London ০১:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চলতি সপ্তাহেই বিশেষ তারল্য-সহায়তা দেওয়া হচ্ছে

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য–সহায়তা দিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির (নিশ্চয়তা) বিপরীতে তারল্য–সহায়তা পাবে। তারল্যের জোগান দেবে সবল ব্যাংকগুলো।

সরকার পরিবর্তনের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আগের মতো টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক টিকিয়ে রাখার পথ থেকে সরে এসেছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য–সহায়তা দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ইতিমধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। এ নিয়ে গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও কাজ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা। তাঁদের কেউ কেউ জানান, কোন সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো সহায়তা পাবে, তা নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। তা হয়ে গেলেই দুর্বল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি হবে এবং তারা তারল্য–সহায়তা পাবে। চলতি সপ্তাহেই এ সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব ব্যাংক থেকে টাকা লুটের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে টাকার জন্য ব্যাংকগুলোতে যাচ্ছেন। টাকা না পাওয়ায় অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এভাবে চললে ভালো ব্যাংকও আক্রান্ত হবে। এ জন্য তাদের চাপ সামলাতে অর্থসহায়তা দেওয়া হবে। আশা করা যায়, তারল্য–সহায়তা পেলে চাপ বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর এসব ব্যাংক পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোনো ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর পথ না দেখলে সেটিকে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি যোগ দিয়েই ব্যাংক খাতের সংস্কারে মনোযোগ দেন। যেসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান অনিয়ম–দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণহীন ছিল, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বদলে দেওয়া হয়। একে একে ১১টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেন নতুন গভর্নর। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, কমার্স, আল-আরাফাহ্, ন্যাশনাল, ইউসিবি, আইএফআইসি ও এক্সিম ব্যাংক এবং আভিভা ফাইন্যান্স। এর মধ্যে নয়টির নিয়ন্ত্রণ ছিল সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত এস আলম গ্রুপের হাতে। গ্রুপটির বিরুদ্ধে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে তারল্য–সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো।

এদিকে মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদে প্রশাসক বসানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর ক্ষুদ্র ও বড় সব ধরনের আমানতকারী টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে ভিড় করছেন। এতে বেশির ভাগ ব্যাংকে তারল্য–সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে সবাই টাকা পাচ্ছেন না। সে জন্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি থাকায় কয়েকটি ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ব্যাংকের গ্রাহকেরা এটিএম বুথ থেকেও টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ব্যাংকের পরিস্থিতি কী, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো করেই জানে। এ জন্য এই ব্যাংকের পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সহায়তা দিতে হবে। আমরা নিশ্চিত করতে পারি, আর কোনো অর্থের নয়ছয় হবে না। আমরা বলে দিয়েছি, আমানত যেই এলাকা থেকে আসবে, সেই এলাকাতেই বিনিয়োগ করতে হবে। এতে প্রত্যন্ত এলাকার উন্নয়ন হবে, আমানতকারীরাও স্বস্তি পাবে।’

এমন পরিস্থিতিতে ৮ আগস্ট গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংকগুলো যাতে তারল্য–সহায়তা পায়, সে জন্য তাদের আন্তব্যাংক থেকে ধার করার সুযোগ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ওই সব ব্যাংকের গ্যারান্টার হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো বিল-বন্ড বা জামানতের বিপরীতে টাকা ধার দেয়। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর সেই ধরনের জামানত না থাকায় এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করবে। যারা গ্যারান্টির বিপরীতে তারল্য–সহায়তা চায় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি হবে। আবার যারা গ্যারান্টির বিপরীতে তারল্য–সহায়তা দিতে চায় তাদের সঙ্গেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তি হবে। এর মাধ্যমে তিন মাস, ছয় মাস ও এক বছরের জন্য তারল্য–সহায়তা পাবে ব্যাংকগুলো। গ্যারান্টির বিপরীতে টাকা নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে ঋণ আদায় জোরদার করতে হবে। আয় অব্যাহত রাখতে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া যাবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক এ ব্যবস্থায় টাকা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে। আরও কয়েকটি ব্যাংক টাকা পেতে যোগাযোগ করেছে বলে জানা যায়।

