London ০৩:১২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম:
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেলেন ১০ গুণীজন মেডিকেলে ভর্তির টাকা এখনো জোগাড় হয়নি ইমার যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেশার কুকারে রান্না করলেন সাবেক সৈনিক খোলাবাজার থেকে ১০ হাজার বিনামূল্যের পাঠ্যবই জব্দ, গ্রেপ্তার ২ শেরপুরে মাধ্যমিকের ৯ হাজার সরকারি বই জব্দ! আটক ১ মেডিকেলে চান্স পেয়েও অর্থের অভাবে ডাক্তারী লেখা পড়া নিয়ে দুশ্চিন্তা প্রান্তি ও পরিবার খাগড়াছড়িতে একক আধিপত্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার, গড়েছেন হাজার কোটি টাকার সম্পদ নোয়াখালীতে শর্টসার্কিটের আগুনে পুড়ে ছাই ১১ দোকান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন উন্নত হচ্ছে : ইসি মাছউদ

বিদেশি পাসপোর্টে হাজার কোটি লুট

হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম (এস আলম), পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সিআইডি ও দুদকসূত্রে জানা গেছে, বহুল আলোচিত এসব ব্যক্তির প্রত্যেকে বিদেশি পাসপোর্টধারী। বিদেশি পাসপোর্ট নিয়ে হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন তাঁরা। এস আলমের আছে সাইপ্রাসের পাসপোর্ট, মতিউর রহমান, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের আছে কানাডার পাসপোর্ট এবং নজরুল ইসলাম মজুমদারের আছে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট।সিআইডি বলছে, এস আলম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এস আলমসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে এক দিনের ব্যবধানে বিদেশি নাগরিক হিসেবে আবার বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের (পিআর) অনুমতি গ্রহণ করেছেন। তাঁরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিজের ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ করেছেন। তবে দুদকসূত্র জানান, এস আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন অনেক আগেই সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নিয়ে ওই দেশের পাসপোর্ট নিয়েছেন। সিআইডির তথ্যানুযায়ী, এস আলম ও তাঁর সহযোগীরা পাচার করা অর্থে সিঙ্গাপুরে ২ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন। পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগের নামে ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

অন্যদিকে দুদক জানায়, গত বছরের নভেম্বরে ইসলামী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে তারা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। গত বছর ডিসেম্বরেও ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় তারা। এর মধ্যে মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪ কোটি, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৪ কোটি ও সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহীর কয়েকটি শাখা থেকেও বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া দুদক জানায়, দেশের ব্যাংক খাতসহ শেয়ারবাজার লুটপাটে অন্যতম অভিযুক্ত পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটের মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নাফিজ সরাফাত এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে। ২২ আগস্ট তাঁর বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পিএলসির মালিকানায়ও যুক্ত। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। তিনি গত এক দশকে হোটেল ব্যবসা, বিদ্যুৎ, মোবাইলের টাওয়ার, মিডিয়াসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছেন। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পুলিশ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে পদ্মা ব্যাংক দখল করেছিলেন। ইতোমধ্যে তাঁর সব অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদকের আরেক সূত্র জানান, মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত জাভেদ মতিন ২০২০ সালের বড় একটি সময়জুড়ে প্রতারণা করে হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন সোর্সিং কোম্পানি মিং গ্লোবাল লিমিটেড থেকে ১৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিনিয়োগের ছদ্মবেশে ওই অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংস আইএনসি নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানির দুটি ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৮ লাখ ডলার শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে এবং আরেকটি অংশ একটি বাংলাদেশি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়; যে কোম্পানির পেছনেও তিনিই আছেন। ২০২০ সালের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ওই কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে ২ লাখ ৭৮ হাজার ডলার শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। মোনার্ক হোল্ডিংস থেকে আরও প্রায় ৫ লাখ ৬৪ হাজার ডলার জিন বাংলা ফেব্রিকস নামে একটি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। ২২ আগস্ট শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, তাঁর ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামসহ ১১ ব্যক্তির সব বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান সরকারি চাকরি করে দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এরই মধ্যে দেশেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। সরকারি চাকরি করা অবস্থায়ই নিয়েছেন কানাডার নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান জানান, ট্রেড বেইসড মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ডলার পাচারের অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়েছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ইমন হোসেন গাজী হত্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা মামলায় নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে তিনি ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া প্রায় দেড় দশক ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ৫ আগস্টের পর তাঁকে সে দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৪:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
২৭
Translate »

বিদেশি পাসপোর্টে হাজার কোটি লুট

আপডেট : ০৪:১৬:৪৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪

হাজার কোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম (এস আলম), পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক সদস্য মতিউর রহমান এবং নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে পৃথক অনুসন্ধান করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এবং দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

