London ০৪:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাউবোর এই স্বেচ্ছাচারিতা মানা যায় না

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের চরম ভুক্তভোগী খুলনার কয়রা উপজেলা। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা—এসব সমস্যায় জেরবার কয়রার বাসিন্দারা। সমুদ্র উপকূলীয় নদীঘেরা এ উপজেলার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম আমাদের কারও অজানা নয়। আমরা অবাক হই, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাচীর হিসেবে কাজ করা সেখানকার ৫০ হাজার গাছ বাঁধ নির্মাণের কাজের নামে কেটে ফেলা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতীরবর্তী প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ কাজ করতে গিয়ে গত আট মাসে সেখানকার অর্ধলাখ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারের দাবি, তাঁরা কোনো গাছ কাটছেন না। এলাকার লোকজন এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার স্থানীয় লোকজনের দাবি, পাউবোর লোকজনই তাঁদের গাছ কেটে নিয়ে যেতে বলেছেন।

মূলত কয়েক মাস আগে বাঁধ সংস্কারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রথমে ওই গাছ কাটা শুরু করেন। পরে এলাকার কিছু মানুষও যোগ দেন। এভাবে কয়েক মাসের মধ্যে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তার মানে এ গাছ কাটায় পাউবো আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল।

পাউবো বলছে, বাঁধ নির্মাণ শেষে বাঁধের পাশে পুনরায় গাছ রোপণ করা হবে। সেখানে আবারও বাগান হবে। এ জন্য বন বিভাগের সঙ্গে পাউবোর দুই কোটি টাকার একটি চুক্তিও হয়েছে। এ ছাড়া কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও চরে বনায়ন করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি টাকার বৃক্ষরোপণ করা হবে বাঁধের ঢালে।

গাছ কাটার পর এমন আশ্বাস বা পরিকল্পনা বা চুক্তির বিষয়টি নতুন নয়। দিন শেষে দেখা যায়, গাছ কাটার বিষয়টি যেভাবে ‘প্রাধান্য’ পায়, গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে তা হয় না। তা ছাড়া বানিয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা সোলাইমান সরদার বলেন, ‘একটা গাছ লাগায়ে তা বড় করতি কয়েক বছর সময় লাগে। সেই গাছ মাত্র কয়েক দিনেই কেটে ফেলেছে পাউবোর লোকজন। বাঁধ টিকিয়ে রাখতেও তো গাছের দরকার। তা ছাড়া বাঁধের ভেতর-বাইরে সবখানে যথেষ্ট মাটি কাটার জায়গা ছিল। শ্রমিক দিয়ে সেখান থেকে মাটি আনতে পারত। কিন্তু যন্ত্র দিয়ে বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটার জায়গা তৈরি করতে কয়েক হাজার গাছ কাটা হয়েছে।’

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যে এটি স্পষ্ট যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে পরিবেশ রক্ষাকে প্রাধান্য দেয়নি। এর দায় পাউবোকেই নিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদের এমন স্বেচ্ছাচারিতা কোনোভাবে মানা যায় না। আমরা চাই এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সেই সঙ্গে এ প্রশ্নও রাখতে চাই, প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে পরিবেশবিধ্বংসী নীতি থেকে কবে বের হবে পাউবো?

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:৫৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪
৩১
Translate »

পাউবোর এই স্বেচ্ছাচারিতা মানা যায় না

আপডেট : ০২:৫৫:৩৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের চরম ভুক্তভোগী খুলনার কয়রা উপজেলা। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা—এসব সমস্যায় জেরবার কয়রার বাসিন্দারা। সমুদ্র উপকূলীয় নদীঘেরা এ উপজেলার মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রাম আমাদের কারও অজানা নয়। আমরা অবাক হই, প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রাচীর হিসেবে কাজ করা সেখানকার ৫০ হাজার গাছ বাঁধ নির্মাণের কাজের নামে কেটে ফেলা হয়েছে। এটি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীতীরবর্তী প্রায় ৩২ কিলোমিটার এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। এ কাজ করতে গিয়ে গত আট মাসে সেখানকার অর্ধলাখ গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারের দাবি, তাঁরা কোনো গাছ কাটছেন না। এলাকার লোকজন এসব গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার স্থানীয় লোকজনের দাবি, পাউবোর লোকজনই তাঁদের গাছ কেটে নিয়ে যেতে বলেছেন।

মূলত কয়েক মাস আগে বাঁধ সংস্কারের জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন প্রথমে ওই গাছ কাটা শুরু করেন। পরে এলাকার কিছু মানুষও যোগ দেন। এভাবে কয়েক মাসের মধ্যে হাজার হাজার গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। তার মানে এ গাছ কাটায় পাউবো আর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততা ছিল।

পাউবো বলছে, বাঁধ নির্মাণ শেষে বাঁধের পাশে পুনরায় গাছ রোপণ করা হবে। সেখানে আবারও বাগান হবে। এ জন্য বন বিভাগের সঙ্গে পাউবোর দুই কোটি টাকার একটি চুক্তিও হয়েছে। এ ছাড়া কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও চরে বনায়ন করা হবে। সব মিলিয়ে প্রায় চার কোটি টাকার বৃক্ষরোপণ করা হবে বাঁধের ঢালে।

গাছ কাটার পর এমন আশ্বাস বা পরিকল্পনা বা চুক্তির বিষয়টি নতুন নয়। দিন শেষে দেখা যায়, গাছ কাটার বিষয়টি যেভাবে ‘প্রাধান্য’ পায়, গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে তা হয় না। তা ছাড়া বানিয়াখালী গ্রামের বাসিন্দা সোলাইমান সরদার বলেন, ‘একটা গাছ লাগায়ে তা বড় করতি কয়েক বছর সময় লাগে। সেই গাছ মাত্র কয়েক দিনেই কেটে ফেলেছে পাউবোর লোকজন। বাঁধ টিকিয়ে রাখতেও তো গাছের দরকার। তা ছাড়া বাঁধের ভেতর-বাইরে সবখানে যথেষ্ট মাটি কাটার জায়গা ছিল। শ্রমিক দিয়ে সেখান থেকে মাটি আনতে পারত। কিন্তু যন্ত্র দিয়ে বাঁধের কাছ থেকে মাটি কাটার জায়গা তৈরি করতে কয়েক হাজার গাছ কাটা হয়েছে।’

স্থানীয় লোকজনের ভাষ্যে এটি স্পষ্ট যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পে পরিবেশ রক্ষাকে প্রাধান্য দেয়নি। এর দায় পাউবোকেই নিতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তাদের এমন স্বেচ্ছাচারিতা কোনোভাবে মানা যায় না। আমরা চাই এর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হোক। সেই সঙ্গে এ প্রশ্নও রাখতে চাই, প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে পরিবেশবিধ্বংসী নীতি থেকে কবে বের হবে পাউবো?