London ১২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারী ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভারতে ইলিশ রপ্তানিতে মাফিয়ার গুপ্তজাল

থরে থরে সাজানো ‘লোভনীয়’ ইলিশ। সূর্যকিরণে চিকচিক করছে রুপালি মাছের গা। তাতে আরও বেড়েছে ইলিশের সৌন্দর্য। বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের মোকাম ক্রেতা-বিক্রেতায় গমগম। মোকামজুড়ে তুমুল হাঁকডাক, ধুন্ধুমার বেচাকেনা।

মঙ্গলবার এক দিনেই এই মোকামে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে ৬০০ মণ ইলিশ। ১ কেজি ২০০ গ্রামের বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম পড়েছে ১ হাজার ৯৫৮ টাকা। এক কেজির বেশি ওজনের দাম ১ হাজার ৮৫৮ টাকা। আর ‘এলসি সাইজ’ হিসেবে পরিচিত ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের দাম ১ হাজার ৬৮৩ টাকা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছের মোকাম বরগুনার পাথরঘাটায়ও দামের গতি-প্রকৃতি অভিন্ন। ভারতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব মোকাম থেকে এ দামেই ইলিশ কিনেছেন। তবে তারা রপ্তানি দর পাবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত প্রতি কেজি ১০ ডলার (১২০০ টাকা)। পরিবহন, প্যাকেজিং ও শ্রমিক খরচ ১০ ডলারের মধ্যেই। 

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রপ্তানিকারকরা তিন আকারের ইলিশ কেনেন। এলসি সাইজের চেয়ে ছোট ইলিশ তারা নেন না। সব আকারের ইলিশ কেনার পর অন্যান্য খরচসহ প্রতি কেজির দাম আরও বেড়ে যায়। তবে ভারতে রপ্তানি হয় নির্ধারিত ১২০০ টাকা দরেই। এ নিয়ে রয়েছে কৌতূহল। কেনা দামের চেয়ে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কমে ইলিশ পাঠিয়ে কীভাবে ব্যবসা করছেন রপ্তানিকারকরা? 

প্রশ্ন উঠেছে, ব্যবসায়ীরা সত্যিই কি লোকসানে ইলিশ রপ্তানি করছেন, নাকি ভিন্ন কোনো কৌশলে ‘লাভের গুড়’ খাচ্ছেন। বিভিন্ন মোকাম ঘুরে জেলে, নৌকার মাঝি, ট্রলার মালিক, দাদনদাতা, আড়তদার, ইলিশ রপ্তানিকারক, মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে ক্রয় ও রপ্তানিমূল্যের মধ্যে বড় ফারাক। সমকাল জানতে পেরেছে, সাগরে ইলিশ ধরা থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ নিয়ন্ত্রণ করে সুবিধাভোগীরা। রপ্তানির আড়ালে ইলিশ পাচার ও হুন্ডিতে লেনদেন নিয়েও মিলেছে নানা তথ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলিশের পেছনে রয়েছে মাফিয়া চক্রের গুপ্তজাল। বাংলাদেশ থেকে কলকাতা পর্যন্ত এই চক্রের জাল বিছানো। জেলেদের জিম্মি করে বছরের পর বছর তারা ইলিশের দরদাম ঠিক করে বাজার হাতে রাখছে। এই চক্র ভেঙে দিলে জেলেদের জীবন বদলে যেতে পারে।

কাগজের সঙ্গে মিল নেই বাস্তবতার

মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪৯ প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। সে হিসাবে ১২ অক্টোবরের মধ্যে ২ হাজার ৪৫০ টন ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে।

রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, তা মোট উৎপাদনের মাত্র শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া সরকার যে পরিমাণ রপ্তানির অনুমোদন দেয়, এর চেয়ে কম ইলিশ যায় ভারতে। গত বছর মন্ত্রণালয় ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৯৫০ টনের অনুমতি দিলেও বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন। ইলিশ রপ্তানির প্রথম অনুমতি দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। সেবার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি কেজি ইলিশ ৬ ডলার (৫০৭ টাকা) দরে প্রথম তিন চালান পাঠানো হয়েছিল। পরে অবশ্য তা প্রতি কেজি ১০ ডলারে উন্নীত হয়। 

বরিশালের পোর্ট রোড ও বরগুনার পাথরঘাটা মোকামের কয়েকজন ব্যবসায়ী সমকালকে নিশ্চিত করেছেন, কাগজপত্রে ঠিকই মন্ত্রণালয়ের দরে রপ্তানি হচ্ছে। তবে ভারতের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ওই দেশের বাজারদর অনুযায়ী। তা ছাড়া কাগজপত্রে যে পরিমাণ রপ্তানি দেখানো হয়, তার চেয়ে বেশি ইলিশ কৌশলে পাচার হয়। পাচারের ইলিশ ও অতিরিক্ত দরের টাকা লেনদেন হয় হুন্ডিতে। এই অনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে দু’দেশের ইলিশ ব্যবসায়ীরা জড়িত। ফলে লোকসান দেখানো হলেও অবৈধ পন্থায় বড় অঙ্কের লাভ করছেন ইলিশ রপ্তানিকারকরা।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ ভারতে যে দামে রপ্তানি হচ্ছে, তার চেয়ে প্রতি কেজিতে প্রায় ৮০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে দেশের ভোক্তাকে।

এদিকে, বাংলাদেশের ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম হতাশ করেছে ভারতের ক্রেতাদেরও। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশ নামে মূলত কলকাতার হাওড়া, পাতিপুকুর, বারাসাত, শিয়ালদা, শিলিগুড়ির পাইকারি বাজারে। সে দেশের ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ বলেন, নিলামে এক কেজির চেয়ে বড় ইলিশের পাইকারি বাজারেই দাম উঠছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ রুপি। আর এক কেজির নিচে দাম ওঠে ১৪০০ থেকে ১৫০০ রুপি। খুচরা পর্যায়ে এক কেজি আকারের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার রুপি। 

কলকাতার ক্রেতা দীপক দেবনাথ বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতি কেজি ১০ ডলারে কেনা ইলিশ ভারতীয় মুদ্রায় দাম পড়ে মাত্র ৮৩০ রুপি। তবে খুচরা বাজারে সেই ইলিশের দাম পৌঁছাচ্ছে আড়াই হাজার রুপি। দিল্লি, পুনের মতো বাজারে একই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০০ রুপি। তাঁর প্রশ্ন, বাংলাদেশ থেকে ইলিশ ভারতে আসার পর কী এমন ঘটে, যার কারণে ইলিশের দাম তিন গুণ হয়ে যায়? 

রপ্তানি দরের চেয়ে বাজারে দামের ফারাক কেন– এমন প্রশ্নে মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম বলেন, ‘ইলিশ রপ্তানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগের। তখনকার বাজারদরের সঙ্গে মিল রেখে ১০ ডলারে প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়। এখনও সেই পরিপত্র অনুযায়ী রপ্তানি হচ্ছে। তবে ইলিশের দেশীয় বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম সমন্বয় হতে পারে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, দাদন ব্যবসাসহ ইলিশের সবকিছুর সঙ্গেই রপ্তানিকারকরা জড়িত। ইলিশ আহরণে তাদের বিনিয়োগ আছে। সরকার রপ্তানি মূল্য কম ধরলেও তারা বেশি দামে কেনেন। কমে কিনলে দেশের বাজারেও দাম কমে যেতে পারে।  চক্রটি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশের বাজারও এভাবে কবজায় রাখে। 