সিআইডি ও দুদকসূত্রে জানা গেছে, বহুল আলোচিত এসব ব্যক্তির প্রত্যেকে বিদেশি পাসপোর্টধারী। বিদেশি পাসপোর্ট নিয়ে হাজার কোটি টাকা লুট করেছেন তাঁরা। এস আলমের আছে সাইপ্রাসের পাসপোর্ট, মতিউর রহমান, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের আছে কানাডার পাসপোর্ট এবং নজরুল ইসলাম মজুমদারের আছে যুক্তরাষ্ট্রের পাসপোর্ট।সিআইডি বলছে, এস আলম ও তাঁর সহযোগীদের বিরুদ্ধে ১ লাখ ১৩ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা বিদেশে পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু হয়েছে। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে এস আলমসহ সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা বাংলাদেশের নাগরিকত্ব বাতিল করে এক দিনের ব্যবধানে বিদেশি নাগরিক হিসেবে আবার বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের (পিআর) অনুমতি গ্রহণ করেছেন। তাঁরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সাইপ্রাস ও ইউরোপে বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করে নিজের ও তাঁদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ করেছেন। তবে দুদকসূত্র জানান, এস আলম ও তাঁর স্ত্রী ফারজানা পারভীন অনেক আগেই সাইপ্রাসের নাগরিকত্ব নিয়ে ওই দেশের পাসপোর্ট নিয়েছেন। সিআইডির তথ্যানুযায়ী, এস আলম ও তাঁর সহযোগীরা পাচার করা অর্থে সিঙ্গাপুরে ২ কোটি ২৩ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার পরিশোধিত মূলধনের ক্যানালি লজিস্টিক প্রাইভেট লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠান করেছেন। পণ্য আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগের নামে ছয়টি ব্যাংক থেকে ৯৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।

অন্যদিকে দুদক জানায়, গত বছরের নভেম্বরে ইসলামী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে তারা। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। গত বছর ডিসেম্বরেও ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিনটি শাখা থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয় তারা। এর মধ্যে মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৫৪ কোটি, ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ৮৪ কোটি ও সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টসের ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ১১৯ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংকের রাজশাহীর কয়েকটি শাখা থেকেও বিপুল অঙ্কের টাকা সরিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া দুদক জানায়, দেশের ব্যাংক খাতসহ শেয়ারবাজার লুটপাটে অন্যতম অভিযুক্ত পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত। ব্যাংক দখল ও শেয়ারবাজার থেকে অর্থ লোপাটের মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) নাফিজ সরাফাত এবং তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করেছে। ২২ আগস্ট তাঁর বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সিআইডির তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি রেইস অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট পিএলসির মালিকানায়ও যুক্ত। কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের ট্রাস্টি বোর্ডেরও চেয়ারম্যান। তিনি গত এক দশকে হোটেল ব্যবসা, বিদ্যুৎ, মোবাইলের টাওয়ার, মিডিয়াসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসার বিস্তার ঘটিয়েছেন। এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে দুদকের এক কর্মকর্তা জানান, চৌধুরী নাফিজ সরাফাত পুলিশ ও একটি গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তাদের সহায়তা নিয়ে পদ্মা ব্যাংক দখল করেছিলেন। ইতোমধ্যে তাঁর সব অনিয়ম নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। দুদকের আরেক সূত্র জানান, মিলিয়ন ডলার জালিয়াতির সঙ্গে যুক্ত একটি ব্যাংক হিসাব থেকে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম অর্থ পেয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক কেলেঙ্কারিতে দোষী সাব্যস্ত জাভেদ মতিন ২০২০ সালের বড় একটি সময়জুড়ে প্রতারণা করে হংকংভিত্তিক সাপ্লাই চেইন সোর্সিং কোম্পানি মিং গ্লোবাল লিমিটেড থেকে ১৩ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিনিয়োগের ছদ্মবেশে ওই অর্থ মোনার্ক হোল্ডিংস আইএনসি নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি কোম্পানির দুটি ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। সেখান থেকে ৮ লাখ ডলার শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে এবং আরেকটি অংশ একটি বাংলাদেশি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়; যে কোম্পানির পেছনেও তিনিই আছেন। ২০২০ সালের জুন-জুলাইয়ের মধ্যে ওই কোম্পানির ব্যাংক হিসাব থেকে ২ লাখ ৭৮ হাজার ডলার শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের ব্যক্তিগত হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। মোনার্ক হোল্ডিংস থেকে আরও প্রায় ৫ লাখ ৬৪ হাজার ডলার জিন বাংলা ফেব্রিকস নামে একটি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে পাঠানো হয়। ২২ আগস্ট শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম, তাঁর ছেলে জুহায়ের সারার ইসলামসহ ১১ ব্যক্তির সব বিও (বেনিফিশিয়ারি ওনার্স) হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

দুদকের তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, এনবিআরের সাবেক সদস্য মতিউর রহমান সরকারি চাকরি করে দুই স্ত্রী, পাঁচ সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে গড়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ। এরই মধ্যে দেশেই প্রায় ৫০০ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদের হদিস মিলেছে। সরকারি চাকরি করা অবস্থায়ই নিয়েছেন কানাডার নাগরিকত্ব এবং পাসপোর্ট।

নাসা গ্রুপের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে সিআইডি। সংস্থার বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) আজাদ রহমান জানান, ট্রেড বেইসড মানি লন্ডারিংয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৩ মিলিয়ন বা ৩০ লাখ ডলার পাচারের অভিযোগ তদন্ত শুরু হয়েছে।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে ইমন হোসেন গাজী হত্যায় রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানায় করা মামলায় নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করে ডিবি পুলিশ। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে নজরুল ইসলাম মজুমদারকে সরিয়ে ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর আগে তিনি ২০০৭ সাল থেকে ব্যাংকটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন। এ ছাড়া প্রায় দেড় দশক ব্যাংক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন তিনি। ৫ আগস্টের পর তাঁকে সে দায়িত্ব থেকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।