সারা বিশ্বে সম্পদমূল্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকগুলো বিশেষ তারল্য–সহায়তা পায়। তবে দেশের দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর সম্পদমূল্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন উপায়ে এসব ব্যাংককে তারল্য–সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা পেলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা তোলার চাপ সামলানো গেলে পরে ব্যাংক পুনর্গঠনে মনোযোগ দেওয়া হবে। ব্যাংক থেকে আর কোনো টাকা বের হবে না, এটি নিশ্চিত করা হয়েছে।’

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা আশা করি, কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে না। প্রতিটি খারাপ ঋণকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে। নামে-বেনামে কে এটার মালিক, তা চিহ্নিত করা হবে। কোন পরিবার থেকে এটা নেওয়া হয়েছে, তাদের কী সম্পদ রয়েছে, তা-ও বের করা হবে। এরপর সেই সম্পদের দিকে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এই প্রক্রিয়া চলবে, এটাই চূড়ান্ত সমাধান।’

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৫:১৪:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
৭৬
Translate »

দুর্বল ব্যাংকগুলোকে চলতি সপ্তাহেই বিশেষ তারল্য-সহায়তা দেওয়া হচ্ছে

আপডেট : ০৫:১৪:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪

অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে যেসব ব্যাংক দুর্বল হয়ে পড়েছে, সেগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংক বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য–সহায়তা দিতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এসব ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্যারান্টির (নিশ্চয়তা) বিপরীতে তারল্য–সহায়তা পাবে। তারল্যের জোগান দেবে সবল ব্যাংকগুলো।

সরকার পরিবর্তনের পর নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আগের মতো টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক টিকিয়ে রাখার পথ থেকে সরে এসেছে। তবে বিশেষ ব্যবস্থায় তারল্য–সহায়তা দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি ইতিমধ্যে নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। এ নিয়ে গতকাল শনিবার ছুটির দিনেও কাজ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তারা। তাঁদের কেউ কেউ জানান, কোন সূচকের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলো সহায়তা পাবে, তা নির্ধারণের চেষ্টা চলছে। তা হয়ে গেলেই দুর্বল ব্যাংকগুলোর সঙ্গে চুক্তি হবে এবং তারা তারল্য–সহায়তা পাবে। চলতি সপ্তাহেই এ সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এসব ব্যাংক থেকে টাকা লুটের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষুদ্র আমানতকারীরা আতঙ্কিত হয়ে টাকার জন্য ব্যাংকগুলোতে যাচ্ছেন। টাকা না পাওয়ায় অনেক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এভাবে চললে ভালো ব্যাংকও আক্রান্ত হবে। এ জন্য তাদের চাপ সামলাতে অর্থসহায়তা দেওয়া হবে। আশা করা যায়, তারল্য–সহায়তা পেলে চাপ বন্ধ হয়ে যাবে। এরপর এসব ব্যাংক পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হবে। কোনো ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর পথ না দেখলে সেটিকে একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।

গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভর্নর হিসেবে নিয়োগ পান অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর। তিনি যোগ দিয়েই ব্যাংক খাতের সংস্কারে মনোযোগ দেন। যেসব ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান অনিয়ম–দুর্নীতির কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণহীন ছিল, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ বদলে দেওয়া হয়। একে একে ১১টি ব্যাংক ও ১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেন নতুন গভর্নর। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি, ইউনিয়ন, গ্লোবাল ইসলামী, কমার্স, আল-আরাফাহ্, ন্যাশনাল, ইউসিবি, আইএফআইসি ও এক্সিম ব্যাংক এবং আভিভা ফাইন্যান্স। এর মধ্যে নয়টির নিয়ন্ত্রণ ছিল সাবেক সরকারের ঘনিষ্ঠ বলে বিবেচিত এস আলম গ্রুপের হাতে। গ্রুপটির বিরুদ্ধে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। ফলে তারল্য–সংকটে পড়েছে ব্যাংকগুলো।