রপ্তানির আড়ালে সিন্ডিকেট

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে চলে যান বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল। তিনি ভারতে থাকলেও এই নেতার হাতেই বরিশালের মৎস্য খাতের নাটাই। তাঁর নিবন্ধনের মাধ্যমে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া বরিশালের পোর্ট রোড মোকামের রয়েছে চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে টুটুলের মালিকানাধীন মাহিমা এন্টারপ্রাইজ ও তানিসা এন্টারপ্রাইজ। বাকি দুটি এসএআর এন্টারপ্রাইজ ও নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ। 
পোর্ট রোডের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, টুটুলের নামে দুটি প্রতিষ্ঠান হলেও তিনি চারটি প্রতিষ্ঠানের ইলিশ ভারত পাঠাচ্ছেন। তাঁর মামা পরিচয়ে বাবর নামক জনৈক ব্যক্তি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন টুটুল। এখন ভারতে থেকে টুটুল বৈধ ও অবৈধভাবে ভারতে ইলিশ পাঠান এবং হুন্ডিতে লেনদেন দেখভাল করেন।  ভারতে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন। 

বেশি দামে ইলিশ কিনে কম দামে রপ্তানিতে কী লাভ– জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেন টুটুলের মামা বাবর। রপ্তানি অনুমোদন পাওয়া আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান পাবনার সেভেনস্টার প্রতিষ্ঠান নগরের পোর্ট, পটুয়াখালীর মহিপুর ও বরগুনার পাথরঘাটায় এজেন্ট নিয়োগ করে রপ্তানিযোগ্য ইলিশ কিনছে। 

সেভেনস্টারের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত পোর্ট রোডের সাইফুল ইসলাম ও মহিপুরের মো. চাদুর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, ক্রয় ও রপ্তানির নির্ধারিত দরে বড় ফারাক থাকায় ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত লোকসান দিচ্ছেন। লোকসান দিয়ে কেউ ব্যবসা করে কিনা– এ প্রসঙ্গ তুললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

সেভেনস্টার গ্রুপের বিপণন ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন বলেন, রপ্তানি ব্যবসায় অনেক গোমর আছে। রপ্তানি চালানে যে দরই দেখানো হোক, অতিরিক্ত দরের টাকার লেনদেন হয় হুন্ডিতে। তা ছাড়া চোরাই পথে পাঠানো ইলিশেরও লেনদেন হয় একই পদ্ধতিতে। একই কথা বলেন পোর্ট রোডের কয়েকজন ব্যবসায়ী। 

ইলিশ কেনাবেচা তদারকিতে গত সপ্তাহে পাথরঘাটা গিয়েছিলেন সেভেনস্টারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রিকাত আলী। তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান ইলিশ কেনার প্রতিযোগিতায় থাকায় দাম এ বছর বেশি। ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এ বছর লোকসান দিয়ে রপ্তানি করছেন। কিছু ব্যবসায়ী হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। তারা লাভে আছেন। 

ইলিশ রপ্তানিতে প্রভাবশালী এ ব্যবসায়ী যুক্তি দেখান, ইলিশের হিসাব হলো ৪৩ কেজিতে এক মণ। তা ছাড়া বিভিন্ন আকারের মাছ একেক দরে কেনা হয়। এগুলো সমন্বয় করে ৪০ কেজিতে মণ হিসাবে ভারতে রপ্তানি হয় বিধায় লাভ না হলেও সমান সমান হয়। তবে অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, এ রকম হিসাবেও বর্তমান দরে রপ্তানিতে বৈধভাবে লাভ করা সম্ভব নয়। 

পাথরঘাটা ইলিশ মৎস্য পাইকারি সমিতির সভাপতি মো. শাফায়েত মুন্সী জানান, নির্ধারিত ডলার দরে ইলিশ রপ্তানি করেও ব্যবসায়ীরা লাভ করছেন। কারণ তারা ভারত থেকে নগদ টাকা না এনে ভারতের বিভিন্ন পণ্য কিনে আনেন। 

পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য পাইকার আব্বাস উদ্দিন জানান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকায় সাগরের ইলিশের স্বাদ কম, তাই নদীর মাছের চেয়ে দামও কম। রপ্তানি ব্যবসায়ীরা এই দু’ধরনের ইলিশ কিনে মিশ্রণ করেন। 

ইলিশ রপ্তানিতে রহস্যজনক বাণিজ্য বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, মোকাম ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৫০০-৮০০ টাকা কমে রপ্তানি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কোথায় লাভ হয়– আমরাও হিসাব মিলাতে পারছি না। এ কর্মকর্তা বলেন, রপ্তানি ব্যবসায়ীদের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কারা অনুমোদন পেয়েছেন, কীভাবে তাদের তদারকি করতে হবে, এসব বিষয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়নি। ফলে কী পরিমাণ ইলিশ ভারতে গেল, সে হিসাবও আমরা রাখি না।

রপ্তানিকারক এক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে ইলিশ রপ্তানি হয়। এই অনৈতিক পন্থা সবাই জানেন। তবে কেউ নিয়ন্ত্রণে আনেন না। 

চোরাই পথেও ইলিশ যাচ্ছে ওপারে

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, যশোরের মোকামে যেসব ইলিশ যায়, তা কি দেশের বাজারে বিক্রি হয়? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, যশোর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল দেশের বড় মোকাম নয়। তাহলে পাথরঘাটা, বরিশাল, পটুয়াখালীর মহিপুরের ইলিশ মোকামের আড়তদাররা এই তিন মোকামে কেন ইলিশ পাঠাতে বেশি আগ্রহী?

জানা যায়, এই তিন মোকাম থেকেই চোরাই পথে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ভারতে ইলিশ পাচার করেন। প্রথমে বড় বড় মোকাম থেকে এই তিন এলাকায় ইলিশ সংরক্ষণ করার পর নিজেদের সুবিধামতো তা ধীরে ধীরে সীমান্ত পার করেন ব্যবসায়ীরা। কলকাতার মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে এ অঞ্চলের দাদনদাতা ও আড়তদারদের যোগাযোগ রয়েছে। মূলত কলকাতার কিছু মাছ ব্যবসায়ী কয়েক হাত ঘুরে দেশীয় আড়তদারদের মাধ্যমে প্রতিবছর ইলিশ মৌসুম ঘিরে বিপুল টাকা লগ্নি করেন।

এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশ সিন্ডিকেট শুধু বাজারই নিয়ন্ত্রণ করে না; তারা কারেন্ট জাল তৈরি ও অবৈধভাবে মাছ ধরার সঙ্গেও যুক্ত। এই চক্র কীভাবে ভাঙা যায়, সে পথ খোঁজা হচ্ছে। 

Tag :

Please Share This Post in Your Social Media

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information
আপডেট : ০২:২৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪
৪৮
Translate »

ভারতে ইলিশ রপ্তানিতে মাফিয়ার গুপ্তজাল

আপডেট : ০২:২৫:৫৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ অক্টোবর ২০২৪

থরে থরে সাজানো ‘লোভনীয়’ ইলিশ। সূর্যকিরণে চিকচিক করছে রুপালি মাছের গা। তাতে আরও বেড়েছে ইলিশের সৌন্দর্য। বরিশাল নগরীর পোর্ট রোডের মোকাম ক্রেতা-বিক্রেতায় গমগম। মোকামজুড়ে তুমুল হাঁকডাক, ধুন্ধুমার বেচাকেনা।

মঙ্গলবার এক দিনেই এই মোকামে পাইকারি কেনাবেচা হয়েছে ৬০০ মণ ইলিশ। ১ কেজি ২০০ গ্রামের বেশি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশের দাম পড়েছে ১ হাজার ৯৫৮ টাকা। এক কেজির বেশি ওজনের দাম ১ হাজার ৮৫৮ টাকা। আর ‘এলসি সাইজ’ হিসেবে পরিচিত ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের দাম ১ হাজার ৬৮৩ টাকা। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মাছের মোকাম বরগুনার পাথরঘাটায়ও দামের গতি-প্রকৃতি অভিন্ন। ভারতে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এসব মোকাম থেকে এ দামেই ইলিশ কিনেছেন। তবে তারা রপ্তানি দর পাবেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় নির্ধারিত প্রতি কেজি ১০ ডলার (১২০০ টাকা)। পরিবহন, প্যাকেজিং ও শ্রমিক খরচ ১০ ডলারের মধ্যেই। 

সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রপ্তানিকারকরা তিন আকারের ইলিশ কেনেন। এলসি সাইজের চেয়ে ছোট ইলিশ তারা নেন না। সব আকারের ইলিশ কেনার পর অন্যান্য খরচসহ প্রতি কেজির দাম আরও বেড়ে যায়। তবে ভারতে রপ্তানি হয় নির্ধারিত ১২০০ টাকা দরেই। এ নিয়ে রয়েছে কৌতূহল। কেনা দামের চেয়ে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কমে ইলিশ পাঠিয়ে কীভাবে ব্যবসা করছেন রপ্তানিকারকরা? 

প্রশ্ন উঠেছে, ব্যবসায়ীরা সত্যিই কি লোকসানে ইলিশ রপ্তানি করছেন, নাকি ভিন্ন কোনো কৌশলে ‘লাভের গুড়’ খাচ্ছেন। বিভিন্ন মোকাম ঘুরে জেলে, নৌকার মাঝি, ট্রলার মালিক, দাদনদাতা, আড়তদার, ইলিশ রপ্তানিকারক, মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে পাওয়া গেছে ক্রয় ও রপ্তানিমূল্যের মধ্যে বড় ফারাক। সমকাল জানতে পেরেছে, সাগরে ইলিশ ধরা থেকে শুরু করে বাজারে বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপ নিয়ন্ত্রণ করে সুবিধাভোগীরা। রপ্তানির আড়ালে ইলিশ পাচার ও হুন্ডিতে লেনদেন নিয়েও মিলেছে নানা তথ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইলিশের পেছনে রয়েছে মাফিয়া চক্রের গুপ্তজাল। বাংলাদেশ থেকে কলকাতা পর্যন্ত এই চক্রের জাল বিছানো। জেলেদের জিম্মি করে বছরের পর বছর তারা ইলিশের দরদাম ঠিক করে বাজার হাতে রাখছে। এই চক্র ভেঙে দিলে জেলেদের জীবন বদলে যেতে পারে।

কাগজের সঙ্গে মিল নেই বাস্তবতার

মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ৪৯ প্রতিষ্ঠানকে ৫০ টন করে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। সে হিসাবে ১২ অক্টোবরের মধ্যে ২ হাজার ৪৫০ টন ইলিশ রপ্তানি করতে পারবে।

রপ্তানির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে, তা মোট উৎপাদনের মাত্র শূন্য দশমিক ২৯ শতাংশ। এ ছাড়া সরকার যে পরিমাণ রপ্তানির অনুমোদন দেয়, এর চেয়ে কম ইলিশ যায় ভারতে। গত বছর মন্ত্রণালয় ৭৯ প্রতিষ্ঠানকে ৩ হাজার ৯৫০ টনের অনুমতি দিলেও বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে ইলিশ রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৮০২ টন। ইলিশ রপ্তানির প্রথম অনুমতি দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। সেবার বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতি কেজি ইলিশ ৬ ডলার (৫০৭ টাকা) দরে প্রথম তিন চালান পাঠানো হয়েছিল। পরে অবশ্য তা প্রতি কেজি ১০ ডলারে উন্নীত হয়। 

