয়ার দৌড়ে পরস্পরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লড়ছেন কমলা ও ট্রাম্প। মঙ্গলবার ৫ নভেম্বর নির্বাচনের দিন হলেও যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আগাম ভোট গ্রহণ আগেই শুরু হয়েছে এবং শনিবার রাত ৯টা নাগাদ প্রায় ৮ কোটি ভোট (সশরীরে কেন্দ্রে এবং ডাকযোগে) জমা পড়েছে বলে জানা গেছে। আর এভাবেই এবারের নির্বাচনটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা দৃশ্যমান হচ্ছে। কারণ, এ নির্বাচনের ফলাফলের ওপর মার্কিন গণতন্ত্রের গতি-প্রকৃতি নির্ধারিত হবে।

তথ্য-প্রযুক্তির জগতে যুক্তরাষ্ট্রের মুরুব্বিয়ানার সীমা-পরিসীমা সম্পর্কেও জানা যাবে। সবচেয়ে বড় কথা এ নির্বাচনে ইতিহাস তৈরি হবে, হোয়াইট হাউজে প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট অধিষ্ঠিত হলে, অথবা নির্বাচনের ফলাফল পাল্টে দিতে ক্যাপিটল হিলে হামলাসহ গণতন্ত্রের জন্য মারাত্মক হুমকিস্বরূপ ব্যক্তি আবারো হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। শুধু তাই নয়, ডোনাল্ড ট্রাম্প জয়ী হলে ফৌজদারি আদালতে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তি কারাগারের পরিবর্তে বিশ্বনেতার মুকুট পরিহিত হবেন বলে রাজনৈতিক ও সমাজ-বিশ্লেষকেরা মন্তব্য করেছেন। সবকিছু মিলিয়ে গণতন্ত্রের সত্যিকারের রূপ উদ্ভাসিত হবে বিশ্বচরাচরে এ প্রত্যাশা আমেরিকানদের।  কমলা এবং ট্রাম্প উভয়েই নিজের বিজয় নিশ্চিতের জন্য সভা-সমাবেশ করছেন। পাশাপাশি আগের মতো বিভিন্ন সংস্থার জরিপেও উঠে আসছে জয়-পরাজয়ের নানা আভাস। যদিও গত কয়েকটি নির্বাচনে জরিপের ফলাফল শতভাগ দৃশ্যমান হয়নি, তবুও প্রার্থীগণকে তৎপরতায় উজ্জীবিত রাখতে জরিপগুলো অপরিসীম ভূমিকা রাখে। সর্বশেষ জরিপে রিপাবলিকান স্টেট আইওয়াতে ট্রাম্পের চেয়ে কমলা এগিয়ে গেছেন। আইওয়ায় ২৮ থেকে ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পরিচালিত ডে মইন রেজিস্টার ও মিডিয়াকমের জরিপে ৮০৮ জন সম্ভাব্য ভোটার অংশ নেন। তাদের মধ্যে ৪৭ শতাংশ হ্যারিসের পক্ষে ও ৪৪ শতাংশ ভোটার ট্রাম্পের পক্ষে সমর্থন জানান। এই জরিপে সম্ভাব্য গ্রহণযোগ্য ভুলের মাত্রা ধরা হয়েছে ৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এর আগে সেপ্টেম্বরে আইওয়ায় পরিচালিত আরেকটি জরিপে ট্রাম্প ৪ পয়েন্ট ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন বলে ডে মইন রেজিস্টার সংবাদপত্র জানিয়েছে। এ স্টেটে যে প্রার্থীই জয়ী হবেন অঙ্গরাজ্যের ছয়টি ইলেকটোরাল ভোট তার পক্ষে যাবে।

হোয়াইট হাউজে যেতে হলে একজন প্রার্থীকে অন্তত ২৭০টি ইলেকটোরাল কলেজ ভোট পেতে হবে। বাংলাদেশের সিলেট সদরের মতো আইওয়া হচ্ছে এমন একটি স্টেট, যেখানে বিজয়ী প্রার্থীই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে জয়ী হয়ে আসছেন।  

নির্বাচনের আগে শেষ মুহূর্তের প্রচারে উভয় দল দোদুল্যমান হিসেবে পরিচিত স্টেটগুলোতে বেশি জোর দিচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে পেনসিলভেনিয়া, জর্জিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা, মিশিগান, উইসকনসিন, অ্যারিজোনা ও নেভাদা- এ সাতটি স্টেট দোদুল্যমান হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। শনিবার পর্যন্ত মুসলিম আমেরিকান ভোটারের বড় একটি অংশের সমর্থন কমলা নিজের পক্ষে আনতে সক্ষম হননি। আগের প্রায় সবকটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থীরা মুসলিম আমেরিকার সিংহভাগ ভোট পেয়েছেন। বাইডেন-কমলার গাজা ও লেবানন নীতিতে বিরাগভাজন হয়েছেন মুসলিম আমেরিকানরা। ফলে জাতীয়ভাবে জরিপে এগিয়ে থাকা কমলার পক্ষে দোদুল্যমান ৭ স্টেটের ইলেকটোরাল ভোট বাগিয়ে নেয়া কঠিন হয়ে উঠেছে বলে নির্বাচন পর্যবেক্ষকেরা মন্তব্য করেছেন। তবে উচ্চ শিক্ষিত এবং স্বনির্ভর বয়স্ক শ্বেতাঙ্গ নারীর বড় একটি অংশ শেষ মুহূর্তে কমলার প্রতি ঝুঁকে পড়েছেন-একে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন পর্যবেক্ষকেরা।  