এদিকে মোবাইলে আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান নগদে প্রশাসক বসানো হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, পরিচালনা পর্ষদে পরিবর্তনের পর ক্ষুদ্র ও বড় সব ধরনের আমানতকারী টাকা তোলার জন্য ব্যাংকে ভিড় করছেন। এতে বেশির ভাগ ব্যাংকে তারল্য–সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। ফলে সবাই টাকা পাচ্ছেন না। সে জন্য আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ ছাড়া চলতি হিসাবে বড় ধরনের ঘাটতি থাকায় কয়েকটি ব্যাংকের চেক ক্লিয়ারিং সুবিধা বন্ধ হয়ে গেছে। এসব ব্যাংকের গ্রাহকেরা এটিএম বুথ থেকেও টাকা উত্তোলন করতে পারছেন না।

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই ব্যাংকের পরিস্থিতি কী, এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ভালো করেই জানে। এ জন্য এই ব্যাংকের পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সহায়তা দিতে হবে। আমরা নিশ্চিত করতে পারি, আর কোনো অর্থের নয়ছয় হবে না। আমরা বলে দিয়েছি, আমানত যেই এলাকা থেকে আসবে, সেই এলাকাতেই বিনিয়োগ করতে হবে। এতে প্রত্যন্ত এলাকার উন্নয়ন হবে, আমানতকারীরাও স্বস্তি পাবে।’

এমন পরিস্থিতিতে ৮ আগস্ট গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের জানান, ব্যাংকগুলো যাতে তারল্য–সহায়তা পায়, সে জন্য তাদের আন্তব্যাংক থেকে ধার করার সুযোগ করে দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ক্ষেত্রে ওই সব ব্যাংকের গ্যারান্টার হবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো বিল-বন্ড বা জামানতের বিপরীতে টাকা ধার দেয়। তবে দুর্বল ব্যাংকগুলোর সেই ধরনের জামানত না থাকায় এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংক গ্যারান্টার হিসেবে কাজ করবে। যারা গ্যারান্টির বিপরীতে তারল্য–সহায়তা চায় তাদের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের চুক্তি হবে। আবার যারা গ্যারান্টির বিপরীতে তারল্য–সহায়তা দিতে চায় তাদের সঙ্গেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চুক্তি হবে। এর মাধ্যমে তিন মাস, ছয় মাস ও এক বছরের জন্য তারল্য–সহায়তা পাবে ব্যাংকগুলো। গ্যারান্টির বিপরীতে টাকা নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ক্ষুদ্র আমানতকারীর টাকা ফেরত দেওয়া যাবে। একই সঙ্গে ঋণ আদায় জোরদার করতে হবে। আয় অব্যাহত রাখতে ক্ষুদ্রঋণ দেওয়া যাবে। ইতিমধ্যে কয়েকটি ব্যাংক এ ব্যবস্থায় টাকা চেয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে। আরও কয়েকটি ব্যাংক টাকা পেতে যোগাযোগ করেছে বলে জানা যায়।

সারা বিশ্বে সম্পদমূল্যের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংকগুলো বিশেষ তারল্য–সহায়তা পায়। তবে দেশের দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর সম্পদমূল্য ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। ফলে নতুন উপায়ে এসব ব্যাংককে তারল্য–সহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

জানতে চাইলে গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা পেলে আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব। ক্ষুদ্র আমানতকারীদের টাকা তোলার চাপ সামলানো গেলে পরে ব্যাংক পুনর্গঠনে মনোযোগ দেওয়া হবে। ব্যাংক থেকে আর কোনো টাকা বের হবে না, এটি নিশ্চিত করা হয়েছে।’

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা আশা করি, কোনো ব্যাংক দেউলিয়া হবে না। প্রতিটি খারাপ ঋণকে আলাদাভাবে মূল্যায়ন করা হবে। নামে-বেনামে কে এটার মালিক, তা চিহ্নিত করা হবে। কোন পরিবার থেকে এটা নেওয়া হয়েছে, তাদের কী সম্পদ রয়েছে, তা-ও বের করা হবে। এরপর সেই সম্পদের দিকে যাবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। এই প্রক্রিয়া চলবে, এটাই চূড়ান্ত সমাধান।’