বরিশালের পোর্ট রোড ও বরগুনার পাথরঘাটা মোকামের কয়েকজন ব্যবসায়ী সমকালকে নিশ্চিত করেছেন, কাগজপত্রে ঠিকই মন্ত্রণালয়ের দরে রপ্তানি হচ্ছে। তবে ভারতের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি হচ্ছে ওই দেশের বাজারদর অনুযায়ী। তা ছাড়া কাগজপত্রে যে পরিমাণ রপ্তানি দেখানো হয়, তার চেয়ে বেশি ইলিশ কৌশলে পাচার হয়। পাচারের ইলিশ ও অতিরিক্ত দরের টাকা লেনদেন হয় হুন্ডিতে। এই অনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে দু’দেশের ইলিশ ব্যবসায়ীরা জড়িত। ফলে লোকসান দেখানো হলেও অবৈধ পন্থায় বড় অঙ্কের লাভ করছেন ইলিশ রপ্তানিকারকরা।

গতকাল বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে খুচরা পর্যায়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ দুই হাজার টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। অর্থাৎ ভারতে যে দামে রপ্তানি হচ্ছে, তার চেয়ে প্রতি কেজিতে প্রায় ৮০০ টাকা বেশি খরচ করতে হচ্ছে দেশের ভোক্তাকে।

এদিকে, বাংলাদেশের ইলিশের আকাশছোঁয়া দাম হতাশ করেছে ভারতের ক্রেতাদেরও। পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের ইলিশ নামে মূলত কলকাতার হাওড়া, পাতিপুকুর, বারাসাত, শিয়ালদা, শিলিগুড়ির পাইকারি বাজারে। সে দেশের ফিশ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক আনোয়ার মাকসুদ বলেন, নিলামে এক কেজির চেয়ে বড় ইলিশের পাইকারি বাজারেই দাম উঠছে ১৬০০ থেকে ১৮০০ রুপি। আর এক কেজির নিচে দাম ওঠে ১৪০০ থেকে ১৫০০ রুপি। খুচরা পর্যায়ে এক কেজি আকারের ইলিশ কিনতে গুনতে হচ্ছে দুই হাজার থেকে আড়াই হাজার রুপি। 

কলকাতার ক্রেতা দীপক দেবনাথ বলেন, বাংলাদেশ থেকে প্রতি কেজি ১০ ডলারে কেনা ইলিশ ভারতীয় মুদ্রায় দাম পড়ে মাত্র ৮৩০ রুপি। তবে খুচরা বাজারে সেই ইলিশের দাম পৌঁছাচ্ছে আড়াই হাজার রুপি। দিল্লি, পুনের মতো বাজারে একই ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০০ রুপি। তাঁর প্রশ্ন, বাংলাদেশ থেকে ইলিশ ভারতে আসার পর কী এমন ঘটে, যার কারণে ইলিশের দাম তিন গুণ হয়ে যায়? 

রপ্তানি দরের চেয়ে বাজারে দামের ফারাক কেন– এমন প্রশ্নে মৎস্য অধিদপ্তরের বেনাপোল স্থলবন্দরের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের পরিদর্শক আসওয়াদুল আলম বলেন, ‘ইলিশ রপ্তানির পরিপত্রটি কয়েক বছর আগের। তখনকার বাজারদরের সঙ্গে মিল রেখে ১০ ডলারে প্রতি কেজির রপ্তানিমূল্য নির্ধারণ করা হয়। এখনও সেই পরিপত্র অনুযায়ী রপ্তানি হচ্ছে। তবে ইলিশের দেশীয় বাজারদরের সঙ্গে সংগতি রেখে দাম সমন্বয় হতে পারে।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যবসায়ী বলেন, দাদন ব্যবসাসহ ইলিশের সবকিছুর সঙ্গেই রপ্তানিকারকরা জড়িত। ইলিশ আহরণে তাদের বিনিয়োগ আছে। সরকার রপ্তানি মূল্য কম ধরলেও তারা বেশি দামে কেনেন। কমে কিনলে দেশের বাজারেও দাম কমে যেতে পারে।  চক্রটি রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি দেশের বাজারও এভাবে কবজায় রাখে। 

