নামের মিল থাকায় কারাভোগ, ঋণের টাকা জমা দিয়ে মুক্তি
নামের মিল থাকায় বিনা অপরাধে ১০ দিন কারাভোগ করতে হয়েছে মহসিন গাজী নামে এক দিনমজুরকে। এজন্য তাকে একটি বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) ঋণের টাকাও আদালতের মাধ্যমে শোধ করতে হয়েছে। সংস্থার দায়ের করা মামলায় গত ১৩ এপ্রিল তাঁকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।
দিনমজুর মহসীন গাজী (৫৪) খুলনার কয়রা উপজেলার পূর্ব মঠবাড়ি গ্রামের মৃত মোহাম্মদ আলী গাজীর ছেলে। তিনি ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করেন। এ ঘটনার বিচার চেয়ে শুক্রবার কয়রা থানায় অভিযোগ করেছেন তিনি।
কয়রা থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম জানিয়েছেন, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থার দায়ের করা মামলায় ৪ মাসের সাজা হয় মহসীন রেজা নামে এক ব্যক্তির। মহসীন রেজা ও মহসীন গাজীর বাড়ি একই গ্রামে। তাদের দু’জনের বাবার নামেও মিল রয়েছে। নাম, ঠিকানা ও বাবার নাম মিলে যাওয়ায় এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এজন্য ওই সংস্থাকে তার জমা দেওয়া টাকা ফেরত ও অন্যান্য ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নেন মহসীন রেজা নামে এক ব্যক্তি। এর মধ্যে বিভিন্ন কিস্তিতে ২৫ হাজার টাকা শোধ করেন তিনি। বাকি টাকা শোধ করতে ব্যর্থ হওয়ায় সংস্থা থেকে লিগ্যাল নোটিশ করা হয়। পরে এক মাসের সময় নিয়ে তাঁর নিজ ব্যাংক হিসাবের একটি চেক সংস্থায় জিম্মা রাখেন মহসীন রেজা। এরপরও টাকা শোধ না করায় সংস্থার ব্যবস্থাপক বাদী হয়ে ২০২১ সালে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলায় বিবাদীর অনুপস্থিতিতে ৪ মাসের সাজা হয়। পরে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হলে পুলিশ দিনমজুর মহসীন গাজীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায়।
ভুক্তভোগী মহসীন গাজী বলেন, পুলিশ তাঁর বাড়িতে গিয়ে মামলার কথা বলে আটক করে। এ সময় মামলা সম্পর্কে জানতে পেরে তিনি পুলিশকে বোঝানোর চেষ্টা করেন ওই ব্যক্তি তিনি নন। কিন্তু পুলিশ কোনো কথা না শুনে তাঁকে ধরে নিয়ে কারাগারে পাঠায়। পরে সংস্থার ঋণের টাকা জমা দিয়ে জামিন পান তিনি।
মহসীন গাজীর ছেলে মহিবুল্লাহ গাজী বলেন, তার বাবাকে পুলিশ কারাগারে পাঠানোর পর তিনি ওই সংস্থার অফিসে বারবার গিয়েছেন। সংস্থার কর্মকর্তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও তারা ঋণের কিস্তির টাকা জমা দিতে বলেন। তাদের অফিসে ঋণের খাতায় গ্রহীতার ছবি থাকলেও তারা এড়িয়ে যান। পরে আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে ঋণের টাকা জমা দিয়ে তার বাবাকে কারামুক্ত করতে হয়েছে। তিনি এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
এ বিষয়ে জানতে মামলার বাদী ও সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা (অর্থ ও হিসাব) জি এম কামরুজ্জামান সমকালকে বলেন, মামলার পর তিনি খুলনা থেকে অন্যত্র বদলি হয়েছেন। পরবর্তী সময়ে কী হয়েছে তা তাঁর জানা নেই। এ ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি।