London ০৭:১৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ত্রুটিপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল কিংবা সংস্কার করা প্রয়োজন

বাংলাদেশের ত্রুটিপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) বাতিল কিংবা সংস্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সুপারিশ করেছে ‘আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’। একই সঙ্গে মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে সিএসএ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে (আইসিটি অ্যাক্ট) করা মামলাগুলো প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে তারা।

আইনজীবীদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ঝুঁকিতে থাকা আইনজীবীদের সহায়তা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং আইনের আওতায় সরকারি কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করানোর ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে।

বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ দমনে নিপীড়নমূলক উল্লিখিত আইনগুলো নিয়ে গত মঙ্গলবার নিজেদের ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশ: ফ্লড সাইবারক্রাইম রিজিম রিকোয়ারস রিপিল অর রিফর্ম, সেপ্টেম্বর ২০২৪’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। ওই প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এসব আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাক্‌স্বাধীনতা চর্চার জন্য মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষকে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আনুমানিক ১ হাজার ৪৩৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৫ হাজার ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাক্‌স্বাধীনতা চর্চার জন্য মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষকে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আনুমানিক ১ হাজার ৪৩৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৫ হাজার ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঢাকাভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর এ আইনে অন্তত ৬২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

ত্রুটিপূর্ণ এ আইনগুলোর মাধ্যমে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ।

প্রতিবেদনে এসব আইনে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত হওয়া কয়েকজনের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে লেখক ও কলামিস্ট মুশতাক আহমেদকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২০ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্তত ছয়বার তাঁর জামিন নাকচ করা হয়। ৯ মাসের বেশি সময় বিচারপূর্ব কারাবন্দী থাকার পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই সময় কর্তৃপক্ষ দাবি করে, হার্ট অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।  

এ ছাড়া সরকারের সমালোচনা করায় ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে তাঁর ধানমন্ডির বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। ওই মামলায় গ্রেপ্তারের পর তাঁকে ১০০ দিনের বেশি কারাবন্দী রাখা হয়। তাঁরও জামিন আবেদন পাঁচবার নাকচ করা হয়েছিল। পরে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। ২০২৪ সালেও ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়নি পুলিশ।

ওই মামলায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে এখনো মাঝেমধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে জামিন পাওয়ার পর থেকে চলতি ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ৬৮ বারের মতো হাজিরা দিতে হয়েছে তাঁকে।    

আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে নিজেদের বিভিন্ন কাজ প্রকাশ করায় সাইবার অপরাধ–সংক্রান্ত আইনের বাইরেও অন্যান্য আইনে মানবাধিকারের রক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ঘটনা উল্লেখ করে অ্যাসোসিয়েশন।

আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, করোনা মহামারির সময় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন রোজিনা ইসলাম। এসব প্রতিবেদনসংশ্লিষ্ট কারণে ২০২১ সালের মে মাসে তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে মামলা করা হয়। জামিন মঞ্জুর হওয়ার আগে তাঁকে বেশ কয়েক দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। মামলা দায়েরের তিন বছরের বেশি সময় পর গত ১৪ আগস্ট ওই আইনে করা অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে এ আইনের ব্যবহার বাংলাদেশে মৌলিক মানবাধিকার চর্চার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বতী সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে। এ লক্ষ্যে তারা কিছু সুপারিশ গ্রহণ করতে পারে।

আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশগুলোর প্রথমেই রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল বা সংশোধন করার বিষয়টি। তাতে বলা হয়েছে, এই আইন বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। বিকল্প হিসেবে আইনটির বিশেষ করে ২১, ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় মৌলিক সংশোধন আনতে পারে।

সুপারিশে বলা হয়েছে, যথোপযুক্ত হলে মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা অবশিষ্ট মামলাগুলো খারিজ করতে পারে সরকার। এর বাইরে, সরকার সাইবার অপরাধ দমন আইন–সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের আগ পর্যন্ত এসব আইনে বিশেষ করে মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা না করতে পারে।

আমেরিকান বারের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, সাইবার অপরাধ আইনে আদালতে চলমান মামলাগুলো খারিজের পাশাপাশি অতীতে যাঁদের অবৈধভাবে এসব মামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া জাতিসংঘ নির্যাতনবিরোধী সনদে (সিএটি) বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যেসব ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো দ্রুত ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সরকারের তদন্ত করা উচিত।

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০৬:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
২৩
Translate »

ত্রুটিপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল কিংবা সংস্কার করা প্রয়োজন

আপডেট : ০৬:১৮:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের ত্রুটিপূর্ণ সাইবার নিরাপত্তা আইন (সিএসএ) বাতিল কিংবা সংস্কার করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সুপারিশ করেছে ‘আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস’। একই সঙ্গে মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে সিএসএ, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে (আইসিটি অ্যাক্ট) করা মামলাগুলো প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে তারা।

আইনজীবীদের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটস ঝুঁকিতে থাকা আইনজীবীদের সহায়তা, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষা এবং আইনের আওতায় সরকারি কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করানোর ক্ষেত্রে কাজ করে থাকে।