রপ্তানির আড়ালে সিন্ডিকেট

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভারতে চলে যান বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক নীরব হোসেন টুটুল। তিনি ভারতে থাকলেও এই নেতার হাতেই বরিশালের মৎস্য খাতের নাটাই। তাঁর নিবন্ধনের মাধ্যমে ভারতে ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে। রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া বরিশালের পোর্ট রোড মোকামের রয়েছে চারটি প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে টুটুলের মালিকানাধীন মাহিমা এন্টারপ্রাইজ ও তানিসা এন্টারপ্রাইজ। বাকি দুটি এসএআর এন্টারপ্রাইজ ও নাহিয়ান এন্টারপ্রাইজ। 
পোর্ট রোডের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, টুটুলের নামে দুটি প্রতিষ্ঠান হলেও তিনি চারটি প্রতিষ্ঠানের ইলিশ ভারত পাঠাচ্ছেন। তাঁর মামা পরিচয়ে বাবর নামক জনৈক ব্যক্তি ব্যবসা পরিচালনা করছেন। আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে দক্ষিণাঞ্চলে ইলিশ ব্যবসার একক নিয়ন্ত্রক ছিলেন টুটুল। এখন ভারতে থেকে টুটুল বৈধ ও অবৈধভাবে ভারতে ইলিশ পাঠান এবং হুন্ডিতে লেনদেন দেখভাল করেন।  ভারতে বসেই তিনি কলকাঠি নাড়ছেন। 

বেশি দামে ইলিশ কিনে কম দামে রপ্তানিতে কী লাভ– জানতে চাইলে এ বিষয়ে কথা বলতে অস্বীকার করেন টুটুলের মামা বাবর। রপ্তানি অনুমোদন পাওয়া আরেকটি বড় প্রতিষ্ঠান পাবনার সেভেনস্টার প্রতিষ্ঠান নগরের পোর্ট, পটুয়াখালীর মহিপুর ও বরগুনার পাথরঘাটায় এজেন্ট নিয়োগ করে রপ্তানিযোগ্য ইলিশ কিনছে। 

সেভেনস্টারের পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত পোর্ট রোডের সাইফুল ইসলাম ও মহিপুরের মো. চাদুর কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তারা বলেন, ক্রয় ও রপ্তানির নির্ধারিত দরে বড় ফারাক থাকায় ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত লোকসান দিচ্ছেন। লোকসান দিয়ে কেউ ব্যবসা করে কিনা– এ প্রসঙ্গ তুললে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। 

সেভেনস্টার গ্রুপের বিপণন ব্যবস্থাপক কামাল হোসেন বলেন, রপ্তানি ব্যবসায় অনেক গোমর আছে। রপ্তানি চালানে যে দরই দেখানো হোক, অতিরিক্ত দরের টাকার লেনদেন হয় হুন্ডিতে। তা ছাড়া চোরাই পথে পাঠানো ইলিশেরও লেনদেন হয় একই পদ্ধতিতে। একই কথা বলেন পোর্ট রোডের কয়েকজন ব্যবসায়ী। 

ইলিশ কেনাবেচা তদারকিতে গত সপ্তাহে পাথরঘাটা গিয়েছিলেন সেভেনস্টারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ রিকাত আলী। তিনি বলেন, অনেক প্রতিষ্ঠান ইলিশ কেনার প্রতিযোগিতায় থাকায় দাম এ বছর বেশি। ভারতের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে এ বছর লোকসান দিয়ে রপ্তানি করছেন। কিছু ব্যবসায়ী হুন্ডির মাধ্যমে অবৈধ ব্যবসায় জড়িত। তারা লাভে আছেন। 

