London ০১:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

৫ আসামিকে নিয়ে লুকোচুরি, ৬ জন ডিবির রিমান্ডে

মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় গত শনিবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশছবি: পুলিশের সৌজন্যে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ১১ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে নিয়ে লুকোচুরি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারের ৫৭ ঘণ্টা (গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত) পরও এই পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়নি। অথচ কাউকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্য ছয় আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে সাতজনকে তাঁরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। একজনকে এখনো র‍্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তবে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ রাকিব খান রাত ১০টায় বলেন, ডিবির হেফাজতে থাকা ছয়জন সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন র‍্যাব হস্তান্তর করেছিল। এর বাইরে ডিবির কাছে কোনো আসামি নেই।

গত রোববার বেলা একটায় লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানিয়েছিলেন, মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনায় তাঁরা আটজনকে গ্রেপ্তার করেছেন, যাঁদের পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় জানায়নি র‍্যাব।

র‍্যাব সূত্র জানায়, এ ঘটনাটি র‍্যাব ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে তদন্ত করছে। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্র বলছে, এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করবে না।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ে বেড়িবাঁধ এলাকায় ব্যবসায়ী আবু বকরের বাসায় ডাকাতি হয়। পুলিশ ও বাসার বাসিন্দারা জানান, যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতেরা বাসায় ঢুকে ডাকাতি করেন। এ সময় ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট করা হয়। এ ঘটনায় আবু বকর শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। আবু বকর জমি ও ইট-বালু কেনাবেচার ব্যবসা করেন বলে জানায় পুলিশ।

মাইক্রোবাস ও ছোট কাভার্ড ভ্যান নিয়ে ডাকাতি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মোহাম্মদপুরে ডাকাতিতে জড়িত অন্তত ২০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে র‍্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের নাম জানা গেছে। বিষয়গুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে না।

ওই সূত্রমতে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সদস্যের পাশাপাশি সাধারণ অপরাধীদের যুক্ত করে ডাকাত চক্র গড়ে উঠেছে। কারও বাসায় নগদ টাকা আছে, এমন তথ্য পেলে চক্রের সদস্যরা যৌথ বাহিনীর নাম করে সেখানে যান। তাঁরা মাইক্রোবাস ও ছোট কাভার্ড ভ্যান নিয়ে যান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরিধানের পাশাপাশি ওয়াকিটকি ও ভারী অস্ত্র প্রদর্শন করতেন। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নগদ অর্থ ও বাসায় থাকা স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, তাঁরা একজন ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য পেয়েছে, যাঁর বনানীর বাসায় মোহাম্মদপুরে ডাকাতির টাকা ও স্বর্ণালংকার ভাগাভাগি হয়েছে। ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বাইরে এই চক্রে যেসব বেসামরিক লোক জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তারের দিকেই মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কেউ জড়িত থাকলে সেটি তদন্ত করে দেখছে র‍্যাব।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪
৪৫
Translate »

৫ আসামিকে নিয়ে লুকোচুরি, ৬ জন ডিবির রিমান্ডে

আপডেট : ০২:০৭:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪

মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় গত শনিবার তিনজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশছবি: পুলিশের সৌজন্যে

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ব্যবসায়ীর বাসায় ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ১১ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে নিয়ে লুকোচুরি করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেপ্তারের ৫৭ ঘণ্টা (গতকাল রাত ১০টা পর্যন্ত) পরও এই পাঁচ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়নি। অথচ কাউকে গ্রেপ্তার করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে পাঠানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। অন্য ছয় আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।

র‍্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বলেন, র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আটজনের মধ্যে সাতজনকে তাঁরা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন। একজনকে এখনো র‍্যাব হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তবে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মোহাম্মদ রাকিব খান রাত ১০টায় বলেন, ডিবির হেফাজতে থাকা ছয়জন সাত দিনের রিমান্ডে আছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজন র‍্যাব হস্তান্তর করেছিল। এর বাইরে ডিবির কাছে কোনো আসামি নেই।

গত রোববার বেলা একটায় লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস জানিয়েছিলেন, মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনায় তাঁরা আটজনকে গ্রেপ্তার করেছেন, যাঁদের পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। তাঁদের বিস্তারিত পরিচয় জানায়নি র‍্যাব।

র‍্যাব সূত্র জানায়, এ ঘটনাটি র‍্যাব ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে তদন্ত করছে। আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) সূত্র বলছে, এ বিষয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী কোনো মন্তব্য করবে না।

গত শুক্রবার দিবাগত রাত সোয়া তিনটার দিকে মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড়ে বেড়িবাঁধ এলাকায় ব্যবসায়ী আবু বকরের বাসায় ডাকাতি হয়। পুলিশ ও বাসার বাসিন্দারা জানান, যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ডাকাতেরা বাসায় ঢুকে ডাকাতি করেন। এ সময় ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট করা হয়। এ ঘটনায় আবু বকর শনিবার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন। আবু বকর জমি ও ইট-বালু কেনাবেচার ব্যবসা করেন বলে জানায় পুলিশ।

মাইক্রোবাস ও ছোট কাভার্ড ভ্যান নিয়ে ডাকাতি

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক সূত্র জানিয়েছে, মোহাম্মদপুরে ডাকাতিতে জড়িত অন্তত ২০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে র‍্যাবসহ বিভিন্ন বাহিনীতে কর্মরত সদস্যদের নাম জানা গেছে। বিষয়গুলো স্পর্শকাতর হওয়ায় প্রকাশ করা হচ্ছে না।

ওই সূত্রমতে, ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বর্তমান ও সাবেক কয়েকজন সদস্যের পাশাপাশি সাধারণ অপরাধীদের যুক্ত করে ডাকাত চক্র গড়ে উঠেছে। কারও বাসায় নগদ টাকা আছে, এমন তথ্য পেলে চক্রের সদস্যরা যৌথ বাহিনীর নাম করে সেখানে যান। তাঁরা মাইক্রোবাস ও ছোট কাভার্ড ভ্যান নিয়ে যান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পোশাক পরিধানের পাশাপাশি ওয়াকিটকি ও ভারী অস্ত্র প্রদর্শন করতেন। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল নগদ অর্থ ও বাসায় থাকা স্বর্ণালংকার হাতিয়ে নেওয়া।

ডিবির একটি সূত্র জানায়, তাঁরা একজন ব্যক্তির বিষয়ে তথ্য পেয়েছে, যাঁর বনানীর বাসায় মোহাম্মদপুরে ডাকাতির টাকা ও স্বর্ণালংকার ভাগাভাগি হয়েছে। ওই ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এর বাইরে এই চক্রে যেসব বেসামরিক লোক জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তারের দিকেই মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। আর বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক ও বর্তমান কেউ জড়িত থাকলে সেটি তদন্ত করে দেখছে র‍্যাব।