বাংলাদেশে সাইবার অপরাধ দমনে নিপীড়নমূলক উল্লিখিত আইনগুলো নিয়ে গত মঙ্গলবার নিজেদের ওয়েবসাইটে ‘বাংলাদেশ: ফ্লড সাইবারক্রাইম রিজিম রিকোয়ারস রিপিল অর রিফর্ম, সেপ্টেম্বর ২০২৪’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। ওই প্রতিবেদনে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এসব আইন সংক্রান্ত বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাক্‌স্বাধীনতা চর্চার জন্য মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষকে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আনুমানিক ১ হাজার ৪৩৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৫ হাজার ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বাক্‌স্বাধীনতা চর্চার জন্য মানবাধিকারকর্মী, সাংবাদিক, শিক্ষার্থীসহ বহু মানুষকে সাইবার নিরাপত্তা আইন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। শুধু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনেই ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত আনুমানিক ১ হাজার ৪৩৬টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ৫ হাজার ২৮৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

ঢাকাভিত্তিক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৩ সালে সাইবার নিরাপত্তা আইন কার্যকর হওয়ার পর এ আইনে অন্তত ৬২টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩৭২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।

ত্রুটিপূর্ণ এ আইনগুলোর মাধ্যমে জনগণের মৌলিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে উল্লেখ করে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক নাগরিক সমাজ।

প্রতিবেদনে এসব আইনে নিপীড়নের শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে বিশেষভাবে আলোচিত হওয়া কয়েকজনের উদাহরণ দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মধ্যে লেখক ও কলামিস্ট মুশতাক আহমেদকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ২০২০ সালের মে মাসে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্তত ছয়বার তাঁর জামিন নাকচ করা হয়। ৯ মাসের বেশি সময় বিচারপূর্ব কারাবন্দী থাকার পর ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই সময় কর্তৃপক্ষ দাবি করে, হার্ট অ্যাটাকে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।  

এ ছাড়া সরকারের সমালোচনা করায় ২০১৮ সালের ৫ আগস্ট আলোকচিত্রী ও মানবাধিকারকর্মী শহিদুল আলমকে তাঁর ধানমন্ডির বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। পরদিন তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। ওই মামলায় গ্রেপ্তারের পর তাঁকে ১০০ দিনের বেশি কারাবন্দী রাখা হয়। তাঁরও জামিন আবেদন পাঁচবার নাকচ করা হয়েছিল। পরে ১০ হাজার টাকা মুচলেকায় হাইকোর্ট থেকে জামিন পান তিনি। ২০২৪ সালেও ওই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয়নি পুলিশ।

ওই মামলায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে এখনো মাঝেমধ্যে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। ২০১৮ সালের নভেম্বরে জামিন পাওয়ার পর থেকে চলতি ২০২৪ সালের মে পর্যন্ত ৬৮ বারের মতো হাজিরা দিতে হয়েছে তাঁকে।    

আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন সেন্টার ফর হিউম্যান রাইটসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডিজিটাল মাধ্যমে নিজেদের বিভিন্ন কাজ প্রকাশ করায় সাইবার অপরাধ–সংক্রান্ত আইনের বাইরেও অন্যান্য আইনে মানবাধিকারের রক্ষকদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের ঘটনা উল্লেখ করে অ্যাসোসিয়েশন।

আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশন বলেছে, করোনা মহামারির সময় সরকারের পদক্ষেপ নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন রোজিনা ইসলাম। এসব প্রতিবেদনসংশ্লিষ্ট কারণে ২০২১ সালের মে মাসে তাঁর বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ও ফৌজদারি দণ্ডবিধিতে মামলা করা হয়। জামিন মঞ্জুর হওয়ার আগে তাঁকে বেশ কয়েক দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। মামলা দায়েরের তিন বছরের বেশি সময় পর গত ১৪ আগস্ট ওই আইনে করা অভিযোগ থেকে তাঁকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান সাইবার নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের সংবিধান ও আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে এ আইনের ব্যবহার বাংলাদেশে মৌলিক মানবাধিকার চর্চার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি। বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বতী সরকার ইঙ্গিত দিয়েছে, তারা মানবাধিকার রক্ষার পক্ষে। এ লক্ষ্যে তারা কিছু সুপারিশ গ্রহণ করতে পারে।

আমেরিকান বার অ্যাসোসিয়েশনের সুপারিশগুলোর প্রথমেই রয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল বা সংশোধন করার বিষয়টি। তাতে বলা হয়েছে, এই আইন বাতিলের বিষয়টি বিবেচনা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। বিকল্প হিসেবে আইনটির বিশেষ করে ২১, ২৫, ২৮, ২৯ ও ৩১ ধারায় মৌলিক সংশোধন আনতে পারে।

সুপারিশে বলা হয়েছে, যথোপযুক্ত হলে মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, সাইবার নিরাপত্তা আইন এবং তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে করা অবশিষ্ট মামলাগুলো খারিজ করতে পারে সরকার। এর বাইরে, সরকার সাইবার অপরাধ দমন আইন–সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের আগ পর্যন্ত এসব আইনে বিশেষ করে মানবাধিকারকর্মী ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা না করতে পারে।

আমেরিকান বারের সুপারিশে আরও বলা হয়েছে, সাইবার অপরাধ আইনে আদালতে চলমান মামলাগুলো খারিজের পাশাপাশি অতীতে যাঁদের অবৈধভাবে এসব মামলার লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছিল, তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয় বিবেচনা করতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। এ ছাড়া জাতিসংঘ নির্যাতনবিরোধী সনদে (সিএটি) বাংলাদেশের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, যেসব ঘটনায় নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো দ্রুত ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে সরকারের তদন্ত করা উচিত।