ইলিশ রপ্তানিতে প্রভাবশালী এ ব্যবসায়ী যুক্তি দেখান, ইলিশের হিসাব হলো ৪৩ কেজিতে এক মণ। তা ছাড়া বিভিন্ন আকারের মাছ একেক দরে কেনা হয়। এগুলো সমন্বয় করে ৪০ কেজিতে মণ হিসাবে ভারতে রপ্তানি হয় বিধায় লাভ না হলেও সমান সমান হয়। তবে অন্য ব্যবসায়ীরা জানান, এ রকম হিসাবেও বর্তমান দরে রপ্তানিতে বৈধভাবে লাভ করা সম্ভব নয়। 

পাথরঘাটা ইলিশ মৎস্য পাইকারি সমিতির সভাপতি মো. শাফায়েত মুন্সী জানান, নির্ধারিত ডলার দরে ইলিশ রপ্তানি করেও ব্যবসায়ীরা লাভ করছেন। কারণ তারা ভারত থেকে নগদ টাকা না এনে ভারতের বিভিন্ন পণ্য কিনে আনেন। 

পাথরঘাটা বিএফডিসি মৎস্য পাইকার আব্বাস উদ্দিন জানান, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম এলাকায় সাগরের ইলিশের স্বাদ কম, তাই নদীর মাছের চেয়ে দামও কম। রপ্তানি ব্যবসায়ীরা এই দু’ধরনের ইলিশ কিনে মিশ্রণ করেন। 

ইলিশ রপ্তানিতে রহস্যজনক বাণিজ্য বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপপরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, মোকাম ক্রয়মূল্যের চেয়ে ৫০০-৮০০ টাকা কমে রপ্তানি করছেন ব্যবসায়ীরা। এতে কোথায় লাভ হয়– আমরাও হিসাব মিলাতে পারছি না। এ কর্মকর্তা বলেন, রপ্তানি ব্যবসায়ীদের ওপর আমাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। কারা অনুমোদন পেয়েছেন, কীভাবে তাদের তদারকি করতে হবে, এসব বিষয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়নি। ফলে কী পরিমাণ ইলিশ ভারতে গেল, সে হিসাবও আমরা রাখি না।

রপ্তানিকারক এক প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, হুন্ডির মাধ্যমে ইলিশ রপ্তানি হয়। এই অনৈতিক পন্থা সবাই জানেন। তবে কেউ নিয়ন্ত্রণে আনেন না। 

চোরাই পথেও ইলিশ যাচ্ছে ওপারে

কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, ভোলা, বরিশাল, চাঁদপুর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল, যশোরের মোকামে যেসব ইলিশ যায়, তা কি দেশের বাজারে বিক্রি হয়? এমন প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, যশোর, সাতক্ষীরা, বেনাপোল দেশের বড় মোকাম নয়। তাহলে পাথরঘাটা, বরিশাল, পটুয়াখালীর মহিপুরের ইলিশ মোকামের আড়তদাররা এই তিন মোকামে কেন ইলিশ পাঠাতে বেশি আগ্রহী?

জানা যায়, এই তিন মোকাম থেকেই চোরাই পথে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ভারতে ইলিশ পাচার করেন। প্রথমে বড় বড় মোকাম থেকে এই তিন এলাকায় ইলিশ সংরক্ষণ করার পর নিজেদের সুবিধামতো তা ধীরে ধীরে সীমান্ত পার করেন ব্যবসায়ীরা। কলকাতার মাছ ব্যবসায়ীর সঙ্গে এ অঞ্চলের দাদনদাতা ও আড়তদারদের যোগাযোগ রয়েছে। মূলত কলকাতার কিছু মাছ ব্যবসায়ী কয়েক হাত ঘুরে দেশীয় আড়তদারদের মাধ্যমে প্রতিবছর ইলিশ মৌসুম ঘিরে বিপুল টাকা লগ্নি করেন।

এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ইলিশ সিন্ডিকেট শুধু বাজারই নিয়ন্ত্রণ করে না; তারা কারেন্ট জাল তৈরি ও অবৈধভাবে মাছ ধরার সঙ্গেও যুক্ত। এই চক্র কীভাবে ভাঙা যায়, সে পথ খোঁজা হচ্ছে।