এই ৭ স্টেটের ওপর পরিচালিত সর্বশেষ জরিপের ফলাফল অনুযায়ী (শনিবার) নেভাদা, জর্জিয়া, মিশিগান এবং উইসকনসিনে কমলা হ্যারিস এবং অ্যারিজোনা ও নর্থ ক্যারোলিনায় ট্রাম্প এগিয়ে আছেন। পেনসিলভেনিয়া স্টেটে উভয় প্রার্থী সমানে সমান।  

নানাভাবে বিতর্কিত এবং সমালোচিত ট্রাম্পকে ধরাশায়ী করা নিয়ে ডেমোক্র্যাট কমলা হ্যারিসের কেন এতো দুশ্চিন্তা? কেন আমেরিকানদের মধ্যে শুভবুদ্ধির উদয় ঘটছে না সামগ্রিক অর্থে? কেন ট্রাম্পের বিজয়ের প্রত্যাশা ক্রমে জোরালো হচ্ছে? ইত্যাদি প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে মানুষের ভুলো মনকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বিশ্বের কয়েকটি দেশের নির্বাচনে ক্ষমতাসীনদের ভরাডুবির জের পড়তে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও-এমন একটি ধারণা পেয়ে বসেছে অনেককে। তাদের ধারণা ভোটাররা পরিবর্তনে প্রত্যাশী। নতুন কিছু পেতে চান সকলেই। এর উদাহরণ হচ্ছে ব্রিটেন, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া এবং জাপান। ক্ষমতাসীন পার্টি জয় পায়নি এসব দেশের সর্বশেষ নির্বাচনে। চার বছর আগেও ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছেন। ফ্রেঞ্চ এবং কানাডার নির্বাচনেও ক্ষমতাসীনরা জয়ী হবেন-তা অনেকে ভাবছেন না। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের নির্বাচনে এমন আশঙ্কা সঠিক হয়েছে বলে শোনা যায়নি। তবে করোনার ধাক্কা সামলে নেয়ার আগেই রাশিয়া-ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তথা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি সচেতন আমেরিকানরা সন্তুষ্ট নন এবং কমলা হ্যারিস বাইডেনের কর্মসূচিকেই প্রাধান্য দেয়ার কথা আকারে-ইঙ্গিতে বলছেন বলে ট্রাম্পের বিজয় ত্বরান্বিত হতে পারে-ভাবনা ভোটারের বড় একটি অংশের। বিশেষ করে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে চরম ব্যর্থতা এবং সীমান্তকে ওপেন করে ২২ লক্ষাধিক বিদেশীকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকে পড়ার অবিশ্বাস্য সুযোগ তৈরি করার খেসারত দিতে হচ্ছে কমলাকে-এমন মতামত অনেক জরিপে প্রকাশিত হয়েছে। ট্রাম্প আমলে অর্থনৈতিক অবস্থা গুরুত্ব পাচ্ছে স্বল্প ও মাঝারি আয়ের ভোটারের কাছে।  

এবারের নির্বাচনে মার্কিন মুল্লুকে অনেক আলোচিত-সমালোচিত ট্রাম্পের পরবর্তী জীবনের ভাগ্যও নির্ধারিত হবে। ট্রাম্পের ভাগ্য প্রেসিডেন্ট পদ ও কারাবাসের ঝুঁকির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। জিতলে তিনি প্রেসিডেন্ট হবেন; আর হেরে গেলে তাকে কারাগারে যেতে হতে পারে। উল্লেখ্য, ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র কোডের অ্যাক্সেস পাওয়া প্রথম দোষী সাব্যস্ত অপরাধী। তার হোটেল ও ক্যাসিনো ব্যবসা নিয়ে নানা অভিযোগ আছে; তার বিরুদ্ধে আছে কর জালিয়াতির অভিযোগও। তাই যদি তিনি বিজয় থেকে ছিটকে পড়েন, তাহলে ৭৮ বছরের ট্রাম্পকে আরও অপমানজনক আদালতের বিচারের মুখোমুখি হতে হবে; এমনকি কারাগারেও যেতে হতে পারে। এটি হবে তার মোহনীয় জীবনের সমাপ্তি, যে জীবনে তিনি সবসময় আইন ও জবাবদিহিতাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছেন। তাই বলা হচ্ছে, মঙ্গলবার দিনটি কার্যত ট্রাম্পের জন্য রায়ের দিন।  

বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনের সর্বশেষ বিশ্লেষণ অনুযায়ী আমেরিকার উদ্যমী উদ্যোক্তার ভোট যে প্রার্থী বেশি পাবে তার ভাগ্যেই জুটবে বিজয় মুকুট। এক্ষেত্রে ৪০ বছরের কম বয়সী যুব সমাজের মনোভাব উপস্থাপনকালে ম্যাগাজিনটি বলেছে যে, গত নির্বাচনে জো বাইডেন এই শ্রেণীর পুরুষ ভোটারের সমর্থন পেয়েছিলেন। এবার সে চেষ্টা করছেন কমলা হ্যারিস। কিন্তু বাইডেনের দুর্বল এবং সিদ্ধান্তহীন অনেক পদক্ষেপে স্বনির্ভরতায় বিশ্বাসী পুরুষ যুবকেরা কমলার প্রতি আস্থা রাখতে চাচ্ছেন না।